বিশ্ব আইভিএফ দিবসের প্রাক্কালে, কলকাতার চিকিৎসক মহল জোরালোভাবে দাবি তুলেছে—বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় জিনগত স্ক্রিনিং যেন আর বিলাসিতা না থেকে চিকিৎসার এক অমূল্য অংশ হয়ে ওঠে। বহু দম্পতি আজও জানেন না, সুস্থ দেহের আড়ালে লুকিয়ে থাকে এমন কিছু জিনগত ত্রুটি যা সফল গর্ভধারণে বাধা সৃষ্টি করে। উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন সেই সমস্যার সমাধান সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, IVF চিকিৎসায় Preimplantation Genetic Testing (PGT) ব্যবহার করলে সুস্থ সন্তানের সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। আধুনিক প্রজনন চিকিৎসায় এই পদ্ধতি এখন আশার আলো।

🟫 STORY HIGHLIGHTS

▸ জিনগত স্ক্রিনিং সফল গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ায়
▸ পুনঃবার গর্ভপাতের ক্ষেত্রে উপকারি PGT
▸ Thalassemia ও SMA-র মতো রোগ আগে থেকেই শনাক্ত সম্ভব
▸ সুস্থ দম্পতির বন্ধ্যাত্বের কারণ হতে পারে গোপন জিনগত সমস্যা
▸ ডোনেশন বা দত্তক ছাড়াও সুস্থ সন্তান সম্ভব, বললেন চিকিৎসকেরা

বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসায় নতুন আলো দেখাচ্ছে জিনগত প্রযুক্তি, সুস্থ সন্তান জন্মে আশার বার্তা দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা

একটা সময় ছিল, যখন বারবার গর্ভধারণে ব্যর্থতা কিংবা সদ্যোজাতের জটিল রোগকে ‘ভাগ্যের খেল’ বলে হালকা করে এড়িয়ে যাওয়া হতো। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আজ সেই ‘অজানা’ অনেকটাই ধরা পড়ছে জিনগত পরীক্ষার চোখে। আসন্ন বিশ্ব আইভিএফ দিবস (২৫ জুলাই)-এর প্রাক্কালে কলকাতার প্রজনন বিশেষজ্ঞরা বলছেন—সময় এসেছে জিনগত স্ক্রিনিংকে বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার মূল ধারার অংশ করে তোলার।

সম্প্রতি শহরের একটি স্বনামধন্য বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসাকেন্দ্র ‘জিনোম – দ্য ফার্টিলিটি সেন্টার’ আয়োজন করেছিল একটি বিশেষ সেশনের—‘Decode Infertility with Genetics’—যেখানে আলোচনায় উঠে আসে কিভাবে জিনগত স্ক্রিনিং বা PGT (Preimplantation Genetic Testing) বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসায় নতুন দিশা দেখাচ্ছে।

জেনেটিক কাউন্সেলর এমিলি ব্যানার্জি জানালেন,

“আমরা যারা IVF-র মাধ্যমে সন্তান নেওয়ার চেষ্টা করছি, তাদের পক্ষে এই জিনগত স্ক্রিনিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে শুধু সফল গর্ভধারণের সম্ভাবনা বাড়ে না, বরং ভবিষ্যতের সন্তানের স্বাস্থ্য নিয়েও আমরা অনেকটা নিশ্চিত হতে পারি।”

তাঁর কথায়, বহু দম্পতি আছেন, যাঁরা বারবার গর্ভপাতের মুখোমুখি হন। অথচ তাদের প্রজনন অঙ্গের কোনও সমস্যা ধরা পড়ে না।

“এমন ক্ষেত্রেই জিনগত স্ক্রিনিং প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করতে সাহায্য করে,” বলেন এমিলি।

চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য থেকে উঠে আসে এক গভীরতর দৃষ্টিভঙ্গি—আমাদের শরীরের জেনেটিক গঠনে লুকিয়ে থাকা কিছু ত্রুটি কখনো কখনো সন্তানের জন্মকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দেয়। পরিবারে হয়তো কারও অজান্তেই চলে আসছে Thalassemia, Spinal Muscular Atrophy (SMA)-র মতো জটিল রোগের জিনগত বাহকতা। প্রথাগত পরীক্ষা তা বুঝতে পারে না, কিন্তু আধুনিক স্ক্রিনিং পদ্ধতি তা আগেভাগেই শনাক্ত করতে পারে।

জিনোম-এর ক্লিনিকাল সার্ভিসের ডিরেক্টর, ডা. সুজয় দাসগুপ্ত এই বিষয়ে স্পষ্ট ভাষায় জানান,

“দম্পতিরা যদি জেনেটিক সমস্যার বাহক হন, তার মানে এই নয় যে তাঁদের সন্তান ধারণের পথ বন্ধ। IVF এবং PGT প্রযুক্তির সাহায্যে আমরা সেই ভ্রূণ বেছে নিতে পারি, যেগুলিতে ওইসব জিনগত সমস্যা নেই।”

তিনি আরও বলেন,

“অনেক দম্পতির মধ্যে কোনও শারীরিক সমস্যা নেই, তবু সন্তান আসে না। আমরা যখন জিনগত স্ক্রিনিং করি, তখনই ধরা পড়ে সেই লুকোনো ত্রুটি, যা এতদিন চোখ এড়িয়েছিল।”

এই সেশনে উঠে আসে আরেকটি জরুরি বিষয়—দম্পতিরা অনেকসময় অনিশ্চয়তায় থাকেন, তারা কি ডোনার স্পার্ম বা এগ নেবেন, না কি দত্তক নেবেন। কিন্তু চিকিৎসকেরা বলছেন, PGT প্রযুক্তি এখন এতটাই উন্নত যে নিজের জিন বহন করেও স্বাস্থ্যবান সন্তান পাওয়া সম্ভব, যদি সময়মতো স্ক্রিনিং করা হয়।

চিকিৎসকদের মতে, এই প্রক্রিয়া কোনও বিলাসিতা নয়, বরং এটি এখনকার প্রজনন চিকিৎসার এক অপরিহার্য অংশ।
একটি দলগত পদ্ধতি—যেখানে চিকিৎসক, কাউন্সেলর ও রোগী মিলেই তৈরি করেন এক সুনির্দিষ্ট পথ, যেখানে সন্তান আসে সুস্থ, সবল হয়ে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, সময় এসেছে জিনগত স্ক্রিনিংকে ‘বিকল্প’ ভাবার ধারণা থেকে সরে এসে এটিকে ‘প্রয়োজনীয়তা’ হিসেবে মেনে নেওয়ার। কারণ আধুনিক চিকিৎসা কেবল জন্মদান নয়, এক সুস্থ ভবিষ্যৎ তৈরির দায়িত্বও নিতে শুরু করেছে।

আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতিতে বন্ধ্যাত্ব আর অমোচনীয় নয়। কলকাতার বিশেষজ্ঞরা যে বার্তা দিয়েছেন তা স্পষ্ট—সন্তান নেওয়ার পথে বারবার বাধা এলে কেবল শরীর নয়, জিন-ও বলছে অনেক কিছু। IVF-এর সাফল্য এখন অনেকটাই নির্ভর করছে সময়মতো জিনগত স্ক্রিনিং এর উপর। সুস্থ সন্তান এবং ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি এড়াতে এই প্রযুক্তি আজ আর বিলাসিতা নয়, বরং এক অত্যাবশ্যক চিকিৎসাগত পদক্ষেপ। সচেতনতা ও সঠিক পরামর্শই ভবিষ্যতের দিশা।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply