ভারত সামরিক প্রযুক্তির জগতে এক বিশাল পদক্ষেপ নিয়েছে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা সম্পন্ন করে। ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO) এই সাফল্যের নেতৃত্ব দিয়েছে, যা দেশকে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীনের মতো এলিট ক্লাবের অংশে পরিণত করেছে।

india hypersonic missile

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র কী?

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র এমন এক প্রযুক্তি যা শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ দ্রুতগতি (ম্যাচ ৫ বা তার বেশি) সম্পন্ন করে। এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এটি অত্যন্ত ম্যানুভারেবল এবং শত্রুর রাডার বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে এড়িয়ে চলতে সক্ষম। বর্তমানে, ভারতের এই উন্নয়ন কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে একটি বড় মাইলফলক বলে বিবেচিত হচ্ছে।

india hypersonic missile1

ভারতের অগ্রগতি

ভারতের হাইপারসনিক প্রযুক্তির শুরুর দিকে ২০২০ সালে HSTDV (Hypersonic Technology Demonstration Vehicle) প্রোটোটাইপের মাধ্যমে সাফল্যের সূচনা হয়। এর পরীক্ষার সময় এটি ম্যাচ ৬ গতিতে ২৩ সেকেন্ড ধরে চলতে পেরেছিল। এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ভারত হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে অগ্রসর হয়েছে।

সম্প্রতি DRDO এবং ভারতীয় সেনা একসঙ্গে ব্রহ্মোস-২ ক্ষেপণাস্ত্রের হাইপারসনিক সংস্করণ নিয়ে কাজ করছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রায় ১৫০০ কিলোমিটার দূরত্বে শত্রুকে আঘাত করতে সক্ষম এবং এটি রাশিয়ার জিরকন ক্ষেপণাস্ত্রের মডেলে নির্মিত হতে পারে।

কেন এটি গুরুত্বপূর্ণ?

১. কৌশলগত ক্ষমতা বৃদ্ধি: হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে সহজেই এড়াতে পারে।
২. আঞ্চলিক প্রভাব: চীনের ক্রমবর্ধমান হুমকির বিরুদ্ধে এটি ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করবে।
৩. রপ্তানি সম্ভাবনা: ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ইতিমধ্যেই ফিলিপাইনে রপ্তানি করা হয়েছে। হাইপারসনিক সংস্করণ আন্তর্জাতিক বাজারেও চাহিদা তৈরি করতে পারে।
৪. স্বনির্ভরতা: ভারতীয় প্রতিরক্ষা খাতকে বিদেশি প্রযুক্তি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করতে সহায়ক।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

ভারতের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়নের পাশাপাশি ব্রহ্মোস NG (Next Generation) প্রজেক্টেও কাজ করছে। এটি হালকা ও বেশি ম্যানুভারেবল, যা বহুমুখী ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত। ভারতীয় নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী এবং বিমান বাহিনী এই প্রযুক্তির সুবিধা নিতে পারবে।

ভারতের হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন সামরিক শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রতিরক্ষা শিল্পে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করছে। এই সাফল্য শুধুমাত্র ভারতের প্রযুক্তিগত ক্ষমতার প্রমাণ নয়, বরং এটি দেশের আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক কৌশলগত অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে।

তথ্যসূত্র:

Leave a Reply