জিএসটি কাঠামোয় আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রী দফতরের নীতিগত সম্মতিতে ২০১৭ সালে চালু হওয়া জিএসটি ব্যবস্থার বৃহত্তম সংস্কারের প্রস্তাব নিয়ে এগোচ্ছে কেন্দ্র। মূল লক্ষ্য কর স্ল্যাব সরলীকরণ ও কমপ্লায়েন্স সহজতর করা। আলোচনায় রয়েছে ১২% স্ল্যাব সম্পূর্ণ বাতিলের প্রস্তাব, যা পণ্যগুলিকে ৫% বা ১৮% স্ল্যাবে স্থানান্তর করতে পারে। একইসঙ্গে ‘ক্ষতিপূরণ সেস’-এর ভবিষ্যৎ এবং নতুন আয়কর আইনও উঠে আসছে আলোচনার কেন্দ্রে। আগস্টে জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। অর্থনীতির মঞ্চে এ যেন এক মৌলিক পুনর্গঠনের সংকেত।

🟩 স্টোরি হাইলাইটস

  • জিএসটির কাঠামোতে হতে চলেছে আমূল পরিবর্তন

  • প্রধানমন্ত্রী দফতরের তরফে নীতিগত সম্মতি

  • আগস্টের জিএসটি কাউন্সিল মিটিংয়ে প্রস্তাব আলোচনার সম্ভাবনা

  • কর স্ল্যাব সরলীকরণ ও কমপ্লায়েন্স সহজ করাই মূল লক্ষ্য

  • ১২% স্ল্যাব বিলুপ্তির চিন্তা, ৫% বা ১৮% স্ল্যাবে স্থানান্তর হতে পারে

  • বর্তমান স্ল্যাব বিন্যাস: ০%, ৫%, ১২%, ১৮%, ২৮%

  • পরিসংখ্যান: ২১% পণ্য ৫% স্ল্যাবে, ৪৪% ১৮%-এ

  • ‘ক্ষতিপূরণ সেস’-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে পুনর্বিচার

  • নতুন আয়কর আইনও মনসুন অধিবেশনে পেশের সম্ভাবনা

২০১৭ সালে বহু প্রতীক্ষার পর ভারতে চালু হয়েছিল গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স বা জিএসটি। তার পর কেটে গিয়েছে প্রায় আট বছর। এই সময়ে নানা অভিজ্ঞতা, পরিবর্তন ও প্রয়োগের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে একটি নতুন কর ব্যবস্থা। আর এবার সেই কর কাঠামোর ভিতেই আসতে চলেছে এক যুগান্তকারী পালাবদল। The Economic Times-এর বিশেষ সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী দফতর (PMO) এই রদবদলের জন্য ‘নীতিগতভাবে’ সবুজ সংকেত দিয়েছে।

আগস্ট মাসে, মনসুন অধিবেশন শেষ হওয়ার পর, দেশের জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে এই বিস্তৃত প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। ততদিনে রাজনৈতিক পরিসরে সমঝোতা তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক। এক উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিকের কথায়, “আমরা রাজ্যগুলির সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করছি যাতে এই পরিবর্তন সর্বসম্মতভাবে বাস্তবায়িত করা যায়। বিষয়টি শুধুই অর্থনৈতিক নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক সংবেদনশীলতাও জড়িয়ে আছে।”

সরকারের তরফে এই সংস্কারের মূল লক্ষ্য, দেশীয় কর ব্যবস্থাকে আরও সহজ, স্বচ্ছ এবং সময়োপযোগী করে তোলা। এক আধিকারিক বলেন, “জিএসটি চালুর সময়েই বলা হয়েছিল, এটা একটি জীবন্ত আইন। সময়ের প্রয়োজনে এটির রূপ বদলাতে হবে। এখন সেই সময় এসেছে।”

সবচেয়ে বড় পরিবর্তনটির কেন্দ্রে রয়েছে কর স্ল্যাবগুলির যৌক্তিকীকরণ। বর্তমানে প্রধান পাঁচটি স্ল্যাব হল— ০ শতাংশ, ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ, ১৮ শতাংশ ও ২৮ শতাংশ। এছাড়া বিশেষ পণ্যের জন্য আছে ০.২৫ শতাংশ ও ৩ শতাংশের স্ল্যাব। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, মোট পণ্যের ২১ শতাংশ পড়ে ৫ শতাংশ স্ল্যাবে, ১৯ শতাংশ ১২ শতাংশে, ৪৪ শতাংশ ১৮ শতাংশে এবং মাত্র ৩ শতাংশ পণ্য পড়ে সর্বোচ্চ ২৮ শতাংশ স্ল্যাবে।

এই বিন্যাসের মধ্যে ১২ শতাংশ স্ল্যাবটিকে বিলুপ্ত করার প্রস্তাব উঠেছে। এই ক্যাটেগরির পণ্যগুলিকে হয় ৫ শতাংশ, না হয় ১৮ শতাংশে স্থানান্তর করার কথা ভাবা হচ্ছে। এতে যেমন ভোক্তারা উপকৃত হবেন, তেমনই ব্যবসায়িক হিসেবেও সরলতা আসবে।

বিষয়টি নিয়ে আগে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী কাজ শুরু করলেও, কার্যত বড় কোনও অগ্রগতি হয়নি। এবার আর্থিক পরিস্থিতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য আলোচনাও অনুকূল। ফলে এই মুহূর্তকে যথার্থ মনে করছে সরকার।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ‘ক্ষতিপূরণ সেস’। এই সেস প্রয়োগ হয় তামাকজাত দ্রব্য, বিলাসবহুল গাড়ি ইত্যাদির ওপর, যেগুলি ২৮ শতাংশ কর স্ল্যাবের অধীন। শুরুতে এই সেস রাজ্যগুলিকে জিএসটি-তে রূপান্তরের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে চালু হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে কোভিড পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ২.৬৯ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ায়, তা ২০২৬-এর মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এখন একটি পৃথক মন্ত্রিগোষ্ঠী এই সেস থেকে অর্জিত অতিরিক্ত অর্থ কীভাবে ব্যবহৃত হবে, তা খতিয়ে দেখছে।

এই কর সংস্কারের পাশাপাশি, সরকার একটি নতুন আয়কর আইনও মনসুন অধিবেশনেই সংসদে পেশ করার পরিকল্পনা করছে।

জিএসটি কাঠামোর এই রদবদল শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের রূপরেখা গঠনের প্রয়াস। একাধারে ভোক্তা স্বস্তি, ব্যবসায়িক স্বচ্ছতা ও প্রশাসনিক সরলতা— তিনটিকেই এক সুতোয় বাঁধার প্রয়াস বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জিএসটি কাঠামোর এই প্রস্তাবিত রদবদল নিছক একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং এটি ভারতের কর ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ রূপ নির্ধারণে এক গুরত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের নীতিগত সম্মতি ও আগস্টের জিএসটি কাউন্সিল বৈঠকে সম্ভাব্য আলোচনার প্রেক্ষিতে স্পষ্ট, সরকার একটি আরও সহজ, কার্যকর ও জনবান্ধব কর ব্যবস্থা গঠনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। করদাতাদের স্বস্তি, ব্যবসার সুবিধা এবং রাষ্ট্রের রাজস্ব— তিনটির মধ্যে সঠিক ভারসাম্য রাখাই এই সংস্কারের মূল চাবিকাঠি। এখন নজর থাকবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকেই।
খাদ্যপণ্যের দামে বিপুল হ্রাসের প্রেক্ষিতে ভারতের মূল্যস্ফীতি ছয় বছরের সর্বনিম্নে নামা নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক বার্তা। এই পরিসংখ্যান দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, আরবিআই-এর সামনে এখন ভারসাম্যের সূক্ষ্ম খেলা—প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহ দেওয়া, অথচ মূল্যস্থিতিও বজায় রাখা। ভবিষ্যতের নীতিগত পদক্ষেপে তাই থাকবে সংযম, দূরদর্শিতা এবং জাগ্রত দৃষ্টি। মূল্যস্ফীতি কমার এই মুহূর্ত শুধুমাত্র স্বস্তির নয়, বরং সঠিক পথে হাঁটার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Reply