চরম উত্তেজনার মাঝে ওভাল টেস্টের চতুর্থ দিনে ঘটে গেল এক নাটকীয় মোড়। ভারতের পেসার মোহাম্মদ সিরাজ ক্যাচ ধরার পর ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে বাউন্ডারি লাইনে পা ছুঁয়ে ফেলেন। হ্যারি ব্রুক, যিনি তখন ১৯ রানে ব্যাট করছিলেন, সেই ভুলেই পেলেন দ্বিতীয় জীবন। সিরাজের এক পা যেন খুলে দিল ইংল্যান্ডের জয়ের দরজা। এই ছোট্ট ভুলের সুযোগে ব্রুক করেন ৩৭ বলে ঝড়ো হাফ-সেঞ্চুরি এবং রুটের সঙ্গে ১৫০-র বেশি রানের জুটি গড়ে ভারতকে ফেলে দেন প্রবল চাপে।
📌 STORY HIGHLIGHTS
▪️ হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ধরার পর বাউন্ডারি ছুঁয়ে বসেন মোহাম্মদ সিরাজ
▪️ ভারতের কোচ গৌতম গম্ভীর হতাশায় মুখ ঢাকেন ড্রেসিং রুমে
▪️ ক্যাচ ছেড়ে দেওয়ার পর পাল্টা আক্রমণে নামেন ব্রুক
▪️ জো রুটের সঙ্গে ১৫০ রানের জুটি গড়ে ম্যাচ ভারতের হাতছাড়া করেন
▪️ সিরিজে ৩-১ ব্যবধানে জয়ের পথে ইংল্যান্ড
ওভালের বুকে যখন পঞ্চম টেস্টে একরাশ উত্তেজনার আবহে ভাসছিল দুই দল, তখনই যেন হঠাৎ সময় থমকে গেল। হ্যারি ব্রুকের একটি টপ এজ, এক নিখুঁত ক্যাচ—সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু মুহূর্তের ভুলে মোহাম্মদ সিরাজ দিলেন এমন এক উপহার, যার মূল্য ভারতকে হয়তো গিয়ে দিতে হবে গোটা সিরিজ।
রবিবার সকালটা শুরু হয়েছিল ভারতের পক্ষে কিছুটা আশার আলো নিয়ে। ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ৫০/১। দিনের শুরুতেই বেন ডাকেট ও অলি পোপের উইকেট তুলে নিয়ে ভারত কিছুটা স্বস্তিতে ছিল। তবে এরপর নামেন হ্যারি ব্রুক। যে নামটি পরে গোটা চিত্রনাট্যই পাল্টে দেবে, এমনটা কেউ হয়তো ভাবেওনি।
৩৫তম ওভারের প্রথম বল। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ বাউন্সার ছুঁড়লেন। ব্রুক টানতে গিয়ে বলটিকে ঠিকমতো টাইম করতে পারলেন না। টপ এজ হয়ে বল উড়ে যায় লং লেগ অঞ্চলে, যেখানে ছিলেন মোহাম্মদ সিরাজ। তিনি বল হাতে তালুবন্দি করতেই শুরু হয় উদযাপন। কিন্তু ঠিক তখনই ঘটে সেই মহামূল্য ভুল। ভারসাম্য রক্ষা করতে গিয়ে তিনি এক পা রাখেন বাউন্ডারি লাইনে।
“ক্যাচটা নিখুঁত ছিল, তবে বাউন্ডারি লাইনে পা পড়া মানেই ছক্কা। ক্রিকেটের নিয়ম বড় নির্মম।”—চোখের কোনে হতাশা নিয়ে বললেন ধারাভাষ্যকার।
কৃষ্ণ, যিনি বলটি করেছিলেন, ক্যাচ পড়তেই উদযাপন শুরু করেছিলেন। কিন্তু তখনই মুখ থমকে যায় তাঁর। ক্যাচ হয়েও সেটা ছক্কা হয়ে যায়—এমন আঘাত কোনও বোলারের পক্ষেই সহজে সহ্য করা সম্ভব নয়। সিরাজ নিজেও যেন অবিশ্বাসে থমকে যান। বুঝতে পারেননি, কীভাবে এমন ভুল হয়ে গেল!
ক্যামেরা দ্রুত ঘুরে যায় ড্রেসিং রুমের দিকে। সেখানে বসে থাকা গৌতম গম্ভীর, যিনি কিনা এই টেস্ট সিরিজে ভারতের প্রধান কোচ হিসেবে রয়েছেন, তিনি মুখ ঢেকে ফেলেন হতাশায়।
“আমি চোখে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এ ভুলের মূল্য আমরা কতটা চুকোতে চলেছি, তা বুঝে উঠতেই পারছিলাম না,”—সামনের সারিতে বসে থাকা এক ভারতীয় সমর্থকের গলা ধরে আসে।
এই একটি মুহূর্তই যেন বদলে দিল ম্যাচের গতি। হ্যারি ব্রুক দ্বিতীয় জীবন পেয়ে তা কাজে লাগালেন দারুণ ভাবে। আগ্রাসী মেজাজে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন। তাঁর ব্যাটে ঝড় উঠে যায়। সঙ্গে ছিলেন জো রুট। এই দুই ব্যাটার মিলে চতুর্থ উইকেটে গড়ে ফেলেন ১৫০ রানের এক দুরন্ত জুটি।
মাত্র ৩৭ বলে নিজের অর্ধশতক পূর্ণ করেন ব্রুক। এটা ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের পক্ষে তৃতীয় দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি। এর আগেও ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই একই সংখ্যায় হাফ-সেঞ্চুরি করেছিলেন ব্রুক, তবে তাও ছিল একটু আলাদা প্রেক্ষাপটে।
এই টেস্ট সিরিজে ইংল্যান্ড ইতিমধ্যে দু’টি ম্যাচ জিতে এগিয়ে। ভারত জিতেছে একটি। চতুর্থ টেস্টটি হয়েছিল ড্র। ওভালের এই ম্যাচটি জিতলেই ইংল্যান্ড নিশ্চিত করবে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জয়।
এমন এক সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় দল এখন শুধু ফিরে তাকিয়ে ভাবছে—যদি সিরাজ সেই এক পা না ফেলতেন, তাহলে কি আজ চিত্রটা অন্যরকম হতো?
ওভাল টেস্টে মোহাম্মদ সিরাজের সামান্য ভুল যেন ভারতের স্বপ্নে কালো ছায়া ফেলে দিল। যেই ক্যাচটি হতে পারত ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট, সেটিই হয়ে উঠল ইংল্যান্ডের পক্ষে ভাগ্যবদলের সুযোগ। গৌতম গম্ভীরের হতাশ মুখ, সিরাজের নির্বাক প্রতিক্রিয়া—সবকিছুই ইঙ্গিত দেয়, অ্যান্ডারসন-টেন্ডুলকার ট্রফি ভারতের হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা কতটা বাস্তব। ক্রিকেটে একটি মুহূর্তই বদলে দিতে পারে গোটা ফলাফল। আর সেই মুহূর্তের সাক্ষী রইল এই ম্যাচ, যেখানে একটি পা-এর ভুল হয়তো লেখা হয়ে গেল গোটা সিরিজের পরিণতি।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো