উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ বৃষ্টি ও ভূমিধসের ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩৩ জনের। ভেসে গেছে গ্রাম, ধসে পড়েছে ঘরবাড়ি। কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপের মাঝেও মানবতার আলো জ্বেলে দিয়েছেন দু’জন সাধারণ মানুষ — প্রাক্তন সেনা Bishal Thapa এবং চিকিৎসক Doctor Molla Irfan Hossain। এক জন নিজের প্রতিবেশীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উদ্ধার করেছেন, অন্য জন ঝড়ো নদী পার হয়ে পৌঁছেছেন দুর্গম গ্রামে আটকে থাকা মানুষের কাছে।
Story Highlights (READ BOX)
- Former soldier Bishal Thapa rescued neighbours trapped in Mirik mudslide
- Doctor Molla Irfan Hossain crossed a raging river on a zipline to reach stranded villagers
- At least 33 people dead in north Bengal due to landslides and floods
মিরিকের সৈনিক Bishal Thapa-র সাহসিকতা: মৃত্যুর মুখ থেকে টেনে আনা জীবন
রবিবার রাত আড়াইটা। মিরিকের আকাশে অবিরাম বৃষ্টি। অন্ধকারে মিশে গেছে কাদা আর পাথর। ঠিক সেই সময় ফোন বেজে ওঠে প্রাক্তন গোরখা রাইফেলস জওয়ান Bishal Thapa-র। ফোনের অপরপ্রান্তে কাতর কণ্ঠে তাঁর প্রতিবেশী বিবেক ছেত্রী। কোমর পর্যন্ত কাদায় ডুবে সাহায্যের জন্য ডাকছেন তিনি।
“ভাগ্য ভালো, ওর বাঁদিকের পকেটে ফোনটা ছিল,” বলেন ৪২ বছর বয়সী থাপা। “ফোন পেতেই আমি একটা শাবল হাতে নিয়ে দৌড়ে যাই। পথে অন্য প্রতিবেশীদের দরজায় ধাক্কা মারি, কারণ জানতাম, একা পারব না।”
থাপা যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছান, দৃশ্য ছিল বিভীষিকাময়। বিবেকের বাড়ি প্রায় মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পরিবারের দুই মহিলা অচেতন হয়ে পড়ে আছেন মেঝেতে।
“আমি প্রথমে তাঁদের কাদার মধ্যে থেকে টেনে বের করি,” বলেন তিনি। “এরপর দেখি বিবেকের দাদা রাজ, যিনি বাকপ্রতিবন্ধী, ঘরের সামনে কাদায় ডুবে মরিয়া হয়ে হাত নাড়ছেন।”
থাপা বলেন, “ভিতর থেকে বিবেকের আর্তনাদ শুনতে পাচ্ছিলাম, কিন্তু রাজকে ছেড়ে যেতে পারিনি। ও আমাকে সাইন ল্যাঙ্গুয়েজে সাহায্যের অনুরোধ করছিল। আমি কাদা খুঁড়ে তার চারপাশে জায়গা তৈরি করি যাতে সে শ্বাস নিতে পারে।”
এই কাজটি করতে করতে রাত প্রায় ভোর হয়ে যায়। “যদি আমি ১৫ মিনিট দেরি করতাম, রাজ হয়তো জীবন্ত কবর হত,” বলেন Bishal Thapa।
কিছুক্ষণ পরেই অন্ধকারের মধ্যে মোবাইলের আলো দেখা যায়। অন্য গ্রামবাসীরাও পৌঁছে যান সাহায্যে। সবাই মিলে বিবেককে উদ্ধার করেন। কিন্তু রাজ তখনও কাঠের তক্তার নিচে আটকে ছিলেন। তিন ঘণ্টার চেষ্টার পর অবশেষে তাঁকেও টেনে আনা হয় নিরাপদ স্থানে।
মিরিকবাসীর কাছে এখন Bishal Thapa এক বীরের নাম— যিনি প্রমাণ করেছেন, প্রকৃত দুর্যোগের সময় সামরিক প্রশিক্ষণের চেয়ে বড় হল মানবিকতা ও সাহস।
Doctor Molla Irfan Hossain: জিপলাইনে ঝুঁকি নিয়ে নদী পেরিয়ে মানুষের পাশে
এদিকে, জলপাইগুড়ির নাগরাকাটায় বন্যার জলে গ্রাম বিচ্ছিন্ন। রবিবার সকালে Doctor Molla Irfan Hossain, ব্লক মেডিক্যাল অফিসার অফ হেলথ, খবর পান যে খয়েরকাটা ও বামনডাঙ্গা টন্ডু গ্রামের শতাধিক মানুষ নদীর ওপারে আটকে পড়েছেন।
“আমরা সঙ্গে সঙ্গে রওনা দিই,” বলেন হোসেন। “কিন্তু কিছুদূর গিয়ে দেখি তানাতানি ব্রিজ সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। সামনে উত্তাল গাথিয়া নদী। পেছনে ফেরা অসম্ভব।”
এরপর উদ্ধার কাজে নামে National Disaster Response Force (NDRF)। তারা দ্রুত নদীর উপর একটি জিপলাইন তৈরি করে। সেই জিপলাইন ব্যবহার করেই Doctor Molla Irfan Hossain ও তাঁর তিন সদস্যের দল নদী পার হন।
“ওপারে নামার পর দেখি একটা কালভার্টও ধসে গেছে,” বলেন তিনি। “আমাদের ঘুরপথে, পাহাড়ি ঢালে পা পিছলে পিছলে এগোতে হয়। কিন্তু যখন গ্রামের মানুষদের দেখি—তারা আমাদের দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে।”
তিনি আরও বলেন, “অনেকে বলছিল, তারা আশা ছেড়ে দিয়েছিল। এক নবজাতক শিশুও মায়ের হাত থেকে নদীতে পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু সৌভাগ্যবশত সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধার করা হয়।”
সেই গ্রামে পৌঁছে দলটি একটি স্বাস্থ্য শিবির খোলে। সেখানে শিশু খাদ্য, শুকনো রেশন ও ওষুধ বিলি করা হয়। পরে স্পিডবোটে করে আটকে থাকা গ্রামবাসীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়।
এই অভিযানে Doctor Molla Irfan Hossain ও তাঁর দলের অদম্য সাহস দেখিয়েছে—যখন প্রাণের ভয় উপেক্ষা করে তাঁরা শুধু একটাই কথা ভাবছিলেন, “মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।”
মানবিকতার জয়গান: উত্তরবঙ্গের বীরদের শ্রদ্ধা
বৃষ্টির দাপটে ধসে পড়া উত্তরবঙ্গের পাহাড় আজও কাঁদছে। কিন্তু তারই মধ্যে Bishal Thapa আর Doctor Molla Irfan Hossain-এর মতো মানুষদের কাহিনি দেখাচ্ছে আশার আলো। তাঁদের হাতে ভর করেই আজ অনেক পরিবার নতুন জীবন পেয়েছে।
প্রকৃতি যতই নিষ্ঠুর হোক না কেন, মানবিকতার জয় অবশেষে সবকিছুর উপরে—এটাই উত্তরবঙ্গের এই দুই বীরের বার্তা।
উত্তরবঙ্গের এই ভয়াবহ বৃষ্টি ও ভূমিধস শুধু ধ্বংসের চিহ্নই রেখে যায়নি, বরং মানুষের মধ্যে থাকা সাহস ও মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও সামনে এনেছে। প্রাক্তন সেনা Bishal Thapa ও চিকিৎসক Doctor Molla Irfan Hossain দেখিয়েছেন, সংকটের সময়ে এক মুহূর্তের সিদ্ধান্ত কতগুলো জীবন বাঁচাতে পারে।
Bishal Thapa নিজের প্রতিবেশীদের কাদার মৃত্যুফাঁদ থেকে উদ্ধার করে প্রমাণ করেছেন, মানবিকতা কখনও হারায় না। অন্যদিকে Doctor Molla Irfan Hossain নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জিপলাইনে নদী পেরিয়ে পৌঁছেছেন সেইসব গ্রামে, যেখানে কেউ আর যাওয়ার সাহস করেনি।
তাঁদের এই বীরত্ব আজ উত্তরবঙ্গের মানুষের হৃদয়ে আশার প্রতীক। প্রকৃতি যতই রুদ্র রূপ ধারণ করুক না কেন, Bishal Thapa ও Doctor Molla Irfan Hossain-এর মতো মানুষরা বারবার মনে করিয়ে দেন — মানবিকতার শক্তিই সবথেকে বড়।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো