সম্প্রতি বেঙ্গালুরু পুলিশ ও কলকাতা পূর্ব বিভাগ পুলিশ এক যুগ্ম অভিযানে আন্তঃরাজ্য সাইবার অপরাধীদের জালে ফাঁসিয়ে নজিরবিহীন সাফল্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রযুক্তির ছদ্মবেশে প্রতারণা ছড়ানো এই চক্রটি আনন্দপুরের একটি বিলাসবহুল আবাসনে লুকিয়ে ছিল। বেঙ্গালুরু, মুম্বাই ও আহমেদাবাদে বহু ডিজিটাল অপরাধে যুক্ত এই অভিযুক্তরা বহুদিন ধরেই পুলিশের নজরে ছিল। অবশেষে দুই রাজ্যের প্রশাসনিক তৎপরতায় ধরা পড়ে চার অভিযুক্ত। এই ঘটনা প্রমাণ করে—যখন কলকাতা পূর্ব বিভাগ পুলিশ আর বেঙ্গালুরু পুলিশ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নামে, তখন অপরাধীদের কোনো গোপন আস্তানা নিরাপদ থাকে না।

সূচিপত্র

অপরাধীদের কার্যকলাপ : এক অন্তর্জালিক ষড়যন্ত্র

 সুপরিকল্পিত অবস্থান বাছাই: কলকাতার অভিজাত পাড়ায় গোপন ডেরা

  • আন্তঃরাজ্য সাইবার অপরাধীরা বেছে নিয়েছিল আনন্দপুরের একটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট।

  • কলকাতা পূর্বাঞ্চলের নীরব আবাসিক এলাকাগুলি তাদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় মনে হয়েছিল।

  • ফ্ল্যাটটি ছিল সম্পূর্ণ ভাড়া নেওয়া এবং নথিপত্র ছিল জাল পরিচয়ে তৈরি।

 আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর অপরাধ পরিকল্পনা

  • এই আন্তঃরাজ্য সাইবার অপরাধীরা VPN, ফেক আইপি, এবং এনক্রিপ্টেড চ্যাট অ্যাপ ব্যবহার করত, যাতে তাদের অবস্থান শনাক্ত করা না যায়।

  • তারা বিভিন্ন পরিচয়ে ভুয়ো কাস্টমার কেয়ার এক্সিকিউটিভ সাজত এবং মোবাইল OTP ও ব্যাঙ্কিং পিন সংগ্রহ করত।

 বহুরাষ্ট্রীয় প্রতারণা-চক্র

  • মুম্বাই, আহমেদাবাদ ও বেঙ্গালুরুতে ছড়িয়ে ছিল এদের কর্মকাণ্ড।

  • বেঙ্গালুরু পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের শিকারে পড়েছেন শতাধিক ব্যক্তি, যাদের থেকে লাখ লাখ টাকা প্রতারণা করে নেওয়া হয়েছে।

  • বিশেষভাবে লক্ষ্য করা হয়েছিল প্রবীণ নাগরিক, অনভিজ্ঞ অনলাইন ব্যবহারকারী ও জরুরি আর্থিক পরিষেবা গ্রহীতাদের।

 জালিয়াতির অভিনব কৌশল

  • Digital Arrest Scam” – একটি অভিনব প্রতারণা পদ্ধতি: অপরাধীরা নিজেকে CBI, ED, অথবা পুলিশের ভুয়ো কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়ে বলে, কারও বিরুদ্ধে ডিজিটাল কেলেঙ্কারি চলছে।

  • ভয় দেখিয়ে তারা নাগরিকদের কাছ থেকে পেমেন্ট অ্যাপ ব্যবহার করে বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত।

  • কলকাতা পূর্ব বিভাগ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে ৬ মাস অন্তর মোবাইল ও সিম কার্ড বদলাত।

 অপরাধের অর্থ লগ্নি

  • প্রতারণা করে উপার্জিত অর্থ মূলত ক্রিপ্টোকারেন্সি, গ্লোবাল গিফট কার্ড ও অনলাইন গেমিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে হোয়াইট করা হতো।

  • আন্তঃরাজ্য সাইবার অপরাধীরা স্থানীয় ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার না করে দূরবর্তী রাজ্যের ব্যাঙ্ক ও পেমেন্ট গেটওয়েতে টাকা স্থানান্তর করত।

  • বেঙ্গালুরু পুলিশ এই আর্থিক চ্যানেলগুলোর সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন মধ্যস্থতাকারীকেও শনাক্ত করেছে।

🔎 তথ্য থেকে ইঙ্গিত

  • এই চক্রের ধরন বুঝতে গেলে স্পষ্ট হয়, তারা একেবারে কর্পোরেট স্টাইলে কাজ করত—ভাগ করা হতো দায়িত্ব, পরিচালনা চলত এক ধরনের ‘সাইবার অফিস’ পদ্ধতিতে।

  • কলকাতা পূর্ব বিভাগ পুলিশবেঙ্গালুরু পুলিশ-এর সমন্বয়ে এমন এক চক্র ধরা পড়েছে, যারা ভবিষ্যতে আরও বড় সাইবার অপরাধ সংঘটিত করতে চলেছিল বলে গোয়েন্দাদের ধারণা।

আন্তঃরাজ্য সাইবার অপরাধীদের এই জাল কেটে ফেলার পিছনে বেঙ্গালুরু পুলিশকলকাতা পূর্ব বিভাগ পুলিশ-এর ধারালো নজরদারি, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং আন্তঃরাজ্য সমন্বয়ের দৃষ্টান্ত এক নতুন দিগন্ত খুলে দিল। আধুনিক সময়ের প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ যতই জটিল হোক না কেন, এই সাফল্য প্রমাণ করে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি সদা প্রস্তুত—তীক্ষ্ণ, দৃঢ় এবং দক্ষ।

Digital Arrest: People Are Losing Crores To Scammers. How To Remain Safe

Leave a Reply