নিউটাউন থেকে গড়িয়ার সংযোগপথে বর্ষার জল ও ভগ্ন রাস্তা মিলে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজট। সেক্টর V থেকে চিংড়িঘাটা হয়ে এই প্রধান সড়কে প্রতিদিন হাজারো যাত্রীর গতি থেমে যায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। গর্তে ভরা রাস্তা, নিকাশির অভাবে জমে থাকা জল এবং বিকল্প পথের অভাব—সব মিলিয়ে এই পথ এখন সময় ও ধৈর্যের এক কঠিন পরীক্ষা। অস্থায়ী মেরামত সত্ত্বেও সমাধান নেই, বর্ষার অবিরাম বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বাড়ছে, আর শহরের জীবনরেখা যেন প্রতিদিনই ভেঙে পড়ছে।

📌 STORY HIGHLIGHTS

  • সেক্টর V থেকে চিংড়িঘাটা পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী যানজট।

  • বর্ষায় যাত্রার সময় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত বেড়ে যায়।

  • রাস্তার অবস্থা ভগ্নদশা, গর্তে ভরা ও জলে ডোবা।

  • চিংড়িঘাটা একমাত্র নির্গমনপথ, বিকল্প রাস্তাহীনতা।

  • অস্থায়ী মেরামতে সমস্যার মূল সমাধান নেই।

কলকাতার কর্মব্যস্ত সকাল ও সন্ধ্যার সময়, আইটি হাবের দিকে যাতায়াত যেন এক অদ্ভুত সহনশীলতার পরীক্ষা। সেক্টর V থেকে হাজারো অফিসযাত্রীর জন্য চিংড়িঘাটা মোড় হলো একমাত্র নির্গমনপথ—এবং সেই পথই এখন পরিণত হয়েছে যানজটের মহাকেন্দ্রে। এখানে গাড়ির গতি মাপা হয় না কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়, বরং মিনিট প্রতি মিটার হিসাবেই যেন চলছে সব।

Kolkata Traffic Today | New Town to Garia: Heavy rains, broken roads clog  vital Kolkata artery - Telegraph India

সাধারণ দিনে সেক্টর V থেকে চিংড়িঘাটা যেতে কমপক্ষে ৪৫ মিনিট লেগেই যায়,” বললেন এক নিয়মিত যাত্রী, যিনি প্রতিদিন সকাল ৮টায় ওয়াটারসাইড থেকে বাস ধরেন। তিনি হালকা হেসে যোগ করলেন, “বৃষ্টি হলে তো গল্পই আলাদা—তখন সময় কেবল বেড়ে যায় না, ধৈর্যেরও পরীক্ষা হয়।” গত সপ্তাহের টানা বর্ষণ সেই পরীক্ষাকে চরমে তুলেছিল—রাতের শিফট শেষে বাড়ি ফেরার ৪৫ মিনিটের যাত্রা তিন ঘণ্টার দীর্ঘ যুদ্ধে রূপ নিয়েছিল। ঘড়ির কাঁটা দুপুর ছুঁয়েছে, অথচ বাড়ির দোরগোড়ায় পৌঁছনো তখনও বাকি।

নিউটাউন থেকে গড়িয়ার পথে যাতায়াতকারী আইইএমের সহযোগী অধ্যাপক সুবদিত্য মজুমদারের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই। “আমার সন্ধ্যার শাটল সাধারণত দেড় ঘণ্টায় পৌঁছনো উচিত। এখন তিন ঘণ্টা লেগে যায়,” তিনি বললেন, যেন অভ্যস্ত হয়ে গেছেন এই দুর্ভোগে। একটু থেমে যোগ করলেন, “বাইপাস ধাবা, সায়েন্স সিটি, পি.সি. চন্দ্র গার্ডেনস ও হাইল্যান্ড পার্কের সামনে রাস্তার অবস্থা করুণ। হাঁটু-সমান জল, বড় বড় গর্ত—প্রতিটি যাত্রাই হয়ে উঠছে ভয়ের।” তার মতে, নিম্ন-চাপযুক্ত গাড়িগুলোর জন্য এটি একপ্রকার জল-যন্ত্রণাই, কারণ জল ঢুকে যান্ত্রিক ক্ষতি করছে।

Kolkata Traffic Today | New Town to Garia: Heavy rains, broken roads clog  vital Kolkata artery - Telegraph India

এখনকার সমস্যা যেন দ্বিমুখী—যানজট একদিকে, আর রাস্তার ভগ্নদশা অন্যদিকে। সেক্টর V-র প্রধান সড়কগুলো—এসডিএফ মোড় থেকে নিক্কো পার্ক হয়ে চিংড়িঘাটা পর্যন্ত—পিক আওয়ারে যেন গাড়ির এক স্রোতনদী। অনেকে মূল সড়কের বদলে পাশের গলি বেছে নেন, কিন্তু সেখানেও মুক্তি নেই। ফিনটেক সংস্থার অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার সৌরভ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “যেখানে পাঁচ মিনিট লাগা উচিত, সেখানে অর্ধঘণ্টা লেগে যায়। আর বৃষ্টির সময় গর্ত যেন সর্বত্র।” তিনি উল্লেখ করলেন, কিছুটা প্যাচওয়ার্ক মেরামত হয়েছে বটে, কিন্তু পুরো পথ এখনো অচলাবস্থায়।

যাত্রার বাস্তবতা বোঝার জন্য আমরা বেরিয়েছিলাম ইকোস্পেস, নিউটাউন থেকে গড়িয়ার ঢালাই ব্রিজ পর্যন্ত। বিকেল ৫.৩০-এ যাত্রা শুরু করে ৫.৫০-এ বিশ্ববাংলা গেটে পৌঁছলাম। তখনই স্পষ্ট হলো, রাস্তার গর্ত আমাদের সঙ্গী হবে বাকি পথ জুড়ে। নবদিগন্ত ফ্লাইওভারের আগে মূল ও সার্ভিস রোড দু’টোই গর্তে ভরা, ফলে গাড়ির গতি থমকে যাচ্ছিল।

সেক্টর V-এ প্রবেশ করে যেন থেমে গেল সময়। স্ট্রিট ২৭-এ বাস, শাটল আর যাত্রীদের ভিড় গাড়িকে পা ফেলতে দিচ্ছিল না। নিক্কো পার্কের মোড় থেকে চিংড়িঘাটার দিকে যত এগোনো গেল, ততই বাড়ল যানজটের তীব্রতা। বাইপাস ধাবা পেরিয়ে কিছুটা স্বস্তি মিললেও সায়েন্স সিটির কাছেই ফের ঠাসা জ্যাম।

Kolkata Traffic Today | New Town to Garia: Heavy rains, broken roads clog  vital Kolkata artery - Telegraph India

রুবি জেনারেল হাসপাতালের সার্ভিস রোড যেন এক বিপজ্জনক ফাঁদ—গাড়ির সাসপেনশন ভেঙে দেওয়ার মতো গর্তে ভরা। রুবি থেকে অবিশিক্তা পর্যন্ত অবস্থা একই রকম। প্রিন্স আনোয়ার শাহ কানেক্টর পার হয়ে হাইল্যান্ড পার্কের কাছে মেরামতির কারণে রাস্তা সরু হওয়ায় ফের যানজট। পাতুলি ফ্লাইওভারের কাছে পুরনো গর্ত ঢেকে দেওয়া হলেও, কয়েক মিটার পরেই নতুন গর্ত যেন উপহাস করছিল। অবশেষে রাত ৭.৩০-এ ঢালাই ব্রিজে পৌঁছে যাত্রার অবসান ঘটল।

মজুমদার স্পষ্ট করে বললেন, “এটা একদিনের সমস্যা নয়, বরং দীর্ঘস্থায়ী অবস্থা। বর্ষায় নিকাশির অভাবে জল জমে গর্ত ঢেকে রাখে, যা দুই চাকার গাড়ির জন্য মারাত্মক বিপদ।” সাম্প্রতিক মেরামতকে তিনি স্বাগত জানালেও সেটিকে অস্থায়ী সমাধান বলেই মানছেন। সৌরভ চট্টোপাধ্যায়ও একই সুরে বললেন, “পুরো রাস্তা নতুন করে তৈরি করা না হলে এই জ্যাম কখনোই যাবে না।

এদিকে দুর্ঘটনা ও গাড়ির ক্ষতির ঘটনাও বাড়ছে। কেউ বলছেন বাঁকা রিমের কথা, কেউ আবার ফাটা টায়ারের, আর অনেকেই বলছেন ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়া গাড়ির অভ্যন্তরের কথা। কিন্তু সবচেয়ে বড় হতাশা হলো বিকল্প রাস্তাহীনতা—চিংড়িঘাটা এখনও একমাত্র ভরসা।

আগামী এক মাসের বিরতিহীন বর্ষণের সম্ভাবনা নিয়ে অনেকে এখনই চিন্তায়। মজুমদারের কথায়, “এই রাস্তা শুধু অফিস যাওয়া-আসার পথ নয়, এটি জীবনরেখা। আর সেই জীবনরেখা এখন গর্তে ভরা ও জলে ডোবা।

Kolkata Traffic Today | New Town to Garia: Heavy rains, broken roads clog  vital Kolkata artery - Telegraph India

বর্ষার মৌসুম শেষ হলেও নিউটাউন থেকে গড়িয়ার এই সংযোগপথের দুর্দশা সহজে কাটার সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রধান সড়কের ভগ্নদশা, জল জমে থাকা ও যানজট—সব মিলিয়ে এটি এখন কেবল একটি পথ নয়, বরং শহরের শ্বাসনালী, যা প্রতিদিনই অবরুদ্ধ হচ্ছে। বিকল্প রাস্তার অভাব সমস্যাকে আরও গভীর করেছে। অস্থায়ী মেরামত কিছুটা স্বস্তি দিলেও স্থায়ী সমাধান ছাড়া এই পথের দুর্ভোগ কমবে না। জরুরি অবকাঠামো সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ছাড়া কলকাতার এই জীবনরেখা আবার স্বাভাবিক হবে—এমন আশা করা কঠিন।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply