বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপটি ক্যানিংয়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করার পর থেকেই কলকাতা সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টিপাত। শহরের বিভিন্ন অংশে জল জমে নাকাল সাধারণ মানুষ। টপসিয়া, গড়িয়া, বেহালা, টালিগঞ্জ ও ইএম বাইপাসে রাস্তা কার্যত জলমগ্ন। দমকা হাওয়া, বিদ্যুৎ চমক ও বজ্রপাত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। সমুদ্র উত্তাল, জারি হয়েছে সতর্কতা। আগামী ৪৮ ঘণ্টা দক্ষিণবঙ্গে আরও ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস। শহর যেন নিম্নচাপের ছায়ায় বন্দি।
📌 STORY HIGHLIGHTS
নিম্নচাপ বৃহস্পতিবার সকাল ৭.৩০–৮.৩০-এর মধ্যে ক্যানিংয়ের কাছে উপকূল অতিক্রম করে
কলকাতা থেকে ১০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করে নিম্নচাপ, যার ফলে শহরজুড়ে ভারী বৃষ্টি
বেহালা, গড়িয়া, ইএম বাইপাস সহ একাধিক এলাকায় জল জমে যানজট
দমকা হাওয়ার বেগ পৌঁছেছে ৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টায়, সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ
দমদম, শহরতলি অঞ্চলও প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত
সমুদ্র উত্তাল, ২৯ জুলাই পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের নিষেধাজ্ঞা
হাওড়া, হুগলি, দুই মেদিনীপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আরও ৪৮ ঘণ্টা ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা
কলকাতা আবারও জলের শহর হয়ে উঠল বৃহস্পতিবার সকালে। নিঃশব্দে আকাশ কালো করে নেমে এলো বৃষ্টি, আর শহরের একাধিক পাড়া মুহূর্তে হারিয়ে গেল জলরাশির নিচে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া নিম্নচাপটি এদিন সকাল ৭.৩০ থেকে ৮.৩০-এর মধ্যে ক্যানিংয়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে।
আবহাওয়ার ভাষায়, এটি কোনও অচেনা দৃশ্য নয়। ভারতের আবহাওয়া দফতরের (IMD) ভাষায়, “এই নিম্নচাপ পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে ঘণ্টায় প্রায় ১৩ কিলোমিটার বেগে অগ্রসর হচ্ছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় এটি গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে চলে যাবে”। কলকাতাও সেই পথের মধ্যেই পড়ে, আর তাই শহরজুড়ে বৃষ্টির চাদরে ঢাকা পড়েছে সকাল থেকেই।
সকাল ৮.৩০ নাগাদ, এই নিম্নচাপটি ছিল শহর থেকে মাত্র ১০০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে। ফলে, বৃষ্টি হওয়াটাই ছিল স্বাভাবিক পরিণতি। কিন্তু সেই বৃষ্টি মুহূর্তে রূপ নেয় জনজীবনের দুর্বিপাকে।
কলকাতার রাস্তাগুলিতে তখন শুরু হয়েছে এক ধরণের অস্থিরতা। শহরের দক্ষিণাংশ—বেহালা, টালিগঞ্জ, গড়িয়া, ইএম বাইপাস, তপসিয়া, এমনকি সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের মতো কেন্দ্রস্থলও—জলের নিচে। যানজট লেগে গিয়েছে নানা মোড়ে, অফিস-যাত্রীরা হয় ঠায় দাঁড়িয়ে, নয়তো জল ঠেলে পেরিয়ে যাচ্ছেন গন্তব্যের দিকে।
IMD-এর বুলেটিন অনুযায়ী, “আজ সকাল থেকে কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে এবং এই বৃষ্টিপাত শুক্রবার ও সপ্তাহান্তেও চলতে পারে”।
বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এসেছে ঝোড়ো হাওয়া। কলকাতা সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় ৫০ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে বইছে দমকা হাওয়া। বজ্রপাত ও বিদ্যুৎ চমক চোখে পড়েছে বারবার। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের তরফ থেকে সতর্কতা জারি হয়েছে।
“নাগরিকদের জলমগ্ন এলাকায় না ঢোকার অনুরোধ করা হয়েছে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ ঝড়ের সময় গাছের নিচে বা বৈদ্যুতিক খুঁটির পাশে না দাঁড়ানোর আবেদন জানানো হয়েছে”, জানিয়েছেন এক পুরসভা আধিকারিক।
শুধু কলকাতা নয়, শহরতলি দমদমও দেখা গেছে ভারী বৃষ্টির প্রভাব। রেললাইন, বাসস্ট্যান্ড বা বাজার—সবজায়গায় জল জমে গেছে অল্প সময়ের মধ্যেই।
এদিকে, সমুদ্রের ওপরেও বিরাজ করছে উত্তাল অবস্থা। মৎস্যজীবীদের জন্য জারি হয়েছে লাল সতর্কতা। “আগামী ২৯ জুলাই পর্যন্ত কোনও মৎস্যজীবীকে সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে”, জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আবহাওয়া দফতর আরও জানাচ্ছে, আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায়—হাওড়া, হুগলি, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনায়—ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে বজ্রবিদ্যুৎ ও ঝোড়ো হাওয়ার সতর্কতাও রয়েছে।
শহরের মানুষ এমন দিনে একটু থেমে যায়। গাড়ির চাকায় ধাক্কা খায় জলরাশি, রিকশার চাকা কাঁপে ট্রামের লাইন ছুঁয়ে, আর ছাতা-পলিথিনে নিজেকে ঢেকে পথে নামেন হাজারো মানুষ। কলকাতার বর্ষা তার চেনা রূপে আবার ফিরে এসেছে—শুধু সঙ্গে এনেছে কিছু বাড়তি বিপর্যয়।
নিম্নচাপের প্রভাবে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কলকাতা সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জেলায় যে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, তা শুধু রাস্তাঘাটকেই নয়, সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনকেও বিপর্যস্ত করে তুলেছে। বেহালা, গড়িয়া, টালিগঞ্জ, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জল জমে যাওয়ায় শহর কার্যত থমকে গেছে। আবহাওয়া দফতর আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আগামী ৪৮ ঘণ্টার জন্য। প্রশাসনের তরফে সতর্কতা জারি থাকলেও, শহরের জলমগ্ন অবস্থাই বলছে—আবহাওয়ার সঙ্গে যুদ্ধের লড়াই কলকাতার কাছে এখনো শেষ হয়নি।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো