কলেজ স্ট্রিটের প্রকাশক ও বই বিক্রেতারা, যাকে প্রায়ই বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইয়ের বাজার হিসেবে মনে করা হয়, এখনও সেই শক থেকে বেরোতে পারছেন না। সেপ্টেম্বর ২৩-এর ভোরে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে পুরো এলাকাটি পানিতে ডুবে যায়। বই, কাগজ, হার্ডবোর্ড এবং অন্যান্য প্রকাশনার উপকরণ পানিতে ভেসে যায়, যা আর উদ্ধার করা যায়নি।
দুর্গাপূজার ছুটির পরে স্বাভাবিক জীবন ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতির বাস্তবতা প্রকাশ্য হতে শুরু করেছে। বেশিরভাগ কর্মী কাজে ফিরে এসেছেন এবং দোকানগুলো পুনরায় ক্ষতির দিকে তাকাচ্ছে। প্রকাশকরা এখন শুধু আর্থিক ক্ষতির হিসাব করছেন না, বরং মানসিক আঘাতও অনুভব করছেন।
Story Highlights:
College Street বই বাজারের ব্যবসায়ীদের মোট ক্ষতি প্রায় ₹2 কোটি।
ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বড় ও ছোট প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান উভয়ই।
Durga Puja-র নতুন প্রকাশিত বইও পানিতে নষ্ট হয়েছে।
Dasgupta & Co. দোকানে ৫২টি শেলফ পানিতে, ২,০০০-এর বেশি বই ক্ষতিগ্রস্ত।
সরকারি প্রতিনিধি এখনও এলাকার ক্ষতি দেখেননি।
পাঠকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থন জানিয়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।
ট্রিদিব চ্যাটার্জি, Publishers & Booksellers Guild-এর প্রতিনিধি, বলেন,
“আমাদের এলাকার সব ব্যবসায়ীর ক্ষতি প্রায় ₹2 কোটি। ক্ষতির মধ্যে রয়েছে বাঁধা বই, কাগজ, কভার জ্যাকেট, হার্ডবোর্ড এবং অন্যান্য বই তৈরির উপকরণ। আমাদের প্রকাশনা সংস্থা Patra Bharati-এর ক্ষতি প্রায় ₹9 লাখ।”
দেয়’স পাবলিশিং-এর সুবঙ্কর দে বলেন,
“আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রায় ₹8-9 লাখ মূল্যের বই হারিয়েছে। তবে এই ক্ষতি আর্থিকের চেয়ে বেশি মানসিক। আগুন ও পানি — এগুলো বইয়ের জন্য মহিষাসুর। আমি আগে কখনও এত জল দেখিনি। ১৯৭৮ সালে বন্যা হয়েছিল, কিন্তু আমি তখন ছোট ছিলাম। এরপর আম্পান ঘূর্ণিঝড়, যা বেশি ঝড়ের মতো ছিল। কিন্তু এই ক্ষতি আলাদা।”
ছোট প্রকাশকরা বিশেষভাবে হতাশ, কারণ Durga Puja-র নতুন বইগুলোই নষ্ট হয়েছে। দীপ প্রকাশনের সিইও সুকন্যা মণ্ডল বলেন,
“আমরা ১,০০০-এর বেশি বই হারিয়েছি। সকাল ১১টার দিকে দোকানে এসে আমি শক অবস্থায় ছিলাম। ক্ষতি হয়ে গেছে, আর কিছু করা যায়নি।” তিনি ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ₹3 লাখ অনুমান করেছেন।
কলকাতার সবচেয়ে পুরনো বইয়ের দোকান Dasgupta & Co.-র আরবিন্দ দাসগুপ্তা বলেন,
“আমাদের দোকানে ৫২টি শেলফ পানিতে ডুবে গেছে। দুর্লভ বই থেকে নথি ও কম্পিউটার সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা পুনরুদ্ধারযোগ্য নয়।”
তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন,
“কোনও সরকারি প্রতিনিধি একবারও Boipara-তে (College Street) আসেননি। শহরের শিক্ষার কেন্দ্রের প্রতি এই আচরণ নিন্দনীয়। College Street শহরের প্রাণশক্তি বহন করে।”
প্রসিদ্ধ লেখক অমর মিত্র রাজ্য সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন,
“এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নত করা হোক এবং নতুন প্রকাশকদের জন্য বিশেষ সহায়তা দেওয়া হোক। আমি শুনেছি, যুব লেখকরা তহবিল সংগ্রহ করে প্রায় ₹5.5 লাখ বিতরণ করেছেন।”
একজন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের গৌরব অধিকারী বলেন,
“পাঠকরা সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থন জানিয়েছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত বই ডিসকাউন্টে কেনার প্রস্তাব রেখেছেন। বাঙালি পাঠক ইংরেজিতে যাচ্ছে — এটি সত্য নয় যদি আপনি এই সমর্থন দেখেন।”
Book Farm-এর অংশীদার সন্তনু ঘোষ বলেন,
“আমাদের প্রকাশনা সংস্থার বই প্রায় ₹1 লাখ মূল্যের হারিয়েছে। বইয়ের দোকান পানিতে ভেসে যাওয়ার চেয়ে ভয়ঙ্কর কিছু হতে পারে না। সিনিয়ররাও বলছেন তারা এরকম কিছু দেখেননি।”
কলেজ স্ট্রিট বই বাজারের এই ক্ষতি শুধু প্রকাশকদের নয়, পাঠকদের জন্যও বড় আঘাত। শহরের শিক্ষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্র এই পানিবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেতে দ্রুত পদক্ষেপের প্রয়োজন।
College Street-এর এই বানভাসি শুধু প্রকাশক ও বই বিক্রেতাদের জন্যই নয়, পুরো কলকাতার পাঠক ও সংস্কৃতি প্রিয়দের জন্য বড় আঘাত। College Street-র বই বাজারের ক্ষতি প্রমাণ করে, শহরের শিক্ষা ও সাহিত্য কেন্দ্রের রক্ষার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। ছোট ও বড় সব প্রকাশক এই বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং Durga Puja-র নতুন বইও পানিতে ভেসে গেছে। College Street-এর পুনরুদ্ধার এবং ভবিষ্যতের জন্য কার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপরিহার্য, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরনের flood damage প্রতিরোধ করা যায়।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো