কলকাতার ঐতিহ্যবাহী কুমারটুলি ঘাট নতুন রূপে ফিরতে চলেছে। হুগলি নদীর তীরে শিল্প, সংস্কৃতি ও বিসর্জনের আবেগে জড়ানো এই ঘাটটির সৌন্দর্যায়ন ও পুনরুদ্ধারে একসঙ্গে কাজ শুরু করল স্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট (কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট) ও আদানি পোর্টস। সম্প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরের মাধ্যমে এই উদ্যোগে সিলমোহর পড়েছে। শুধু ঘাট নয়, এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মৃৎশিল্পের ঐতিহ্য, প্রজন্মের আবেগ ও শহরের স্মৃতি রক্ষার চেষ্টাই হচ্ছে এবার। সঙ্গে থাকছে আরও চারটি ঘাট পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা, যাতে নতুন আলোয় ফিরতে পারে কলকাতার নদীঘাট-সংস্কৃতি।
📌 STORY HIGHLIGHTS
কুমারটুলি ঘাটে পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের লক্ষ্যে SMP Kolkata ও Adani Ports-এর মধ্যে MoU স্বাক্ষর
ঘাটের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্য বজায় রেখে সৌন্দর্যায়ন ও সংস্কার
পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও পর্যটনের উপযোগী করে তোলার পদক্ষেপ
মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্যবাহী আবাসস্থল হিসেবে ঘাটটির সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
আরও চারটি ঘাট—ছোটেলাল, মায়ের, টেলকাল ও নিমতলা ইমারশন ঘাট—পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনা
হুগলি নদীর শান্ত অথচ স্মৃতিবহ তীরে দাঁড়িয়ে থাকা কুমারটুলি ঘাট শুধু একটি জলপথ নয়, এটি কলকাতার সংস্কৃতি ও শিল্প ঐতিহ্যের এক অন্তরনিহিত অধ্যায়। সেই ঘাটকে ঘিরেই এবার নতুন প্রাণসঞ্চারের পরিকল্পনায় একত্রিত হল দুই গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা—স্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্ট, কলকাতা (SMPK) ও আদানি পোর্টস অ্যান্ড স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড (APSEZ)।
শুক্রবার, ১১ জুলাই ২০২৫ তারিখে এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য কুমারটুলি ঘাটের পুনর্গঠন, পুনরুদ্ধার এবং সৌন্দর্যায়ন।
এই চুক্তির মাধ্যমে শুধু একটি ঘাটের সংস্কার নয়, বরং এক বিস্মৃতপ্রায় ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করারই ইঙ্গিত মিলেছে। বহু শতাব্দী ধরে যাঁরা নদীর তীর ঘেঁষে প্রতিমা গড়েছেন, যাঁদের হাতের ছোঁয়ায় বাংলার উৎসব প্রাণ পায়—সেই কুমোর সম্প্রদায়ের জীবন ও শিল্পের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে এই কুমারটুলি ঘাট।
স্যামা প্রসাদ মুখার্জি পোর্টের চেয়ারম্যান রথেন্দ্র রমন বলেন,
“কুমারটুলি ঘাট কেবলমাত্র একটি নির্মাণ নয়—এটি এক জীবন্ত ইতিহাস, যা বাংলার শিল্প ও সংস্কৃতির মূলস্রোতের সঙ্গে জড়িত। আদানি পোর্টস-এর সঙ্গে এই অংশীদারিত্ব আমাদের সেই ইতিহাসকে সংরক্ষণের এক সম্মানজনক সুযোগ এনে দিল।”
এই প্রকল্পটি SMPK-র স্বচ্ছতা অভিযানের একটি অঙ্গ। কলকাতার অন্যতম প্রাচীন এই ঘাটটির পুনরুদ্ধার প্রকল্পে থাকবে আধুনিকতার ছোঁয়া, তবে তার ঐতিহ্যবাহী কাঠামো ও পরিবেশ অটুট থাকবে।
আদানি পোর্টস-এর পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট (বিজনেস ডেভেলপমেন্ট) সুব্রত ত্রিপাঠী এই প্রয়াসকে সম্মানের চোখে দেখেছেন। তিনি জানান,
“কলকাতার আবেগঘন এবং ঐতিহাসিক কুমারটুলি ঘাটের সংস্কারের দায়িত্ব নেওয়া আমাদের কাছে এক পরম গর্বের বিষয়। ঘাটটি শুধুই একটি নদীপথ নয়, এটি মানুষের আত্মিক বন্ধনের কেন্দ্রস্থল।”
পোর্ট ট্রাস্ট সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের আওতায় শুধু কুমারটুলি নয়, আরও চারটি ঘাট—ছোটেলাল ঘাট, মায়ের ঘাট, টেলকাল ঘাট ও নিমতলা ইমারশন ঘাট—পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু হবে অদূর ভবিষ্যতে।
এই ঘাটগুলি কেবল নদীর ধারে নৌ চলাচলের স্থান নয়, বরং কলকাতার নাগরিক জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। উৎসব, বিসর্জন, দৈনন্দিন স্নান বা জলসংগ্রহ—সব ক্ষেত্রেই ঘাটগুলির ব্যবহার বহুল এবং আবেগঘন। সেই আবেগ ও ঐতিহ্যকে অক্ষুণ্ণ রেখেই সৌন্দর্যায়নের ছোঁয়া দিতে চলেছে এই যুগ্ম উদ্যোগ।
পুরসভা, পুলিশ প্রশাসন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিভাগও এই প্রকল্পে সক্রিয়ভাবে যুক্ত রয়েছে। ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনের এই প্রচেষ্টা সফল হলে, কলকাতার নদীঘাটগুলিকে ঘিরে তৈরি হতে পারে এক নতুন পর্যটনবৃত্ত, যা নগরের পরিচিতিকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
এই প্রকল্প শুধু একটি সৌন্দর্যায়নের উদ্যোগ নয়—এটি এক সাংস্কৃতিক দায়িত্ব পালন, এক ঐতিহাসিক ঋণ শোধ।
কুমারটুলি ঘাটের পুনরুদ্ধার শুধুই একটি পরিকাঠামো উন্নয়নের প্রকল্প নয়, বরং এটি কলকাতার সাংস্কৃতিক আত্মাকে নতুনভাবে তুলে ধরার এক ঐতিহাসিক প্রয়াস। আদানি পোর্টস ও কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের এই যৌথ উদ্যোগ শহরের জলসাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। হুগলি তীরবর্তী আরও ঘাটগুলির পুনরায় প্রাণ ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা এবার বাস্তবের মুখ দেখতে চলেছে। এই প্রয়াস সফল হলে কুমারটুলির মৃৎশিল্প, ঘাটের গরিমা ও নদীপারের জীবনযাত্রা পাবে নতুন পরিচিতি ও গর্বের ঠিকানা।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো