একটি দীর্ঘ ছয় দশকের পুরনো জলচুক্তি আজ নতুন করে প্রশ্নের মুখে—সিন্ধু জল চুক্তি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ঐতিহাসিক চুক্তির গভীরে লুকিয়ে থাকা চুক্তির মূল অসুবিধা তুলে ধরেন জাতির সামনে। তাঁর ভাষণে উঠে আসে বাঁধে পলি জমে থাকার বাস্তব সংকট, জলাধারের ধারণক্ষমতা মাত্র ২%-৩% এ নেমে আসার তথ্য এবং পাকিস্তানে এর সরাসরি প্রভাব। কী সেই চুক্তির ছেঁড়া পাতা, আর কেনই বা আজ তা এত আলোচিত? উত্তরের সন্ধানে রইল একটি তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ।

🔹 কী বললেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী?

  • গুজরাটে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,

    “আমি নতুন প্রজন্মকে বলতে চাই, কীভাবে আমাদের দেশকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি-এর খুঁটিনাটি অধ্যয়ন করলে সকলেই হতবাক হবেন।”

  • তিনি জানান,

    “জম্মু-কাশ্মীরের নদীগুলোর উপর বাঁধ নির্মাণ করা হলেও, ওই বাঁধগুলোর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা করার অধিকার ভারতের ছিল না। চুক্তির মূল অসুবিধা এইখানেই – নিচের গেটগুলি খোলার অনুমতি ছিল না। ফলত ৬০ বছর ধরে সেই গেট কখনও খোলা হয়নি।”

🔹 বাঁধের বাস্তব অবস্থা

  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,

    “যেসব জলাধার একশো শতাংশ জল ধারণ করতে পারত, সেগুলির ক্ষমতা এখন মাত্র ২%-৩% এ এসে দাঁড়িয়েছে।”

  • তাঁর কথায়, “সিন্ধু জল চুক্তি-র কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ জলসম্পদের ব্যবহার মার খেয়েছে। এটি চুক্তির মূল অসুবিধা হিসেবে সুস্পষ্ট।”

🔹 সিন্ধু জল চুক্তির বর্তমান অবস্থা

  • ৭ই মে অপারেশন সিন্ধুর সূচনার পর ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রী জানান,

    সিন্ধু জল চুক্তি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে। পাকিস্তানি নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন,

    “আমি কিছু করিনি। আমরা শুধু বলেছি যে চুক্তি আপাতত স্থগিত। পাকিস্তানে এখন আতঙ্ক ছড়িয়েছে।”

🔹 পাকিস্তানে বাঁধ খোলার প্রভাব

  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরও বলেন,

    “আমরা বাঁধের গেট খুলেছি পরিষ্কারের জন্য। পাকিস্তানে ইতিমধ্যে জল বেড়ে গিয়েছে।”

  • এর থেকেই স্পষ্ট, চুক্তির মূল অসুবিধা শুধু ভারতের পক্ষে সীমাবদ্ধতা তৈরি করেনি, বরং প্রতিবেশী দেশের অব্যবস্থাও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

Experts call for better dam storage to avert monsoon floods in Karnataka

কেন এই চুক্তি পুনর্বিবেচনার দাবি?

চুক্তির একপাক্ষিক চরিত্র: জলস্রোতের অসম বণ্টন

  • ১৯৬০ সালের সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী, তিনটি নদীর (সিন্ধু, ঝেলম ও চেনাব) অধিকাংশ জল পাকিস্তানকে বরাদ্দ করা হয়।

  • অপরদিকে, বিয়াস, রাভি ও সুতলজ নদীর জল ভারতের হাতে থাকলেও, উত্তর-পশ্চিম ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তার পূর্ণ সুফল পায় না।

  • এই প্রেক্ষিতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি উল্লেখ করেন, ভারতের জলসম্পদ ব্যবহারে থাকা সীমাবদ্ধতা একপ্রকার চুক্তির মূল অসুবিধা হিসেবেই ধরা যেতে পারে।

  • এই একপাক্ষিক প্রবণতা সীমান্ত রাজ্যগুলিকে দীর্ঘমেয়াদে কৃষি ও পানীয় জলের দিক থেকে বঞ্চিত করে।

প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধ ও দীর্ঘমেয়াদি নিষ্ক্রিয়তা

  • সিন্ধু জল চুক্তি অনুযায়ী, বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ প্রযুক্তিগত বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যেমন—নদীর তলদেশে গেট থাকলেও, তা খোলা যাবে না; পলি অপসারণ নিষিদ্ধ।

  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর ভাষণে বলেন, ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে এই নিচের গেট একবারও খোলা হয়নি। ফলে পলি জমে বাঁধের ধারণক্ষমতা আজ ২% থেকে ৩%-এ নেমে এসেছে।

  • এই তথ্য অনুযায়ী, যে জলাধারগুলো ১০০% জল ধরে রাখার ক্ষমতা রাখত, আজ তার অধিকাংশই কার্যত অকেজো।

  • চুক্তির মূল অসুবিধা এইখানেই—প্রকল্পের রক্ষণাবেক্ষণের স্বাভাবিক অধিকার থেকেও ভারত বঞ্চিত।

সীমান্ত রাজ্যগুলির কৃষিকেন্দ্রিক সংকট

  • পাঞ্জাব ও জম্মু-কাশ্মীরের কৃষিভিত্তিক জনপদগুলিতে জলসঙ্কট দীর্ঘস্থায়ী হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে খরার সময়।

  • অথচ একই সময়ে, সিন্ধু জল চুক্তি অনুসারে পাকিস্তানে লক্ষ লক্ষ কিউসেক জল অবাধে প্রবাহিত হচ্ছে।

  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর বক্তব্যে এই বাস্তবতাকে তুলে ধরে বলেন—জম্মু-কাশ্মীরের নদীগুলির ওপর তৈরি বাঁধগুলো যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় ভারত নিজের জল নিজেই ব্যবহার করতে পারছে না।

  • ফলে সীমান্ত অঞ্চলে কৃষির উৎপাদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে, যা একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যার দিকে নির্দেশ করে।

চুক্তির স্থগিতাবস্থা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

  • ২০২৫ সালের মে মাসে অপারেশন সিন্ধুর পর ভারত ঘোষণা করে যে, সিন্ধু জল চুক্তি-কে ‘abeyance’-এ রাখা হয়েছে।

  • পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি জানান, পাকিস্তানী নাগরিকদের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ত্যাগ করার নির্দেশনার পর এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

  • প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, “আমরা কিছু করিনি—শুধু বলেছি চুক্তি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে, আর ওদিকে (পাকিস্তানে) আতঙ্ক শুরু হয়ে গেছে।”

  • এই মন্তব্য স্পষ্টভাবে চুক্তির কৌশলগত গুরুত্ব এবং চুক্তির মূল অসুবিধা গুলিকে সামনে এনে দেয়।

সিন্ধু জল চুক্তি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র সাম্প্রতিক বক্তব্য এবং চুক্তির মূল অসুবিধা নিয়ে এই মুহূর্তে জাতীয় স্তরে এক তীব্র আলোচনার সূত্রপাত হয়েছে। বিষয়টির ইতিহাস যেমন পুরনো, তেমনি বর্তমান বাস্তবতা তাতে যুক্ত করেছে এক নতুন মাত্রা। সময় বলবে, এই চুক্তি আগামী দিনে কোন পথে এগোবে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply