সম্পূর্ণ দেশীয় গবেষণায় নির্মিত Extended Trajectory–Long Duration Hypersonic Cruise Missile (ET-LDHCM) ভারতকে পৌঁছে দিল সেই অল্প কয়েকটি দেশের কাতারে, যারা শব্দের গতিরও বহু গুণে এগিয়ে থাকা অস্ত্র ব্যবস্থার অধিকারী। প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা DRDO-র ‘প্রজেক্ট বিষ্ণু’ থেকে জন্ম নেওয়া এই মিসাইল Mach 8 গতি, ১,৫০০ কিমি পাল্লা ও পারমাণবিক ক্ষমতা নিয়ে দেশের কৌশলগত শক্তিকে এক নতুন দিগন্তে পৌঁছে দিল। শত্রুর চোখ এড়িয়ে আগুনের মতো ছুটে চলার এই ক্ষমতা ভারতকে দিল নিঃশব্দে কিন্তু দৃঢ় বার্তা।

📌 STORY HIGHLIGHTS

  • সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি হাইপারসনিক মিসাইল

  • গতি: Mach 8 (প্রায় ১১,০০০ কিমি/ঘণ্টা)

  • পাল্লা: ১,৫০০ কিমি; ওয়ারহেড বহন ক্ষমতা: ১,০০০–২,০০০ কেজি

  • নিচু উচ্চতায় উড়ে শত্রু ঘাঁটি এড়াতে সক্ষম

  • উন্নত স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন দিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে হাইপারসনিক গতি

  • তিন বাহিনীর প্ল্যাটফর্ম থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য

  • পারমাণবিক ও প্রচলিত দুটি অভিযানে ব্যবহারযোগ্য

  • DRDO সফলভাবে সম্পন্ন করেছে ১,০০০ সেকেন্ডের স্ক্র্যামজেট গ্রাউন্ড টেস্ট

বিশ্বের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির আঙিনায় ভারতের একটি নীরব কিন্তু দৃষ্টিনন্দন অগ্রযাত্রা ধীরে ধীরে সামনে আসছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নিপুণ ছোঁয়ায় গড়ে উঠেছে এমন এক অস্ত্র যা শুধু দেশের আত্মরক্ষার কাঠামো মজবুত করবে না, পাশাপাশি কৌশলগতভাবে এশিয়ার ভূরাজনীতিতেও এক দৃঢ় অবস্থান তৈরি করবে।

ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থা (DRDO)-র নেতৃত্বে, এক গোপন প্রকল্প ‘প্রজেক্ট বিষ্ণু’-র অধীনে জন্ম নিয়েছে Extended Trajectory–Long Duration Hypersonic Cruise Missile (ET-LDHCM) — একটি হাইপারসনিক অস্ত্র যা নিজস্ব প্রযুক্তি ও দেশীয় উদ্ভাবনের মাধ্যমে নির্মিত।

বজ্রগতির নতুন সংজ্ঞা

এই মিসাইলের সর্বোচ্চ গতি Mach 8, অর্থাৎ ঘণ্টায় প্রায় ১১,০০০ কিলোমিটার — যা কোনো শব্দের গতির আট গুণ! এই গতিতে, শত্রুপক্ষের রাডার বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিছু বোঝার আগেই আঘাত হানবে এই অস্ত্র। এর টার্গেট শুধুমাত্র সীমান্তবর্তী অঞ্চল নয়, বরং “শত্রুর অন্তঃস্থলেই পৌঁছে যেতে সক্ষম এই মহাশক্তিশালী অস্ত্র” — বলছেন এক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক।

প্রতিরোধ-অসাধ্য অভিযাত্রা

এই অস্ত্রটি শুধু তার গতি বা দূরত্বে সীমাবদ্ধ নয়, এটি নির্মিত এমন উপকরণে, যা ২,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপ সহ্য করতে সক্ষম। আবার এটি নিচু উচ্চতায় উড়তে পারে, যা একে রাডারের নজর থেকে গোপন রাখে। এই অদৃশ্য-দ্রুত বোল্ট শত্রুর কোনও প্রতিরক্ষাকেই সময় দেবে না প্রতিক্রিয়া জানানোর।

“এটি শুধু একটি মিসাইল নয়, এটি একটি স্ট্র্যাটেজিক বার্তা — ভারত এখন হাইপারসনিক ক্লাবে দৃঢ়ভাবে প্রবেশ করেছে”, বলছেন এক প্রাক্তন বিমানবাহিনী কমান্ডার।

ইঞ্জিনে আগুন, তবু নিঃশব্দ অভিযান

ET-LDHCM-এর প্রাণ হল একটি উন্নত স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিন, যা পরিবেশের অক্সিজেন ব্যবহার করে জ্বালানি দাহ করে। এই ব্যবস্থার ফলে এটি দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত দ্রুত গতি বজায় রাখতে পারে। DRDO ইতিমধ্যেই এর স্ক্র্যামজেট ইঞ্জিনের ১,০০০ সেকেন্ডের সফল গ্রাউন্ড টেস্ট সম্পন্ন করেছে, যা প্রকল্পের সফলতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।

কৌশলের বহু মুখ

এই মিসাইলের আরেকটি চমকপ্রদ বৈশিষ্ট্য — “বহুমুখী উৎক্ষেপণ ক্ষমতা”। এটি শুধু মাটির উপর নয়, আকাশে বিমান থেকে, এমনকি জলেও নৌযান থেকে উৎক্ষেপণ করা সম্ভব। যার ফলে শত্রুর পক্ষে বুঝে ওঠা কঠিন হয়ে পড়বে, কোন দিক থেকে আসছে বিপদ।

“এই অস্ত্র একা নয়, সঙ্গে এনেছে এক নতুন যুগের সূচনা — যেখানে গতি, গোপনতা ও ধ্বংসক্ষমতা একত্রে মিলিত”, মন্তব্য একজন সামরিক বিশ্লেষক।

কোন অস্ত্র কতটা বহন করতে পারে?

এই মিসাইল একসাথে ১,০০০ থেকে ২,০০০ কেজি ওজনের ওয়ারহেড বহন করতে সক্ষম — তা হতে পারে প্রচলিত বোমা, আবার হতে পারে পারমাণবিক অস্ত্রও। এর পাল্লা প্রায় ১,৫০০ কিলোমিটার, যা একে দক্ষিণ এশিয়ার যেকোনো স্পর্শকাতর টার্গেটের নাগালে এনে দেয়।

অর্থনীতি ও প্রযুক্তির যুগলবন্দি

এই প্রকল্প শুধু প্রতিরক্ষা নয়, শিল্প ও গবেষণাতেও এক নবজাগরণের বার্তা বহন করছে। বহু দেশীয় MSME ও ডিফেন্স সংস্থা এতে যুক্ত হয়ে গবেষণা, উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

“হাইপারসনিক প্রযুক্তি শুধু যুদ্ধক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয় — মহাকাশে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ, দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া এবং বিমান প্রযুক্তিতেও এটি বিপ্লব ঘটাতে পারে”, জানান এক DRDO বিজ্ঞানী।

সমাপ্তির পথে এক যুগান্তকারী অস্ত্র

২০২৪ সালের নভেম্বরে ভারতের প্রথম হাইপারসনিক অস্ত্র পরীক্ষার সাফল্যের পর ET-LDHCM এই ধারাবাহিকতার দ্বিতীয় সাফল্য। খুব শীঘ্রই এটি তিন বাহিনীর হাতে চলে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই অস্ত্র ভারতের প্রতিরক্ষা ভাণ্ডারে এক ‘কৌশলগত রত্ন’ হয়ে উঠতে চলেছে — যার মাধ্যমে আগামী দিনের যেকোনো সংঘাতের মুখোমুখি ভারত আরও আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাঁড়াতে পারবে।

“ET-LDHCM হল ভারতের সেই অস্ত্র যা শব্দের আগে পৌঁছবে এবং ইতিহাসে নিজের উপস্থিতি জানিয়ে দেবে”, মন্তব্য প্রতিরক্ষা সূত্রের।

প্রতিরক্ষার আকাশে ভারতের নতুন সূর্যোদয়, যার উত্থান অগাধ গতি ও নির্ভুল নিশানায়।

ET-LDHCM মিসাইলের আত্মপ্রকাশ শুধু একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য নয়, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলে এক মৌলিক পরিবর্তনের সূচনা। প্রজেক্ট বিষ্ণুর গোপন গবেষণায় নির্মিত এই হাইপারসনিক মিসাইল দেশীয় প্রযুক্তির ক্ষমতা ও বৈজ্ঞানিক আত্মনির্ভরতাকে এক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। Mach 8 গতিবেগ ও ১,৫০০ কিমি পাল্লার এই অস্ত্র, শুধু আঞ্চলিক নিরাপত্তা নয়, ভারতের বৈশ্বিক প্রতিরক্ষা অবস্থানকে আরও দৃঢ় করে তুলবে। নিঃশব্দে, নিখুঁত গতিতে আঘাত হানার এই সামরিক সক্ষমতা আগামী দিনে ভারতের প্রতিরক্ষা স্তম্ভে এক বিপ্লব ডেকে আনবে — শক্তি ও কৌশলের এক অভূতপূর্ব যুগে প্রবেশের দিকচিহ্ন।
খাদ্যপণ্যের দামে বিপুল হ্রাসের প্রেক্ষিতে ভারতের মূল্যস্ফীতি ছয় বছরের সর্বনিম্নে নামা নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক বার্তা। এই পরিসংখ্যান দেশের অর্থনীতিকে কিছুটা স্বস্তি দিলেও, আরবিআই-এর সামনে এখন ভারসাম্যের সূক্ষ্ম খেলা—প্রবৃদ্ধিকে উৎসাহ দেওয়া, অথচ মূল্যস্থিতিও বজায় রাখা। ভবিষ্যতের নীতিগত পদক্ষেপে তাই থাকবে সংযম, দূরদর্শিতা এবং জাগ্রত দৃষ্টি। মূল্যস্ফীতি কমার এই মুহূর্ত শুধুমাত্র স্বস্তির নয়, বরং সঠিক পথে হাঁটার জন্য এক সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Reply