পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন বর্তমানে পরিকল্পনার অভাবে বিপর্যস্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক যানবাহনের চাহিদা দ্রুত বাড়লেও, চার্জিং স্টেশন ও উপযুক্ত প্রযুক্তিগত পরিকাঠামোর ঘাটতি এই অগ্রগতিকে ব্যাহত করছে। সরকারী ও বেসরকারি স্তরে সুসংহত নীতির অভাব, বাস্তবায়নে বিলম্ব, এবং অব্যবস্থাপনার ফলে এই খাত আজ অনিশ্চয়তার মুখে। পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন যদি পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত না হয়, তবে ভবিষ্যতের টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে পড়বে। এখন সময়, নতুন করে দৃষ্টিভঙ্গি ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করার।
ইভি পরিকাঠামো উন্নয়নে পরিকল্পনার অভাব: সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ
❗ অসম্পূর্ণ ও অনন্বিত নীতি কাঠামো
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে সরকারী নীতি এখনো স্পষ্ট, সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক নয়।
একদিকে রাজ্য সরকার বৈদ্যুতিক যানবাহন উন্নয়ন নিয়ে উচ্চাভিলাষী ঘোষণা করলেও, তা বাস্তবায়নের স্পষ্ট রূপরেখা নেই।
ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব এতটাই প্রকট যে, নীতির সঙ্গে মাটির সংযোগই তৈরি হয়নি।
⚙ প্রযুক্তিগত বাস্তবতা ও নকশাগত দূরদর্শিতার অভাব
ইভি চার্জিং স্টেশনের পরিমাণ শহরে তুলনামূলকভাবে কিছুটা হলেও উন্নত, কিন্তু গ্রামাঞ্চলে চার্জিং স্টেশন কার্যত অনুপস্থিত।
কোনও পূর্ণাঙ্গ মাস্টার প্ল্যান বা ইভি অবকাঠামো পরিকল্পনা না থাকায়, প্রয়োজন অনুযায়ী চার্জিং স্টেশন বসানো সম্ভব হচ্ছে না।
শহরের ব্যস্ততম এলাকাতেও যেখানে প্রয়োজন, সেখানেই নেই গাড়ি চার্জিং পরিকাঠামো।
🏗 অবকাঠামোগত স্বচ্ছতা ও তদারকির ঘাটতি
পশ্চিমবঙ্গের ইভি নীতির ব্যর্থতা এখানেই, যে বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় কোনো স্বচ্ছতা নেই।
বিভিন্ন প্রকল্পে একাধিক সংস্থা নিযুক্ত হলেও তাদের মধ্যে সমন্বয়হীনতা প্রকট।
যেমন: কিছু স্থানে চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জট এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, নির্মাণ শুরুর আগেই প্রকল্প বাতিল হয়েছে।
📉 বিনিয়োগে অনিশ্চয়তা ও বেসরকারি খাতের উদাসীনতা
ইভি অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগ সমান গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বেসরকারি সংস্থাগুলির অংশগ্রহণ কম।
কারণ: পর্যাপ্ত উৎসাহমূলক নীতি নেই, ব্যবসায়িক লাভের সম্ভাবনা স্পষ্ট নয়, এবং প্রাথমিক লগ্নিতে ঝুঁকি বেশি।
এছাড়া, পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি স্থিরতা না থাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও অনিচ্ছুক।
🔌 বিদ্যুৎ সরবরাহ ও রক্ষণাবেক্ষণের চ্যালেঞ্জ
বহু এলাকায় ইভি চার্জিং স্টেশনের জন্য পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো নেই।
বিদ্যমান বিদ্যুৎ অবকাঠামো-ও যথেষ্ট নয়, বিশেষ করে রুরাল ও সাব-আর্বান এলাকায়।
একাধিক স্থানে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা চরমে পৌঁছেছে।
🚧 ভবিষ্যতের জন্য কোনও রোডম্যাপ নেই
পশ্চিমবঙ্গে বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট রোডম্যাপ নেই যা সাধারণ জনগণ, ব্যবসায়ী মহল বা প্রযুক্তি সংস্থা অনুসরণ করতে পারে।
টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে কীভাবে ইভি-কে মূলধারায় আনা হবে, তা স্পষ্ট নয়।
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন এখন শুধুই পরিকল্পনাগত ত্রুটির বলি। যতদিন না সরকার ও বেসরকারি খাত যৌথভাবে সুসংহত ও বাস্তবসম্মত রূপরেখা তৈরি করতে পারছে, ততদিন বৈদ্যুতিক যানবাহনের পরিকাঠামো উন্নয়নে বাধা থেকেই যাবে। সময় এসেছে নীতি ও প্রযুক্তিকে একসঙ্গে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার।
চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জট: সমস্যার শিকড়ে
⚖ জমি নির্বাচন ও প্রশাসনিক জটিলতা
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে জমির অভাব বা অনুপযুক্ততা বড় অন্তরায়।
সরকারী জমি থাকলেও, তা প্রায়শই বিতর্কিত বা বিভিন্ন দফতরের অধীন—ফলে প্রকল্প আটকে যায়।
অনেক ক্ষেত্রে ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব এতটাই প্রকট যে ঠিক কোন এলাকায় চার্জিং স্টেশন প্রয়োজন, সেই ডেটা-ই নেই।
উদাহরণ: কলকাতার বুকে বহু ব্যস্ত জোনে পর্যাপ্ত চার্জিং স্টেশন নেই, অথচ কিছু কম প্রয়োজনীয় অঞ্চলে স্থাপন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে—স্রেফ ফাইল অনুযায়ী।
🏗 অবকাঠামো নির্মাণে দরপত্র ও ঠিকাদার সংক্রান্ত বিলম্ব
ইভি অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় প্রচুর অসংগতি।
টেন্ডার ডেকে কাজ দেওয়া হলেও, প্রায়শই চুক্তির শর্তাবলী স্পষ্ট নয়, ফলে কাজ শুরু হতেই বিলম্ব হয়।
একাধিক প্রকল্পে ঠিকাদার বদল হয়েছে নির্মাণ শুরুর আগেই।
পর্যবেক্ষণ: অনেক ক্ষেত্রে ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা শুরু হয় ঠিকাদারের অনভিজ্ঞতা ও প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাবে।
⚡ বিদ্যুৎ সংযোগ এবং লাইসেন্সিং প্রক্রিয়ায় দেরি
গাড়ি চার্জিং পরিকাঠামো স্থাপন করতে গেলে DISCOM-এর মাধ্যমে আলাদা সংযোগ এবং অনুমতি লাগে, যা সপ্তাহে নয়, মাসে গড়ায়।
লাইসেন্স, নিরাপত্তা ছাড়পত্র, পরিবেশ অনুমোদন—সব কিছু পেরোতে গিয়ে প্রকল্পগুলি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জটে আটকে পড়ছে।
বিশেষ করে গ্রাম ও শহরতলির ক্ষেত্রে, বিদ্যুৎ পরিকাঠামোর দুর্বলতা প্রকল্প স্থাপনায় আরও ধাক্কা দেয়।
🛑 স্থানীয় প্রতিবন্ধকতা ও জনসচেতনতার অভাব
অনেক এলাকায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দারা ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা সৃষ্টি করেন, কারণ তাঁরা জমি অধিগ্রহণ বা বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে ঘিরে আতঙ্কে থাকেন।
এমনকি কিছু জায়গায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে চার্জিং স্টেশন থেকে অতিরিক্ত বিকিরণ হয়, যা বৈদ্যুতিক গাড়ির ভবিষ্যৎ নিয়ে জনমানসে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
💰 আর্থিক বরাদ্দের অসামঞ্জস্যতা
রাজ্য বাজেটে ইভি পরিকাঠামো পরিকল্পনার জন্য নির্দিষ্ট বরাদ্দ থাকে না বা বরাদ্দ থাকলেও তা পুরোপুরি খরচ হয় না।
নির্ধারিত বরাদ্দ সময়মতো ছাড় না পাওয়ায় ইভি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জট বাড়তে থাকে।
তথ্যসূত্র: ২০২৪-এ ঘোষিত EV পলিসির অধীনে বরাদ্দকৃত অর্থের ৩৫% এখনও ব্যয় হয়নি, এমনটাই জানিয়েছে রাজ্য পরিবহন দফতরের এক অভ্যন্তরীণ সূত্র।
📊 ডেটা ও মাইক্রো-স্ট্র্যাটেজির অভাব
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন পরিচালনার জন্য কোনও শক্তিশালী জিওস্পেশিয়াল ম্যাপিং বা ট্রাফিক অ্যানালাইসিস নেই।
ফলে চাহিদা-ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না এবং ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জট কেবল একটি পরিকাঠামোগত সমস্যা নয়, এটি পশ্চিমবঙ্গে ইভি নীতির ব্যর্থতা ও দৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ। যদি ইভি চার্জিং স্টেশনের পরিমাণ নির্ভরযোগ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে না বাড়ানো হয়, তাহলে বৈদ্যুতিক যানবাহন উন্নয়ন শুধু ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
শহর ও গ্রামে ইভি চার্জিং স্টেশন: বৈষম্যের বাস্তব রূপরেখা
📌 নগর এলাকায় অদ্ভুত অসামঞ্জস্য
কেন্দ্রীভূত স্থাপন, সমান বণ্টনের অভাব
কলকাতা ও হাওড়ার মতো অঞ্চলে কিছু ইভি চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হলেও তা মূলত বাণিজ্যিক এলাকা ও রাস্তাঘাট সংলগ্ন – যেমন পার্কস্ট্রিট, এসপ্ল্যানেড, বাইপাস।
দক্ষিণ কলকাতার অভিজাত এলাকায় পরিকাঠামো তুলনামূলকভাবে ভালো হলেও উত্তর কলকাতা ও শহরতলির অনেক অংশে ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা প্রকট।
এই অসামঞ্জস্য প্রমাণ করে, ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব কতটা বাস্তব ও দৃষ্টিভঙ্গিভিত্তিক।
ট্রাফিক হিটম্যাপ উপেক্ষিত
যানবাহনের ঘনত্বের সঙ্গে ইভি পরিকাঠামো সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
নগর পরিকল্পনায় কোনও “EV-Heat-Zone” বিশ্লেষণ না থাকায়, ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে।
❝ উদাহরণ: যাদবপুর-বাঘাযতীন রোডে দৈনিক হাজারের উপর যান চলে, অথচ ৫ কিমি ব্যাসার্ধে একটি কার্যকর ইভি চার্জিং স্টেশন পর্যন্ত নেই। ❞
🏞️ গ্রামীণ ও শহরতলির বাস্তবতা
চার্জিং স্টেশন নয়, ধারণাই নেই
বহু গ্রামীণ অঞ্চলে এখনও পর্যন্ত ইভি চার্জিং স্টেশন তো দূরস্ত, ইভি সংক্রান্ত সরকারি সচেতনতা বা পাইলট প্রকল্প-ও দেখা যায় না।
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন কেবল শহরকেন্দ্রিক ঘোষণা হয়ে থেকে গেছে।
বিদ্যুৎ সংযোগের সীমাবদ্ধতা
গ্রামে এখনো অনেক জায়গায় লো ভোল্টেজ ও আনস্টেবল বিদ্যুৎ সরবরাহ, ফলে ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব প্রকট হয়।
কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া গেলেও তা “কমার্শিয়াল” শ্রেণিভুক্ত নয়, তাই চার্জিং স্টেশনের লাইসেন্স জটিলতা বাড়ে।
রোড নেটওয়ার্কের অযোগ্যতা
EV-এর মুভমেন্টের জন্য প্রয়োজন নিরবিচ্ছিন্ন, সুরক্ষিত রোড। কিন্তু বহু গ্রামাঞ্চলের রাস্তা এতই কর্দমাক্ত বা ভাঙাচোরা, যে ইলেকট্রিক যানবাহন উন্নয়ন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়।
❝ উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিম মেদিনীপুর, জলপাইগুড়ি বা মালদার বহু গ্রামে EV চলাচল সম্ভাব্য হলেও, ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা ও রাস্তার কারণে ব্যবহার বাস্তবে সীমিত। ❞
🔄 পরিকল্পনা ও বাস্তবতার ফাঁক
EV নীতিতে ‘এক নীতি, এক রূপ’ নেই
রাজ্য EV নীতিতে শহর ও গ্রামের ভিন্ন ভৌগোলিক ও প্রযুক্তিগত বাস্তবতা বিবেচনায় রাখা হয়নি।
ফলে পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন কেবল নির্দিষ্ট জেলায় কেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে।
বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ
শহরে ROI স্পষ্ট হলেও গ্রামে নেই, তাই বেসরকারি সংস্থাগুলি গ্রামীণ ইভি চার্জিং স্টেশন নিয়ে আগ্রহ দেখায় না।
সরকার কোনও ‘EV রুরাল ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট’ মডেল দাঁড় করাতে পারেনি।
📉 ব্যর্থতার পরিসংখ্যান
পশ্চিমবঙ্গ সরকার ২০২3-এ ঘোষণা করেছিল ২০২৫ সালের মধ্যে ১০০০+ ইভি চার্জিং স্টেশন স্থাপন হবে।
২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত চালু হয়েছে মাত্র ১৩৫টি। এর মধ্যে ৭৪% রয়েছে শহরাঞ্চলে, মাত্র ২৬% গ্রামীণ বা শহরতলি অঞ্চলে।
❝ এই বৈষম্যই প্রমাণ করে, ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব কেবল শব্দে নয়, পরিসংখ্যানে ধরা পড়ে। ❞
শহর ও গ্রামে ইভি চার্জিং স্টেশন নিয়ে যে বিভাজন তৈরি হয়েছে, তা শুধু প্রযুক্তি-নির্ভরতা নয়—এটি রাজনৈতিক, আর্থিক ও দৃষ্টিভঙ্গিগত সীমাবদ্ধতার বহিঃপ্রকাশ।
যতদিন না রাজ্য গ্রামীণ ও শহরতলির ইভি নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য স্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করছে, ততদিন পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন একটি অসমাপ্ত অধ্যায় হয়েই থাকবে।
ইভি ব্যবহারকারীর অসুবিধা: পরিকল্পনার শূন্যতায় ভোগান্তির বাস্তব চিত্র
🔌 চার্জিং স্টেশন হান্ট: সময় ও মনোবলের অপচয়
অ্যাপ বলছে একদিক, বাস্তব বলছে আরেক
বহু ইভি চার্জিং স্টেশন ‘লাইভ’ দেখালেও, পৌঁছে দেখা যায় — হয় “আউট অফ সার্ভিস” নয়তই বন্ধ।
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন-এর তথ্যভাণ্ডার ও মেইনটেনেন্স অ্যাকাউন্টেবিলিটি প্রায় নেই বললেই চলে।
ওয়েটিং টাইম অসহনীয়
বহু চার্জিং স্পটে ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা এতটাই প্রকট, যে গাড়ি সারি দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ৩০-৬০ মিনিট পর্যন্ত।
“ফাস্ট চার্জিং” নামক সেবা অনেক সময় ‘ফাস্ট’ নয়, বরং ‘ফরগেট’ টাইপ অভিজ্ঞতা।
🧾 চার্জিং খরচের অদ্ভুত বৈষম্য
কোনো স্ট্যান্ডার্ড রেট নেই
৩ কিলোমিটার দূরের দুই ইভি চার্জিং স্টেশন-এ চার্জিং রেট ভিন্ন, এবং এই রেট ঠিক হওয়ার কোনও সরকারি গাইডলাইন নেই।
ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব এ ক্ষেত্রেও প্রকট — মূল্যবোধ না থাকলে খরচ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব।
অতিরিক্ত সার্ভিস চার্জ
কিছু স্টেশনে প্রাইভেট অপারেটররা ইভি ব্যবহারকারীর অজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে অতিরিক্ত টাকা নেয় – যেমন চার্জিং ছাড়াও ‘লোকেশন ফি’, ‘মেইনটেনেন্স ফি’ ইত্যাদি যুক্ত করা হয়।
⚠️ সুরক্ষা ও প্রযুক্তিগত সমস্যা
অরক্ষিত স্টেশন, ঝুঁকি সর্বত্র
অনেক ইভি চার্জিং স্টেশন অবস্থিত অন্ধকার, নির্জন রাস্তায় — যেখানে রাতে চার্জ করতে গেলে গাড়ি চালক (বিশেষ করে মহিলা) বিপদের আশঙ্কা করেন।
কোনও জরুরি ইমার্জেন্সি বাটন বা সহায়তা লাইন নেই।
অনভিজ্ঞ টেকনিশিয়ান
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা চার্জিং স্টেশন পরিচালনা করে তারা EV-specific ট্রেনিং পায়নি।
ফলে কেবল ইভি ব্যবহারকারীর নয়, ইভি চার্জিং স্টেশন নিজেও হুমকির মুখে থাকে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে।
📍 রুট প্ল্যানিংয়ে বাধা
‘রেঞ্জ অ্যাংজাইটি’ নামক মানসিক চাপ
কম ব্যাটারিতে গাড়ি চালাতে চালাতে চার্জিং স্টেশন খুঁজে না পেয়ে চালক মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগেন।
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন এখনো এতটাই এলোমেলো যে গুগল ম্যাপের উপর পুরোপুরি নির্ভর করা যায় না।
চার্জিং স্টেশন না জেনে কেউ রোডে বেরোয় না
শহরের বাইরের যেকোনো ট্রিপে আগে থেকে চার্জিং স্টেশন কোথায় আছে তা জানলে তবেই বের হওয়া যায় — যা EV-র ‘ফ্লেক্সিবিলিটি’ নষ্ট করে।
🧾 সার্টিফিকেশন ও লাইসেন্স জটিলতা
মানহীন চার্জার দিয়ে বিপদ ডেকে আনা
কিছু ইভি চার্জিং স্টেশন নিম্নমানের চার্জার ব্যবহার করে, যেগুলো ব্যাটারি লাইফ ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
BIS বা ARAI কর্তৃক স্বীকৃত চার্জিং ইকুইপমেন্টের হার অত্যন্ত কম।
সরকারি তদারকি নেই বললেই চলে
সরকারের তরফে তদারকি ও ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব এতই প্রকট যে ব্যতিক্রম ছাড়া কারও রুটিন ইনস্পেকশন হয় না।
ইভি ব্যবহারকারীর অসুবিধা শুধুই রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে চার্জ দেওয়ার বিষয় নয় — এটি এক ধরনের অস্থির জীবনযাত্রার উপসর্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
যতক্ষণ না পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন একটি সুপরিকল্পিত, সুশৃঙ্খল ও ব্যবহারকারীকেন্দ্রিক রূপ পাচ্ছে, ততদিন ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা EV বিপ্লবকে বাস্তবে পৌঁছতে দেবে না।
পরিবেশবান্ধব যানবাহন ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা: সম্ভাবনার মাঝেই পরিকল্পনার অন্ধকার
♻️ বৈদ্যুতিক যানবাহনের অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভূমিকা
কার্বন নির্গমন কমাতে বৈদ্যুতিক যানই ভবিষ্যৎ
প্রতি কিলোমিটারে একেকটি EV প্রায় ৬০-৭০% কম CO₂ নিঃসরণ ঘটায় একটি পেট্রোলচালিত গাড়ির তুলনায়।
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন যদি বিজ্ঞানভিত্তিক হয়, তবে রাজ্য প্রতি বছর লক্ষাধিক টন কার্বন সংরক্ষণ করতে পারে।
ভারতীয় জ্বালানি আমদানি নির্ভরতা হ্রাস
EV ব্যবহারের প্রসারে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় সম্ভব, কারণ অপ্রচলিত জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমবে।
কিন্তু ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব এর ফলে এই লক্ষ্য বহু দূরের।
🔋 টেকসই ভবিষ্যতের স্ট্যাপিং স্টোন: চার্জিং স্টেশন
হাইব্রিড অবকাঠামো দরকার
শুধু ইভি চার্জিং স্টেশন বসালেই হবে না, সেই স্টেশন যদি পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তিতে চলে — তবেই টেকসইতা নিশ্চিত হবে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ ইভি চার্জিং স্টেশন এখনও গ্রিড বিদ্যুৎনির্ভর।
সোলার-ইন্টিগ্রেটেড চার্জিং স্টেশন এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে।
ব্যবস্থাপনায় পরিকল্পনার অভাব
ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব এতটাই প্রবল, যে কোথায় বেশি যানবাহন চলে — সেই ডেটা পর্যন্ত ব্যবহার করা হচ্ছে না।
শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকাগুলো একেবারেই উপেক্ষিত — যা পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার ভারসাম্যহীনতা স্পষ্ট করে।
🚧 পরিবহন নীতিতে পরিবেশ নিয়ে ভাবনা অনেকটাই লোকদেখানো
EV কে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার পথে বাধা
EV শুধু “গিমিক” হয়ে থাকছে যতক্ষণ না পর্যন্ত ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা দূর করা হচ্ছে।
প্রায় ৪০% নতুন ইভি ব্যবহারকারী ১ বছরের মধ্যেই ফের পেট্রোল গাড়ির দিকে ফিরে যাচ্ছে – প্রধান কারণ চার্জিং অনিশ্চয়তা।
সরকারি প্রকল্পের দৃষ্টিকোণ অস্পষ্ট
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন নিয়ে ঘোষণাগুলো বেশিরভাগই প্রাক-নির্বাচনী স্টান্ট হয়ে থাকছে।
বাস্তবায়নে নেই কোনও শৃঙ্খলিত টাইমলাইন, নেই জনসাধারণের অংশগ্রহণ।
🌿 EV কিন্তু Green নয় — যদি সে Grey Grid-এ চলে
বিদ্যুৎ উৎপাদন উৎস উপেক্ষিত
অধিকাংশ ইভি চার্জিং স্টেশন বিদ্যুৎ নিচ্ছে কয়লা ভিত্তিক গ্রিড থেকে — ফলে EV চললেও প্রকৃত কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমছে না।
‘গ্রীন ইভি’ তখনই কার্যকর, যখন ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব দূর করে তাকে সোলার বা বায়ু শক্তির সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে।
🔄 পুনর্ব্যবহারযোগ্য ব্যাটারি এবং E-Waste ব্যবস্থাপনা নেই বললেই চলে
ব্যাটারি লাইফ শেষ মানেই পরিবেশে বিষাক্ত ধাতুর সঞ্চার
লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি পুনর্ব্যবহারের সঠিক অবকাঠামো না থাকলে EV রীতিমতো E-waste বিপর্যয় ডেকে আনবে।
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কোনও উল্লেখ নেই — যা দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশবান্ধবতা প্রশ্নবিদ্ধ করে।
পরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহারে আগ্রহ বৃদ্ধি পেলেও, তা কার্যকর হচ্ছে না কারণ ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব সর্বত্র প্রকট।শুধু EV কিনে রাস্তায় নামলে পরিবেশ রক্ষা হয় না — প্রয়োজন সুসংহত পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন, যার প্রতিটি স্তরে থাকতে হবে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও পূর্ব পরিকল্পনা।
রাজ্য সরকারের ইভি পরিকল্পনা: উন্নয়নের থামানো গতি
পশ্চিমবঙ্গের ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন এবং তার জন্য রাজ্য সরকারের ইভি পরিকল্পনা আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদিও রাজ্য সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতিমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলির বাস্তবায়ন এবং কার্যকরীতা প্রশ্নবিদ্ধ। নিচে বিস্তারিত বিশ্লেষণ করা হলো, যেখানে “রাজ্য সরকারের ইভি পরিকল্পনা” এবং “পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন”—এই বিষয়গুলি প্রাধান্য পাবে।
🔒 পরিকল্পনার অভাব: গতি অবরুদ্ধ
রাজ্য সরকারের দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গির অভাব
রাজ্য সরকারের ইভি পরিকল্পনা আজও একাধিক কাগজে সীমাবদ্ধ, এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে শক্তিশালী ভিশন মিসিং।
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার উন্নতি একসময় সরকারের হাতে ছিল, কিন্তু পর্যাপ্ত ফান্ডিং এবং প্রস্তুতির অভাবে তার গতি থেমে গেছে।
অস্থির নীতি পরিবর্তন
কয়েকটি বছর ধরে রাজ্য সরকারের ইভি পরিকল্পনা চলমান নীতির পরিবর্তন দেখে এসেছে—যা ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের জন্য অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে এই পরিকল্পনার দিক পরিবর্তন মোটেও ভাল সংকেত নয়। একে বলতে পারেন, ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব – স্থায়ী সমাধান না থাকা।
💸 অর্থনৈতিক সহায়তার অভাব
কম পুঁজির সরকারী উদ্যোগ
সরকারী উদ্যোগ থেকে এখনও পর্যন্ত পর্যাপ্ত ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন সহায়তা প্রদান করা হয়নি।
যে সমস্ত ইভি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা ছিল, তা বর্তমানে এক ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কটে পড়েছে। যেখানে ব্যবসায়ী বা শিল্পগোষ্ঠীকে সহায়তা করা হয়নি, সেখানেও নতুন প্রযুক্তির প্রয়োগ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কার্যকরী সমাধান ছাড়া কো-ফাইন্যান্সিং
অন্যান্য রাজ্যের তুলনায়, পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন জন্য সরকারি সহায়তার পরিমাণ খুবই কম, বিশেষত ইভি চার্জিং স্টেশন স্থাপনে কোনো পরিকল্পনা সুসংগঠিত নয়।
🏛️ প্রশাসনিক জটিলতা এবং শৃঙ্খলার অভাব
বারবার নতুন সিদ্ধান্তের চাপ
রাজ্য সরকারের ইভি পরিকল্পনা নানা প্রশাসনিক অশান্তির কারণে একাধিকবার নতুন নিয়মে আটকে গেছে।
ইভি চার্জিং স্টেশন তৈরি নিয়ে পরিকল্পনার অভাব দেখিয়ে প্রশাসন একে একে নানা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়ে ফেলে, যার ফলে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারাচ্ছেন।
প্রশাসনিক স্বচ্ছতার অভাব
যেখানে গতি বাড়ানোর কথা, সেখানে নানা ট্যাক্স, লাইসেন্স, ইভি চার্জিং স্টেশন স্থাপনের অনুমোদন সম্পর্কিত ফর্মালিটিজকে নিয়ে নানা প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
রাজ্যের ইভি পরিকল্পনা যদি বাস্তবায়িত হতে চায়, তবে এই সমস্ত বাধাগুলি অবিলম্বে দূর করতে হবে।
⚡ রাজ্য সরকারের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য
২০৩০ সালের মধ্যে ২৫% বৈদ্যুতিক যানবাহন
পশ্চিমবঙ্গের ইভি পরিকল্পনা অনুসারে, রাজ্য ২০৩০ সালের মধ্যে মোট যানবাহনের ২৫% বৈদ্যুতিক করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
কিন্তু এই উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণে কোনও শক্তিশালী ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনা কার্যকরী হয়নি, ফলে আরও বেশি সঞ্চালিত চার্জিং স্টেশন অপরিহার্য।
ট্যাক্স অবকাশ এবং অন্যান্য সুবিধা
রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু কর ছাড়ের ঘোষণা হলেও, তা খুবই সীমিত। ইভি চার্জিং স্টেশন সমস্যা বা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় আরও প্রণোদনা দেয়া না হলে, লক্ষ্য অর্জন কল্পনা হয়ে থাকবে।
🏗️ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর অভাব
একক কেন্দ্রীয় পরিকল্পনার অভাব
পশ্চিমবঙ্গের ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন এ এখনও পর্যন্ত কোন একক কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা ছিল না যা ইভি চার্জিং স্টেশনগুলোকে প্রাসঙ্গিক করে তুলবে।
এক্ষেত্রে কলকাতার পাশাপাশি গ্রামীণ অঞ্চলে ইভি পরিকাঠামোর উন্নতি একেবারেই তলানিতে ঠেকেছে।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের অপর্যাপ্ততা
পশ্চিমবঙ্গে ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন যদি যুক্তিসঙ্গতভাবে সম্ভব হয়, তবে সরকারী এবং বেসরকারী অংশীদারিত্ব অবশ্যই থাকতে হবে। তবে, রাজ্য সরকারের ইভি পরিকল্পনা এখনও তেমন কোনো কৌশল নির্ধারণ করতে পারেনি যা বেসরকারি উদ্যোগের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি করবে।
রাজ্য সরকারের ইভি পরিকল্পনা এবং ইভি পরিকাঠামো উন্নয়ন—এখনও পর্যন্ত উন্নতির আশা এক ধরনের ধোঁকা। সঠিকভাবে বিনিয়োগ এবং রাজ্য সরকারের শৃঙ্খলা ও সহযোগিতা ছাড়া, এই প্রকল্প সফল হবে বলে মনে হয় না।