কুমোরটুলির প্রতিমাশিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল এ বছর দুর্গাপুজোর প্রস্তুতিতে এনেছেন চমকপ্রদ অভিনবত্ব। মাটির প্রতিমার চোখে তিনি প্রথমবারের মতো বসিয়েছেন আমেরিকান ডায়মন্ড স্টোন, যা আলোয় প্রতিফলিত হয়ে সৃষ্টি করছে জীবন্ত থ্রিডি প্রভাব। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার সংমিশ্রণে গড়া এই প্রতিমা ইতিমধ্যেই আকর্ষণ করেছে একাধিক হাউজিং কমিটি ও ক্লাবকে। করোনাসুর ও ডেল্টাসুরের নির্মাতা হিসেবে পরিচিত পাল এবারও শিল্পে প্রযুক্তির স্পর্শে রচনা করেছেন নতুন কল্পনার দিগন্ত—দেবীর দৃষ্টিতে যুক্ত করেছেন রহস্য, আলো ও অভিজ্ঞান।
📌 STORY HIGHLIGHTS
কুমোরটুলির ইন্দ্রজিৎ পালের নতুন দুর্গামূর্তির চোখে প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছে আমেরিকান ডায়মন্ড স্টোন
আলোয় ঝলমল করে চোখ, সৃষ্টি হচ্ছে জীবন্ত থ্রিডি ইফেক্ট
‘করোনাসুর’ ও ‘ডেল্টাসুর’ প্রতিমার জনক ইন্দ্রজিৎ এই ভাবনার মূল কারিগর
নিউ টাউনের একাধিক পুজো কমিটি ইতিমধ্যেই অর্ডার করেছে
নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘দেবীর দৃষ্টি’তে যুক্ত হয়েছে নান্দনিক স্টোরিটেলিং
কলকাতার কুমোরটুলির এক পুরনো সরু গলির ভিতরে, কাঁচা মাটির ঘ্রাণ আর মাটির প্রতিমার স্পর্শে যখন শহরের উৎসব প্রস্তুতি ধীরে ধীরে চেহারা নিচ্ছে, তখনই নিঃশব্দে এক নতুন ঝলক এনে দিলেন প্রতিমাশিল্পী ইন্দ্রজিৎ পাল। এ বছর তাঁর স্টুডিও থেকে উঠে আসছে এমন এক দুর্গামূর্তি, যার চোখে যুক্ত হয়েছে আমেরিকান ডায়মন্ড স্টোন। কেবল মাটির গঠন আর রঙের তুলিতে নয়, প্রতিমার দৃষ্টিতে এবার ধরা দিচ্ছে এক বৈপ্লবিক আলোর নকশা।
শিল্পীর ভাষায়, “চোখের চার কোণায় ছোট ও বড় AD স্টোন বসানো হয়েছে। মাঝখানে দু’টি ছোট রত্ন, যা আলো পড়লে এক অদ্ভুত ঝিলিক তোলে। প্যান্ডেলের আলোয় যখন এগুলো সঠিক কোণ থেকে আলোয় প্রতিফলিত হবে, তখন মনে হবে যেন প্রতিমার চোখ আপনাকেই দেখছে, প্রাণবন্ত, একেবারে জীবন্ত।”
এই চিন্তা বা ভাবনার বীজ কোনও পূর্বপরিকল্পিত প্যান্ডেল থিম থেকে আসেনি, বরং শুরু হয়েছিল তাঁর নিজস্ব কর্মশালার নীরব এক পরীক্ষায়। নিজেই এক ডামি প্রতিমার চোখে বসিয়েছিলেন কৃত্রিম রত্ন, যেখান থেকে আলো প্রতিফলিত হওয়ার মুহূর্তটি তাঁকে চমকে দেয়।
“একদিন আমি অফিসে একটা মডেল প্রতিমায় এই স্টোনগুলো বসাই। এরপর যারা দেখতে আসে, প্রত্যেকেই ছবি তোলে, ভিডিও করে। চোখের ঝলকটাই যেন ঈশ্বরীয়। তখনই বুঝেছিলাম, এ আমি চালিয়ে নেব,” বলেন শিল্পী।
তবে এটা প্রথম নয়। অতিমারির প্রথম ঢেউয়ে যখন গোটা দেশ আতঙ্কে কাঁপছে, তখনই কুমোরটুলির ঘরোয়া এক ওয়ার্কশপে জন্ম নিয়েছিল ‘করোনাসুর’ — যেখানে মহিষাসুরকে রূপান্তরিত করা হয়েছিল করোনাভাইরাসের প্রতীকীতে। এরপর আসে ‘ডেল্টাসুর’। তখন থেকেই নতুন কিছু ভাবার সাহস খুঁজে পান ইন্দ্রজিৎ।
এই ৫৪ বছর বয়সি শিল্পী ছোটবেলা থেকেই কুমোরটুলির মাটির ধুলোয় বেড়ে ওঠা। ভাইয়ের সঙ্গে একযোগে প্রায় ৪০ বছর ধরে কাজ করলেও, গত ১৫ বছরে নিজের ভাবনায় এবং কল্পনায় প্রতিমা গড়ে তোলার সাহস দেখিয়েছেন তিনি।
তাঁর আরেক পরিচয় আছে — চলচ্চিত্র নির্মাতা। গত বছর তৈরি করেছিলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য ছবি ‘রেড রোজ’, এছাড়াও রয়েছে একাধিক টেলিফিল্মের কাজ। কিন্তু তাঁর নিজের কথায়, মাটি আর প্রতিমা তাঁর কাছে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত।
“এই বছরের AD স্টোন দিয়ে চোখ বানানোটা শুধু ঝলক বা আলংকারিক কিছু নয়,” বলেন ইন্দ্রজিৎ। “এটা এক ধরনের ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং। আমি চাই মানুষ যখন দুর্গার চোখের দিকে তাকাবে, তখন যেন এক অনুভব হয়, দেবী সত্যিই তাদের ওপর নজর রাখছেন। এক ধরনের বিস্ময়, এক প্রগাঢ় অভিভূতি যেন মনে জন্ম নেয়।”
ইতিমধ্যে নিউ টাউনের ইউনিওয়ার্ল্ড সিটি-সহ একাধিক হাউজিং সোসাইটি এবং পুজো কমিটি এই অভিনব ঝলমলে চোখের প্রতিমার জন্য বরাত দিয়েছে। পালের বিশ্বাস, এই নতুনত্ব প্যান্ডেলপ্রেমী দর্শকদের মুগ্ধ করবে।
“মানুষ প্রথমে ভাববে, আলোটা কোথা থেকে আসছে? তারপর যখন দেখবে, কোনও বাহ্যিক আলো নয়, প্রতিমার চোখ থেকেই আলো ফিরে আসছে, তখন সেই মুহূর্তে এক জাদুর আবেশ তৈরি হবে,” বলেন ইন্দ্রজিৎ।
আলোর নকশা, প্রযুক্তির ছোঁয়া ও শিল্পচেতনার মেলবন্ধনে কুমোরটুলির ইন্দ্রজিত পালের এই নতুন উদ্যোগ নিছক প্রতিমা গড়ার চেয়ে অনেক বেশি কিছু। আমেরিকান ডায়মন্ডের প্রতিফলনে দুর্গার চোখে যে জীবন্ত অভিব্যক্তি ফুটে উঠছে, তা একাধারে নান্দনিক, অভিনব ও দর্শনীয়। ঐতিহ্যের ধারাকে অক্ষুণ্ণ রেখে আধুনিক ভাবনাকে মাটির প্রতিমায় রূপ দিয়ে পাল প্রমাণ করলেন, শিল্প কখনও স্থির নয়—তাতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হয় নতুন মাত্রা, নতুন বিস্ময়। এই প্রতিমা শুধুই পূজার উপকরণ নয়, এক নতুন চোখে দেখা শিল্পের প্রতিচ্ছবি।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো