একদিকে ছিল দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান, অন্যদিকে সেই উদ্‌যাপন রূপ নিল প্রাণঘাতী ঘটনায়। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB)-র প্রথম আইপিএল জয়ের আনন্দ যে এতটা বেদনাদায়ক পরিণতি টানবে, তা ভাবেনি কেউই। গর্বের আবহে রচিত হল এক হৃদয়বিদারক অধ্যায়, যা কাঁপিয়ে দিল গোটা দেশকে।গতকাল চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরে উদ্‌যাপনের জেরে ঘটে যায় এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। হাজার হাজার সমর্থক ভিড় করেছিলেন RCB-র জয় উপলক্ষে আয়োজিত ইভেন্টে। কিন্তু আনন্দ পরিণত হয় আতঙ্কে, আর সেই আতঙ্ক এক মুহূর্তে কেড়ে নেয় ১১টি তাজা প্রাণ।

হৃদয়বিদারক দৃশ্য, বিচ্ছিন্নতা ও অশ্রুতে ভেজা পরিবার

মঙ্গলবার সন্ধ্যাবেলায় চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের বাইরের পরিস্থিতি ক্রমে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন দলের জয় উদযাপন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে। কিন্তু আয়োজকদের প্রস্তুতি ছিল তার তুলনায় অপ্রতুল। প্রবেশপথের সীমাবদ্ধতা, ভিড় নিয়ন্ত্রণের ঘাটতি এবং দ্ব্যর্থপূর্ণ বার্তার কারণে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়। একসময়ে সেই ভিড় রূপ নেয় বিভীষিকায়। দেখা যায়, বহু মানুষ পড়ে যাচ্ছেন, চিৎকার করছেন, কেউ কাউকে পিষে দিচ্ছেন।

“আমার একমাত্র ছেলেকে হারালাম”— এক বাবার কান্না

এই ঘটনার সবচেয়ে মর্মান্তিক দিক উঠে আসে এক বাবার বেদনায়। ভূমিক নামের এক তরুণ, যিনি ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্র এবং আরসিবির একজন উন্মাদ ফ্যান, তিনিও প্রাণ হারান এই পদদলনে। তাঁর বাবা সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে যা বলেন, তা শোনার পর চোখের জল আটকানো কঠিন।

“আমি ২২ বছর ধরে ওকে বড় করেছি, আর আজ রাস্তায় ওকে মরতে দেখছি—তোমাদের ব্যবস্থার জন্যই। আমি জানতামও না যে ও এখানে এসেছে। দয়া করে শুধু আমার ছেলের দেহটা আমাকে ফেরত দিন। যা হবার ছিল, তা হয়ে গেছে,” স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে এভাবেই বলছিলেন ভূমিকের শোকাহত পিতা।

এক হৃদয়বিদারক ঘটনায়, পদদলিতের শিকার আরও এক তরুণের পিতা প্রশাসনের কাছে আবেদন জানান, যেন তার ছেলের মৃতদেহে ময়নাতদন্ত না করা হয়। তিনি বলেন, “অন্তত আমার ছেলের দেহটা আমাকে ফেরত দিন। দয়া করে ময়নাতদন্ত করবেন না। ওর দেহ টুকরো টুকরো করে কাটবেন না। আমার একটাই ছেলে ছিল, আর আজ আমি ওকে হারিয়েছি। ও আমাকে কিছু না জানিয়েই এখানে এসেছিল। এখন মুখ্যমন্ত্রী বা উপমুখ্যমন্ত্রী আসতে পারেন, কিন্তু কেউ আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিতে পারবে না।”—এইভাবেই সংবাদমাধ্যমের সামনে কান্নাজড়ানো গলায় নিজের যন্ত্রণা জানান ওই পিতা।

Bengaluru stampede highlights: RCB issues statement after 11 killed; Rishi Sunak condoles incident | Hindustan Times

বিভ্রান্তি ও ব্যর্থতা— কে নেবে দায়?

এই ঘটনা যে শুধুই একবারের দুর্ঘটনা নয়, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে নানা বিশ্লেষণে। মূল সমস্যার শিকড় রয়েছে আয়োজনের গাফিলতিতে। একদিকে RCB-এর তরফে প্রচার চলছিল সাধারণ দর্শকদের অংশগ্রহণের অনুমতি নিয়ে, অন্যদিকে প্রশাসনের তরফে কোনও স্পষ্ট দিকনির্দেশ ছিল না। এতে অনেকেই ভেবেছিলেন তাঁরা ঢুকতে পারবেন, এবং সেই আশাতেই রীতিমতো হুড়োহুড়ি শুরু হয়।

বিশেষ করে স্টেডিয়ামের সংকীর্ণ প্রবেশপথগুলো দ্রুত অচল হয়ে যায়। কেউ ঢোকার চেষ্টা করছিল, কেউ বেরোতে পারছিল না, এমন অবস্থায় পায়ের তলায় পিষে যান অনেকেই।

তরুণ প্রাণের মৃত্যুতে প্রশ্ন উঠছে প্রস্তুতি ও দায়বদ্ধতা নিয়ে

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জমায়েতকারী মানুষের সংখ্যা অনেকটাই অপ্রত্যাশিত ছিল। আয়োজক সংস্থাগুলি এবং পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব ছিল প্রকট। বিশৃঙ্খলা এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, অনেকেই সাহায্য চেয়ে হাহাকার করলেও, তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিকেল ৫টার মধ্যে এই মর্মান্তিক ঘটনার পুরো চিত্র পরিষ্কার হয়ে ওঠে। পদদলিতের প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে আরসিবি এবং রাজ্য প্রশাসনের মধ্যে দ্বন্দ্বপূর্ণ যোগাযোগ, অতিরিক্ত ভিড়, অপর্যাপ্ত জনসংযোগ নিয়ন্ত্রণ এবং সীমিত প্রবেশ পথ। অনুষ্ঠানে জমায়েত হওয়া জনসমাগম স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা এবং আয়োজকদের প্রত্যাশার অনেক গুণ বেশি ছিল।পদদলনের পর ঘটনাস্থলে আসে উদ্ধারকারী বাহিনী। ১১ জন নিহতের পাশাপাশি অগণিত আহতদের নিকটস্থ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।দুঃখজনকভাবে, ১১ জনের প্রাণ আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

Bengaluru stampede: Son of pani puri vendor, new joinee at tech firm, 14-year-old school girl among 11 killed | Bangalore News - The Indian Express

মুখ্যমন্ত্রীর তদন্তের নির্দেশ, উপমুখ্যমন্ত্রীর দুঃখপ্রকাশ

কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এই ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন এবং অবিলম্বে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। অন্যদিকে উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার বলেন, “এটা ছিল তরুণ, উদ্দীপ্ত ভিড়। লাঠিচার্জ দিয়ে তাদের থামানো যায় না। কিন্তু পরবর্তীতে যেন এমন না ঘটে, তার জন্যই এই তদন্ত প্রয়োজন।

DISGRACED': BCCI shocked but has 'no role' in Bengaluru stampede that caused deaths, injuries during RCB victory parade | Cricket

● ময়নাতদন্তের পর দেহ হস্তান্তর

সব মৃতদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করে বৃহস্পতিবার সকালেই পরিবারগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যদিও অনেক পরিবারের অভিযোগ, তাঁদের অনুমতি ছাড়াই দেহ কাটাছেঁড়া করা হয়েছে। এই নিয়েও প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।

বেঙ্গালুরুর পদদলিত দুর্ঘটনা এক মর্মান্তিক সতর্কতা যা আমাদের সামনে তুলে ধরেছে জনসমাগম পরিচালনার গুরুত্ব এবং দায়বদ্ধতার অপরিহার্যতা। শুধু উদযাপন নয়, সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এমন ঘোর অঘটন নতুন নয়। এই ঘটনায় প্রাণ হারানো পরিবার ও আহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। প্রশাসন ও আয়োজকদের উচিত দ্রুত দায়ীদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। কারণ প্রতিটি প্রাণই মূল্যবান, আর জন নিরাপত্তার দায়িত্বে কোনো ব্যর্থতা গ্রহণযোগ্য নয়।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply