৬ জুন ২০২৫ তারিখে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করবেন বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু ‘চেনাব ব্রিজ’, যা জম্মু ও কাশ্মীরের রেয়াসি জেলায় ৩৫৯ মিটার উঁচু অবস্হানে নির্মিত। এই সেতু, উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেললিঙ্ক প্রকল্পের অংশ, ভারতীয় প্রকৌশলের এক অনবদ্য নজির। দীর্ঘ ২২ বছর পর এই সেতু নতুন দিগন্ত খুলে দেবে কাশ্মীরকে দেশের সঙ্গে রেল যোগাযোগে যুক্ত করে। প্রকল্পের কঠিন ভূ-প্রকৃতি, বায়ুপ্রবাহ ও ভূমিকম্প প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়ে ছিল নানা চ্যালেঞ্জ, যা সফলতার সঙ্গে পেরোনো হয়েছে।
সূচিপত্র
Toggleপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৬ জুন উদ্বোধন করবেন বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু ‘চেনাব ব্রিজ’: ঘোষণা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহের
এক্স (সাবেক টুইটার)-এ এক পোস্টে মন্ত্রী লেখেন,
“ইতিহাস রচিত হতে চলেছে… আর মাত্র ৩ দিন! দুর্দান্ত চেনাব ব্রিজ, বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু, আজ জম্মু ও কাশ্মীরে দাঁড়িয়ে রয়েছে গর্বের প্রতীক হয়ে। এটি উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেললিঙ্ক প্রকল্পের অংশ। প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার ক্ষমতাসম্পন্ন এই সেতুটি প্রধানমন্ত্রী মোদী ৬ জুন উদ্বোধন করবেন। এটি নতুন ভারতের শক্তি ও দৃষ্টিভঙ্গির প্রতীক!”
এই চিনাব ব্রিজ সংযুক্ত থাকবে কাটরা থেকে সাঙ্গলদান পর্যন্ত রেলপথের সঙ্গে, যার ফলে নতুন দিল্লি ও কাশ্মীরের মধ্যে সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপন সম্ভব হবে।
❖ এক নজরে মূল তথ্য:
🔷 প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করবেন
🔷 বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু ‘চেনাব ব্রিজ’
🔷 স্থান: রেয়াসি জেলা, জম্মু ও কাশ্মীর
🔷 তারিখ: ৬ জুন ২০২৫
♦ প্রকল্পের পটভূমি ও দীর্ঘসূত্রিতা
২০০২ সালে শুরু হওয়া উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেললিঙ্ক (USBRL) প্রকল্পে একাধিক পর্যায়ে কাজ হয়েছে। এই প্রকল্পের অন্যতম জটিল এবং নজরকাড়া উপাদান হল বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু ‘চেনাব ব্রিজ’, যার উচ্চতা নদী পৃষ্ঠ থেকে ৩৫৯ মিটার। এটি প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের থেকেও প্রায় ৩৫ মিটার উঁচু।
২০০৮-০৯ সালে উচ্চগতির বাতাস ও সম্ভাব্য বিপদের আশঙ্কায় এর নির্মাণ সাময়িক স্থগিত ছিল। পরে প্রকৌশলগত পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে কাজ ফের শুরু হয়।
♦ প্রযুক্তিগত শক্তি ও নিরপত্তা ব্যাবস্থা
বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু ‘চেনাব ব্রিজ’ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ৩০,০০০ মেট্রিক টন স্টিল।
🔹 ভৌত ক্ষমতা:
৪০ কেজি টিএনটি বিস্ফোরণ প্রতিরোধে সক্ষম
৮ মাত্রার ভূমিকম্পে স্থিতিশীল
২৬০ কিমি/ঘণ্টা বেগের বাতাসেও ভারসাম্য রক্ষা করতে পারে
🔹 জীবনকাল:
অনুমান করা হচ্ছে, সেতুটি অন্তত ১২০ বছর কার্যক্ষম থাকবে
🔹 নকশা ও স্থায়িত্ব:
সেতুটি আর্চ-টাইপ, যার মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গা অতল গিরিখাত
সুনির্দিষ্ট হাওয়া-চাপ পরীক্ষা, কম্পন বিশ্লেষণ, সিসমিক টেস্ট ও জলবায়ু সহ্যক্ষমতার জন্য বহুবার পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে
♦ পরিকাঠামোর বুনিয়াদি কাঠামো
USBRL প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ২৭২ কিমি
এর মধ্যে ১১৯ কিমি অংশ টানেলের মধ্যে
১,০০০-র বেশি ছোট-বড় সেতু অন্তর্ভুক্ত
চিনাব ব্রিজ যুক্ত রয়েছে কাটরা-সাঙ্গলদান রুটে
এটি সম্পূর্ণ হলে নতুন দিল্লি থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত সরাসরি রেল সংযোগ গড়ে উঠবে
♦ প্রকল্পের ধাপ ভিত্তিক অগ্রগতি
ধাপ | এলাকা | উদ্বোধন |
---|---|---|
ফেজ I | কাজিগুন্ড–বারামুলা | ২০০৯ (UPA) |
ফেজ II | বানিহাল–কাজিগুন্ড | ২০১৩ (UPA) |
ফেজ III | উধমপুর–কাটরা | ২০১৪ (NDA) |
ফেজ IV | বানিহাল–সাঙ্গলদান | ২০২৪ (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) |
ফাইনাল | কাটরা–রেয়াসি–সাঙ্গলদান (চিনাব ব্রিজ সহ) | ৬ জুন ২০২৫ (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) |
♦ সমসাময়িক পর্যবেক্ষণ ও ট্রায়াল
২০২৫ সালের ২০ জুন ভারতীয় রেলওয়ে আট-কোচের MEMU ট্রেন বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু ‘চেনাব ব্রিজ’ পেরিয়ে সাফল্যের সঙ্গে ট্রায়াল সম্পন্ন করেছে। রেলপথের বাস্তবিক সক্ষমতা যাচাইয়ে এই ট্রায়াল গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হিসেবে বিবেচিত।
♦ অন্যান্য অপ্রচলিত তথ্য
চেনাব ব্রিজে ব্যবহৃত স্টিলের অ্যান্টি-করোশন লেয়ারটি দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছে
সেতুর বিভিন্ন অংশ নির্মিত হয়েছে সীমান্ত রোড অর্গানাইজেশন (BRO) এবং আফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার-এর যৌথ তত্ত্বাবধানে
সেতুর রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি মাসে নির্ধারিত ইন্টিগ্রেটেড সেন্সর মডিউল ব্যবহার করা হবে
নিরবিচারে পাথর সরানোর কারণে এলাকায় পরিবর্তন আনা হয়েছে ভূগোলগত গঠনেও
বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু ‘চিনাব ব্রিজ’ উদ্বোধনের মাধ্যমে ভারতীয় রেল যোগাযোগের একটি নতুন অধ্যায় সূচিত হতে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-র হাত ধরে এই প্রকৌশল মাইলফলক কাশ্মীরকে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত করবে। প্রকল্পটি শুধু অবকাঠামো নয়, বরং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। দীর্ঘদিনের পরিশ্রম ও প্রযুক্তিগত জটিলতা অতিক্রম করে চিনাব ব্রিজ স্থাপিত হওয়া ভারতের স্থায়িত্ব ও উন্নয়নের এক অসাধারণ নিদর্শন বলেই বিবেচিত হবে।