তীব্র গরমে স্বস্তি দিতে পারে সহজ ঘরোয়া পানীয়
চড়া রোদের দাপটে পশ্চিমবঙ্গ ও কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে অসহ্য গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। এমন সময় শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ রাখতে বিশেষ ভূমিকা নিতে পারে ঘরোয়া কিছু পানীয়। সত্তু, বেল, শসা, কোকুম, কাঁচা আম বা নারকেল—এই সহজ উপকরণেই তৈরি হতে পারে পুষ্টিকর ও ঠান্ডা রাখার মতো পানীয়, যা স্বাদের পাশাপাশি শরীরেরও উপকার করে। বাইরের দামি পানীয় নয়, ঘরোয়া উপায়েই এবার গরমকে করুন বিদায়। সহজ উপকরণে বানান ঠান্ডা পানীয়, থাকুন হালকা ও সুস্থ।
📌 স্টোরি হাইলাইটস (READ BOX):
পশ্চিমবঙ্গে তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি
সত্তু, বেল, শসা, কোকুম, কাঁচা আম—সবই ঘরোয়া পানীয় তৈরির মূল উপকরণ
গরমে দেহ শীতল রাখার সঙ্গে সঙ্গে হজম ও পুষ্টির জোগান দেয় এই পানীয়গুলি
বাইরের প্যাকেটজাত পানীয়ের বদলে বেছে নিন প্রাকৃতিক, ঘরোয়া উপায়
ছাতু ড্রিঙ্ক – পুষ্টির আধার:
প্রচণ্ড গরমে যেসব পানীয় শরীরের উপকারে আসে, তার মধ্যে ছাতু অন্যতম। ভাজা ছোলার গুঁড়ো দিয়ে তৈরি এই পানীয় বাংলার বহু পরিবারে গ্রীষ্মের সকাল শুরু করার চেনা পদ্ধতি। এটি শুধু শরীর ঠান্ডা রাখে না, দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং হজমেও সাহায্য করে। এক গ্লাস ঠান্ডা জলে ১-২ চামচ ছাতু গুঁড়ো ও এক চিমটে লবণ মিশিয়ে ভালোভাবে নেড়ে নিলেই এই পানীয় প্রস্তুত।
বেল শরবত – শৈশবের স্মৃতি:
বেল, বাংলার প্রাচীন ফল, যার শরবত বহু ঘরের রোজকার গ্রীষ্মকালীন অভ্যাস। পাকা বেলের শাঁস জল মিশিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রেখে গুড় বা চিনি ও সামান্য বিটনুন মিশিয়ে বানানো হয় এই পানীয়। এটি শুধুমাত্র তৃষ্ণা নিবারণ করে না, শরীরের পেট ঠান্ডা রাখে এবং হজম প্রক্রিয়া সহজ করে।
শসা-ইনফিউজড জল – সাদামাটা অথচ কার্যকরী:
শসা গ্রীষ্মকালের শ্রেষ্ঠ উপহারগুলির একটি। এক গ্লাস ঠান্ডা জলে কয়েকটি শসার টুকরো ভিজিয়ে রেখে সারাদিনে চুমুক দিয়ে পান করলে শরীর থাকে সজীব এবং মসৃণ। শসার উচ্চ জলীয় পরিমাণ শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট করতে সাহায্য করে।
সোল কড়ি – কোকণের রসনা:
কোনও কোনও পানীয় শুধু পানীয় নয়—একটা অঞ্চল, এক টুকরো সংস্কৃতি। সোল কড়ি সেইরকমই এক পানীয় যা মহারাষ্ট্রের কোকণ অঞ্চলে গরমের মাসগুলোয় ভাতের সঙ্গেও খাওয়া হয়। কোকুম ও নারকেল দুধ দিয়ে তৈরি এই পানীয় হজমেও সহায়তা করে। জিরে, কাঁচা লঙ্কা, বিটনুন, ধনেপাতা দিয়ে সোল কড়ির স্বাদ আরও বাড়ানো যায়।
কমলালেবুর রস – প্রাকৃতিক ভিটামিন সি:
গরমে ঘাম ও ক্লান্তির হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই চিনি মেশানো কোমল পানীয়ের দিকে ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু তার বদলে ঘরেই তৈরি করুন টাটকা কমলালেবুর রস। এতে ভিটামিন সি থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, পাশাপাশি এটি শরীরকে হাইড্রেট রাখে এবং মেজাজ ফুরফুরে করে।
আমপানা – গরমের ঘরোয়া সমাধান:
সবুজ কাঁচা আম সিদ্ধ করে তার রসের সঙ্গে পুদিনা, বিটনুন, ভাজা জিরে ও গুড় বা চিনি মিশিয়ে বানানো হয় আমপানা। এটি গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখার পাশাপাশি হিট স্ট্রোক থেকেও রক্ষা করতে পারে।
নারকেল জল – প্রাকৃতিক ইলেক্ট্রোলাইট:
প্রাকৃতিকভাবে শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যালান্স বজায় রাখতে যা সবচেয়ে উপযোগী, তা হলো নারকেল জল। এতে সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়ামসহ একাধিক খনিজ পদার্থ থাকে, যা শরীরের জলশূন্যতা রোধ করে ও দ্রুত শক্তি দেয়।
এই তীব্র গরমে শরীরকে সুস্থ, সতেজ ও হাইড্রেট রাখতে উপরের পানীয়গুলিকে রোজকার খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। একদিকে স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখা যাবে, অন্যদিকে স্বাদের দিকেও আপস করতে হবে না। সহজলভ্য এই পানীয়গুলিকে ঘরেই প্রস্তুত করে গরমের মরসুমে থাকুন সুরক্ষিত ও সতেজ।