শিল্প মেলা ২০২৫ শুধুমাত্র রঙ-তুলি আর ক্যানভাসের খেলা নয়, এটি অনুভূতির এক গভীর প্রতিচ্ছবি, যেখানে প্রতিটি রেখা একটি গল্প বলে, আর প্রতিটি রঙে মিশে থাকে আবেগের অপূর্ব ঝঙ্কার। দিল্লির বুকে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত এই মহোৎসব শিল্পের এক অনন্য আসর, যেখানে শিল্প প্রাণ পায়, রঙ কথা বলে, আর সৃষ্টিশীলতা ছড়িয়ে পড়ে অবাধে। শিল্প মেলা ২০২৫ শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, এটি এক মিলনক্ষেত্র—দেশ-বিদেশের খ্যাতিমান শিল্পী, উদীয়মান প্রতিভা, সংগ্রাহক ও শিল্পরসিকদের এক মহা সমাবেশ। লোকশিল্পের চিরায়ত রূপ থেকে শুরু করে আধুনিক ডিজিটাল আর্টের সম্মোহনী ছোঁয়া—সবকিছুই একত্রিত হয় এই মেলায়। ইতিহাস ও ভবিষ্যতের মেলবন্ধনে গড়ে ওঠা এই মেলা যেন শিল্পের এক বহুমাত্রিক ক্যানভাস।
এই বছরের শিল্প মেলা ২০২৫ আরও ব্যতিক্রমী হতে চলেছে। থিম, পরিবেশনা, প্রযুক্তির ব্যবহার—সবকিছুতেই থাকছে এক নতুন মাত্রা, যেখানে সৃজনশীলতার সম্ভার হবে আরও বিস্তৃত, আরও চমকপ্রদ। তাই, যদি তুমি শিল্পের এই মহাযজ্ঞে নিমগ্ন হতে চাও, তাহলে প্রস্তুত হয়ে যাও! কারণ শিল্প মেলা ২০২৫-এ প্রতিটি পদক্ষেপেই অপেক্ষা করছে নতুন বিস্ময়, মুগ্ধতার অনির্বচনীয় অনুভূতি এবং এক অভূতপূর্ব শিল্প অভিজ্ঞতা।
চলো, এবার একদম খুঁটিনাটি জেনে নেওয়া যাক, শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি সম্পর্কে!
সূচিপত্র
Toggleশিল্প মেলার স্থান: কোথায় হচ্ছে এবার?
শিল্পের মহাসমারোহে ডুবে যাওয়ার জন্য দরকার এক উপযুক্ত প্রাঙ্গণ, যেখানে সৃষ্টিশীলতার নিরবচ্ছিন্ন বিস্তার ঘটে, আর দর্শকরা রঙ ও রূপের অপার মায়াজালে হারিয়ে যেতে পারেন। সেই উপলব্ধিকে বাস্তব রূপ দিতে, শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি-র জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে এক সুপরিচিত, ঐতিহ্যবাহী এবং সুবিশাল ভেন্যু—প্রগতি ময়দান।
দিল্লির প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এই সুবিশাল স্থানটি শুধুমাত্র এক্সিবিশন বা প্রদর্শনীর জন্য নয়, বরং এক বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক মিলনস্থল। এই মাঠজুড়ে ছড়িয়ে থাকবে শিল্পের অসংখ্য রূপ—চিত্রকলার ছোঁয়া, ভাস্কর্যের সংবেদনশীল উপস্থিতি, ডিজিটাল আর্টের আধুনিক ছন্দ আর লোকশিল্পের শেকড়স্পর্শী আবহ।
এই শিল্প মেলার স্থান এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যেখানে প্রতিটি দর্শনার্থী সহজেই প্রবেশ করতে পারেন, শিল্পীদের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপন করতে পারেন এবং শিল্পকর্মের গভীরে নিমগ্ন হতে পারেন। প্রশস্ত গ্যালারি, অত্যাধুনিক আলো-বাতাসের সংযোগ, আর নিরিবিলি শিল্পমগ্ন পরিবেশ একে করে তুলেছে এক আদর্শ প্ল্যাটফর্ম।
শিল্পের বিস্তার আর উপলব্ধির গভীরতা উপলব্ধি করতে হলে শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি-র প্রগতি ময়দান যেন এক বাস্তব শিল্পস্বর্গ, যেখানে প্রতিটি কোণায় কোণায় ছড়িয়ে থাকবে সৃজনশীলতার সুরভি!
শিল্প মেলার থিম: এবারের চমক কী?
শিল্প নিছকই রং-তুলির খেলা নয়, বরং এটি এক বহুমাত্রিক ভাষা, যেখানে প্রতিটি রেখার বাঁকে, প্রতিটি রঙের সংমিশ্রণে লুকিয়ে থাকে এক গভীর গল্প। শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি এই বছরের জন্য বেছে নিয়েছে এক অভূতপূর্ব ও হৃদয়স্পর্শী থিম—“ভারতের বৈচিত্র্যময় শিল্প”।
ভারত, যার মাটি, আকাশ, নদী, পাহাড়—সবকিছুতেই মিশে আছে হাজার বছরের শিল্প ও সংস্কৃতির ছোঁয়া। এই মেলায় সেই সুবিশাল ঐতিহ্যের এক বহুমাত্রিক প্রকাশ ঘটবে। প্রতিটি ক্যানভাসে ধরা দেবে ভিন্ন ভিন্ন গল্প, প্রতিটি শিল্পকর্ম হবে এক অনুভূতির প্রতিচিত্র। এই থিম শুধু রঙ ও রেখার সংযোগ নয়, বরং ভারতের আত্মার সঙ্গে শিল্পের এক গাঢ় মেলবন্ধন।
এই মেলায় স্থান পাবে ভারতের নানা প্রান্তের লোকশিল্প, যেমন মাধুবনী, পটচিত্র, ওয়ারলি কিংবা গোঁদ আর্ট, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সংরক্ষিত হয়ে এসেছে শিল্পীদের হাত ধরে। একই সঙ্গে থাকবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় তৈরি বিমূর্ত চিত্রকলার অনুরণন, যেখানে রঙের বৈচিত্র্য ও বিমূর্ততার ছন্দ এক নতুন ভাষা সৃষ্টি করবে।
শিল্প শুধু অতীতের গৌরবময় ইতিহাস নয়, এটি ভবিষ্যতের এক স্বপ্নও। তাই, শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি-তে এই থিমের আওতায় ডিজিটাল আর্ট, এনএফটি আর্ট, ভিজ্যুয়াল ইনস্টলেশন এবং ভার্চুয়াল রিয়েলিটির এক অভিনব সংমিশ্রণ দেখা যাবে। যেখানে নতুন প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শিল্পের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে, সৃষ্টি হবে নতুন অভিজ্ঞতার।
এই শিল্পমেলা যেন এক সুরময় ক্যানভাস, যেখানে অতীতের শিকড়, বর্তমানের ভাবনা, আর ভবিষ্যতের দৃষ্টিভঙ্গি একসঙ্গে মিশে গড়ে তুলবে শিল্পের এক বিস্ময়কর মহাযজ্ঞ।
এই বছরের বিশেষত্ব: নতুনত্বের অপার দিগন্ত
শিল্প তার নিজস্ব ভাষায় কথা বলে, আবেগের রং দিয়ে অনুভূতির ছবি আঁকে, সময়ের ক্যানভাসে এক অনন্ত গল্প বুনে চলে। আর এই বছর শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি তার ঐতিহ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে, যেখানে শিল্পের সঙ্গে প্রযুক্তির সংমিশ্রণ ঘটবে, সৃষ্টিশীলতার সীমানা প্রসারিত হবে, এবং শিল্পরসিকরা নতুন এক শিল্প-অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবেন।
এইবারের মেলায় নবীন এবং প্রবীণ শিল্পীদের এক অপূর্ব সহাবস্থান হবে। যাঁরা শিল্পজগতে সদ্য প্রবেশ করেছেন, তাঁদের সৃজনশীল ভাবনার জন্য বরাদ্দ থাকছে এক বিশেষ প্রদর্শনী। সেখানে তরুণ প্রতিভারা তাঁদের শিল্পকর্মের মাধ্যমে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করবেন, যেখানে রঙ, রেখা, আলো-অন্ধকারের মায়াজাল ছাড়িয়ে শিল্পের নতুন সংজ্ঞা গঠিত হবে। শুধু ভারতীয় নয়, আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকেও অনেক নতুন শিল্পী এই মেলায় অংশগ্রহণ করবেন, যা এই বছরের অন্যতম আকর্ষণ।
এছাড়াও, শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি-তে প্রথমবারের মতো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR)-র মাধ্যমে দর্শকদের শিল্পের মধ্যে প্রবেশ করার এক অভিনব অভিজ্ঞতা দেওয়া হবে। একটিমাত্র ক্যানভাস বা স্কাল্পচারের দিকে তাকিয়ে থাকা নয়, এবার দর্শকেরা নিজেই শিল্পের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারবেন, ঘুরে দেখতে পারবেন ডিজিটাল শিল্পের জগৎ, অনুভব করতে পারবেন প্রতিটি রেখার স্পন্দন, প্রতিটি রঙের গভীরতা।
এই বছরের আরেকটি বিশেষ সংযোজন হল লাইভ আর্ট পারফরম্যান্স। এখানে শুধু ছবির ফ্রেমে সীমাবদ্ধ থাকা শিল্প নয়, বরং শিল্পের সৃষ্টি হতে দেখার এক বিরল সুযোগ পাবেন দর্শকরা। নামী চিত্রশিল্পী এবং ভাস্কররা দর্শকদের সামনে লাইভ পেইন্টিং, ইনস্টলেশন এবং ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন। এটি শুধুমাত্র শিল্পের প্রতি এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করবে না, বরং দর্শক ও শিল্পীর মধ্যকার সম্পর্ককেও আরও ঘনিষ্ঠ করে তুলবে।
এবারের মেলায় আরও একটি চমকপ্রদ সংযোজন হলো NFT আর্ট গ্যালারি। ডিজিটাল যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে, শিল্প মেলায় এবার থাকবে ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে সংরক্ষিত NFT (Non-Fungible Token) আর্ট, যা সংগ্রাহকদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করবে। ডিজিটাল চিত্রকলা, অ্যানিমেটেড আর্ট, ইন্টারঅ্যাক্টিভ ডিজাইন—সবকিছুই এবার আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সংগ্রহ এবং বিক্রির সুযোগ পাবে।
শিল্পপ্রেমীদের জন্য থাকছে বিশেষ আর্ট ওয়ার্কশপ ও প্যানেল ডিসকাশন। এখানে অংশ নেবেন দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা শিল্পী, সমালোচক এবং আর্ট কিউরেটররা। তাঁরা আলোচনা করবেন শিল্পের ভবিষ্যৎ, আধুনিক প্রযুক্তির প্রভাব, এবং ভারতীয় শিল্পের আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে অবস্থান নিয়ে।
সব মিলিয়ে, শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি শুধু একটি প্রদর্শনী নয়, এটি হবে শিল্পের এক জীবন্ত অভিজ্ঞতা, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তে নতুন কিছু জানার, দেখার এবং অনুভব করার সুযোগ থাকবে। এটি হবে এক শিল্পসন্ধ্যা, যেখানে অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ একই সঙ্গে মিশে যাবে, সৃষ্টি হবে এক অনন্য শিল্প-উৎসব, যা শিল্পরসিকদের হৃদয়ে চিরস্থায়ী ছাপ রেখে যাবে।
কী কী শিল্পকর্ম দেখা যাবে? এক অপার রঙের রাজ্যে প্রবেশ
শিল্প কখনও একমাত্রিক নয়, এটি বহুমাত্রিক, বহুরূপী, বহুবর্ণ। প্রতিটি রেখার টানে, প্রতিটি রঙের সঞ্চারে, প্রতিটি গঠনের বুননে এক অদৃশ্য সুর বাজে, যা অনুভব করতে হয় হৃদয় দিয়ে। আর সেই শিল্পের সমস্ত সম্ভার নিয়েই হাজির হচ্ছে শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি—যেখানে ক্যানভাস, রঙ, আলো-ছায়ার খেলা, এবং আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে গড়ে উঠবে এক অবিস্মরণীয় দৃশ্যপট।
এখানে শিল্পের এক অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ থাকবে, যেখানে প্রতিটি শিল্পকর্ম নিজস্ব ভাষায় কথা বলবে। চলো, দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন বিস্ময় অপেক্ষা করছে এই মেলায়।
চিত্রকলা: রঙের আল্পনা, অনুভূতির বিস্ফোরণ
শিল্প মানেই প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে চিত্রকলা—যেখানে রঙের অপূর্ব সংমিশ্রণে মিশে থাকে সময়ের গল্প, সমাজের প্রতিবিম্ব, অনুভূতির গভীরতা। শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি-তে উপস্থিত থাকবে ভারত ও বিশ্বের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীদের তুলির জাদু।
- ঐতিহ্যবাহী ভারতীয় চিত্রশিল্প, যেমন মাধুবনী, ওয়ারলি, পটচিত্র, রাজস্থানী মিনিয়েচার, কলমকারি ইত্যাদির সমাহার, যা ভারতের শিকড়কে তুলে ধরবে।
- বিমূর্ত শিল্প (Abstract Art), যেখানে রঙের বুনন এবং টেক্সচার অনুভূতির নতুন ব্যাখ্যা দেবে।
- সমসাময়িক বাস্তবধর্মী (Contemporary Realism) শিল্পকর্ম, যা আধুনিক জীবনের বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলবে।
- জলরঙের স্বচ্ছতা, তেলরঙের গভীরতা, এবং অ্যাক্রেলিকের চটপটে উজ্জ্বলতা—সব মিলিয়ে এক রঙিন বিস্ফোরণ ঘটবে এই মেলায়।
ভাস্কর্য: গঠনের ভাষায় শিল্পের প্রাণসঞ্চার
শুধু ক্যানভাসের মধ্যেই শিল্প সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভাস্কর্যের শক্তিশালী অবয়বেও শিল্প এক নতুন রূপ পায়। এই মেলায় থাকছে বিশ্বের নামী ভাস্করদের তৈরি প্রথাগত মূর্তি, বিমূর্ত ভাস্কর্য, ধাতব ও পাথরের শিল্পকর্ম, এবং আধুনিক ইনস্টলেশন।
- মার্বেল, ব্রোঞ্জ, কাঠ ও মাটির নিখুঁত কারুকাজে তৈরি মূর্তিগুলো ভারতীয় ঐতিহ্যের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠবে।
- ধাতব ভাস্কর্য, যেখানে আধুনিক ও পরাবাস্তব শিল্পের ছোঁয়া থাকবে।
- পুনর্ব্যবহৃত জিনিসপত্র দিয়ে বানানো ইনস্টলেশন আর্ট, যা পরিবেশবান্ধব শিল্পের এক নতুন বার্তা বহন করবে।
ডিজিটাল ও এনএফটি (NFT) শিল্প: আধুনিক যুগের সৃজনশীল বিস্ময়
শিল্প ক্রমশ সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং ডিজিটাল শিল্প এখন আর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নয়—এটি বর্তমানের বাস্তবতা। এই মেলায় প্রথমবারের মতো বিশাল পরিসরে NFT (Non-Fungible Token) আর্ট গ্যালারি থাকবে, যা প্রযুক্তি ও শিল্পের যুগলবন্দিকে এক নতুন মাত্রা দেবে।
- ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR) এবং অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR) ইনস্টলেশন, যেখানে দর্শকরা ডিজিটাল শিল্পের মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
- 3D ডিজিটাল পেইন্টিং, যা পর্দার মধ্যেও জীবন্ত হয়ে উঠবে।
- এনএফটি আর্ট, যা ব্লকচেইনের মাধ্যমে সংরক্ষিত থাকবে এবং নতুন প্রজন্মের সংগ্রাহকদের জন্য অভিনব সংগ্রহের সুযোগ করে দেবে।
লোকশিল্প ও হস্তশিল্প: শিকড়ের টান অনুভব করো
ভারতের লোকশিল্প ও হস্তশিল্প যে কত বৈচিত্র্যময়, তা বোঝার জন্য শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি আদর্শ জায়গা। এখানেই একত্র হবে দেশের নানা প্রান্তের শিল্পীরা, যাঁদের হাতে গড়া শিল্পকর্ম ভারতীয় সংস্কৃতির এক অসাধারণ প্রতিচিত্র তুলে ধরবে।
- পশ্চিমবঙ্গের পটচিত্র, বিহারের মাধুবনী, মহারাষ্ট্রের ওয়ারলি, রাজস্থানের ফাড চিত্রকলা—যা হাতে আঁকা ঐতিহ্যের গল্প বলে।
- কাঠের পুতুল, ধাতব অলংকার, পোড়ামাটির শিল্প, কাঁথা নকশা, পীতল ও রুপোর হস্তশিল্প—যা শিল্প ও কারিগরিত্বের এক সম্মিলন।
- জমকালো তাঁতশিল্প ও ব্লকপ্রিন্টের কাজ, যা ভারতীয় বস্ত্রশিল্পের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য তুলে ধরবে।
লাইভ আর্ট পারফরম্যান্স: শিল্পের সজীব বহিঃপ্রকাশ
শিল্প শুধুমাত্র প্রদর্শনের বিষয় নয়, এটি এক অভিজ্ঞতাও বটে। তাই এই মেলায় দর্শকদের জন্য থাকছে লাইভ আর্ট সেশন, যেখানে শিল্পী নিজের হাতে ক্যানভাসে তুলির টানে সৃষ্টি করবেন অপূর্ব শিল্পকর্ম।
- স্ট্রিট আর্ট এবং গ্রাফিতি লাইভ পারফরম্যান্স, যেখানে শিল্পীরা রাস্তায় ওয়াল পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে নতুন বার্তা তুলে ধরবেন।
- স্যান্ড আর্ট, যেখানে বালির ওপর তৈরি চিত্র এক মুহূর্তে গড়ে উঠবে এবং হারিয়ে যাবে, কিন্তু তার সৌন্দর্য দর্শকদের মনে চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
- ক্যালিগ্রাফি আর্ট, যেখানে অক্ষরের সৌন্দর্য এক নতুন মাত্রা পাবে।
কিভাবে যাবেন? টিকিট কোথায় পাবেন?
শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি-তে আসতে চাইলে আগে থেকেই যাতায়াতের পরিকল্পনা করা গুরুত্বপূর্ণ। এটি অনুষ্ঠিত হবে প্রগতি ময়দান, যা দিল্লির অন্যতম প্রধান প্রদর্শনী কেন্দ্র। যাতায়াতের জন্য রয়েছে একাধিক বিকল্প—
- মেট্রো: নিকটতম মেট্রো স্টেশন প্রগতি ময়দান (ব্লু লাইন), যেখান থেকে মাত্র কয়েক মিনিট হাঁটলেই মেলার প্রবেশদ্বার।
- বাস: দিল্লি ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (DTC) বিভিন্ন বাস এই মেলার দিকে যায়, বিশেষ করে সেন্ট্রাল ও দক্ষিণ দিল্লি থেকে।
- ক্যাব ও ট্যাক্সি: ওলা, উবার এবং অন্যান্য ক্যাব পরিষেবা সহজেই এখানে পৌঁছে দেয়।
- রেলপথ: দেশের অন্যান্য শহর থেকে এলে নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশন সবচেয়ে কাছের রেলস্টেশন, যেখান থেকে মাত্র ২০-৩০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়।
- বিমান: দূরবর্তী শহর বা বিদেশ থেকে এলে ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মেলা পর্যন্ত ক্যাব বা মেট্রোয় সহজেই পৌঁছানো যাবে।
টিকিটের দাম ও সংগ্রহের উপায়
মেলার প্রবেশের জন্য টিকিট সংগ্রহ করতে হবে আগেভাগে।
- অনলাইন টিকিট: মেলার অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, BookMyShow, Paytm, Insider-এর মাধ্যমে অনলাইনে বুক করা যাবে।
- অনসাইট টিকিট: মেলার প্রবেশদ্বারে টিকিট কাউন্টার থাকবে, তবে ভিড় এড়াতে আগেভাগে বুক করাই ভালো।
- ছাড় ও বিশেষ অফার: শিক্ষার্থী ও গোষ্ঠীগত বুকিংয়ে (১০ জন বা তার বেশি) ছাড় পাওয়া যাবে।
- ভিআইপি ও এক্সক্লুসিভ পাস: বিশেষ শিল্পী, ওয়ার্কশপ ও আর্ট টকসে অংশগ্রহণের জন্য সীমিত সংখ্যক ভিআইপি পাস থাকবে, যা শুধুমাত্র অনলাইনে পাওয়া যাবে।
মেলার সময়সূচি ও দর্শনার্থীদের জন্য নির্দেশিকা
- তারিখ ও সময়: মেলাটি ২০২৫ সালের ৭ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০:৩০ টা থেকে রাত ৮:৩০ টা পর্যন্ত চলবে।
- সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিশেষ ব্যবস্থা: ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ও প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ থাকবে।
- বিশ্রাম ও খাবারের ব্যবস্থা: ফুড কোর্ট, ক্যাফে ও লাউঞ্জের মাধ্যমে বিশ্রামের সুযোগ থাকবে।
- প্রবীণ ও শিশুদের জন্য সুবিধা: বিশেষ প্রবেশদ্বার, বসার জায়গা ও শিশুদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা থাকবে।
ভ্রমণের আগে টিকিট বুকিং নিশ্চিত করে নিলে মেলাটি উপভোগ করা আরও সহজ হবে।
শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি শুধুমাত্র একটি প্রদর্শনী নয়, এটি শিল্পপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা। দেশ-বিদেশের বিখ্যাত ও নবীন শিল্পীদের সৃষ্টিকর্ম একত্রে দেখার সুযোগ পাওয়া, নতুন ধারার শিল্পের সন্ধান করা এবং শিল্প জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় করার এক সুবর্ণ সুযোগ এটি।
এই মেলায় অংশগ্রহণ শুধু শিল্প উপভোগের জন্য নয়, বরং এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের গভীরতা উপলব্ধির এক মাধ্যম। তাই আগেভাগেই পরিকল্পনা করুন, টিকিট বুক করুন, এবং শিল্পের এই বিশাল উৎসবে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন। শিল্প মেলা ২০২৫, দিল্লি শুধু দেখার জন্য নয়, অনুভবের জন্যও!