লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে এক অবিস্মরণীয় সন্ধ্যায় ক্রিকেটের নাট্যমঞ্চে রচিত হলো এক অনন্য মহাকাব্য। যেখানে আফগানিস্তান তার সংগ্রামী চেতনার আগুন জ্বালিয়ে, সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে পরাজয়ের গহ্বরে ঠেলে দিল। ক্রিকেটপ্রেমীরা দেখল এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন—যেখানে ছোট দল বলে কোনো কিছু নেই, যেখানে আত্মবিশ্বাস আর লড়াই-ই চূড়ান্ত সত্য।

AFG Vs ENG Highlights Champions Trophy 2025: Afghanistan Beat England By Eight Runs To Knock Them Out In Lahore

সূচিপত্র

আফগানিস্তানের ব্যাটিং—শুধু রান নয়, ছিল এক সাহসী যুদ্ধগাথা

ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটিং ছিল মহাকাব্যের মতো, কিন্তু তিনি একা ছিলেন না। তার পাশে ছিলেন আরও কিছু সাহসী যোদ্ধা, যারা ব্যাট হাতে প্রতিপক্ষের বোলিংকে নাস্তানাবুদ করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। একের পর এক ব্যাটসম্যান এসে যেন রানতৃষ্ণার এক অলিখিত প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন। প্রতিটি শট, প্রতিটি রান যেন ছিল এক নতুন ইতিহাস রচনার ইঙ্গিত।

ইব্রাহিম জাদরানের ব্যাটে রূপকথার জন্ম

লাহোরের আকাশে তখনো সন্ধ্যার রঙ ভালোভাবে মেলেনি, গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তখনো উন্মাদনার জোয়ার ওঠেনি। কিন্তু ঠিক তখনই, আফগানিস্তানের ইনিংসের সূচনা করলেন এক যোদ্ধা—ইব্রাহিম জাদরান! ব্যাট হাতে নামলেন যেন রণাঙ্গনে এক নির্ভীক সৈনিক, যার একমাত্র লক্ষ্য প্রতিপক্ষের দুর্গ ভেঙে দেওয়া।

শুরুটা ছিল ধীরস্থির। উইকেটের চারপাশ বুঝে, প্রতিপক্ষের কৌশল বুঝে নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছিলেন জাদরান। প্রতিটি ডেলিভারি ছিল তার জন্য নতুন এক পরীক্ষা, আর তিনি ধৈর্য আর দক্ষতার অপূর্ব মিশেলে সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হচ্ছিলেন বারবার। শুরুর কয়েক ওভার ধরে তিনি ছিলেন স্থির, শান্ত। কিন্তু একবার যখন তার ব্যাট কথা বলা শুরু করল, তখন যেন রুদ্ধশ্বাস ইংল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ!

একটি, দুটি নয়—বাউন্ডারির ঝড় বইয়ে দিলেন জাদরান। তার ব্যাট থেকে যখন প্রথম ছক্কাটি এলো, তখনই বোঝা গেল, আজ কিছু বিশেষ ঘটতে চলেছে। লেগসাইড হোক বা অফসাইড, তার ব্যাটিং ছিল সিম্ফোনির মতো মধুর। প্রতিটি শট যেন ছিল নিখুঁত শিল্পকর্ম—কখনো কাভার ড্রাইভের নান্দনিকতা, কখনো পুল শটের দুর্বার শক্তি, কখনো বা একদম নিখুঁত টাইমিংয়ে স্কয়ার কাট।

ইংল্যান্ডের পেসাররা ছিলেন হতভম্ব, স্পিনাররা ছিলেন অসহায়। যতক্ষণ উইকেটে ছিলেন, ততক্ষণ ইব্রাহিম জাদরান ছিলেন এক ব্যাটিং কারিগর, যিনি সূক্ষ্ম হাতে রান বুনে চলেছিলেন। একের পর এক বোলার বদলানো হচ্ছিল, ফিল্ডিং সেটআপ পাল্টানো হচ্ছিল, কিন্তু কিছুতেই থামানো যাচ্ছিল না তাকে।

১৪৬ বলের মহাকাব্যিক ইনিংস—১৭৭ রানের রূপকথা! চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে এত বড় ব্যক্তিগত ইনিংস আর কেউ খেলেনি। শেষ পর্যন্ত যখন তিনি আউট হলেন, তখন স্টেডিয়াম জুড়ে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানালো হাজারো দর্শক। এমন ইনিংস তো ঘনঘন দেখা যায় না!

তার এই মহাকাব্যিক ব্যাটিংয়েই আফগানিস্তান ৩২৫/৭ রানের বিশাল সংগ্রহ দাঁড় করায়। এটি ছিল শুধুই রান নয়, এটি ছিল লড়াইয়ের এক প্রতীক, ছিল ক্রিকেটীয় সৌন্দর্যের এক নিখুঁত উদাহরণ!

Ibrahim Zadran scores a hundred against England, becomes the first Afghanistan batter to…. - Crictoday

রহমানউল্লাহ গুরবাজের ঝড়ো সূচনা

ইনিংসের সূচনা হয় রহমানউল্লাহ গুরবাজের তাণ্ডবে। যেন মরুভূমির তপ্ত হাওয়ার মতো ইংল্যান্ডের বোলারদের বুকে ঝড় বইয়ে দিলেন। ব্যাট হাতে নেমেই বুঝিয়ে দিলেন—এই ম্যাচে আফগানরা ভয় পেতে আসেনি, এসেছে রাজত্ব করতে।

তার ব্যাট থেকে এল ধুন্ধুমার সব শট। প্রথম ওভারেই একটি চোখধাঁধানো কাভার ড্রাইভ মারলেন, যেন ক্যানভাসে আঁকা নিখুঁত চিত্রকর্ম। কয়েক ওভার পরেই জোফ্রা আর্চারের গতির বিরুদ্ধে চমৎকার পুল শটে বল গ্যালারির দর্শকদের মাঝে পাঠিয়ে দিলেন। যেন ঘোষণা করলেন—আজকের দিনটি তাদের!

দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৩১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে তিনি ফিরে গেলেন, তবে তার দাপুটে ব্যাটিং আফগান শিবিরে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে গেল। তার তীব্র গতির ইনিংসই ইব্রাহিম জাদরানের জন্য নিখুঁত মঞ্চ প্রস্তুত করেছিল।

3 heroes, 3 zeroes of Afghanistan vs England match in ICC Champions Trophy 2025 - Crictoday

রশিদ খানের ঝড়ো ক্যামিও—এক বিস্ফোরক সমাপ্তি

ইনিংসের শেষদিকে যখন দ্রুত রান দরকার, তখন নামলেন আফগানিস্তানের ক্রিকেট সাম্রাজ্যের আরেক রাজপুত্র—রশিদ খান। তার হাতে ব্যাট মানেই যেন এক অগ্নিগর্ভ বিস্ফোরণ। এবং সেটাই হলো!

মাত্র ১৪ বলে ৩৪ রানের এক তাণ্ডবলীলা! প্রতিটি শট ছিল যেন এক বজ্রপাত, যা ইংল্যান্ডের বোলারদের আত্মবিশ্বাস পুড়িয়ে দিল এক নিমেষে। আদিল রশিদের বলে এক পা এগিয়ে এসে লং-অন দিয়ে যে ছক্কাটি মারলেন, সেটি যেন লাহোরের আকাশ ফুঁড়ে বেরিয়ে যেতে চেয়েছিল।

শেষ ওভারে আরও একটি বিশাল ছক্কা! স্টেডিয়ামে তখন উল্লাসের ঝড়। তার এই ছোট্ট কিন্তু বিধ্বংসী ইনিংসই আফগানিস্তানের স্কোরকে ৩২৫ ছাড়িয়ে দিল, যা শেষ পর্যন্ত ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিল।

মাঝের ওভারগুলোর স্থিরতা—হাশমতুল্লাহ শহিদি ও মোহাম্মদ নবি

ইনিংসের মাঝে যখন আফগানিস্তান একটু বিপাকে, তখন নাবিকের মতো দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন হাশমতুল্লাহ শহিদি ও মোহাম্মদ নবি। শহিদি ছিলেন নিখুঁত স্থিরতা আর সংযমের প্রতিচ্ছবি। তার ব্যাট থেকে এল ২৭ রান, তবে এই ইনিংসের মূল্য ছিল অমূল্য।

অন্যদিকে, অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি ছিলেন যেন নির্ভরতার প্রতীক। তার ব্যাটিং ছিল শান্ত কিন্তু কার্যকরী। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে ২৩ রানের ইনিংস খেলে দলকে ভরসা দিলেন।

ব্যাটিংয়ের শেষ প্রতিধ্বনি—এক ঐতিহাসিক সংগ্রহ

এই সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আফগানিস্তান ৩২৫ রান তোলে। প্রতিটি রান ছিল লড়াইয়ের ফল, প্রতিটি শট ছিল ইতিহাসের এক টুকরো। তারা শুধু রান করেনি, তারা নিজেদের প্রমাণ করেছে, তারা নিজেদের শক্তির গল্প লিখেছে ব্যাটে-বলে।

এই ইনিংস ছিল সাহস, সংযম ও দুঃসাহসের নিখুঁত সংমিশ্রণ। আর এই সংগ্রহই ইংল্যান্ডকে কাঁপিয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল!

ইংল্যান্ডের ব্যাটিং—ভগ্ন স্বপ্ন, ছিন্ন আশা

জো রুটের ব্যাট যেন একা লড়ে যাচ্ছিল মরুভূমির মাঝে একটি সবুজ বৃক্ষের মতো। কিন্তু ক্রিকেট একক যোদ্ধাদের খেলা নয়, এটি একদল যোদ্ধার সম্মিলিত প্রয়াস। আর এখানেই ব্যর্থ হল ইংল্যান্ড।

তাদের ইনিংস ছিল যেন এক অসমাপ্ত কবিতা, যেখানে প্রথম কয়েকটি পংক্তি ছিল সুরেলা, কিন্তু পরবর্তী অংশ জুড়ে ছিল ছন্দপতনের করুণ চিত্র। উইকেটের পতন ছিল একেকটি ভেঙে পড়া স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি, আর প্রতিটি ভুল শট যেন পরাজয়ের কফিনে একেকটি পেরেক।

একটি সংগ্রামী ইনিংস, একা জো রুটের নিঃসঙ্গ লড়াই

ইংল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই যখন ধস নেমে এলো, তখনই আবির্ভাব ঘটল এক নির্ভরতার নাম—জো রুট। ব্যাট হাতে যখন তিনি ক্রিজে পা রাখলেন, তখন ইংল্যান্ডের ড্রেসিং রুমে হয়তো হতাশার ছায়া। কিন্তু রুট জানতেন, যতক্ষণ তিনি উইকেটে আছেন, ততক্ষণ আশার আলো নিভে যায়নি।

প্রথম কয়েকটি ওভার কাটিয়ে ওঠার পর তার ব্যাটে দেখা দিল সঙ্গীতের মাধুর্য, কবিতার ছন্দ। প্রতিটি শট ছিল নিখুঁত, যেন শিল্পীর তুলি থেকে উঠে আসা জলছবি। কাভার ড্রাইভগুলো এতটাই মসৃণ ছিল যে মনে হচ্ছিল, বল বুঝি ঘাস ছুঁয়ে নয়, বাতাসে ভেসে যাচ্ছে। স্কয়ার কাটগুলো ছিল দৃঢ়চেতা, পুল শটগুলো যেন বজ্রের মতো তীক্ষ্ণ।

কিন্তু সমস্যা ছিল অন্যত্র—তিনি একা ছিলেন। তার একপ্রান্ত আগলে রাখা ইনিংসের বিপরীতে, অন্যপ্রান্তে যেন ব্যাটারদের আসা-যাওয়ার পালা লেগে গিয়েছিল। ইংল্যান্ডের একেকজন ব্যাটার এলেন, ব্যর্থ হলেন, আবার ফিরে গেলেন। কিন্তু রুট ছিলেন অবিচল, ছিলেন অনড়, একা এক সৈনিকের মতো দাঁড়িয়ে।

England vs. Afghanistan: Time, TV channel, live stream, squads, tickets for T20 World Cup match | Sporting News India

জনি বেয়ারস্টোর ব্যর্থ প্রতিশ্রুতি

ইংল্যান্ডের ইনিংসের সূচনায় যখন জনি বেয়ারস্টো ব্যাট হাতে এলেন, তখন মনে হচ্ছিল তিনি আজ ভয়ংকর কিছু করবেন। প্রথম কয়েকটি শটে তার আত্মবিশ্বাস স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। শর্ট বলের ওপর তার আধিপত্য ছিল অসাধারণ, ব্যাকফুটে গিয়ে দুর্দান্ত পুল শট খেললেন, যেন বলকে লজ্জায় ফেলে দিচ্ছেন!

কিন্তু বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। মোহাম্মদ নবির এক চতুর ডেলিভারিতে বিভ্রান্ত হলেন, ব্যাট আর প্যাডের ফাঁক গলে বল আঘাত হানল স্টাম্পে। মাত্র ২১ রান করে বিদায় নিলেন তিনি, এবং সঙ্গে সঙ্গে ইংল্যান্ডের ইনিংসে নেমে এল এক অশনি সংকেত।

জস বাটলারের ছায়া হয়ে থাকা ইনিংস

ইংল্যান্ডের অধিনায়ক জস বাটলার ব্যাটিংয়ে এলেন এক অস্থির সময়ের মধ্যে, যখন তার দলের প্রয়োজন ছিল এক নির্ভরযোগ্য ইনিংস। কিন্তু আজকের দিনটি যেন ছিল না তার জন্য!

প্রথম কয়েকটি ওভার ধরে তার ব্যাট ছিল নিঃশব্দ, যেন সেট হওয়ার অপেক্ষায়। কখনো ডিফেন্সিভ শট, কখনো এক-দুই রান নিয়ে খেলায় স্থিরতা আনার চেষ্টা করলেন। কিন্তু আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণের সামনে আজ তিনি যেন এক ক্লান্ত রাজপুত্র—যার তরবারি আছে, কিন্তু ধার নেই!

ফজলহক ফারুকির একটি নিখুঁত আউটসুইঙ্গারে তিনি কেবল বল ছোঁয়ার চেষ্টা করলেন, কিন্তু ব্যাটে লাগল না। পরের বলেই অফস্টাম্পের বাইরে একটি তীক্ষ্ণ ডেলিভারি, এবার ব্যাট ছুঁলো, তবে তা সরাসরি চলে গেল উইকেটকিপারের গ্লাভসে! এক হতাশাজনক ১৪ রানের ইনিংসের সমাপ্তি হলো, আর সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের স্বপ্ন আরও কিছুটা ফিকে হয়ে গেল।

বেন স্টোকস—যোদ্ধার আকাঙ্ক্ষা, কিন্তু ব্যর্থতা

বেন স্টোকসের নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে এক অকুতোভয় যোদ্ধার প্রতিচ্ছবি, যিনি একবার জ্বলে উঠলে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। আজও ইংল্যান্ডের সমর্থকরা আশায় বুক বেঁধেছিল, হয়তো তিনি আবার কোনো অলৌকিক কিছু করে ফেলবেন।

কিন্তু ক্রিকেটে অলৌকিক ঘটনা বারবার ঘটে না। আজমতুল্লাহ ওমরজাইয়ের বলগুলো তার সামনে এসে পড়ছিল আগ্নেয়গিরির লাভার মতো! একবার, দু’বার—কিছু শট খেলতে চাইলেন, কিন্তু টাইমিং ঠিক হচ্ছিল না। তার ব্যাট থেকে এল কয়েকটি চমৎকার স্ট্রেট ড্রাইভ, একটি ঝলমলে পুল শট, কিন্তু তারপরই এল সেই ধ্বংসের মুহূর্ত!

ওমরজাইয়ের এক অফ-কাটার বল আচমকা ব্যাটের ভেতরের প্রান্তে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানল। ৩৩ রানের ইনিংস শেষ হলো, এবং সেই সঙ্গে ইংল্যান্ডের টিকে থাকার স্বপ্নও আরও নড়বড়ে হয়ে উঠল।

হ্যারি ব্রুক—আশার ঝলক, কিন্তু ক্ষণস্থায়ী

ইংল্যান্ডের তরুণ তারকা হ্যারি ব্রুক ব্যাটিংয়ে এলে দলের অবস্থা ছিল করুণ। কিন্তু তিনি ছিলেন ভিন্ন মেজাজে। প্রথম বল থেকেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, তিনি লড়তে এসেছেন!

একটি চমৎকার অন-ড্রাইভ, এরপর স্কয়ার কাট—তার ব্যাট থেকে রান বেরোচ্ছিল নান্দনিকতার এক সুরেলা সংগীতের মতো। ইংল্যান্ডের সমর্থকরা নতুন করে আশার আলো দেখতে পেলেন।

কিন্তু সেই আলো নিভে গেল দ্রুতই। রশিদ খানের এক গুগলির ফাঁদে পড়ে এলবিডব্লিউ হলেন তিনি। রিভিউ নিয়েও লাভ হলো না। ২৮ রানের ছোট্ট কিন্তু প্রতিশ্রুতিশীল ইনিংস শেষ হলো, এবং তার সঙ্গে ইংল্যান্ডের জয়ের স্বপ্নও প্রায় নিভে গেল।

শেষ প্রতিরোধ, কিন্তু অমোঘ নিয়তি

ক্রিস ওকস, স্যাম কারানরা চেষ্টা করলেন, কিছু রান যোগ করলেন, কিন্তু তখন পর্যন্ত ম্যাচ ইংল্যান্ডের হাতের বাইরে চলে গেছে। ওমরজাই, রশিদ খান, নবির স্পিন-জাদুতে একে একে সবাই ফাঁদে পড়লেন।

শেষ ব্যাটসম্যান আউট হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যেন এক করুণ সুর বেজে উঠল ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে। তারা লড়েছিল, কিন্তু লড়াই ছিল অসম। একদিকে ছিল একক বীরত্বের প্রতীক জো রুট, অন্যদিকে ছিল একটি সম্মিলিত আফগান দল, যারা প্রত্যেকেই নিজেদের সেরাটা দিয়েছে।

একটি ব্যর্থ ব্যাটিং অধ্যায়, একটি গৌরবময় পরাজয়—যেখানে পরাজয়ও এক গল্প বলে

ক্রিকেট কেবল বিজয়ীদের জন্য গল্প লেখে না, যারা হারে, তাদের জন্যও একেকটি পরাজয় হয়ে ওঠে ইতিহাসের অংশ। আজকের দিনে, লাহোরের মাটিতে, আফগানিস্তান যেমন তাদের অগ্নিস্নাত সংগ্রামের মাধ্যমে এক মহাকাব্য রচনা করল, তেমনি ইংল্যান্ডও রচনা করল এক করুণ অথচ হৃদয়স্পর্শী পরাজয়ের কাব্য।

ইংল্যান্ডের ইনিংস ছিল একটি অসমাপ্ত অর্কেস্ট্রা—যেখানে জো রুটের ব্যাট একক সুর তুলছিল, কিন্তু বাকি দলের ব্যর্থতা সেই সংগীতকে পূর্ণতা দিতে পারল না। এটি ছিল এমন এক নৌকা, যার কেবল মাঝি জানতেন কীভাবে তরী ভাসাতে হয়, কিন্তু নাবিকেরা ছিলেন দিকভ্রান্ত। এটি ছিল এমন এক স্বপ্ন, যা গড়ে উঠেছিল জয়ের প্রত্যাশায়, কিন্তু ভেঙে গেল একটি একটি করে উইকেট পতনের দোলাচলে।

তবুও, এই পরাজয় শুধুই ব্যর্থতার প্রতীক নয়। এটি এক শিক্ষা, এটি এক বাস্তবতা, এটি ক্রিকেটের অনিশ্চয়তার এক চিত্রপট। কারণ ক্রিকেটের মায়াবী নিয়মই তো এমন—যেখানে একদিন বিশ্বজয়ীরা পরদিন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে।

লাহোরের বাতাসে তখনও ধ্বনিত হচ্ছিল আফগান সমর্থকদের বিজয়োল্লাস, কিন্তু ইংল্যান্ডের ড্রেসিংরুমে ছিল নিস্তব্ধতা। এটি নিছক একটি ম্যাচ ছিল না, এটি ছিল এক গল্প, যেখানে সাহস আর ব্যর্থতা পাশাপাশি হেঁটেছে, যেখানে প্রতিভা ও ভাগ্যের দ্বন্দ্ব ফুটে উঠেছে।

তবে পরাজয় চিরকালীন নয়, যেমন জয়ও নয়। ক্রিকেটে প্রতিটি ম্যাচ এক নতুন সূচনা, প্রতিটি হার এক নতুন প্রতিজ্ঞার ভিত্তি। হয়তো আগামী দিনে, এই পরাজয়ের ছাই থেকে নতুন এক শক্তিশালী ইংল্যান্ড উঠে আসবে, ঠিক যেমন অতীতে তারা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু আজকের রাতটি আফগানদের, আজকের আকাশ তাদের জয়গানে মুখরিত। ক্রিকেটের ইতিহাসে এই ম্যাচ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে—একদিকে গৌরবময় বিজয়, আর অন্যদিকে এক শোকগাথার অনুরণন!

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুনফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুনএকসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply