কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সংকট তৈরি করেছিল, তবে ভারতের ওষুধ রপ্তানি সেই সময়ে বৈশ্বিক নেতৃত্বের এক নিদর্শন হিসেবে উঠে আসে। ভারতে প্রস্তুত হওয়া ওষুধ, বিশেষ করে প্যারাসিটামল ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সাহায্য করে। ভারতের স্বাস্থ্যসেবা খাত এবং ওষুধ শিল্পের উন্নতি, পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে এই রপ্তানির ভূমিকা, দেশের বৈশ্বিক প্রভাবকে শক্তিশালী করেছে। এই প্রবন্ধে, কোভিডের সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি এবং তার বৈশ্বিক নেতৃত্বের গুরুত্ব ও প্রভাব বিশ্লেষণ করা হবে।

সূচিপত্র

এটা কী? কোভিডে ভারতের ওষুধ রপ্তানি

কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকট সৃষ্টি করেছিল, এবং এই দুর্দিনে ভারতের ওষুধ রপ্তানি বিশ্বে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। তবে ভারতের ভূমিকা শুধুমাত্র ওষুধ সরবরাহে সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি একটি শাসনযোগ্য নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। আসুন, বিস্তারিতভাবে জানি কীভাবে ভারতের ওষুধ রপ্তানি কোভিডের সময়ে বৈশ্বিক নেতৃত্বে পরিণত হয়েছে।

ভারতের বিশাল ওষুধ শিল্প: কোভিডের মুখে এক অভাবিত শক্তি

  • বিশ্বের সবচেয়ে বড় জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুতকারী: ভারতের ওষুধ শিল্পের একটি বিশাল পরিসর রয়েছে, যা বিশ্বের ৫০% জেনেরিক ওষুধ প্রস্তুত করে। এই অগ্রগতি ভারতকে কোভিডের সময় সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্য সাপ্লাই চেইন দেশের একজন গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ভারতের ওষুধ রপ্তানি শুধুমাত্র দেশে নয়, বৈশ্বিক বাজারেও চাহিদা তৈরি করেছে।

  • স্বল্পমূল্যে উচ্চমানের ওষুধ: ভারতের রপ্তানি করা ওষুধের মূল বৈশিষ্ট্য হল এর কম দাম এবং উচ্চ গুণগত মান। কোভিড মহামারী চলাকালীন, ভারতের ওষুধ কোম্পানিগুলি বিশ্বের বিভিন্ন দরিদ্র দেশগুলির জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহ করেছে।

Trump's tariffs shake global pharma—India at the crossroads of crisis and  opportunity - The Economic Times

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকটে ভারতের ভূমিকা: কোভিডের সময় ওষুধের রপ্তানির কাহিনি

  • হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বিতর্ক: এক সত্য ঘটনা বলি। ২০২০ সালের মার্চে, ভারতের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে, তারা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি করবে, কারণ এটি কোভিডের বিরুদ্ধে কার্যকরী বলে ধারণা করা হচ্ছিল। যদিও পরে কিছু দেশের সমালোচনার পর, ভারত এই রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ করে, এটি ছিল ভারতের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতারই এক পরিচয়।

  • ওষুধের সরবরাহের গতি: শুধু ভারতের তৈরি ওষুধ নয়, ভারত কোভিডের প্রথম দিকে দ্রুত টেস্ট কিট, পিপিই কিট এবং মাস্কও সরবরাহ করেছে। সেক্ষেত্রে, কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব অপরিসীম ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এও ভারতের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেছে।

ভারতের উৎপাদন ক্ষমতা এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ

  • বিশ্বের প্রতিটি কোণায় ভারতীয় ওষুধের প্রবাহ: কোভিডের সময়ে ভারত তার ওষুধ রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য নতুন পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলি যেমন ‘সেরাম ইনস্টিটিউট’ ও ‘বায়োকন’ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানগুলি কোভিডের ভ্যাকসিন উৎপাদনেও বিশাল ভূমিকা পালন করেছে। কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকটে ভারতের ভূমিকা এক অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে ওঠে।

  • বিশ্বের প্রয়োজনীয় দেশগুলিতে সরবরাহ: আফ্রিকা, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, এবং দক্ষিণ আমেরিকার অনেক দেশ ভারতের ওষুধের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। ভারতীয় ওষুধের রপ্তানি কেবলমাত্র গরীব দেশগুলোকেই সাহায্য করেনি, বরং উন্নত দেশগুলির জন্যও এটি একটি অবলম্বন ছিল।

প্রকৃত কাহিনীর স্ফূর্তিতে ভারতীয় কোম্পানির উদ্যোগ

  • সেরাম ইনস্টিটিউটের প্রচেষ্টা: সেরাম ইনস্টিটিউট, ভারতের অন্যতম বৃহৎ ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, কোভিড ভ্যাকসিন উৎপাদনে বিশ্বজুড়ে শীর্ষে ছিল। এটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রথম করোনা ভ্যাকসিন প্রস্তুতির কাজ শুরু করে। কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব এবং ভারতের ওষুধ রপ্তানি এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।

  • একটি জীবন রক্ষাকারী সিদ্ধান্ত: একটি ছোট্ট কিন্তু চমকপ্রদ কাহিনি—সেরাম ইনস্টিটিউটের সিইও আদার পুনাওয়ালা তার কোম্পানি থেকে প্রথম দফায় প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডোজ ভ্যাকসিন রপ্তানি করার সিদ্ধান্ত নেন। এটা ছিল ভারতের চূড়ান্ত প্রতিশ্রুতি—কোভিড মহামারী চলাকালীন গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনে ভারত অবিচল থাকে।

ভারতের ওষুধ রপ্তানির প্রতি আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া

  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা: ভারতীয় নেতৃত্বের ওপর সবচেয়ে বড় প্রশংসা আসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) থেকে, যারা ভারতের ওষুধ রপ্তানির ওপর একাধিক প্রশংসাসূচক রিপোর্ট প্রকাশ করে। WHO জানায়, ভারতের অবদান ছাড়া কোভিডের সময় বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা করা প্রায় অসম্ভব ছিল।

  • প্রতিরোধের চ্যালেঞ্জ: তবে, কিছু দেশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ছিল, বিশেষ করে যখন ভারত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছিল। এই ঘটনাটি আন্তর্জাতিক রাজনীতির দিকে নতুন মোড় দেয়, তবে ভারতের প্রতিশ্রুতি ছিল স্পষ্ট—বিশ্বের চিকিৎসা সঙ্কট মেটাতে তারা প্রস্তুত ছিল।

এভাবে, কোভিডে ভারতের ওষুধ রপ্তানি শুধুমাত্র একটি জাতীয় অর্জন নয়, বরং এটি বিশ্ববাজারে ভারতের একটি শক্তিশালী উপস্থিতি তৈরি করেছে। ভারত, যা একদিকে বৈশ্বিক সংকটের সময় বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সঙ্কটের মোকাবিলা করতে সহায়ক হয়েছে, অন্যদিকে, তার ওষুধ শিল্পের উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের দিকে অগ্রসর হয়েছে। ভারতের ওষুধ রপ্তানি যে শুধুমাত্র দেশের জন্য নয়, বরং পুরো বিশ্বের জন্য একটি উপকারিতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা সবারই জানা উচিত।

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ? ভারতের ওষুধ রপ্তানি কোভিডের সময়ে বৈশ্বিক নেতৃত্বের একটি উদাহরণ

কোভিড-১৯ মহামারী পৃথিবীজুড়ে যে বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল, সেখানে ভারতের ওষুধ রপ্তানি একেবারে অত্যাবশ্যক হয়ে উঠেছিল। এই সময়, ভারত শুধুমাত্র নিজ দেশে রোগীদের জন্য ওষুধ সরবরাহ করেনি, বরং বিশ্বব্যাপী বহু দেশকে সহায়তা করেছে। কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব শুধুমাত্র একটি নীতি ছিল না, এটি ছিল একটি বাস্তব পদক্ষেপ, যা বিশ্বকে ভারতীয় শক্তি ও সেবামূলক মনোভাবের প্রতি আরও কাছাকাছি নিয়ে এসেছে।

বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংকটের মোকাবিলা: ভারতীয় রপ্তানির গুরুত্ব

  • বিশ্বের একক বৃহত্তম ওষুধ প্রস্তুতকারী: ভারতের ওষুধ শিল্প বিশ্বে অন্যতম বৃহত্তম। কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল, যা এই শিল্পকে বিশ্বের স্বাস্থ্য সংকটে নেতৃত্ব দিতে সক্ষম করেছে। এই সময়ে, ভারতীয় ওষুধ কোম্পানিগুলি বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইনে একটি বিশাল ভূমিকা পালন করেছে।

  • রপ্তানি বৃদ্ধি ও সাশ্রয়ী দাম: ভারতের ওষুধ রপ্তানির মূল শক্তি ছিল তার সাশ্রয়ী দাম ও উচ্চমানের গুণগত নিশ্চয়তা। সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সরবরাহের মাধ্যমে, ভারতের ওষুধ রপ্তানি দরিদ্র এবং উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে, যারা কোভিডের সময় সঠিক চিকিৎসা পেতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছিল।

ভারতের নেতৃত্বের বিষয়: কোভিডে ভারতের ওষুধ রপ্তানি কৌশল

  • বিশ্বের সংকট মোকাবিলায় ভারতের সহায়তা: কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতে, কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব এক উদাহরণ হয়ে দাঁড়ায়। ভারত তার তৈরি ওষুধ এবং চিকিৎসা সামগ্রী যেমন পিপিই কিট, টেস্ট কিট এবং ওষুধের রপ্তানি বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি করেছিল, যা বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সংকটকে কিছুটা সহজতর করেছে।

  • প্রথমদফায় রপ্তানি বৃদ্ধি: জানুয়ারী ২০২০ থেকে ভারতের ওষুধ রপ্তানি এক গুরুত্বপূর্ণ বেড়ে গিয়েছিল। কোভিডের প্রতিরোধে ব্যবহৃত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং প্যারাসিটামল দেশের চাহিদা পূরণের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও সরবরাহ করা হয়। ভারতীয় কোম্পানিগুলির দ্রুত পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছিল।

Indian Pharma: A Global Leader Under Pressure | Institut Montaigne

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও বিশ্বব্যাপী প্রশংসা

  • বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রশংসা: ভারতের ওষুধ রপ্তানি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) বেশ কিছু বার প্রশংসা প্রকাশ করেছে। WHO জানিয়েছে যে, কোভিড-১৯ মহামারীর প্রথম পর্যায়ে, ভারতের সাহায্য ছাড়া অনেক দেশেই পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারতো। কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি এবং তার বৈশ্বিক ভূমিকা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল।

  • বিদেশি সহায়তা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা: যখন বিশ্বের অধিকাংশ দেশই অভ্যন্তরীণ সংকটে পতিত, ভারত তার উন্নত উৎপাদন ক্ষমতা দিয়ে বিশ্বের স্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলায় সহায়তা করেছে। এটি ভারতের স্বাস্থ্য খাত এবং কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একটি স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকে।

কোভিডের সময়ে ভারতের আন্তর্জাতিক প্রভাব: সশক্ত ওষুধ শিল্প

  • ইউনাইটেড নেশনস’স ধন্যবাদ: ভারতের ওষুধ রপ্তানি নিয়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন রিপোর্টও প্রশংসাসূচক ছিল। তারা জানায়, ভারতকে বিশ্ব স্বাস্থ্য চ্যালেঞ্জে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানো উচিত। কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের ভূমিকা এটিই একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

  • ভ্যাকসিন উৎপাদনে ভারতীয় সহযোগিতা: ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট কোভিড ভ্যাকসিন উৎপাদনে অন্যতম প্রধান নাম হয়ে দাঁড়ায়। ভারতের ওষুধ রপ্তানি শুধুমাত্র টেস্ট কিট ও অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং ভারতীয় ভ্যাকসিন রপ্তানি বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ভারতের গ্লোবাল প্রভাবের নতুন দিগন্ত: ভবিষ্যৎ আশাবাদী

  • ভারতের ভবিষ্যৎ ওষুধ রপ্তানি সম্ভাবনা: কোভিড-১৯ পরবর্তী সময়েও ভারতের ওষুধ রপ্তানি একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সামনে নিয়ে এসেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকটের এই সময়ে, ভারতীয় কোম্পানিগুলির প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং উৎপাদন ক্ষমতা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ওষুধ সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

  • উন্নত দেশগুলির মধ্যে ভারতীয় অংশগ্রহণ: কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য নয়, বরং উন্নত দেশগুলির স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপরও প্রভাব ফেলেছে। এই নেতৃত্বের ফলে, ভারতকে বিশ্বের ওষুধ শিল্পের সবচেয়ে বড় অংশীদার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

ভারতের ওষুধ রপ্তানি কোভিডের সময়ে এক বৈশ্বিক বিপ্লব সৃষ্টি করেছিল। এটি ভারতকে একটি স্বাস্থ্যগত দানবের মতো বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব এর সঠিক দৃষ্টান্ত। সামগ্রিকভাবে, ভারতের এই সাফল্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, অর্থনীতি এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ভারতের ওষুধ রপ্তানি কেবলমাত্র ব্যবসায়িক কার্যকলাপ ছিল না, এটি একটি মানবিক উদ্যোগ ছিল, যা বিশ্বকে একত্রিত করতে সাহায্য করেছে।

ভারতের ওষুধ রপ্তানি: ৫টি চমকপ্রদ তথ্য

ভারতের ওষুধ রপ্তানি শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছিল না, এটি ছিল একটি আন্তর্জাতিক দায়িত্ব। কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি বিশ্বের দেশগুলির জন্য একটি আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই ক্ষেত্রে কিছু বিশেষ তথ্য রয়েছে, যা প্রমাণ করে যে, ভারতের ওষুধ রপ্তানি কীভাবে বৈশ্বিক নেতৃত্বে ভূমিকা রেখেছে। চলুন, এই চমকপ্রদ তথ্যগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।

বিশ্বের বৃহত্তম ভ্যাকসিন উৎপাদক: সেরাম ইনস্টিটিউটের অবদান

  • ভারতের ওষুধ রপ্তানি বিশেষভাবে ভ্যাকসিন রপ্তানির ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য ছিল। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট, বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভ্যাকসিন উৎপাদক। কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, এটি প্রমাণ করেছিল যে, কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারত এর মাধ্যমে পৃথিবীজুড়ে লাখ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করেছিল, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অত্যন্ত জরুরি ছিল।

  • ভ্যাকসিন ডিপ্লোম্যাসি: সেরাম ইনস্টিটিউট ভারতের ওষুধ রপ্তানি ক্ষেত্রে বৈশ্বিক নেতৃত্বের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব এক নতুন মাইলফলক ছুঁয়েছে, যেখানে ভারত স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় উন্নত দেশগুলোকেও সহযোগিতা করেছে।

হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের বিশ্বব্যাপী সরবরাহ

  • হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন একটি প্রাথমিক ওষুধ যা কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় ব্যবহার হয়েছিল। ভারত সরকার এই ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কোভিডের প্রথম দিকে, ভারতের ওষুধ রপ্তানি এর মাধ্যমে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বিশাল পরিমাণে বিদেশে রপ্তানি করা হয়েছিল।

  • কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি এর ফলে, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলি উপকৃত হয়েছে। ভারতের এই পদক্ষেপ, কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব নিঃসন্দেহে একটি বিশ্বমঞ্চে প্রশংসিত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এর প্রশংসা

  • কোভিড মহামারীর সময়, ভারতের ওষুধ রপ্তানি নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ব্যাপক প্রশংসা জানিয়েছে। কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের ভূমিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এক বিপুল প্রভাব ফেলেছিল।

  • WHO জানিয়েছিল যে, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি ছিল একটি আন্তর্জাতিক সেবা, যা এই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে সাহায্য করেছে। ভারতের রপ্তানি কেবলমাত্র আঞ্চলিক সাপ্লাই চেইনে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি বৈশ্বিক চাহিদাও পূরণ করেছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে ভারতের ওষুধ রপ্তানি

  • ভারতের ওষুধ রপ্তানি বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হয়ে উঠেছিল। কোভিড মহামারীর মধ্যে, ভারত বিভিন্ন আফ্রিকান, ল্যাটিন আমেরিকান ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিতে ওষুধ সরবরাহ করেছে।

  • কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি এবং বৈশ্বিক নেতৃত্বের ভূমিকা এই সময়ে অত্যন্ত স্পষ্ট হয়েছিল। ভারতের সরকারের “ভ্যাকসিন মিত্র” প্রকল্পের মাধ্যমে, ভারতীয ওষুধ শিল্প বিশ্বের অনেক দেশকে সাশ্রয়ী দামে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসা সরবরাহ করেছে।

Global supplier India curbs drug exports as coronavirus fears grow | Reuters

অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উৎপাদন ক্ষমতা

  • ভারতের ওষুধ রপ্তানি সাফল্যের মূল ছিল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উৎপাদন ক্ষমতা। ভারতের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি এবং উৎপাদন সক্ষমতার জন্য, কোভিড-১৯ মহামারী রপ্তানি পরিস্থিতির জন্য ভারত প্রস্তুত ছিল।

  • ভারতীয় কোম্পানিগুলি কোভিড মহামারী সময় ভারতের ওষুধ রপ্তানি কৌশলে বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, যার ফলে দ্রুত উৎপাদন এবং বিশ্বব্যাপী সরবরাহ সম্ভব হয়েছে।

ভারতের ওষুধ রপ্তানি এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে কোভিড মহামারী সময়। এই সময়ে, ভারত শুধু দেশীয় চাহিদা পূরণই করেনি, বরং আন্তর্জাতিক মহামারী মোকাবিলায় অত্যন্ত কার্যকরী ভূমিকা রেখেছে। কোভিডে ভারতের বৈশ্বিক নেতৃত্ব পরবর্তীতে ভারতের স্বাস্থ্য খাতের অগ্রগতির প্রমাণ, যা উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্য উদাহরণ। ভারতের ওষুধ রপ্তানি কেবলমাত্র ব্যবসায়িক নয়, এটি একটি মানবিক প্রচেষ্টা, যা বিশ্বের কাছে ভারতকে আরো শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে গেছে।

Leave a Reply