উত্তর দিনাজপুরের Itahar ব্লকের জাফর আলি তাঁর স্ত্রী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে মঙ্গলবার উঠলেন অটোর চালক আসনে। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাই—পুনরায় গুরগাঁও পৌঁছানো, যেখানে বছর কয়েক ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করছিলেন।

জাফরের সঙ্গে আরও ৩৪টি প্রবাসী পরিবার ছিলেন। এই পরিবারগুলো Itahar ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম—কাপাসিয়া, রাধানগর, কামারডাঙা—থেকে এসেছিল। তাদের ২৫টি অটোর কনভয় শনিবার সকালেই গুরগাঁও পৌঁছায়।

এই প্রবাসীরা জুলাই মাসে বাড়ি ফিরেছিলেন, তখন হরিয়ানা এবং অন্যান্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যে পুলিশি হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। কিছু শ্রমিককে আটক করা হয়েছিল, ভাষা এবং আঞ্চলিক পরিচয়ের কারণে হয়রানি করা হয়েছিল।

তবে পশ্চিমবঙ্গে তাদের জন্য জীবিকা সীমিত ছিল। জাফর আলি জানান, “প্রায় এক মাস বাড়িতে ছিলাম। Itahar-এ যা আয় করতাম, তা গুরগাঁওয়ের আয়ের এক পঞ্চমাংশও নয়। তাই আমরা আবার গুরগাঁও ফিরতে বাধ্য হলাম, যদিও ভয় ছিল পুলিশি হয়রানি হতে পারে।”

মোস্তাক আলম বলেন, “গুরগাঁও পুলিশ সম্প্রতি আমাদের অনেককে ডকুমেন্ট দেখাতে বলেছিল। আমরা সমস্ত কাগজ দেখালেও নির্যাতন করা হয় এবং বাংলাদেশি আখ্যা দেওয়া হয়। তাই ২৫টি অটো নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম।”

যখন বাড়ি ফেরেন, তখন বুঝতে পারলেন Itahar-এ দৈনিক ২০০ টাকার উপার্জনে পরিবার চালানো কঠিন। ফলে পুনরায় গুরগাঁও ফেরার সিদ্ধান্ত নেন।

জাফর আলি আরও বলেন, “আমাদের অনেকেই অটো কিনতে লোন নিয়েছি। মাসিক কিস্তি ১০,০০০ টাকা। Itahar-এ থাকলে কিস্তি দেওয়া অসম্ভব। স্ত্রীরা গুরগাঁওয়ে ডোমেস্টিক হেল্প হিসেবে মাসে ১০,০০০ বা তার বেশি উপার্জন করেন। সন্তানদের স্কুলে পাঠাতে হলে দৈনিক ২০০ টাকায় সংসার চালানো সম্ভব নয়।”

Story Highlights:

  • Itahar ব্লকের ৩৫ পরিবার আবারও গুরগাঁও ফেরার পথে।

  • পুলিশি হস্তক্ষেপ এবং বাংলাদেশি সন্দেহে জুলাই মাসে তারা বাড়ি ফিরেছিল।

  • Itahar-এ দৈনিক আয় ২০০ টাকা, গুরগাঁওয়ে আয় ১,০০০ টাকা।

  • সরকারি Shramashree স্কিমের ৫,০০০ টাকা সহায়তা যথেষ্ট নয়।

মমতা ব্যানার্জি অভিযোগ করেছেন, বিজেপির রাজ্যে বাঙালি ভাষাভাষীদের উপর “Bengali phobia” রয়েছে। তিনি প্রবর্তন করেছেন Shramashree স্কিম। এই স্কিম অনুযায়ী, প্রত্যেক কর্মী মাসে ৫,০০০ টাকা সহায়তা পাবেন এবং গুরগাঁও থেকে ফেরার সময় এককালীন ৫,০০০ টাকা ভ্রমণ ভাতা পাবেন।

তবে আলম বলেন, “৫,০০০ টাকার সহায়তা যথেষ্ট নয়। দৈনিক ২০০ টাকার সঙ্গে মিলিয়ে খরচ চালানো সম্ভব নয়। সহায়তা কবে, কতদিন এবং কীভাবে দেওয়া হবে তা অস্পষ্ট।”

তাদের পথচলা অন্তর্ভুক্ত ছিল—পুণিয়া, মুজফফরপুর, লখনউ, আগ্রা এবং মথুরা। শেষপর্যন্ত তারা পৌঁছান গুরগাঁও।

দুলাল শেখ জানান, “আগামীকাল আমরা কিছু অটো নিয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছি, দেখতে যে পুলিশ ভেরিফিকেশন সমস্যা আছে কি না। সব ঠিক থাকলে সোমবার থেকে আমরা অটো চালানো শুরু করব।”

এবার প্রত্যেকে সঙ্গে নিয়েছেন Itahar পুলিশ স্টেশনের ও স্থানীয় বিধায়কের ভেরিফিকেশন সার্টিফিকেট। শেখ বলেন, “আমরা আশা করি এটি বাংলাদেশি আখ্যা দেওয়ার সমস্যা কমাবে। এই কাগজ আমাদের পরিচয় প্রমাণ করবে।”

Itahar-এর তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন বলেন, “বিজেপি শাসিত রাজ্যে ভাষার কারণে যারা হয়রানির শিকার হয়েছেন, তাঁদের পাশে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আছে। অভিযোগ কেন্দ্র ও একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছি। তবে কেউ বেশি আয়ের জন্য গুরগাঁও ফেরার সিদ্ধান্ত নিলে, সেটি তাদের পছন্দ। আমরা এটি নিয়ে বাধ্য করতে পারি না।”

পরিশেষে বলা যায়, Itahar-এর ৩৫টি পরিবার জীবিকার তাগিদে আবারও গুরগাঁও ফিরেছে। যদিও পুলিশি যাচাই ও হয়রানির আশঙ্কা ছিল, তবুও গুরগাঁওয়ের উপার্জন সম্ভাবনা তাদের মূল প্রাধান্য পেয়েছে। দৈনিক আয়, ঋণের কিস্তি এবং পরিবারের জীবিকা নিশ্চিত করার কারণে এই প্রবাসীরা আবার গুরগাঁও-এ নিজেরা অটো চালাতে শুরু করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, জীবিকার প্রয়োজন অনেক সময় ঝুঁকি নেবার পথও বেছে নিতে বাধ্য করে, এবং গুরগাঁও তাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তার প্রধান কেন্দ্র হিসেবে রয়ে গেছে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply