একটাই প্রশ্ন—ধান কাটা চাষির ভাগ্যে কি আজও শুধু দুর্দিনের ছায়া?
হাঁড়ি ভরাতে যিনি কষ্ট করেন, তাঁর নিজের হাঁড়িই কি ফাঁকা থাকে?
কী নিয়ে এত বিতর্ক?
– চুপচাপ মাঠঘাটের নরম কাদা আর ঘামে ভেজা আঁচলের আড়ালে লুকিয়ে আছে এক জটিল যুদ্ধ – “পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য” নিয়ে।
চলুন একটু খুঁটিয়ে দেখি, কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য বিতর্ক কেন এতটা গম্ভীর ও মারাত্মক রূপ নিয়েছে:
চাষির ঘামে ফসল, কিন্তু দামে ভাঁজ
📌 কৃষিপণ্যের দাম কে ঠিক করে?
মাঠে পাকা ধান ১৮০০ টাকা কুইন্টালে বিকোচ্ছে, অথচ বাজারে সেই চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা কেজি!
মাঝখানে কে খাচ্ছে লাভটা? মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব এখানেই সবচেয়ে বড় বিষফোঁড়া।
📌 চাষির লাভের হার – নামমাত্র
১ বিঘে জমিতে ধান চাষে খরচ ~১০,০০০ টাকা
লাভ? বড়জোর ১৫০০–২০০০ টাকা
এটাই কি পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য?
হাটে মান্ডিতে ন্যায্য নয়, নাটকই বেশি
📌 হাট ও মান্ডির পরিস্থিতি – দুর্নীতির দুর্গন্ধ
স্থানীয় হাটে চাষিদের জোর করে কম দামে বিক্রি করানো হয়
বহু মান্ডিতে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) কার্যকরই হয় না
MSP ঘোষণা হয়, কিন্তু খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা নেই!
📌 সরাসরি কৃষক বিক্রি ব্যবস্থা – কল্পনার মতোই দুর্লভ
শহরে সরাসরি কৃষক থেকে কেনার ব্যবস্থার অভাব
যেটুকু আছে, সেটাও দুর্বল, অসংগঠিত
ফড়িয়ার ফাঁদ – লুকোনো লাভ, খোলামেলা ক্ষতি
📌 কৃষক ও ফড়িয়ার দ্বন্দ্ব – অসম যুদ্ধ
ফড়িয়ারা ঋণ দিয়ে কৃষকের ওপর দখল রাখে
তারপর চাষিদের থেকে ন্যায্য দামের অভাবে জোর করে সস্তায় কিনে নেয়
আর বাজারে আকাশছোঁয়া দামে বিক্রি করে
📌 কৃষি পণ্য বিপণন সমস্যা – পথ নেই, বিকল্প নেই
পরিবহণ খরচ, প্যাকেজিং, হিমঘর – কিছুই নেই চাষির হাতের কাছে
ফলে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণে কৃষক একেবারে নিরুপায়
কৃষির খরচ বাড়ছে, কিন্তু দাম কমছে!
📌 কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি – চাষির কোমরে দড়ি
সারের দাম, ডিজেল, কীটনাশক – সবকিছুই বেড়েছে
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য বাড়েনি একরত্তি
📌 কৃষি ভর্তুকি বিতর্ক – কাগজে আছে, খেত নেই
বহু ভর্তুকির স্কিম বাস্তবে কৃষকের কাছে পৌঁছায় না
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা যদি নিয়মিত হত, তাহলে চাষিদের আয় স্থিতিশীল থাকত
আন্দোলন, ক্ষোভ, আর আশা
📌 কৃষক আন্দোলন পশ্চিমবঙ্গে – চাপা ক্ষোভের আগুন
সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ ও নদিয়ার বহু চাষি রাস্তায় নেমেছেন
তাঁদের একটাই দাবি – কৃষকের ন্যায্য মূল্য চাই, শুধু প্রতিশ্রুতি নয়
📌 পশ্চিমবঙ্গের কৃষিনীতি – দিশাহীন নাকি ইচ্ছাহীন?
নীতি আছে, বাস্তবায়ন নেই
বহু সরকারি প্রকল্প মাঠে নেই, ফাইলে আটকে আছে
❗ কিছু চমকপ্রদ অথচ কম আলোচিত তথ্য
২০২৪-২৫ সালে পশ্চিমবঙ্গে উৎপাদিত ধানের প্রায় ৬৮% এখনও খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচার আওতার বাইরে
কৃষি বিপণনের ৭৫% এখনও ফড়িয়ার উপর নির্ভরশীল
সরকার নির্ধারিত MSP তালিকায় থাকা সত্ত্বেও অনেক ফসলে বাস্তবে সেই মূল্য চাষিকে কেউ দেয় না
এই পুরো বিতর্কের কেন্দ্রে বারবার ফিরে আসে একটিই কথা—“পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য” আজও শুধু ফাইলের পাতায় আর ভোটের প্রতিশ্রুতিতে সীমাবদ্ধ।
👉 খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা যদি বাধ্যতামূলক না হয়, তাহলে চাষি কতই বা লাভ করবেন?
👉 ন্যায্য দামের অভাব শুধু চাষির নয়, আমাদের খাদ্য নিরাপত্তারও প্রশ্ন তুলে দেয়।
পশ্চিমবঙ্গের মাঠে ফসল ফলে ঠিকই, কিন্তু ন্যায্য মূল্য নিয়ে শুরু হয়েছে এক লুকোনো লড়াই—যার গল্প শুনলে আপনি থমকে যাবেন…
মাঠে আগুন, বাজারে শীতলতা — কেন এখন এত তোলপাড়?
“ধানের ভাণ্ডার রাজ্যে ধানের দামেই দ্বন্দ্ব!”
একটা সময় ছিল, যেখানে ফসল ফললে চাষির মুখে হাসি ফুটত। এখন ফসল ফললেও ঘর ভরে না, বরং ঋণের পাহাড় বাড়ে। পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য নিয়ে বিতর্ক যেন আগুনে ঘি ঢালছে!
চলুন দেখি, এই ঘূর্ণিঝড় ঠিক কোন দিক থেকে উঠে এল—
MSP আছে, কিন্তু ব্যবহার নেই – এ কেমন ন্যায্যতা?
🧾 সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP)
কাগজে-কলমে MSP ঠিক হয় প্রতি মৌসুমেই।
কিন্তু মাঠে গিয়ে দেখা যায়—খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা প্রায় নেই বললেই চলে!
বহু চাষি জানেনই না, তাদের ফসলের MSP কত!
❗ বাস্তব চিত্র:
রাজ্যে ২০২৩-২৪ সালে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ~১৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন
কিনেছে সরকার মাত্র ~২৫ লক্ষ মেট্রিক টন!
বাকিটা? ফড়িয়াদের জালে পঁচে গেছে কৃষকের ন্যায্য মূল্য ছাড়াই
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা – ফাঁকা প্রতিশ্রুতির ঝুলি?
🛒 কেন এই কেনাবেচা জরুরি?
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে শস্য কেনা বাধ্যতামূলক করা উচিত
এতে চাষি বাঁচেন, বাজারও নিয়ন্ত্রিত থাকে
অথচ এই খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা একেক বছরে একেক মত চলে – কখনও হয়, কখনও হয় না
🔍 ফাঁকফোকর কোথায়?
সরকারি ক্রয়কেন্দ্র অনেক ব্লকে নেই
যেসব আছে, সেগুলোতে কমিশন, কাটা-ছাঁটা, দালালি
ফলে চাষি বলে, “সরকারের কাছে বিক্রি করেও লাভ নেই”
মিডলম্যানদের রাজত্ব – কার লাভ, কার ক্ষতি?
👥 মধ্যস্বত্বভোগীর প্রভাব
চাষি ফসল তোলার পরই হাত পাঁকায় ফড়িয়া
MSP-র অনেক নিচে দাম দিয়ে কিনে নেয়
আর শহরে সেই ফসল বিক্রি হয় ৩–৪ গুণ দামে
❗ কষ্টের ফল, অন্যের আয়
ধান কেটেছে চাষি
কিন্তু লাভ পেল ফড়িয়া
আর কৃষকের ন্যায্য মূল্য হয়ে গেল শুধুই তত্ত্ব
বাজার নেই, রাস্তা নেই, অথচ চাষি লড়েই চলেছেন
🛤️ কৃষিপণ্য বিপণন সমস্যা
নেই সরকারি সংগ্রহ
নেই নির্ভরযোগ্য বাজার
নেই পরিবহণের সুব্যবস্থা
তাই পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য পৌঁছাতে পারে না চাষির ঘরে
🚜 কৃষিপণ্য পরিবহণ সমস্যা
রাস্তা খারাপ, ভ্যান কম, ডিজেলের দাম আকাশছোঁয়া
একে আবার ফসলের নষ্ট হওয়ার ভয়
তাই চাষি বাধ্য হন, লোকসান মেনেই বিক্রি করতে
কৃষকের ন্যায্য মূল্য = শহরের খাদ্য নিরাপত্তা
🍛 আজ যদি চাষি না টিকেন, কাল আমাদের পাতে খাবার থাকবে?
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা ব্যর্থ হলে চাষি ফসল ফলানোই ছেড়ে দিতে পারেন
তাতে শুধু কৃষকের ক্ষতি নয় – গোটা সমাজ বিপদে পড়বে
সস্তায় চাল-ডাল পেতে চাইলে, আগে চাষিকে তাঁর ন্যায্য দামের অভাব দূর করতে হবে
💥 বিশেষ তথ্য যা অনেকেই জানেন না:
🔹 পশ্চিমবঙ্গে ধানের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) প্রায়ই বাকি রাজ্যের থেকে কম কার্যকর
🔹 অনেক সময় সরকারি ক্রয় বিলম্বে হয় — চাষিরা বাধ্য হন বাজারে ফেলে দিতে
🔹 মাত্র ২৫-৩০% ফসল সরকারি ক্রয়ে পড়ে, বাকিটা ফড়িয়ার পেটে
🔹 সরকারি কৃষি ভর্তুকি বিতর্ক এখনও চলমান – টাকার ঘোষণা হয়, পৌঁছায় না
এই কারণেই আজ পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য শুধু অর্থনৈতিক প্রশ্ন নয়, এটা একটা সামাজিক, নৈতিক ও ভবিষ্যতের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা যেন একটা ম্যাজিক কী – যা সঠিকভাবে প্রয়োগ হলেই বদলে যেতে পারে কৃষকের কপাল।
আপনার মনে কী প্রশ্ন ঘুরছে এখন?
চাষি কী আদৌ তাঁর ঘামে ন্যায্য মূল্য পাবেন?
না কি এ লড়াই চলতেই থাকবে?
কারা ক্ষতিগ্রস্ত? — হেরে যাচ্ছে যারা, চুপ করে যাচ্ছে যারা…
“চাষের মাঠে ঘামের সেচ, অথচ ঝুলছে পকেট – এ লড়াই কি শুধু মাটির?”
না। এই লড়াই শুধু ফসলের নয়, এটা এক একর জমির পেছনের মানুষের।
চলুন দেখি, পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কারা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত চাষিরা – ঘামের দাম মেলে না
🌾 জমির সাথে যাদের আত্মা বাঁধা
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা না হওয়ায় চাষিরা ফড়িয়াদের কাছে বেচতে বাধ্য হন।
ফল? একমণ ধান ১২০০ টাকায় উৎপাদন করেও বিক্রি হয় ৯০০ টাকায়!
কৃষকের আর্থিক দুরবস্থা বাড়ে, দেনায় জর্জরিত হয় গোটা পরিবার।
📉 চাষির লাভের হার – একেবারে তলানিতে
সরকারি MSP পেলেও অনেক সময় সেই টাকা পৌঁছায় না সময়মতো।
তাই চাষি বলে, “ধানের দামেই যদি জীবন ভেসে যায়, তাহলে চাষ রেখে কী লাভ?”
কৃষক পরিবারের ছেলেমেয়েরা – আশা নয়, এখন হতাশাই উত্তরাধিকার
👶🏻 নতুন প্রজন্ম চাষে আসতে চায় না
তারা দেখে, বাবা-দাদুর জীবন গেছে ফসলের পেছনে কিন্তু কিছুই জোটেনি।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য না থাকলে, আগামী প্রজন্ম মাঠে ফিরবে না – এটাই বাস্তব।
📚 পড়াশোনার খরচও জোগাতে হিমশিম
চাষি বাবার আয় দিয়ে ছেলের কলেজে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আরেকদিকে, কৃষি উপকরণের মূল্যবৃদ্ধি সব ভেঙে দেয় পরিকল্পনা।
ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক – যাদের কণ্ঠ হারিয়ে যায়
🧓 ১-২ বিঘে জমির মালিকরাই সবচেয়ে বেশি বিপদে
তারা না পারে সরকারি হাটে পৌঁছাতে, না পারে দামাদামি করতে।
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা তাদের কাছে শুধুই শোনা কথা!
💸 সহায়তা পায় না, বঞ্চিতই থেকে যায়
সরকারি কৃষি ভর্তুকি অনেক সময় শুধু বড় চাষিদের পকেটে ঢোকে।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য তখন একটা শূন্য বুলি হয়ে যায় তাদের জীবনে।
হাট-মাণ্ডির হাল – চাষির নয়, দালালের স্বর্গ
🧺 হাট ও মান্ডির পরিস্থিতি করুণ
অপ্রতুল অবকাঠামো, নেই তদারকি
অনেক হাটে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) বোর্ডই নেই!
🕵️ ফড়িয়াদের খেলাঘর
ফড়িয়ারা একজোট হয়ে দাম চেপে রাখে
চাষির মুখে তখন একটা কথাই থাকে, “দিলাম… যাক, নইলে পচে যাবে”
নারী কৃষক – অদৃশ্য নায়ক, অথচ ক্ষতির কেন্দ্রে
👩🌾 পরিশ্রমে কম নয়, স্বীকৃতিতে নেই
বহু নারী চাষের সব কাজ করেন—বীজ বোনা থেকে ফসল তোলা।
কিন্তু খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা-তে তাদের নামে নাম নথিভুক্ত থাকে না, ফলে সুবিধাও মেলে না।
🧕 স্বীকৃতি নেই মানে, সহায়তাও নেই
কৃষি ভর্তুকি, সরাসরি বিক্রি ব্যবস্থা—সবটাই পুরুষের নামে।
অথচ পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য তাঁদেরও অধিকার!
ক্ষতির ঢেউ শুধু মাঠে নয়, সমাজের প্রতিটি কোণায়
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা সঠিকভাবে হলে, এই সমস্যার অনেকটাই সমাধান হতে পারত।
ন্যায্য দাম না পাওয়ায় শুধু চাষিই নয়—পুরো গ্রামীণ অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ে।
আর তাই পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য আসলে একটা বাঁচা-মরার লড়াই।
👉 আপনি কি জানতেন?
চাষিরা অনেক সময় নিজেদের ফসল নিজের বাড়ির লোকের কাছেও বাজারদরের চেয়ে বেশি দামে কেনেন — কারণ বাজারে তাঁরা পান না ন্যায্য দামের অভাব মেটানোর সুযোগ!
বিতর্কের বীজ কোথায় বোনা হয়েছিল? — এক আড়াল থাকা গল্প!
“চাষি ধান ফলায়, সরকার কিনে না – এই নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখল কে?”
বিতর্কটা শুধু ‘দাম কম’ – এই সরল কথাটায় সীমাবদ্ধ নয়।
এর ভিতরে আছে চুপিচুপি চলা মধ্যস্বত্বভোগীদের খেলা,
সরকারি নীতির অস্পষ্টতা, আর বাজারব্যবস্থার অদ্ভুত ন্যায়হীনতা।
চলুন খুঁটিয়ে দেখি কোথা থেকে মাথাচাড়া দিল এই উত্তাল বিতর্ক:
বাজারে দাম পড়ে, কিন্তু খরচ বাড়ে — ব্যাস, সেখানেই সমস্যা!
📈 চাষের খরচ:
সার, কীটনাশক, ডিজেল – সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া।
অথচ খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা-তে সেই খরচের কোনও ছাপই নেই!
📉 বিক্রির দাম:
MSP ঘোষণা হয়, কিন্তু কার্যকর হয় না।
ফলে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য আসলে হয়ে দাঁড়ায় কাগুজে কল্পনা।
MSP আছে, কিন্তু মেলে না — এটি কি এক ‘মৌন প্রতারণা’?
❗ বাস্তব চিত্র:
পশ্চিমবঙ্গে বহু ব্লকে সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) কার্যত অস্তিত্বহীন।
সরকারি কেনাবেচার ব্যবস্থা নেই, নেই পর্যাপ্ত গুদাম বা সংগ্রহ কেন্দ্র।
🧩 ফলাফল:
চাষিকে বাধ্য হয়ে ফড়িয়ার কাছে বিক্রি করতে হয়।
অথচ সরকার বলে—“তোরা MSP পাচ্ছিস তো!”
তাই পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য নিয়ে যে বিতর্ক, তা শুরু হয় এই দ্বিচারিতা থেকেই।
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা – বাস্তব বনাম প্রচার
📰 প্রচারে:
“সরকার প্রচুর খাদ্যশস্য কিনছে, MSP দিচ্ছে”—এই বার্তা বারবার দেওয়া হয়।
⚠️ বাস্তবে:
রাজ্যের বহু কৃষক বলেন, “খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা” শুনেছি কাগজে, বাস্তবে দেখিনি”
সরকারি এজেন্সিগুলি অনেক সময় নির্দিষ্ট কৃষক গোষ্ঠীকেই অগ্রাধিকার দেয়।
কৃষিপণ্য বিপণন সমস্যা – বিতর্কের মূল অঙ্গ
🧺 সরাসরি বিক্রির অভাব:
সরাসরি কৃষক বিক্রি ব্যবস্থা পশ্চিমবঙ্গে অনেকটাই দুর্বল।
চাষিরা নিজে বাজারে দাঁড়ানোর মতো অবকাঠামো পায় না।
💥 হাট-মাণ্ডির দুর্বলতা:
নেই ট্রান্সপারেন্সি, নেই রেট বোর্ড
অনেক জায়গায় তো খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা সম্পূর্ণভাবে অনুপস্থিত!
রাজনীতির রঙে রঙিন হয়ে ওঠে বিতর্ক
🏛️ রাজনৈতিক অবস্থান:
একদল বলে, “চাষির জন্য অনেক করেছি”
অন্যদল বলে, “সবই মিডিয়ার নাটক”
😓 কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত চাষি:
চুপ করে থাকেন, কারণ “নালিশ করলে পরের মরসুমে হয়তো সরকারি গুদামেই ঠাঁই হবে না।”
এই রাজনীতির খেলাতেই পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য একটা রাজনৈতিক বলির পাঁঠা হয়ে দাঁড়ায়।
বিতর্ক শেষ নয়, বরং এখনই শুরু
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা সঠিকভাবে চালু না হলে বিতর্ক চলতেই থাকবে।
চাষিরা শুধু দাবি করছেন না—তাঁরা এখন প্রশ্ন তুলছেন:
“আমার ঘামের দাম যদি কাগজেই লেখা থাকে, তাহলে কেন চাষ করব?”
এই বিতর্ক থেকে জন্ম নিচ্ছে আন্দোলন, বিক্ষোভ, নতুন সংগঠন —
আর তার কেন্দ্রে জ্বলছে একটাই দাবির আগুন:
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য চাই, এখনই চাই।
কোন কোন বিষয়ে চাষিরা আজ নিঃশ্বাস ফেলারও ফুরসত পাচ্ছেন না?
“ধান ফলাতে চাষি জান দেয়, আর বিক্রির সময় জান পায় না দাম!”
এটা কোনও ছড়া নয়, পশ্চিমবঙ্গের কৃষি-বাস্তবতা।
চলুন দেখে নিই, ঠিক কোন কোন বিষয়ে চাষিদের জীবন হয়ে উঠছে ক্রমাগত জটিল, ঘোলাটে আর অতৃপ্ত।
উৎপাদন বাড়ে, লাভ বাড়ে না — “পরিশ্রমের হিসেব উধাও”
📌 ব্যয়বৃদ্ধির হিসেব:
সার, বীজ, কীটনাশক, ডিজেল—সবকিছুর দাম গত পাঁচ বছরে ৩০-৪০% বেড়েছে।
কিন্তু খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা তে সেই খরচের প্রতিফলন নেই।
📌 আয়হীন উৎপাদন:
প্রতি বিঘা ধানে যে খরচ হয়, তা উসুল করতে গিয়ে অনেক চাষির ঋণের খাতা মোটা হচ্ছে—আয়ের খাতা নয়।
এতে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য তো দূর, বাঁচার ন্যূনতম ভরসাটুকুও মেলে না।
পরিবহণ ব্যয় – এক নিঃশব্দ লোপাট
🚜 পণ্য তুলেও লাভ নেই:
কৃষিপণ্য পরিবহণে নেই সরকারি ভর্তুকি।
গ্রামের ভিতর থেকে হাট পর্যন্ত একেক ট্রিপে দিতে হয় অতিরিক্ত ₹৩০০–₹৫০০, যা চাষির পকেটেই চোট।
🏪 হাট-মাণ্ডিতে অনিশ্চয়তা:
অনেক সময় হাটে পৌঁছে শোনা যায়, “আজ কেনা হবে না”।
আবার অনেক জায়গায় খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা হয়ই না, ফলে বাধ্য হয়ে ফড়িয়ার হাতে বেচতে হয় লোকসানে।
মধ্যস্বত্বভোগী – এক অদৃশ্য দানব
😠 দাম ফিক্স করে যারা:
চাষি যত পরিশ্রম করুক, লাভ পায় ফড়িয়া বা আড়তদার।
তারাই ঠিক করে আজ ধানের দাম হবে ₹১৮০০ না ₹১৪০০।
😢 দ্বন্দ্ব তীব্রতর:
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য নিয়ে যখন আলোচনা হয়, তখন এই মধ্যস্বত্বভোগীর অবদান অনেক সময় চাপা পড়ে যায়।
কৃষি বাজারের নিয়ন্ত্রণ নেই — “যার দামে ইচ্ছে, সেই দামে বিক্রি হয়”
🧭 রেটবোর্ড অনুপস্থিত:
অধিকাংশ হাটে নেই সরকারি রেটবোর্ড, ফলে কৃষক জানতেই পারে না MSP কতো।
🛑 সরকারের উপস্থিতি দুর্বল:
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা যেন একটা অলীক ধারণা – কেবল বড় কৃষি মেলার পোস্টারে দেখা যায়।
সরকারি তথ্য ও প্রকল্প – জানে ক’জন?
🗂️ তথ্যের অপ্রাপ্যতা:
চাষিরা অনেকেই জানেন না MSP কীভাবে প্রাপ্ত হয়, কোথায় আবেদন করতে হয়।
অনেক সময় সরকারি প্রকল্পে নাম থাকলেও অর্থ হাতে আসে না।
📣 সচেতনতার অভাব:
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য পেতে গেলে আগে দরকার তথ্যের অধিকার, আর সেটা আজও অজানার অন্ধকারে ঢাকা।
চাষিকে গুরুত্ব নয়, ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে গণ্য
🎯 রাজনৈতিক ভাষ্য:
সরকার চাষিকে দেখে ভোটের সময়, তাদের সমস্যা দেখে না বছরের বাকি দিনগুলোতে।
❌ প্রণোদনার ভান:
অনেক প্রকল্প কেবল ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবায়ন দুর্বল।
অথচ খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা ঠিকঠাক চালু থাকলে, রাজ্যের হাজারো চাষির আত্মসম্মান রক্ষা পেত।
এই কষ্টের কৃষি আর কতকাল?
“একটা দিন চাষির চোখে দেখে দেখুন—ধান ফলানো মানে শুধুই জমি নয়, সেটা একটা জীবনযুদ্ধ!”
আজ পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য র শুধু দাবি নয়, এটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অস্তিত্ব রক্ষার চিৎকার।
আর যদি খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা ব্যবস্থা বাস্তবিকভাবে চালু না হয়,
তবে ভবিষ্যতে কৃষক কমবে—আর ক্ষুধার চাষ বাড়বে।
“বীজ আমি বুনি, ঘাম আমার পড়ে, লাভ কেন অন্যের?” – এক চাষির গল্প
📍 ঘটনা: নদিয়ার কৃষক সঞ্জয় বাবুর দুঃখ
নদিয়ার হাঁসখালির এক ক্ষুদ্র চাষি সঞ্জয় পাল। নিজের মাত্র ১.৫ বিঘে জমিতে ধান চাষ করেন।
২০২4 সালের অক্টোবর—কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে কষ্ট করে মাঠে সোনালী ধান তুলে আনলেন। খুশি মন, কারণ ফলন ভালো।
কিন্তু সমস্যার শুরু হাটে পৌঁছে।
“সরকারের MSP বলছে প্রতি কুইন্টাল ধানের দাম ₹২১৬০। কিন্তু হাটে গিয়ে শুনলাম ফড়িয়া বলছে—‘₹১৫০০-র বেশি পাবি না।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, সরকার তো বলছে বেশি দিচ্ছে? ফড়িয়া হেসে বলল, ‘সরকার কোথায় আছে, আমাদের দ্যাখ।’”
💔 বাস্তব দুঃখ:
সঞ্জয়ের মতো হাজারো কৃষক জানেন না খাদ্যশস্যের সরকারিভভাবে কেনাবেচা কোথায় হয়, কীভাবে হয়, কিংবা MSP-র জন্য আবেদন কীভাবে করতে হয়।
তিনি একসময় স্থানীয় সরকারি ক্রয়কেন্দ্রেও গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখান থেকে উত্তর এসেছিল: “আজ ক্রয় হচ্ছে না, পরে এসো।”
এইভাবে সঞ্জয় বাধ্য হন ফড়িয়ার হাতে ধান বিক্রি করতে। যে ধান চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ₹১৮০০ প্রতি কুইন্টাল, তা বিক্রি করতে হয় ₹১৫০০-তে।
🔎 বিশ্লেষণ: কেন এমনটা হচ্ছে?
সরকারি হাট নেই, থাকলেও বন্ধ
নদিয়ারই আরেক কৃষক বিনয় দত্ত বলছেন, “২০১৮ সালে আমাদের ব্লকে একটা সরকারি ক্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছিল, এখন ২০২5-এ সেটা শুধু বোর্ড হয়ে আছে—ক্রয় নেই, সাহায্য নেই।”
সরকারি কর্মীরা যথাসময়ে আসেন না
কৃষিপণ্য বিক্রি করতে গেলে আগে থেকে লাইন দিতে হয়। অনেক সময় লোকে এসে দেখে কেউই নেই। খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা যেন একটা অলীক ব্যপার হয়ে গেছে।
মধ্যস্বত্বভোগীর একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ
ফড়িয়ারা আগে থেকেই এলাকায় ‘রেট’ বেঁধে রাখে।
যারা সরকারি ব্যবস্থায় বিক্রি করতে চায়, তাদের ভয় দেখানো হয়—“তোদের ধান তো কেউ কিনবে না।”
এই সমস্যায় কী প্রভাব পড়ছে?
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় ঢুকে পড়ছেন। অনেকে শহরে গিয়ে দিনমজুরের কাজ করছেন।
চাষির সন্তানরা আর চাষ করতে চায় না। তাদের চোখে এটা এখন লজ্জার পেশা।
অথচ এই সব সমস্যার মূলে যদি খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা সঠিকভাবে চালু হতো, তাহলে চাষিরা ন্যায্য দাম পেতেন, লাভ পেতেন, আত্মসম্মানও রক্ষা পেত।
বাস্তব উদাহরণে সমাধান কী হতে পারে?
সরকারি MSP ক্রয়কেন্দ্রগুলো সারাবছর খোলা রাখা দরকার।
পঞ্চায়েত স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি, যেন চাষিরা জানে কোথায় এবং কীভাবে MSP পাওয়া যায়।
মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য হাটে সরকারিভাবে রেটবোর্ড বাধ্যতামূলক করতে হবে।
সঞ্জয় বা বিনয়ের মতো চাষিদের সরাসরি বিক্রি ব্যবস্থায় যুক্ত করতে হবে।
“ফসল ফলাই, ঋণ নিই, শেষমেষ বেচে গরু!” – বাঁকুড়ার দুর্গাপদর করুণ বাস্তব
🎬 ঘটনাটি কী?
বাঁকুড়ার শুশুনিয়া অঞ্চলের চাষি দুর্গাপদ গড়াই।
২০২3-এ বর্ষায় ফলন ছিল বেশ ভালো—ধান, সর্ষে দুটোই ফলেছে। কিন্তু তাঁর খুশি বেশিদিন টিকল না।
“MSP শুনে আমি সরকারি হাটে গেছিলাম, তারা বলল—‘ফরম ফিল আপ করতে হবে, আধার কার্ড লাগবে, ব্যাঙ্ক ডিটেইলস চাই।’ আমি সব দিলাম। তারপর শুনলাম—‘আজ তো রেকর্ডিং শেষ, পরে আসুন।’ তারপর ৪ বার গেছি—সবসময় এক কথা!”
শেষে বাধ্য হয়ে দুর্গাপদ তার ধান মাত্র ₹১৪৮০ কুইন্টালে বেচে দেন স্থানীয় ফড়িয়ার কাছে। তার ব্যাঙ্ক ঋণ মেটাতে না পেরে গরু বিক্রি করতে হয়। আর নিজের মেয়ের স্কুলের বেতন? সেটাও বাকি পড়ে।
বিশ্লেষণ: কেন দুর্গাপদের মতো কৃষকরা পিছিয়ে?
সরকারি ব্যবস্থার অজস্র জটিলতা
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা ব্যবস্থা এতটাই জটিল ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে, যা গ্রামের সাধারণ কৃষকদের পক্ষে বোঝা মুশকিল।
আধার লিঙ্ক, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন—এ সবই বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তথ্য না থাকা
দুর্গাপদ জানেনই না সরকারি হাট কবে খোলে, কখন বন্ধ হয়। কারণ কোথাও সময়সূচি টাঙানো নেই।
রাজনৈতিক প্রভাব
স্থানীয় নেতৃত্বের পরিচয় না থাকলে সরকারি ব্যবস্থা থেকে অনেকসময় দূরে রাখা হয়।
“ধানের দাম পেতে পঞ্চায়েতে ঘুরলাম, কিন্তু ফড়িয়াই খেল সব” – হুগলির কৃষিমেলা পরবর্তী ঘটনা
🌾 ঘটনা কী?
২০২4 সালের ডিসেম্বরে হুগলিতে এক কৃষিমেলা হয়, যেখানে সরকার জানায়—
“এই বছর MSP তে বড় ধান কেনা হবে সরাসরি কৃষকদের থেকে। সবাই সরকারি রেজিস্ট্রেশন করান।”
চাষি রবীন্দ্রনাথ দে অনেক আশায় ছিলেন। তিনি আবেদনও করেন। কিন্তু যখন ফসল নিয়ে সরকারি হাটে যান, তখন জানানো হয়—“তালিকায় আপনার নাম নেই।” অথচ তিনি রসিদসহ রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন।
এরপর?
ফড়িয়া তাঁকে অফার দেন—₹১৪৭৫ প্রতি কুইন্টাল। বাধ্য হয়ে তিনিও সেখানেই ধান বিক্রি করেন।
দিন শেষে রবীন্দ্রনাথ বলেন—
“সরকার বলে খাদ্যশস্যের সরকারিভভাবে কেনাবেচা হবে, কিন্তু গায়ে লাগিয়ে দিলে তো লাভ নেই!”
এই অভিজ্ঞতা কী দেখায়?
✅ সমস্যাগুলি:
সরকারি তথ্যের অপ্রতুলতা
রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ার ত্রুটি
মাঠ পর্যায়ের সরকারি কর্মীদের গাফিলতি
✅ ফলাফল:
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য এখনো বহু চাষির কাছে স্বপ্ন।
MSP নীতির কাগজে প্রচার থাকলেও বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে না।
কিছু বাস্তব সমাধানের প্রস্তাব:
📌 গ্রামপঞ্চায়েত স্তরে MSP সচেতনতা শিবির চালু হোক।
📌 পঞ্চায়েত অফিসেই কৃষি রেজিস্ট্রেশন করানো হোক, মোবাইল OTP বা আধার ছাড়া বিকল্প ব্যবস্থাও থাকুক।
📌 সরকারি হাটে ‘ফড়িয়া-মুক্ত জোন’ ঘোষণা করা হোক।
📌 খাদ্যশস্যের সরকারিভভাবে কেনাবেচা বিষয়ে গ্রামে গ্রামে মাইকিং/পোস্টার লাগানো বাধ্যতামূলক করা হোক।
সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব?
(আলু পেঁয়াজের হাহাকার থেকে শুরু করে ভাতের হাঁড়িতে ব্যথা – সব কিছুর মূলে লুকিয়ে রয়েছে এই ন্যায্য মূল্যের চোরাগলি!)
হাটে-মাঠে দাম বাড়ে, কিন্তু চাষির থালায় মাংসের ঝোল পড়ে না!
খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা যেভাবে একঘরে হয়ে উঠছে, তার সরাসরি প্রভাব পড়ে বাজারে।
দালাল বা ফড়িয়া যখন চাষির কাছ থেকে কম দামে ধান বা সবজি কিনে, তখন তারা নিজেদের সুবিধামতো বাজারে চড়া দামে বিক্রি করে।
কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য যদি নির্ধারিত হতো সঠিকভাবে, তাহলে মধ্যস্বত্বভোগীর লাভ হ্রাস পেত—ফলে সাধারণ ক্রেতারও সাশ্রয় হতো।
উদাহরণ: ২০২৪ সালে মুর্শিদাবাদে সরকার MSP ঘোষণা করলেও ৬০% চাষি হাটেই বিক্রি করতে পারেননি। এরপর বাজারে চালের দাম ২৭ টাকা থেকে ৩৮ টাকা হয়ে যায় মাত্র ৪ সপ্তাহে।
শহুরে মধ্যবিত্তের থালায় দুর্ভোগের সাদাকালো ছায়া
শহরের বাজারে চাল, ডাল, আলু কিংবা সরষের তেলের দাম হঠাৎ বেড়ে গেলে প্রথমে ধাক্কা খায় মধ্যবিত্ত পরিবার।
বাজার-নির্ভর খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা-র স্থিরতা না থাকলে জিনিসপত্রের দাম ওঠানামা করে প্রচণ্ড।
অনেকসময় যাদের মাসিক আয় স্থির, তাদের জন্য বাড়তি বাজারদর মানে চিকিৎসা, শিক্ষা বা অন্যখাতে কাটা ছেঁড়া।
প্রক্রিয়াজাত খাবারের বিপ্লবের পিছনে চাপা পড়ে যাচ্ছে কৃষকের কান্না
একদিকে ফ্লেভারড চাল, প্যাকেটজাত ডাল, চকচকে মোড়কে বিক্রি হচ্ছে হাজার হাজার টাকার ফুড প্রোডাক্ট।
অথচ সেই কাঁচামালের পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য ঠিকঠাক পৌঁছাচ্ছে না চাষির হাতে!
এতে সাধারণ মানুষের পকেট খালি হচ্ছে—কিন্তু কৃষক পাচ্ছে না তার পাওনা।
খাদ্য নিরাপত্তা নাকি মুনাফার রসদ?
MSP, ভর্তুকি, ও খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা – এই বিষয়গুলো কেবল ফাইলের পাতায় থাকলে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
যেমন, যদি ধানের সঠিক ন্যায্য মূল্য না নির্ধারণ হয়, তাহলে আগামী মৌসুমে কৃষক ধান ফলাতেই চাইবেন না। তখন চালের জোগান কমে যাবে।
এর ফলে চাল আমদানির প্রয়োজন পড়বে অন্য রাজ্য বা দেশ থেকে, যা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তাকেই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে।
গ্রাম আর শহরের মধ্যে চিন্তার দূরত্ব বাড়ে
শহরের মানুষ ভাবেন, “কৃষক তো খেতে পাচ্ছেন না, কারণ তারা অশিক্ষিত বা অদক্ষ।”
কিন্তু বাস্তব হলো, পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য পৌঁছায় না বলেই তারা পিছিয়ে পড়ে!এর ফলে সমাজে একধরনের দৃষ্টিভঙ্গির বৈষম্য গড়ে ওঠে।
শহুরে উন্নয়ন আর গ্রামের অবমূল্যায়ন – এ দুইয়ের মাঝখানে তৈরি হয় গভীর খাদ।
কৃষকের আত্মহত্যা আমাদের নীরব ব্যর্থতা
২০২৩ সালে পশ্চিমবঙ্গে কৃষিজ-ঋণজনিত কারণে আত্মহত্যার খবর এসেছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও পুরুলিয়া থেকে।
এর পেছনে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, উৎপাদনের খরচ না ওঠা এবং সরকারি খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা ব্যবস্থার অনিয়ম।
📌 আত্মহত্যা কিন্তু কখনো ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়, বরং সামাজিক পরিকাঠামোর ভেঙে পড়ার প্রতীক।
নতুন আলোর খোঁজে: ভবিষ্যতের রাস্তা কী?
(পথ কুয়াশায় ঢাকা, কিন্তু দিগন্তে একটা রোদের রেখা তো দেখা যায়…)
সরকারি কেনাবেচা হোক স্বচ্ছ ও ডিজিটাল!
পশ্চিমবঙ্গের বহু হাট ও মান্ডি আজও প্রথাগত কাগজকলমের জালে আটকে।
এক ডিজিটাল MSP প্ল্যাটফর্ম চালু হলে—চাষি সরাসরি জানতে পারবেন খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা কবে কোথায়, কত দামে হচ্ছে।
এতে মধ্যস্বত্বভোগীদের ছোবল অনেকটাই কমবে।
📌 যেমন বিহার ও মহারাষ্ট্রে এই ধরনের “e-Mandi” সফল হয়েছে।
🔁 বারবার বলতেই হয়:
👉 “পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য” তখনই বাস্তব হবে, যখন খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা হবে অনলাইন ও স্বচ্ছভাবে।
‘চাষি অ্যাপ’ – চাষির হাতে প্রযুক্তির বল
গ্রামের কৃষকদের জন্য স্থানীয় ভাষায় একটি অ্যাপ চালু করা যেতে পারে— যেখানে থাকবে:
✅ MSP আপডেট
✅ স্থানীয় হাটের রেট
✅ সরকারি কেনাবেচার সময়সূচি
✅ সরাসরি বিক্রির অপশনএতে চাষিরা বাজার বুঝে, নিজেদের উৎপাদন ও বিক্রি পরিকল্পনা করতে পারবেন।
👉 এটা বাস্তবায়িত হলে, পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার আর শুধুই ভাষণ নয়—কাজের প্রমাণ দিতে পারবে।
‘হাতের হাট’ – সরাসরি বিক্রির মডেল তৈরি হোক শহর জুড়ে
কলকাতা, শিলিগুড়ি, দুর্গাপুরে বড় বড় হাউজিংয়ের সামনে চালু হতে পারে ‘সাপ্তাহিক কৃষক হাট’।
চাষিরা সরাসরি ভোক্তার হাতে পৌঁছে দেবেন চাল, ডাল, সবজি।
তাতে ফড়িয়ার লাভ বন্ধ হয়ে পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য সরাসরি পৌঁছবে চাষির হাতে।
📌 সল্টলেকে ২০২2 সালে এক মাসের পাইলট প্রোগ্রামে এই মডেল ৩৫% বেশি লাভ দিয়েছে কৃষকদের।
চুক্তিভিত্তিক চাষের স্বচ্ছ নিয়ম দরকার
বর্তমান চুক্তিভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থায় চাষিরা অনেকসময় ঠকেন কারণ চুক্তির ভাষা জটিল ও আইনি সহায়তা দুর্লভ।
যদি রাজ্য সরকার খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা ছাড়াও চুক্তিভিত্তিক চাষে হস্তক্ষেপ করে—তাহলে চাষির স্বার্থ রক্ষা হবে।
✅ উদাহরণ:
কর্ণাটকে সরকার চুক্তিভিত্তিক চাষের জন্য চাষি ও কোম্পানির মাঝে ‘তৃতীয় পক্ষ নিরীক্ষা বোর্ড’ চালু করেছে।
‘কৃষি শিক্ষার পাঠশালা’ হোক পাড়ায় পাড়ায়
অনেক চাষিই জানেন না কীভাবে তাদের পণ্যের দাম নির্ধারণ হয়।
MSP শব্দটাই অনেকে বুঝে না!তাই ব্লকভিত্তিক কৃষি শিক্ষাকেন্দ্র চালু হলে—
✅ কীভাবে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য কেনাবেচা হয়
✅ কীভাবে ফড়িয়া ঠকায়
✅ কীভাবে ন্যায্য মূল্য দাবি করতে হয়—সব শেখানো হবে।
👉 তবেই “পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য” হবে সত্যিকারের শক্তি।
জবাবদিহিতা হোক সরকারেরও – খালি প্রতিশ্রুতি নয়!
প্রতিটি ব্লকে সরকারকে MSP সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে—
কাদের থেকে কী পরিমাণ খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা হয়েছে, সেই তথ্য পাড়া স্তরে পৌঁছাতে হবে।তা না হলে কৃষক যেমন ঠকেন, তেমনি সাধারণ মানুষও বাজারে ঠকে যান।
নতুন সকাল আসবেই যদি…
“…যদি তথ্য আসে হাতের মুঠোয়, যদি হাটে থাকে স্বচ্ছতা, আর যদি চাষির চোখে জ্বলে আশার দীপ্তি –
তাহলে নিশ্চিত, পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য আর শুধু স্বপ্ন থাকবে না,
হয়ে উঠবে চাষির জীবনের অন্যতম সত্য।”
শেষ কথায় একটা অনুভব…
একটা ধানের শীষ ফলাতে যেমন পরিশ্রম লাগে, ঠিক তেমনই তার ন্যায্য মূল্য পেতে লাগে সুস্থ নীতির সমর্থন।
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি খাতে ন্যায্য মূল্য শুধু একটা অর্থনৈতিক ইস্যু নয়, এটা একটা অসাম্য ও উপেক্ষার গল্প।
চাষিদের মুখে হাসি ফিরলে তবেই খাদ্য নিরাপত্তার সুরক্ষা হয়।
আর তাই, খাদ্যশস্যের সরকারিভাবে কেনাবেচা – হোক মানবিকতার হাত ধরে, শুধু সরকারের নয়, চাষিরও স্বার্থে।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো