স্থান: গুসকারা, পূর্ব বর্ধমান
সময়: সকাল ৮টা (সোমবার)
পূর্ব বর্ধমান জেলার এই অঞ্চলটি পূর্বেই দুর্ঘটনার জন্য কুখ্যাত ছিল। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না।
প্রদীপবাবু ছিলেন গুসকারা পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের সিরিষ্টোলা এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় লটারি বিক্রেতা। তিনি প্রতিদিনের মতো নিজের কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন, সেই সময়ই বাংলার দুর্ঘটনা ঘটে যায়।
🚨 পুলিশি ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক: বাংলার দুর্ঘটনা ঘিরে এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা
বাংলার দুর্ঘটনা, বিশেষ করে গুসকারা, পূর্ব বর্ধমান-এর এই রোড অ্যাক্সিডেন্ট, শুধু এক ব্যক্তির মৃত্যু নয়—একটা গোটা সিস্টেমে ধাক্কা দিয়ে গেল। আর সেই কেন্দ্রবিন্দুতে আজ প্রশ্নচিহ্ন পুলিশের ভূমিকাকে ঘিরে।
অভিযোগ অনুযায়ী পুলিশি আচরণ
সুদীপ জানান, পুলিশ তাঁকে একটি বস্তা ধরিয়ে বলে:
“তুমি ছেলের ছেলে, দেহাংশগুলো তুমি তোলো।”
এরপর তিনি নিজেই বস্তায় দেহাংশ সংগ্রহ করেন এবং ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশদের সহযোগিতা করেন।
🎥 তথ্যের ভিন্ন সুর: ভিডিও প্রকাশের পর নতুন প্রশ্ন
সোশ্যাল মিডিয়ায় পুলিশি বিবৃতি
পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়, যেখানে সুদীপ দাস বলেন:
“পুলিশ আমাকে কিছু করতে বলেনি। আমি নিজে থেকেই সাহায্য করেছি।”
দুটি বক্তব্যে অসঙ্গতি
সুদীপের সাংবাদিকদের সামনে বলা কথার সঙ্গে ভিডিওর বক্তব্যের মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাক লক্ষ্য করা যায়।
এই ভিন্নতা ঘিরে বাংলার দুর্ঘটনা নিয়ে মানুষের মধ্যে তৈরি হয়েছে সংশয় ও কৌতূহল।
🔍 প্রশাসনিক প্রতিক্রিয়া:
পুলিশ সুপারের প্রতিক্রিয়া:
পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার সায়ক দাস বলেন:
“ভিকটিমের ছেলে এখনও কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি। কিন্তু আমি একটি ভিডিও দেখেছি। আমি জোনাল ডিএসপিকে তদন্ত করতে বলেছি।”
এখানে উল্লেখযোগ্য, পুলিশ সুপার নিজে ভিডিও দেখে তদন্তের নির্দেশ দেন, কোনও লিখিত অভিযোগ ছাড়াই।
🧾 উপ-দৃষ্টিভঙ্গি:
তদন্ত নির্দেশ শুধুই ভিডিও ক্লিপ দেখে—যেটা পুলিশের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে প্রকাশিত—সেই ভিডিও নিয়েই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছে।
বাংলার দুর্ঘটনা নিয়ে যদি প্রকৃত তদন্ত হয়, তবে এই ভিডিও-নির্ভর পদক্ষেপ কতটা কার্যকর, তা সময় বলবে।
তদন্তের দায়িত্ব জোনাল ডিএসপির হাতে:
পুলিশের অভ্যন্তরীণ নিয়ম মেনেই, জোনাল ডিএসপি-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তদন্তের।
⚠️ সাব-বিশ্লেষণ:
তদন্ত আদৌ নিরপেক্ষ হবে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েছে জনমানসে।
বাংলার দুর্ঘটনা সংক্রান্ত অতীতের অনেক ঘটনায় দেখা গেছে, প্রাথমিক তদন্তই চূড়ান্ত তদন্ত হয়ে গেছে—ফলাফল না জানিয়েই।
🗳️ রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:
বিজেপি নেতার সরাসরি মন্তব্য:
পূর্ব বর্ধমান জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি মৃত্যুঞ্জয় চন্দ্র স্পষ্ট করে বলেন:
“তৃণমূলের শাসনে পুলিশ মানবিকতা হারিয়েছে। দোষী পুলিশদের শাস্তি হওয়া উচিত।”
এই মন্তব্য একদিকে যেমন বাংলার দুর্ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়িয়েছে, তেমনি পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলেছে।
এই বক্তব্য বাংলার দুর্ঘটনাকে আরও রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে এবং পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক আবহে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে।
বারবার কেন ঘটছে এমন ঘটনা?
বাংলার দুর্ঘটনা যেন এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়—বরং নিয়মিত খবরের শিরোনাম। বিশেষ করে গুসকারা, পূর্ব বর্ধমান-এর মতো জায়গায় এমন দুর্ঘটনা বারবার কেন ঘটছে, সেই প্রশ্ন এখন তীব্র হয়ে উঠেছে। পুরো পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে এই ধরণের দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে তৈরি হয়েছে একরাশ সন্দেহ ও ক্ষোভ।
🔹 ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের অভাব:
নিয়মিত ট্রাফিক নজরদারির ঘাটতি বহু ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার মূল কারণ হয়ে উঠছে।
গুসকারা, পূর্ব বর্ধমান-এর মত গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ড এলাকায়ও সিগনাল বা ট্রাফিক কনস্টেবল চোখে পড়ে না, এমন তথ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের মুখে বারবার উঠে এসেছে।
এই অঞ্চলে পাথর বোঝাই ডাম্পারগুলি যেভাবে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল করে, তাতে দুর্ঘটনা প্রায় অনিবার্য।
ওই অঞ্চলে অনেক ডাম্পার বেআইনি ওভারলোড করে চলে বলে দাবি করেছেন পরিবহণ কর্মীরা, যা বহু বাংলার দুর্ঘটনার পেছনে নীরব ঘাতক হিসেবে কাজ করে।
🔹 সিসিটিভি বা নজরদারি ব্যবস্থার ঘাটতি:
গুসকারা, পূর্ব বর্ধমান-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ট্রানজিট পয়েন্টেও সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা খুব কম।
নিয়ম ভাঙা কিংবা গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে যে প্রযুক্তিগত সহায়তা দরকার, তার অভাবে বাংলার দুর্ঘটনা যেন আরও অচেনা থেকে যাচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গের বহু ছোট শহরে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বাজেট বরাদ্দ থাকলেও, বাস্তবায়ন প্রায় নেই বললেই চলে।
🔹 চালকদের গাফিলতি ও প্রশিক্ষণের অভাব:
দুর্ঘটনার দিন যে ডাম্পারটি প্রদীপ কুমার দাস-কে ধাক্কা মারে, তার চালক নাকি ঘটনাস্থল থেকে পলিয়ে যায়—এ তথ্য উঠে এসেছে স্থানীয়দের বক্তব্যে।
চালকদের প্রয়োজনীয় ট্রেনিং, লাইসেন্স যাচাই বা সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত সচেতনতা এখানে অনেকটাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে আছে।
বাংলার দুর্ঘটনা অনেক সময়ই ঘটছে এমন চালকদের হাতে, যারা হয়তো নির্ধারিত ঘন্টা ছাড়িয়ে কাজ করছেন, ফলে ক্লান্তির জেরে গাড়ি চালানোর দক্ষতা হ্রাস পাচ্ছে।
🔹 সাধারণ মানুষের অসচেতনতা:
শুধুমাত্র প্রশাসন বা চালকদের দায় নয়, অনেক সময় পথচারীরাও নিরাপত্তা নির্দেশ না মেনে রাস্তা পার হন, যার ফলে বাংলার দুর্ঘটনা থেকে কেউই নিরাপদ থাকছেন না।
এই পরিস্থিতি গুসকারা, পূর্ব বর্ধমান-এও আলাদা নয়—বাসস্ট্যান্ডের মতো ব্যস্ত জায়গাতেও বহুজন অসাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করেন।
🔹 নিয়ম মানার সংস্কৃতি গড়ে না ওঠা:
পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বহু ছোট শহরে নিয়ম ভাঙা যেন ‘নতুন স্বাভাবিক’ হয়ে উঠছে।
ট্রাফিক আইন, স্পিড লিমিট, হেলমেট, সিটবেল্ট—সবকিছুই কাগজে আছে, বাস্তবে কম।
বাংলার দুর্ঘটনা-তে মৃতদের পরিবারের তরফে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনও অভিযোগ দায়ের হয় না—এটা একটা বড় সামাজিক ব্যর্থতা, যেখান থেকে ব্যবস্থার ঘাটতি শুরু।
যতবার বাংলার দুর্ঘটনা ঘটে, ততবারই প্রশ্ন ওঠে—গুসকারা, পূর্ব বর্ধমান-এর মতো জায়গায় কেন এই ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না? পশ্চিমবঙ্গে প্রশাসনিক তৎপরতা থাকলেও, স্থায়ী সমাধানে যে এখনও অনেক দূর যেতে হবে, সেটা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে বাস্তব চিত্রে।