বেঙ্গালুরুর রামমূর্তি নগর থেকে উঠে এসেছে এক চমকে দেওয়া চিট ফান্ড প্রতারণার কাহিনি, যার কেন্দ্রে রয়েছেন কেরালার এক দম্পতি—টমি ও শাইনি। ‘A&A চিটস অ্যান্ড ফাইনান্স’ নামে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিচালনার আড়ালে প্রায় ₹৪০ কোটির বিনিয়োগ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁদের বিরুদ্ধে। ১৫-২০ শতাংশ লাভের মায়াজালে শতাধিক মানুষ পড়ে সর্বস্ব খুইয়েছেন। প্রায় ২৬০টিরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে। বিনিয়োগকারীদের বিশ্বাস ভেঙে বর্তমানে ওই দম্পতি পলাতক, আর পুলিশ তল্লাশিতে নেমেছে। তদন্তে উঠে আসছে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য।

📌 STORY HIGHLIGHTS

  • অভিযুক্ত: কেরালার টমি ও শাইনি

  • প্রতিষ্ঠান: A&A চিটস অ্যান্ড ফাইনান্স

  • বসবাস: বেঙ্গালুরুর রামমূর্তি নগর

  • অভিযোগ: ₹৪০ কোটি আত্মসাৎ

  • অভিযোগকারীর সংখ্যা: ২৬০-র বেশি

  • লভ্যাংশের প্রলোভন: ১৫-২০%

  • বর্তমান অবস্থা: দম্পতি পলাতক

  • তদন্ত: রামমূর্তি নগর থানা

বেঙ্গালুরুর রামমূর্তি নগরের শান্ত পাড়ায় বেশ নিরবিচারে বসবাস করছিলেন এক কেরালার দম্পতি—টমি ও শাইনি। প্রতিবেশীদের সঙ্গে মিশুকে, চার্চের নিয়মিত সদস্য, এবং মালয়ালি কমিউনিটির পরিচিত মুখ। কিন্তু হঠাৎ করেই সেই চেনা মুখগুলো এখন অভিযোগের কেন্দ্রে। প্রায় ₹৪০ কোটি টাকার চিট ফান্ড প্রতারণার অভিযোগে এই দম্পতির বিরুদ্ধে মামলা রুজু হয়েছে এবং পুলিশ তদন্তে নেমেছে।

দুজনেই দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বেঙ্গালুরুতে বসবাস করছিলেন। নিজেদের গড়ে তুলেছিলেন ‘A&A চিটস অ্যান্ড ফাইনান্স’ নামে একটি অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির প্রলোভন ছিল বিশেষ—১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে লভ্যাংশের প্রতিশ্রুতি। এতটা লাভের কথা শুনে অনেকেই তাড়াহুড়ো করে বিনিয়োগ করে বসেন।

কথিত আছে, শুরুতে প্রতিষ্ঠানটি নিয়মিতভাবে বিনিয়োগকারীদের নির্ধারিত লভ্যাংশ প্রদান করত। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে একটি বিশ্বাস জন্মায় যে এটি একটি নির্ভরযোগ্য সংস্থা। কেউ তাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য টাকা জমা রাখেন, কেউ আবার চিকিৎসার জন্য গচ্ছিত অর্থ বিনিয়োগ করেন। এমনও অনেকে আছেন, যারা নিজেদের জমিজমা বিক্রি করে এই স্কিমে টাকা ঢালেন।

এক বিনিয়োগকারী পি.টি. সাভিও, যিনি ₹৭০ লাখ খুইয়েছেন, বলেন:
“প্রথমে খুব ভাল রিটার্ন দিত, মনে হয়েছিল বিশ্বাস করা যায়। হঠাৎই সব বন্ধ হয়ে যায়। এখন তো কেউই ফোন ধরছে না।”

আরেক কেরালার বাসিন্দা, যিনি পরিচয় গোপন রাখতে চান, বলেন:
“১২-১৩ শতাংশ লাভ বলেছিল। প্রথমে ঠিকঠাকই সুদ দিত, বিশ্বাস বেড়েছিল। তাই আমি আমার ছেলে-মেয়েকেও বলি বিনিয়োগ করতে।”

তাদের সঙ্গে তিন মাস আগে দেখা করা এক বিনিয়োগকারী জানিয়েছেন:
“আমি ওনাদের আগেই বলেছিলাম, জুলাইয়ে একটা জরুরি প্রয়োজনে টাকা দরকার হবে। উনি তখন বলেছিলেন, চিন্তা নেই। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা গায়েব।”

দম্পতির অফিসে খোঁজ নিয়েও মেলেনি কোনো তথ্য। কর্মীরা জানিয়েছেন, তারাও কিছু জানেন না। মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

মালয়ালি সমাজের এক সংগঠক বলেন:
“টমি নিয়মিত চার্চে আসতেন, কমিউনিটি মিটিংয়ে যোগ দিতেন। সেখান থেকেই মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। সেখানেই সবাইকে বুঝিয়ে বলতেন, এটা লাভজনক স্কিম।”

এই চিট ফান্ডে যাঁরা বিনিয়োগ করেছিলেন, তাঁদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে এই সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
এক মহিলা বলেন:
“প্রথমে আমার বাবা বিনিয়োগ করেন। পরে আমিও এবং আমার বোনও টাকাটা রাখি। এতদিন কোনও সমস্যা হয়নি। আমরা ভাবতেই পারিনি এটা এমন প্রতারণা হতে পারে।”

এখন পর্যন্ত ২৬০টিরও বেশি অভিযোগ জমা পড়েছে এবং পুলিশ জানিয়েছে, তারা দম্পতির সন্ধানে তল্লাশি শুরু করেছে। রামমূর্তি নগর থানায় মামলা রুজু হয়েছে এবং তদন্ত দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে।

টমি ও শাইনি এখন কোথায় রয়েছেন, তা স্পষ্ট নয়। তবে এত বড় অঙ্কের প্রতারণা কীভাবে এতদিন ধরা পড়ল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে অন্যান্য রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় সংস্থার সহায়তা নেওয়া হতে পারে।

এই ঘটনায় আবারও স্পষ্ট হয়েছে, উচ্চ রিটার্নের লোভে পড়ে বিনিয়োগের আগে প্রতিষ্ঠানটির বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করা কতটা জরুরি।

বেঙ্গালুরুর রামমূর্তি নগরে ঘটে যাওয়া এই চিট ফান্ড কেলেঙ্কারি শুধুই একটি প্রতারণার ঘটনা নয়—এটি সতর্ক সংকেত। অতিরিক্ত লাভের মোহে পড়ে অনেকেই তাঁদের জীবনের সমস্ত সঞ্চয় হারিয়েছেন। কেরালার টমি ও শাইনির ‘ফির হেরা ফেরি’ ধাঁচের পরিকল্পনা বহু মানুষের আস্থা, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎকে ভেঙে চুরমার করেছে। তদন্ত জারি রয়েছে, তবে এই ঘটনার মাধ্যমে ফের একবার প্রমাণিত হলো—অর্থ বিনিয়োগের আগে সচেতনতা এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক তথ্য যাচাই কতটা প্রয়োজনীয়। বিশ্বাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা প্রতারণা চেনা যতটা কঠিন, তার পরিণাম ততটাই নির্মম।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply