নারায়ণা হেলথ ইনশিওরেন্স লিমিটেড কলকাতায় চালু করল তাদের নতুন স্বাস্থ্যবিমা পরিষেবা ‘আদিতি’ ও ‘আদিতি প্লাস’। এক ছাতার নিচে চিকিৎসা ও বিমার অভূতপূর্ব এই সংযুক্ত মডেল রোগী, হাসপাতাল ও বিমা সংস্থার মধ্যকার দীর্ঘদিনের অবিশ্বাস দূর করতে উদ্যোগী। বছরে ১ কোটি টাকার কভারেজ, দ্রুত ক্লেম নিষ্পত্তি ও প্রাইভেট রুম সুবিধা—সব মিলিয়ে সাধ্যের মধ্যে স্বাচ্ছন্দ্য চিকিৎসার আশ্বাস। মধ্যবিত্তের নাগালে প্রিমিয়ামে গুণগত পরিষেবা আনতে তৈরি এই প্রকল্প স্বাস্থ্যখাতে এক নতুন দিশা রচনা করতে চলেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

📌 স্টোরি হাইলাইটস

  • নারায়ণা হেলথ ইনশিওরেন্স লিমিটেড আনল নতুন বিমা প্রকল্প “আদিতি” ও “আদিতি প্লাস”

  • আদিতি: ₹১ কোটি সার্জারির জন্য, ₹৫ লক্ষ চিকিৎসার জন্য কভারেজ; বার্ষিক প্রিমিয়াম ₹১২,০০০ (চার সদস্যের পরিবার)

  • আদিতি প্লাস: ₹১ কোটি সার্জারির জন্য, ₹২০ লক্ষ চিকিৎসার জন্য কভারেজ; বার্ষিক প্রিমিয়াম ₹২৯,০০০

  • রোগীর ছাড়পত্রের পর বিলম্ব ছাড়াই সরাসরি ক্লেম নিষ্পত্তির প্রতিশ্রুতি

  • মূলত নারায়ণার নিজস্ব হাসপাতাল নেটওয়ার্কে প্রযোজ্য, তবে প্রয়োজনে বাইরের হাসপাতালেও সুবিধা

  • লক্ষ্যমাত্রা: সরকারি বিমার বাইরে থাকা মধ্যবিত্তের বিশাল জনগোষ্ঠী

স্বাস্থ্যব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের এক অন্তর্নিহিত সমস্যা—বিশ্বাসের ঘাটতি, বিলম্বিত ক্লেম প্রক্রিয়া, আর্থিক অনিশ্চয়তা। সেই অচল ব্যবস্থাকে ভেঙে নতুন পথ রচনার অভিপ্রায়ে কলকাতার স্বাস্থ্যপরিসরে পা রাখল নারায়ণা হেলথ ইনশিওরেন্স লিমিটেড (NHIL)। বেঙ্গালুরু-ভিত্তিক নারায়ণা হেলথ তাদের দু’টি অভিনব স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প “আদিতি” ও “আদিতি প্লাস” চালু করল শহরে, যা শুধুই বিমা নয়—বিশ্বাস, গতি ও মানবিকতার মিশ্রণে গঠিত এক স্বাস্থ্যসাথী প্রতিশ্রুতি।

স্বাস্থ্যবিমার জগতে যেখানে প্রায়শই সন্দেহ, জটিলতা ও বিলম্ব এক অস্বস্তিকর অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করে, সেখানে এক অভিনব পন্থা নিয়ে হাজির হয়েছে নারায়ণা হেলথ। আদিতি এবং আদিতি প্লাস—এই দুই প্রকল্পে শুধুমাত্র আর্থিক নিরাপত্তা নয়, বরং একধরনের নির্ভরতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

“বিমা শুধু টাকার সুরক্ষা নয়, রোগীকে মানসিক সান্ত্বনাও দিতে হবে,” বলছিলেন এনএইচআইএল-এর ডিরেক্টর রবি বিশ্বনাথ। তাঁর কথায়, বহুদিন ধরেই তিনটি পক্ষ—হাসপাতাল, বিমা সংস্থা এবং রোগী—পরস্পরের প্রতি অনাস্থা পোষণ করেছে। সেই ফাঁক বন্ধ করতেই এই মডেল তৈরি। কারণ এখানে হাসপাতাল এবং বিমা সংস্থা—দুটোই এক ছাতার তলায়।

আদিতি প্রকল্পে প্রতি বছর ₹১ কোটি টাকার সার্জারি এবং ₹৫ লক্ষ টাকার মেডিকেল চিকিৎসার কভারেজ দেওয়া হচ্ছে। চারজনের পরিবারের জন্য প্রিমিয়াম ধার্য করা হয়েছে ₹১২,০০০। তবে সাধারণ শয্যার মধ্যেই এই পরিষেবা মিলবে।

অন্যদিকে, আদিতি প্লাস আরও বিস্তৃত কভার নিয়ে এসেছে। একই পরিমাণ সার্জারির কভার থাকলেও, মেডিকেল চিকিৎসার জন্য এখানে ₹২০ লক্ষ পর্যন্ত সুবিধা মিলবে এবং প্রাইভেট রুমের সুযোগ থাকবে। বার্ষিক প্রিমিয়াম ₹২৯,০০০, যদিও বয়স এবং রোগ ইতিহাস অনুযায়ী কিছুটা ওঠানামা হতে পারে।

বিশ্বনাথ আরও জানান, “নন-মেডিকেল খরচও আমরা কভার করব। ছাড়পত্র পাওয়ার পর ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে বিল চূড়ান্ত করার প্রথাকে আমরা বাদ দিতে চাই।”

এই প্রকল্প মূলত নারায়ণার নিজস্ব হাসপাতাল নেটওয়ার্কে চালু হবে। কিন্তু কোনও কারণে যদি নির্দিষ্ট শহরে তাদের হাসপাতাল না থাকে, সেক্ষেত্রে অন্যান্য হাসপাতালের সঙ্গে ক্যাশলেস পরিষেবার ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে। আর যদি সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়, তাহলে চিকিৎসার পর রোগীকে টাকা রেয়াতি ভিত্তিতে ফেরত দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে।

এই বিমা প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সেই বিপুল সংখ্যক নাগরিক, যাঁরা সরকারি বিমার আওতার বাইরে থাকলেও প্রাইভেট বিমার খরচ বহন করতে অক্ষম। নারায়ণা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা ডা. দেবী শেঠির কথায়, “এই প্রকল্প সেই ‘মিসিং মিডল’-এর জন্য, যারা অর্থ আছে অথচ সুরক্ষা নেই—এই বৈষম্য আমরা দূর করতে চাই।”

নারায়ণার এই উদ্যোগ নিছক একটি আর্থিক পরিষেবা নয়, বরং এটি এক গভীর সামাজিক উদ্দেশ্য পূরণের উপায় হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে। গ্রুপ সিওও আর. ভেঙ্কটেশ বলেন, “রোগীর জন্য আমরা শুধু ডাক্তার নই, আর্থিক সাথীও। এক ছাতার নিচে চিকিৎসা ও বিমা—ভারতের ক্ষেত্রে এই মডেলই প্রথম।”

যদিও সরকারের তরফে একটি স্বাস্থ্যবিমা সংস্থার আধিকারিক এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এমন প্রকল্পে কার্যকারিতা নির্ভর করে হাসপাতাল নেটওয়ার্কের পরিধির উপর। তাঁর কথায়, “যদি রোগী এমন হাসপাতালে যান যা নারায়ণার আওতার বাইরে, তখন ফের সেই পুরনো সমস্যা—বিলম্ব, নিয়ম না মানার অজুহাতে ক্লেম বাতিল—ফিরে আসতে পারে।”

তবুও, নারায়ণা হেলথের এই একীভূত মডেল সফল হলে, তা দেশের গোটা স্বাস্থ্যব্যবস্থার রূপ পাল্টে দিতে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকেই। বিমা ও স্বাস্থ্যসেবার সংযুক্ত রূপ হয়তো ভবিষ্যতের পথ দেখাচ্ছে—যেখানে রোগী শুধু সংখ্যা নয়, এক মানুষ হিসেবে সম্মান পায়।

নারায়ণা হেলথের নতুন স্বাস্থ্যবিমা পরিকল্পনা ‘আদিতি’ ও ‘আদিতি প্লাস’ কলকাতার স্বাস্থ্যপরিসরে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে। চিকিৎসা ও বিমাকে একীভূত করে আস্থা, গতি ও সাশ্রয়ের মিশেলে এই পরিষেবা মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে উন্নত চিকিৎসা আনার প্রতিশ্রুতি দেয়। যদিও এই মডেলের সাফল্য নির্ভর করবে তার পরিধি ও প্রয়োগে স্বচ্ছতার উপর, তবুও স্বাস্থ্য পরিষেবার ভবিষ্যৎ কাঠামো বদলের ইঙ্গিত দিচ্ছে নারায়ণার এই উদ্যোগ। রোগী, হাসপাতাল ও বিমা সংস্থার সম্পর্ক নতুন আকারে গড়ে তোলার এ এক সাহসী ও অভিনব পদক্ষেপ।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply