সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ অবদান: সমান্তরাল সাফল্যের কাঠামো
ডিফেন্স পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (DPSUs): পরিকাঠামো ও উৎপাদনের পুনর্গঠন
ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি-তে ডিফেন্স পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিংস (DPSUs)-এর অবদান ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ₹৮,৩৮৯ কোটি পর্যন্ত পৌঁছেছে।
এই অঙ্ক ২০২৩-২৪-এর ₹৫,৮৭৪ কোটির তুলনায় ৪২.৮৫% প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এই অগ্রগতির পেছনে একাধিক কাঠামোগত পরিবর্তন কার্যকর হয়েছে:
উৎপাদন ইউনিটগুলির আধুনিকীকরণ
রপ্তানিযোগ্য পণ্যের পরিসরে প্রযুক্তি-নির্ভর সিস্টেম অন্তর্ভুক্তি
ডেলিভারি ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার ডিজিটাল স্বয়ংক্রিয়তা
DPSU গুলির আওতায় ভারী শিল্প ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান যেমন HAL, BEL, BEML ইতিমধ্যে ইউরোপ, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে।
বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব: রপ্তানির স্থির ধারা
২০২৪-২৫ সালে বেসরকারি খাতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি হয়েছে ₹১৫,২৩৩ কোটি — ২০২৩-২৪ সালের ₹১৫,২০৯ কোটি-র তুলনায় প্রায় অপরিবর্তিত।
এই সামান্য পরিবর্তন সত্ত্বেও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি সংস্থাগুলি:
বিশ্বমানের সাব-সিস্টেম ও অ্যাভিওনিক্স রপ্তানিতে নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছে
৮০টিরও বেশি দেশে নির্ভরযোগ্য ক্লায়েন্ট বেস গড়ে তুলেছে
রপ্তানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে রয়েছে UAV, সেন্সর, সাইবার সিস্টেম ও বুলেটপ্রুফ গিয়ার
ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি-তে এই ধারাবাহিক অংশগ্রহণ রপ্তানি বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
রপ্তানি সংক্রান্ত পরিকাঠামো ও অনুমোদন ব্যবস্থার উন্নয়ন
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পরিচালিত পোর্টাল থেকে অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুততর হওয়ায় DPSU ও বেসরকারি খাতের অংশীদারদের মধ্যে রপ্তানি উৎসাহ বেড়েছে।
অনুমোদিত রপ্তানি অনুরোধের সংখ্যা ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে দাঁড়িয়েছে ১,৭৬২ — পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় ১৬.৯২% বৃদ্ধি।
এটি একটি ধারাবাহিক ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির হার বজায় রাখার প্রযুক্তিনির্ভর কাঠামো তৈরি করেছে।
একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ: সরকার বনাম বেসরকারি অবদান
খাত | ২০২৩-২৪ (₹ কোটি) | ২০২৪-২৫ (₹ কোটি) | প্রবৃদ্ধি (%) |
---|---|---|---|
DPSU | ৫,৮৭৪ | ৮,৩৮৯ | ৪২.৮৫% |
বেসরকারি | ১৫,২০৯ | ১৫,২৩৩ | ~০.১৬% |
উল্লিখিত তথ্য অনুসারে, DPSU-র অবদান গত অর্থবর্ষে তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও, ২০২৪-২৫-এ তারা ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধির অন্যতম চালক হয়ে উঠেছে।অন্যদিকে, বেসরকারি খাত একটি স্থিতিশীল পরিসংখ্যান বজায় রেখেছে, যা প্রবৃদ্ধি কম হলেও রপ্তানি ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে।
৮০টি দেশে রপ্তানি, বৈচিত্র্যময় সামগ্রী
ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি আজ শুধুমাত্র একটি দেশের নির্ভরশীলতা থেকে বেরিয়ে এসে প্রায় ৮০টি দেশে পৌঁছেছে। রপ্তানি সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে:
অস্ত্র ও গোলাবারুদ
সাব-সিস্টেম এবং সম্পূর্ণ সিস্টেম
খুচরো যন্ত্রাংশ ও উপাদান
এই বৈচিত্র্যময় রপ্তানি ভারতের প্রতিরক্ষা শিল্পের গভীরতা ও পরিপক্বতা নির্দেশ করে। ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির হার এই বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নীতিগত সংস্কার ও অনুমোদন প্রক্রিয়ার সহজীকরণ:
শিল্প লাইসেন্স প্রক্রিয়ার সহজীকরণ
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-র উদ্যোগে রপ্তানিকেন্দ্রিক সংস্থাগুলিকে শিল্প লাইসেন্স প্রাপ্তিতে আগের তুলনায় অনেক কম স্তর পেরোতে হচ্ছে।
একাধিক সরকারি নথি ও যাচাইকরণের শর্ত হ্রাস পেয়ে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি-র গতিবিধিতে একটি সময় সাশ্রয়ী গতি দেখা দিয়েছে।
গৃহীত লাইসেন্স আবেদনগুলির প্রক্রিয়াকরণে এখন নির্ধারিত সময়সীমা কার্যকর — বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ৪ থেকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত অনুমোদন মিলছে।
নির্দিষ্ট যন্ত্রাংশে লাইসেন্স অব্যাহতি: নির্বাচিত অবকাঠামো উপাদানের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড়
২০২৩ সালের পরিবর্তিত নীতিমালার অধীনে কিছু নির্দিষ্ট অংশ ও সামরিক উপাদান — যেমন বুলেটপ্রুফ শিল্ড, হেলমেট, কমিউনিকেশন ডিভাইস — এখন আর রপ্তানির ক্ষেত্রে পৃথক লাইসেন্সের আওতায় পড়ছে না।
এই উদ্যোগ ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি-কে গতি দিয়েছে, বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি মাপের সংস্থাগুলির জন্য।
লাইসেন্সের মেয়াদ বৃদ্ধি: সময়ের শৃঙ্খল হ্রাস
পূর্বে, রপ্তানি লাইসেন্সের মেয়াদ ২ বছর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, বর্তমানে সেটি বৃদ্ধি পেয়ে ৫ বছর পর্যন্ত কার্যকরী হয়েছে।
এই মেয়াদবৃদ্ধি রপ্তানিকারক সংস্থাগুলিকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি বাস্তবায়নে সাহায্য করছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়।
এভাবে ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি-র ধারাবাহিকতা ও পরিকল্পনা কাঠামো আরও সংগঠিত হয়েছে।
এক্সপোর্ট অথরাইজেশন প্রক্রিয়া সহজতরকরণ: এক পোর্টাল এক সমাধান
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-এর ডিজিটাল রপ্তানি পোর্টাল চালু হওয়ার ফলে এক্সপোর্ট অথরাইজেশন প্রক্রিয়া এখন সম্পূর্ণ অনলাইনভিত্তিক।
পূর্বে যেখানে অফলাইন দস্তাবেজ যাচাই ও অনুমোদনে প্রায় ৩–৪ মাস সময় লাগত, সেখানে এখন গড়ে ৩০–৪৫ দিনেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হচ্ছে।
আবেদনকারীদের ট্র্যাকিং সুবিধা, SMS ও ই-মেইল আপডেট, এবং এক ক্লিক আপলোড সিস্টেম রপ্তানিকারকদের জন্য একটি কার্যকর অবকাঠামো তৈরি করেছে।
পরিসংখ্যানের দৃষ্টিতে রপ্তানি অনুমোদনের ক্রমবর্ধমান প্রবাহ
২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে এক্সপোর্ট অথরাইজেশন প্রক্রিয়া-র মাধ্যমে মোট ১,৭৬২টি রপ্তানি অনুমোদন জারি হয়েছে — যা আগের বছরের ১,৫০৭টি অনুমোদনের তুলনায় ১৬.৯২% বৃদ্ধি।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-র তথ্য অনুসারে, এই বৃদ্ধির পেছনে একটি নিরবিচ্ছিন্ন নীতিগত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সক্রিয় থেকেছে।
একইসঙ্গে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৭.৪% বৃদ্ধি পেয়েছে — একটি দৃষ্টান্তমূলক প্রবণতা যা ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি বৃদ্ধির সম্ভাবনার ইঙ্গিত দেয়।
আত্মনির্ভরতার দিকে এগিয়ে চলা
এক সময় ভারত প্রতিরক্ষার জন্য সম্পূর্ণভাবে আমদানির উপর নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখন ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি শুধু বৃদ্ধিই পায়নি, বরং তা দেশের আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের প্রতিফলন।প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের নীতিগত সংস্কার ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা এই পরিবর্তনের প্রধান কারণ।নতুন ও উন্নত স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (SOP) রপ্তানি অনুমোদনের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়েছে।
সাম্প্রতিক তথ্য ও সরকারি পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট, ভারতের প্রতিরক্ষা রপ্তানি এখন একটি সংগঠিত ও প্রযুক্তিনির্ভর রপ্তানি কাঠামোর দিকে এগোচ্ছে, যেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়-র নীতিগত সংস্কার, অনুমোদন প্রক্রিয়ার দ্রুততা এবং বেসরকারি ও সরকারি ক্ষেত্রের সমন্বিত অংশগ্রহণ একটি ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির হার-এর পথ তৈরি করছে। ভবিষ্যৎ লক্ষ্যমাত্রা নির্দিষ্ট থাকায় এই খাতের গতিপ্রকৃতি এবং রপ্তানি প্রবাহ আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের অবস্থানকে দৃঢ় করার সম্ভাবনা দেখাচ্ছে।