২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া RG Kar rape-and-murder ঘটনাটি শুধু একটি অপরাধের খবর ছিল না; এটি মুহূর্তেই দেশজুড়ে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটায়। কলকাতা হয়ে ওঠে সেই ক্ষোভের প্রধান কেন্দ্র, যেখানে মানুষের প্রতিবাদ আর শিল্প একসঙ্গে মিশে গিয়ে নতুন ভাষা তৈরি করে। বিক্ষোভ, দীর্ঘ মিছিল, প্ল্যাকার্ড—সবকিছুর ভিড়ে শহরের রাস্তাগুলি যেন ক্যানভাসে রূপ নেয়।
কলকাতার রাস্তায় শিল্প কেবল সৌন্দর্যের প্রদর্শনী নয়। বরং এটি মানুষের আবেগ, ক্রোধ ও দাবির বহিঃপ্রকাশ। পুজোর আলপনা, দীপাবলির রংগোলি, কলেজের দেওয়ালে স্প্রে পেইন্টিং—সবই একেকটা গল্প বলে। আর সেই গল্পের নতুন অধ্যায় হলো RG Kar rape-and-murder ঘটনার প্রতিবাদে ফুটে ওঠা মুরাল, পোস্টার আর গ্রাফিতি।
📰 STORY HIGHLIGHTS
RG Kar rape-and-murder প্রতিবাদে কলকাতার রাস্তায় মুরাল ও গ্রাফিতি
জনপরিসরকে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন শিল্পীরা
LGBTQIA+, anti-CAA/NRC, climate justice ও Covid-19 ইস্যুতে স্ট্রিট আর্টের সক্রিয় ভূমিকা
লীনা কেজরিওয়ালের MISSING Public Art Project-এর প্রভাব
CPI(M) নেতা দিপসিতা ধর ও অন্যান্য শিল্পীদের বক্তব্যে প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর
বালিগঞ্জের দলিত কুইয়ার ভিজ্যুয়াল আর্টিস্ট আর্চি রায় বললেন,
“আমরা কেবল স্রষ্টা নই, বরং সংগ্রামী। জনপরিসরকে ব্যবহার করা উচিত সচেতনতা আর কর্মের আহ্বান জানানোর জন্য—হোক তা কুইয়ার অধিকার, রাজনীতি বা সামাজিক ইস্যু।”
রায় ২০০৯ সাল থেকে আর্টকে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। Hok Kolorob (২০১৪) থেকে Take Back The Night (২০২৪)—তার যাত্রা নানা মাইলস্টোনে ভরা।
তিনি আরও যোগ করলেন,
“কলকাতার রাস্তাগুলি সেইসব কথা মনে রাখে, যা প্রতিষ্ঠানগুলি প্রায়ই ভুলে যায়। আর্ট শুধু নথিভুক্ত করে না, দাবি তোলে।”
তার মতে, পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ মামলা থেকে শুরু করে anti-NRC, ভীমা কোরেগাঁও, কাশ্মীর ইস্যু—সবক্ষেত্রেই আর্টের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। RG Kar rape-and-murder আন্দোলনের সময় শহরের পথঘাট হয়ে উঠেছিল প্রতিরোধের জীবন্ত চিত্র।
গত দশকে স্ট্রিট আর্ট শুধু anti-CAA/NRC protests, কুইয়ার ও LGBTQIA+ আন্দোলন নয়, জলবায়ু ন্যায়বিচারের দাবি এবং Covid-19 সচেতনতা প্রচারেও প্রাণসঞ্চার করেছে।
শহরের দেয়ালে কালো সিলুয়েট আর পাশে #missing লেখা কি আপনার চোখে পড়েছে? ২০১৪ সালে ফটোগ্রাফার ও সামাজিক শিল্পী লীনা কেজরিওয়াল যৌন পাচারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে শুরু করেছিলেন MISSING Public Art Project।
CPI(M) নেতা দিপসিতা ধর বললেন,
“RG Kar rape-and-murder ইস্যুর সময় যে স্ট্রিট আর্টের উত্থান আমরা দেখেছি, তা এক প্রাচীন ও গৌরবময় ঐতিহ্যের পুনরুত্থান।”
তিনি আরও বলেন,
“মুরাল, পোস্টার, গ্রাফিতির মতো ভিজ্যুয়াল ইন্টারভেনশন জনআলোচনায় পরিবর্তন আনে এবং রাজনৈতিক চাপ তৈরি করে। মৌখিক যোগাযোগ যেখানে নির্দিষ্ট শ্রোতাকে লক্ষ্য করে, স্ট্রিট আর্ট সবার কাছে পৌঁছে যায়। এতে কৌতূহল বাড়ে, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে।”
শিল্পী নীলাঞ্জন ঘোষালও একই সুরে বললেন,
“স্ট্রিট আর্ট বিজ্ঞাপনের অংশ নয়। আমরা কাউকে প্যাম্পলেট পড়তে বলি না। কিন্তু এটি অবচেতনে থেকে যায়। পরবর্তীতে একই কারণে কোনও র্যালি দেখলে মানুষ তা মনে করে মনোযোগ দেয়।”
অভিনেত্রী উমা বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন,
“আমি বহুবার দেখেছি সাধারণ মানুষ কোনও ইস্যু না জেনেই তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করেছেন।”
তিনি ও তাঁর সহশিল্পীরা সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শগত পার্থক্য সত্ত্বেও সবসময় জনগণের কাছ থেকে বিপুল সমর্থন পেয়েছেন।
তিনি আরও স্মৃতিচারণা করলেন,
“২০১৪ সালে Kolkata International Performance Art Festival (KIPAF) প্রচারের সময় আমরা স্ট্রিট আর্টে নির্ভর করেছিলাম। প্রতিক্রিয়া ছিল ইতিবাচক। এমনও হয়েছে যে একদিনেই আমরা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত সংগ্রহ করেছি। যেহেতু আমাদের উদ্যোগ ছিল সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র, নাগরিকদের এই সমর্থনই আমাদেরকে সমাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে ও প্রতিষ্ঠিত নিয়মকে চ্যালেঞ্জ জানাতে উদ্বুদ্ধ করেছে।”
কলকাতার রাস্তায় এই শিল্পই আজ প্রমাণ করছে—প্রতিবাদের ভাষা কেবল শব্দে নয়, রঙে, রেখায় এবং ছবিতেও বেঁচে থাকে। আর সেই ভাষাই RG Kar rape-and-murder ইস্যুর সময় নতুন করে জনমত গড়ে তুলেছে।
RG Kar rape-and-murder ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতার স্ট্রিট আর্ট দেখিয়ে দিল, এই শহরের দেয়াল শুধু সাজসজ্জার জন্য নয়, জনমতের প্রতিধ্বনি তোলারও জায়গা। মুরাল, পোস্টার, গ্রাফিতি—সবকিছু মিলিয়ে শিল্পীরা এক শক্তিশালী ভাষা তৈরি করেছেন যা সাধারণ মানুষের মনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। কুইয়ার অধিকার থেকে শুরু করে anti-CAA/NRC, climate justice, Covid-19 সচেতনতা—সব ক্ষেত্রেই এই অভিব্যক্তি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
আজ স্পষ্ট, RG Kar rape-and-murder কেবল একটি অপরাধ নয়, এটি শিল্প ও প্রতিবাদের মেলবন্ধনে জনমতকে সংগঠিত করার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কলকাতার স্ট্রিট আর্ট প্রমাণ করেছে, রঙ আর রেখার মধ্য দিয়েই সমাজের ন্যায়বিচার আর দায়িত্ববোধের দাবি পৌঁছে দেওয়া যায় সবচেয়ে দ্রুত এবং গভীরভাবে।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো