সুরমাই মাছের ঝাল-মশলাদার ফ্রাই কারি আজ ঘরোয়া রান্নার নতুন আকর্ষণ। ভারতের আঞ্চলিক রন্ধনশৈলীতে মাছের কারির নানা রূপ থাকলেও, এই বিশেষ পদটি তার স্বাদ ও গন্ধে এক অনন্য অভিজ্ঞতা। প্রথমে মাছ ভেজে, তারপর তেঁতুলজল ও ঘষা নারকেলে তৈরি মশলায় রান্না হওয়া এই ফ্রাইড কিং ফিশ কারি স্বাদে যেমন টক-ঝাল-মশলাদার, তেমনি রসনাকে করে তোলে মুগ্ধ। গরম ভাতের সঙ্গে এটি এক পরিপূর্ণ আহার। সহজ পদ্ধতি, পরিচিত উপকরণ, আর ভরপুর স্বাদ—সব মিলিয়ে আজকের রান্নায় এটি নিঃসন্দেহে এক সুখবর।
🐟 READ STORY HIGHLIGHTS
সুরমাই মাছ ব্যবহার করে তৈরি
তেলে ভেজে নেওয়া হয় মাছ
ঘষা নারকেলে তৈরি হয় মশলার বেস
তেঁতুলজল ও গরম মশলায় তৈরি হয় ঝাল-ঝোল গ্রেভি
রান্না শেষে ঢেকে রেখে স্বাদ মেশানো হয়
গরম ভাতের সঙ্গে উপযুক্ত পরিবেশনযোগ্য
ভারতীয় রান্নার সৌন্দর্যই হল তার অগাধ বৈচিত্র্য। একই পদের নানা আঞ্চলিক রূপ আমাদের খাদ্যসংস্কৃতিকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনই প্রতিটি পদেই লুকিয়ে রয়েছে স্থানীয় ঐতিহ্যের ছাপ। মাছের কারি বা মাছের ঝোল সেই বিশেষ কিছুর মধ্যে পড়ে, যার একেকটি রূপ দেশের বিভিন্ন কোণায় একেকরকমভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বিহার থেকে শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ, গোয়া কিংবা পাঞ্জাব — প্রতিটি অঞ্চলে মাছের কারির নিজস্ব স্টাইল আছে, যার স্বাদ ও গন্ধ একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ঠিক সেই তালিকায় এবার যুক্ত হচ্ছে আর একটি ঝাল-ঝোল মশলাদার পদের নাম — ফ্রাইড কিং ফিশ কারি।
বাড়িতে রান্না হলেও এর স্বাদ একেবারে রেস্তোরাঁর মানের। তেল-মশলার নির্দিষ্ট ব্যবহার, পরিমাণমতো ঝাঁঝ ও তেঁতুলের টক-মিষ্টি ঘ্রাণ — সব মিলিয়ে এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে যাঁরা ঝাল ও ভাজা মাছের সমন্বয়ে তৈরি খাবারে পছন্দ করেন, তাঁদের কাছে এই পদটি একেবারে নিখুঁত পছন্দ হয়ে উঠতে পারে।
কি এই কিং ফিশ?
সুরমাই বা কিং ফিশ তার শক্ত, সুস্বাদু মাংসের জন্য সমাদৃত। এই রেসিপিতে মাছকে প্রথমে মশলা মেখে ভেজে নেওয়া হয় এবং পরে এক ঝাল-মশলায় ভরা কারিতে রান্না করা হয়। নারকেল দুধ বা টক দইয়ের বদলে ব্যবহার করা হয়েছে কুমড়ো শাঁসের মতো তাজা ঘষা নারকেল।
ফ্রাইড কিং ফিশ কারি তৈরির পদ্ধতি
উপকরণ (ম্যারিনেডের জন্য):
কিং ফিশ: ৫-৬ টুকরো
লাল লঙ্কার গুঁড়ো: পরিমাণমতো
হলুদ গুঁড়ো: আধ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো: ১ চা চামচ
নুন: স্বাদমতো
ধনে পাতা: সামান্য কুচোনো
তেল: ভাজার জন্য
কারির জন্য:
পেঁয়াজ (কুচি): ৩টি
টমেটো (কুচি): ২টি
শুকনো লাল লঙ্কা: ৩টি
ঘষা নারকেল: ২ টেবিল চামচ
লঙ্কার গুঁড়ো: ১ টেবিল চামচ
হলুদ: আধ চা চামচ
ধনে গুঁড়ো: ১ চা চামচ
গরম মসলা: এক চিমটি
তেঁতুল জল: আধ কাপ
নুন: স্বাদমতো
কারি পাতা: কয়েকটি
সরষে: ১ চা চামচ
জিরে: আধ চা চামচ
কাঁচা লঙ্কা (ঐচ্ছিক): ১টি
তেল: ১ টেবিল চামচ
রান্নার পদ্ধতি:
মাছ ম্যারিনেট করার ধাপ:
প্রথমেই মাছ ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর তাতে স্বাদ অনুযায়ী লাল লঙ্কার গুঁড়ো, অল্প হলুদ, নুন ও ধনে গুঁড়ো দিয়ে ভালো করে মাখিয়ে নিতে হবে। উপর থেকে সামান্য তেল ও কিছু কুচোনো ধনে পাতা ছড়িয়ে ম্যারিনেট করে রেখে দিতে হবে অন্তত ১৫ মিনিট।
ভাজা পর্ব:
একটি ফ্রাইং প্যানে তেল গরম করে সেই ম্যারিনেট করা মাছগুলোকে একে একে হালকা করে ভেজে নিতে হবে যতক্ষণ না সোনালি বাদামি রং ধরে। এটি একদিকে যেমন স্বাদ বাড়াবে, অন্যদিকে মাছের গঠনও ঠিক থাকবে।
মশলার বেস তৈরি:
একটি আলাদা প্যানে অল্প তেলে রসুন, শুকনো লাল লঙ্কা ও কুচোনো পেঁয়াজ ভেজে নিতে হবে যতক্ষণ না তা সোনালি হয়। এরপর টমেটো ও ঘষা নারকেল দিয়ে ভালো করে কষাতে হবে যতক্ষণ না মিশ্রণটি নরম ও গন্ধযুক্ত হয়। এই মিশ্রণ ঠান্ডা হলে সেটিকে পেস্ট করে নেওয়া হবে।
ঝোল বা গ্রেভি তৈরি:
এবার আবার একটি প্যানে তেল গরম করে তাতে সরষে, জিরে, কারি পাতা এবং চাইলে কাঁচা লঙ্কা ফোড়ন দেওয়া হবে। চাইলে এখানে কিছু কুচোনো পেঁয়াজও যোগ করা যায়। এরপর সেই পেস্ট করা মশলা দিয়ে ২-৩ মিনিট ভালোভাবে নাড়তে হবে।
তেঁতুল জল ও মশলার সংযোজন:
এখন মিশ্রণে তেঁতুল জল ঢেলে দিতে হবে। যদি মনে হয় ঝোল ঘন হয়ে যাচ্ছে, তবে অল্প পরিমাণে জল মেশানো যেতে পারে। শেষে গরম মশলা ও সামান্য নুন দিয়ে স্বাদ ঠিক করে নিতে হবে।
মাছ সংযোজন ও চূড়ান্ত ধাপ:
ভাজা মাছগুলো এবার গ্রেভির মধ্যে দিয়ে দিতে হবে এবং পাত্রটি ঢেকে অল্প আঁচে ৫ মিনিট রান্না করতে হবে যাতে সব স্বাদ একসঙ্গে মিশে যায়। এরপর গ্যাস বন্ধ করে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে যাতে কারির স্বাদ আরও ভালোভাবে মাছের মধ্যে ঢুকে পড়ে।
পরিবেশন:
এই সুস্বাদু ঝাল-মশলাদার ফ্রাইড কিং ফিশ কারি গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করলেই এক সম্পূর্ণ আহার হবে। বিশেষত বৃষ্টির দিনে কিংবা ছুটির দুপুরে পরিবারের সবাইকে নিয়ে খেতে বসলে এই পদটি হতে পারে এক চমৎকার ঘরোয়া ভোজের কেন্দ্রবিন্দু।
এইভাবে সহজ উপকরণে ও ধাপে ধাপে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তৈরি ফ্রাইড কিং ফিশ কারি শুধু স্বাদেই নয়, পরিবেশনের দিক থেকেও এক অভিনব অভিজ্ঞতা। ঝাল-মশলাদার এই পদটি প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় এনে দিতে পারে ভিন্ন স্বাদের ছোঁয়া। রান্নায় বিশেষ দক্ষতা না থাকলেও, এই রেসিপিটি অনুসরণ করলে সহজেই তৈরি করা যায় রেস্তোরাঁর মানের একটি মাছের পদ। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করলেই জমে ওঠে এক পরিপূর্ণ আহার। তাই আজই রান্না করে ফেলুন এই সুস্বাদু সুরমাই কারি এবং ঘরেই উপভোগ করুন রাজকীয় স্বাদের এক নির্ভেজাল আনন্দ।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো