রোলস-রয়েসে ₹৭২.৩ লক্ষ বার্ষিক বেতনে নির্বাচিত হয়েছেন বেঙ্গালুরুর রোবোটিক্স ছাত্রী ঋতুপর্ণা কে এস। NEET পরীক্ষায় ব্যর্থতার পর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রবেশ করে সাহস, নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে তৈরি করেছেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সাহ্যাদ্রি কলেজে পড়াকালীন রোলস-রয়েসে আট মাসের ইন্টার্নশিপ শেষ করে তিনি প্রি-প্লেসমেন্ট অফার পান, যা পরে দ্বিগুণ বেতনবৃদ্ধি এনে দেয়। রাতের শিফটে কঠিন প্রকল্প সামলে দক্ষতা প্রমাণ করেন। এখন তিনি রওনা হচ্ছেন রোলস-রয়েসের টেক্সাস জেট ইঞ্জিন বিভাগে, মাত্র ২০ বছর বয়সে। ব্যর্থতা থেকে উঠে দাঁড়ানোর নিখুঁত উদাহরণ।
🌟 স্টোরি হাইলাইটস:
মেডিকেলের স্বপ্ন ভেঙে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পথ বেছে নেওয়া
সাহ্যাদ্রি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রোবোটিক্স ও অটোমেশনে ভর্তির পর প্রযুক্তিতে জড়িয়ে পড়া
আট মাসের রোলস-রয়েস ইন্টার্নশিপে পরিশ্রম ও প্রতিভার সম্মিলন
নাইট শিফটে কাজ করে প্রমাণ করেছেন নিজের দক্ষতা
প্রাথমিক বেতন ছিল ₹৩৯.৬ লক্ষ, যা বেড়ে হয় ₹৭২.৩ লক্ষ
টেক্সাসের রোলস-রয়েস জেট ইঞ্জিন বিভাগে ২০ বছর বয়সে যোগদান
মাঝেমধ্যেই জীবনের পথ ঠিক সেই রাস্তায় নিয়ে যায়, যেটা আগে কখনো কল্পনাতেও ছিল না। স্বপ্নের গন্তব্যে পৌঁছতে যে সবসময় সোজা রাস্তাই লাগে—তা আজ আর মানতে হয় না। বেঙ্গালুরুর কুড়ি বছরের এক মেয়ে, ঋতুপর্ণা কে এস, যার কাহিনি যেন সময়কে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করছে।
মেডিকেল পড়ার স্বপ্নে চোখ রেখেই শুরু করেছিলেন তাঁর উচ্চমাধ্যমিক জীবন। কিন্তু NEET পরীক্ষায় কাঙ্খিত সাফল্য না পাওয়ায় জীবন একটু থমকে গিয়েছিল। তবুও সেখানে দাঁড়িয়েই তিনি ঠিক করলেন—এবার অন্য পথ ধরে হেঁটেই ছুঁয়ে দেখবেন সাফল্যের শিখর। আজ সেই পথের শেষ প্রান্তে রয়েছে রোলস-রয়েস, আর তাঁর হাতে রয়েছে বার্ষিক ₹৭২.৩ লক্ষ টাকার চাকরির নিয়োগপত্র।
একটা পরীক্ষার ব্যর্থতা, আর তারপরের জয়যাত্রা
মেঘলা দুপুরের মতোই ছিল সেই সময়টা। মনের মধ্যে তখন ঝড়—NEET পরীক্ষায় কাঙ্ক্ষিত ফল হয়নি, মেডিকেল কলেজের স্বপ্ন যেন চোখের সামনে হঠাৎ ভেঙে পড়ল। কিন্তু ঋতুপর্ণা থেমে থাকেননি। তিনি নিজের গন্তব্যের দিশা পাল্টালেন। ২০২২ সালে তিনি CET-এর মাধ্যমে সাহ্যাদ্রি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টে রোবোটিক্স ও অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হলেন।
সেখান থেকেই শুরু হয় এক অন্য জার্নি। হাতে-কলমে শেখা, নতুন প্রযুক্তিকে বুঝে নেওয়া, আর সমস্যা সমাধানে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত করা—এই সবকিছুর মাঝেই গড়ে উঠল এক স্বপ্নের ভিত্তি।
রোবটিক্সে হাতেখড়ি, কৃষকদের জন্য প্রযুক্তির প্রয়োগ
প্রথম বড় কাজ ছিল একটি রোবট তৈরির প্রজেক্ট, যা সুপারি চাষিদের কাজে সহায়তা করবে। এই প্রজেক্টের জন্য গোয়ায় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও এনআইটি সুরথকলে একটি গবেষণামূলক দলে কাজ করেন এবং দক্ষিণ কন্নড়ের ডিস্ট্রিক্ট কমিশনার ফেলোশিপে অংশ নেন।
এই সমস্ত অভিজ্ঞতা তৈরি করে তাঁর ভিত। যেন প্রতিটি ধাপ একেকটা ইট, যা মিলিয়ে তৈরি হল ভবিষ্যতের সাফল্যের প্রাসাদ।
রোলস-রয়েসের দরজায় প্রথম নক
ষষ্ঠ সেমিস্টারে পড়াকালীনই রোলস-রয়েসে ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পান ঋতুপর্ণা। আট মাসের দীর্ঘ ইন্টার্নশিপ চলাকালীন, তিনি একদিকে যেমন কঠিন প্রকল্পে রাতের পর রাত কাজ করেছেন, তেমনি অপর দিকে কলেজের পড়াশোনাও সামলেছেন সমানভাবে।
রোলস-রয়েসের তরফে তাঁর পারফরম্যান্স এতটাই নজরকাড়া ছিল, যে ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে প্রি-প্লেসমেন্ট অফার দেওয়া হয়। তখন বেতন ধার্য হয়েছিল ₹৩৯.৬ লক্ষ বার্ষিক।
কিন্তু গল্পটা এখানেই শেষ হয়নি।
২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে তিনি যখন কোম্পানির প্রকল্পে নাইট শিফটে কাজ শুরু করলেন, তখন তাঁর কর্মনিষ্ঠা, সমস্যা সমাধানে তৎপরতা, এবং আন্তর্জাতিক মানের প্রজেক্টে সাফল্য দেখে সংস্থাটি এপ্রিলেই তাঁর বার্ষিক বেতন বাড়িয়ে দেয় ₹৭২.৩ লক্ষে।
“শেখা ও জানার প্রতি আমার প্যাশন অনেক পুরোনো”
LinkedIn প্রোফাইলে তিনি লেখেন:
“আমি রোবোটিক্স ও অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আগ্রহী। নতুন কিছু শেখা, নতুন আইডিয়া তৈরি করা এবং বাস্তব সমস্যার সমাধান দেওয়া আমার ভালো লাগে।”
তিনি আরও লেখেন,
“মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে, প্রেজেন্টেশন দিতে এবং নিজের জ্ঞান অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আমি ভালোবাসি।”
এই কথাগুলো শুধুই আত্মপ্রকাশ নয়, বরং তাঁর যাত্রার প্রতিফলন।
টেক্সাসে নতুন শুরু
বর্তমানে, সপ্তম সেমিস্টার শেষ করে ঋতুপর্ণা প্রস্তুত টেক্সাসে পাড়ি দেওয়ার জন্য। সেখানে রোলস-রয়েসের জেট ইঞ্জিন বিভাগে যোগ দেবেন তিনি। বয়স মাত্র ২০, আর এই বয়সেই তিনি হতে চলেছেন এই বিভাগে কনিষ্ঠতম সদস্যদের একজন।
জীবনে সবকিছু পরিকল্পনামাফিক হয় না—এই সত্যটাই যেন বার বার প্রমাণ করে দিচ্ছে ঋতুপর্ণার কাহিনি। যখন এক দরজা বন্ধ হয়ে যায়, তখন অনেক সময় আরও বড় আর চমকপ্রদ দরজা খুলে যায়, যদি সাহস থাকে সেই পথে হেঁটে যাওয়ার।
এটাই হয়তো আজকের তরুণ প্রজন্মের কাছে সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা—একটা পরাজয় মানেই যাত্রার সমাপ্তি নয়, বরং হতে পারে এক নতুন শুরুর সুর।
মেডিকেল প্রবেশিকায় ব্যর্থ হলেও থেমে থাকেননি ঋতুপর্ণা। ইচ্ছাশক্তি, পরিশ্রম এবং প্রযুক্তির প্রতি ভালোবাসা তাঁকে পৌঁছে দিয়েছে রোলস-রয়েসের মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে। তাঁর এই যাত্রা কেবল ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং আজকের প্রজন্মের কাছে এক অনুপ্রেরণার বার্তা—যে পথ ভেঙে যায়, সেখানেই শুরু হতে পারে নতুন পথচলা। সুযোগের দরজা সবসময় খোলা থাকে, প্রয়োজন শুধু ধৈর্য, মনোযোগ ও সাহসের। ঋতুপর্ণার গল্প সেই সত্যকেই বারবার প্রমাণ করে।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো