পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাঞ্চলের তিনটি জেলায় বিশেষত কালো পাথর ও গ্রানাইট খনিতে ধারাবাহিক দুর্ঘটনা ঘটছে। এই ঘটনাগুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের তিন বছরের পুরনো Private Mining Policy দ্রুত কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি করেছে। সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, অবৈধ খনি ও তার সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক প্রভাব রাজস্ব ক্ষতি করছে, স্থানীয় সহিংসতা বাড়াচ্ছে এবং সরকারের ভাবমূর্তিতে বড়সড় ধাক্কা দিচ্ছে।

📌 Story Highlights

  • ফেব্রুয়ারি 10, 2024: নলহাটির নাসিপুর পাথর খনিতে দুর্ঘটনায় দুই শ্রমিকের মৃত্যু

  • অক্টোবর 1, 2024: নলহাটির বাহাদুরপুরে খনি ধসে তিনজনের মৃত্যু

  • সেপ্টেম্বর 12, 2025: বাহাদুরপুরের কাছে অবৈধ কয়লা খনি ধসে ছয়জনের মৃত্যু

  • Birbhum-সহ পশ্চিমবঙ্গের তিন জেলায় অবৈধ খনি নিয়ন্ত্রণে Private Mining Policy কার্যকর

  • নীতিতে নিরাপত্তা, পরিবেশ ছাড়পত্র, দক্ষ শ্রমিক ও নিয়মিত পরিদর্শনের বাধ্যবাধকতা

সরকারি সূত্রের দাবি, পশ্চিমবঙ্গে Private Mining মূলত ব্যক্তিগত জমিতে পাথর ও বালির খনির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় গ্রানাইট ও কালো পাথর দু’ধরনেরই উৎপাদন হয়, আর Birbhum কালো পাথরের প্রধান উৎস। বাড়ি ও রাস্তা তৈরিতে এই পাথরের গুরুত্ব অপরিসীম।

একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন,

“যদিও জেলা প্রশাসনগুলি অভিযান চালায়, চাহিদা ও মুনাফার কারণে অবৈধ ব্যবসায়ীরা ক্রমশ মরিয়া হয়ে উঠছে।”

২০২২ সালে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত Private Mining Policy অনুযায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পরিবেশ ছাড়পত্র, দক্ষ অপারেটর নিয়োগ ও নিয়মিত পরিদর্শন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কিন্তু এই নীতি কার্যকর করতে দেরি হয়েছে কাগজপত্র যাচাই ও আবেদন প্রক্রিয়ার কারণে।

কর্মকর্তাদের ভাষায়,

“নীতির কার্যকর করতে এক বছরেরও বেশি সময় লেগেছে কাগজপত্রের কারণে। আবেদনকারীদের জমির মালিকানার নথি সহ বহু নথি জমা দিতে হয়।”

নথি যাচাইয়ের পর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষা হয়—স্কুল-হাসপাতালের নিকটবর্তীতা বা প্রতিবেশীদের আপত্তি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হয়। এখন সরকার একটি কেন্দ্রীয় পোর্টাল চালু করেছে অনুমোদন প্রক্রিয়া দ্রুত করতে এবং কর্মকর্তাদের আবেদনকারীদের সহায়তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি অভিযোগ তুলেছে, শাসকদলীয় নেতাদের সংশ্লিষ্টতা থাকায় নীতির সাফল্য নিয়ে সন্দেহ রয়ে গেছে।

সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য রামচন্দ্র ডোম বলেন,

“নতুন নীতি অবৈধ খনিকে কাগজে বৈধ করতে পারে, কিন্তু শাসকদলীয় নেতাদের লুঠ বন্ধ করবে না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতারণা।”

বিজেপি মুখপাত্র দেবজিত সরকার অভিযোগ করেন,

“তৃণমূল ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত কোনও নীতি পরিবর্তন অবৈধ খনি রুখতে পারবে না। খনির কিংপিনরা নির্দ্বিধায় সমান্তরাল অর্থনীতি চালাচ্ছে।”

একটি সূত্র জানিয়েছে, গত দেড় বছরে Birbhum-এর অবৈধ খনিতে অন্তত ১৪ জন মারা গিয়েছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার আগেও বহু অবৈধ খনি চলেছে।

নীতির অগ্রগতি

কালো পাথর ও গ্রানাইটের পাশাপাশি ফায়ারক্লে ও চিনা ক্লে খনিও Private Mining Policy-এর আওতায় এসেছে। সরকার প্রায় ৩০০টি আবেদন পেয়েছে এবং প্রায় ১৯০ জনকে লেটার অফ ইন্টেন্ট দিয়েছে। গত কয়েক মাসে ২৫-৩০টি খনি নীতির অধীনে চালু হয়েছে।

একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন,

“সম্পূর্ণভাবে নীতি কার্যকর হলে সরকার বছরে অতিরিক্ত ₹৫০০-₹৬০০ কোটি আয় করবে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।”

অবৈধ খনির কৌশল

একটি সূত্র জানিয়েছে, দালালরা মূলত গরিব, বিশেষত আদিবাসী মানুষের কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি লিজ বা অস্থায়ী চুক্তিতে জমি নেয় এবং সরকারি নিয়ম না মেনে খনন শুরু করে। জমির নথি দরিদ্র মালিকদের নামে থাকায় অবৈধ খনির দায়ভার দালালদের নয়, অথচ মুনাফা তারাই পায়।

নতুন Private Mining Policy-তে সরকার সরাসরি জমির মালিকদের নামেই খনি লাইসেন্স দিচ্ছে।

নীতি সংক্রান্ত নিয়ম

আবেদনকারীর ন্যূনতম এক হেক্টর জমি থাকতে হবে। ছোট জমির মালিকেরা যৌথভাবে আবেদন করতে পারবেন। জমির নথি জমা দেওয়ার পর জেলা শাসকের দপ্তর মালিকানা যাচাই করে পাথরের উপস্থিতি নিশ্চিত করে এবং আবেদনকারীকে লেটার অফ ইন্টেন্ট দেয়।

এরপর কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত সংস্থার সাহায্যে খনন পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে ও পরিবেশ দপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হবে। তারপরই খনি লাইসেন্স দেওয়া হবে।

লাইসেন্স পাওয়ার পর জমির মালিক নিজে খনন করতে পারেন বা কোনও সংস্থা নিয়োগ করতে পারেন, তবে লাইসেন্স তার নামেই থাকায় সমস্ত নিয়ম মেনে কাজ চালানোর দায়ভারও তার।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা

পাথর খনন ঢাল ও স্তর তৈরি করে করতে হবে—যা ধস ঠেকানোর ঢাল হিসেবে কাজ করে।
খনি মালিককে বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে, যিনি অনুমোদিত ক্ষমতা অনুযায়ী বিস্ফোরক ব্যবহার করবেন। সরকার নিয়মিত দক্ষতা যাচাই করবে।

অবৈধ খনিতে অদক্ষ শ্রমিক ও অসাংবিধানিক বিস্ফোরক ব্যবহারের ফলে ধসের ঝুঁকি বাড়ে।
নিরাপত্তা লঙ্ঘনে জরিমানা বা লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে।

Birbhum ফোকাসে

Birbhum রাজ্যের সবচেয়ে বড় কালো পাথরের উৎস, যার চাহিদা সারা দেশেই। জেলা শাসক বিধান রায় জানিয়েছেন,

“আমরা ৭৫টি আবেদন পেয়েছি ও ৫৩ জনকে লেটার অফ ইন্টেন্ট দিয়েছি। অন্তত তিনজন পরিবেশ ছাড়পত্রও পেয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন,

“আমরা পাথর-বেল্টের সরকারি জমিও নিলামে তুলছি। এখন পর্যন্ত ২১টি খনি নিলামে দিয়ে ₹৮০ কোটি আয় হয়েছে।”

শিল্প দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেন,

“বৈধ খনির প্রসার এই পিছিয়ে পড়া অঞ্চলে কর্মসংস্থান আনবে। যেখানে পাথর মজুত থাকে সেখানে কৃষি সম্ভব নয়। ফলে এই জমির মালিকেরা নিজেরাই খনি খুলতে পারেন।”

তিনি যোগ করেন,

“কলকাতা ও অন্যান্য শহুরে অঞ্চলে সরকারি ও বেসরকারি নির্মাণ বাড়ায় এই পাথরের চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে।”

এইভাবে Birbhum-সহ পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলায় Private Mining Policy কার্যকর হলে অবৈধ খনি নিয়ন্ত্রণে আসবে, রাজস্ব বাড়বে এবং স্থানীয় মানুষও কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে—সরকারের এমনই আশা।

Birbhum-সহ পশ্চিমবঙ্গের তিনটি জেলায় চলতে থাকা কালো পাথর ও গ্রানাইট খনির অবৈধ কার্যকলাপ বারবার প্রাণহানি ঘটাচ্ছে এবং রাজ্যের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। এই প্রেক্ষাপটে দ্রুত কার্যকর হওয়া Private Mining Policy একদিকে অবৈধ খনিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে, অন্যদিকে বৈধ খনির মাধ্যমে রাজস্ব ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করছে। নিরাপত্তা, পরিবেশ ছাড়পত্র, দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ ও নিয়মিত পরিদর্শন—নীতির এই বাধ্যবাধকতাগুলি সঠিকভাবে কার্যকর হলে পশ্চিমবঙ্গের পাথর ও বালির খনি ক্ষেত্রে স্থায়িত্ব ও স্বচ্ছতা আসবে। Private Mining Policy কেবল আইনি কাঠামো নয়, বরং অবৈধ খনি রোধ, রাজস্ব বৃদ্ধি ও স্থানীয় মানুষের জীবনরক্ষা—সবদিকেই এটি এখন রাজ্যের জন্য একটি অপরিহার্য নীতি হয়ে উঠেছে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply