পিকনিক গার্ডেন এলাকার এক যুবকের শরীরে ধরা পড়েছে কলেরা সংক্রমণ। কলকাতা পুরসভার তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে, আক্রান্ত ২৬ বছর বয়সি যুবক বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। পুরসভার দল তাঁর আবাসন ও জলের উৎস থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে। বর্ষার আবহে শহরে ফের জলবাহিত রোগের ছায়া ঘনীভূত। চিকিৎসক ও প্রশাসনের কড়া নজর চলছে ঘটনাকে কেন্দ্র করে। পানীয় জলে দূষণের সম্ভাবনা, নিকাশি ব্যবস্থার ত্রুটি—সবমিলিয়ে শহরের স্বাস্থ্য-সতর্কতায় নতুন করে যোগ হল এই কলেরা-সংক্রান্ত ঘটনা।
📌 STORY HIGHLIGHTS
🔹 পিকনিক গার্ডেনের যুবক আফরোজ খান কলেরায় আক্রান্ত
🔹 পানীয় জলের উৎস থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছে কেএমসি
🔹 আফরোজ ভর্তি আছেন অ্যাপোলো হাসপাতালে, অবস্থার উন্নতি হচ্ছে
🔹 বর্ষাকালে শহরে গড়ে সাত-আটটি কলেরার কেস রিপোর্ট হয়
🔹 পানীয় জলে মল দূষণ কলেরার মূল কারণ
কলকাতার পিকনিক গার্ডেন এলাকায় এক যুবকের শরীরে ধরা পড়েছে কলেরা। ২৬ বছর বয়সি আফরোজ আহমেদ খানের শরীরেই প্রথম এই সংক্রমণের হদিস মিলল। বর্ষাকাল মানেই শহরের নানা প্রান্তে জল জমা, নিকাশি ব্যবস্থায় সমস্যা এবং দূষিত জলের আশঙ্কা। এমন সময়েই এই ঘটনা নতুন করে চিন্তা বাড়িয়েছে কলকাতা পুরসভা (KMC)-কে।
পুরসভার তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আফরোজের আবাসন এবং তাঁর ব্যবহৃত পানীয় জলের উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে জল নমুনা। সব রকম সম্ভাবনা মাথায় রেখে শুরু হয়েছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
এক পুরসভা আধিকারিক বলেন, একরাশ উদ্বেগ নিয়েই,
“বৃহস্পতিবার ওই যুবক অসুস্থ অবস্থায় ভর্তি হন হাসপাতালে। প্রবল বমি ও পাতলা পায়খানার উপসর্গ ছিল তাঁর শরীরে। পরীক্ষা করার পরেই ধরা পড়ে তিনি কলেরায় আক্রান্ত।”
যদিও এখনই আতঙ্কের কিছু নেই বলেই আশ্বস্ত করছেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ওই এলাকার অন্য কোনও বাসিন্দার শরীরে এই সংক্রমণের হদিস পাওয়া যায়নি। তবুও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে কেএমসি-র পক্ষ থেকে নজরদারি আরও কড়া করা হয়েছে।
এই প্রসঙ্গে একটি স্বস্তির খবরও মিলেছে। আফরোজ বর্তমানে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং হাসপাতাল সূত্রে খবর,
“তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল। ধীরে ধীরে সেরে উঠছেন।”
আবহাওয়া পরিবর্তনের এই সময়টিতে শহরে এমন ঘটনা খুব একটা বিরল নয়। বর্ষাকালে জলবাহিত রোগ ছড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যায়। কেএমসি সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের নানা প্রান্ত থেকে মাসে গড়ে সাত থেকে আটটি কলেরার কেস রিপোর্ট হয়।
এক অভিজ্ঞ কেএমসি কর্মকর্তা জানালেন কিছুটা উদ্বিগ্ন কণ্ঠে,
“কলেরা এখন আর বিরল নয়। এমন রিপোর্ট এলেই আমাদের দল পৌঁছে যায় আক্রান্তের বাড়িতে। আমরা জল নমুনা সংগ্রহ করি এবং জলের যোগান ও নিকাশি ব্যবস্থা খতিয়ে দেখি—কোথাও কোনও ফুটো বা লিক রয়েছে কি না, যা থেকে দূষণ ঘটতে পারে।”
বিশেষজ্ঞরাও জানাচ্ছেন, শহরের পুরনো ও জটিল জলের লাইন এবং স্যুয়ারেজ ব্যবস্থার কারণেই এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
পিয়ারলেস হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. চন্দ্রমৌলি ভট্টাচার্য বলেন, একেবারে স্পষ্টভাবে,
“কলেরার পিছনে মূল কারণই হল মল দিয়ে জল দূষণ। যদি স্যুয়ারেজ লাইনে কোনও ফাঁকফোকর থেকে যায় এবং তা পানীয় জলের লাইনের সঙ্গে মিশে যায়, তাহলে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়।”
তিনি আরও জানান, বড়দের ডায়ারিয়ার ক্ষেত্রে Biofire gastrointestinal টেস্ট করে দ্রুত কলেরার উপস্থিতি নির্ণয় করা সম্ভব।
আফরোজের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁর কোনও সাম্প্রতিক ভ্রমণের ইতিহাস নেই।
তাঁরা জানান,
“বাড়ির খাবার খান আফরোজ, জল পরিশোধক ব্যবহার করেন এবং অন্যান্য কাজে কেএমসি-র পাইপ লাইনের জল ব্যবহার করা হয়।”
পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ তাই পরিস্থিতি বিবেচনা করে জলের ক্লোরিনের মাত্রা বাড়ানোর বিষয়েও উদ্যোগী হয়েছে।
পুরসভা সূত্র জানিয়েছে,
“কলেরার কোনও কেস রিপোর্ট হলে আমরা দ্রুত জলের যোগান বিভাগকে জানাই, যাতে প্রয়োজনে ক্লোরিনেশনের মাত্রা বাড়ানো যায়।”
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে শহরের জলের মান ও পরিকাঠামোর প্রশ্ন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে,
“কলেরা একটি মারাত্মক ডায়ারিয়াজনিত রোগ, যা সময়মতো চিকিৎসা না হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রাণঘাতী হতে পারে।”
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আরও জানায়,
“কলেরা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজন জোরদার নজরদারি, সুষ্ঠু জলের যোগান ও পয়ঃপ্রণালীর ব্যবস্থা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, গুণগত চিকিৎসা পরিষেবা এবং টিকাকরণ কর্মসূচি।”
পিকনিক গার্ডেনের এই ঘটনা হয়তো একক ঘটনা হিসেবে ধরা পড়েছে, কিন্তু এর পিছনে রয়েছে বড় এক স্বাস্থ্য সতর্কতার বার্তা। নগরজীবনে পরিকাঠামোগত ত্রুটি থাকলে যে কোনও মুহূর্তে সেগুলি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে—এই ঘটনাই যেন আবার তা স্মরণ করিয়ে দিল।
পিকনিক গার্ডেনে কলেরায় আক্রান্ত এক যুবকের খবরে শহরজুড়ে সতর্কতা বেড়েছে। পুরসভা জল ও নিকাশি পরিকাঠামো খতিয়ে দেখতে তৎপর হয়েছে, পাশাপাশি জল বিশুদ্ধিকরণেও নেওয়া হয়েছে পদক্ষেপ। বর্ষাকালে কলেরা শহরের জন্য নতুন নয়, তবে কসবা কাণ্ডের তাপে যখন গোটা কলকাতা উত্তাল, ঠিক সেই সময়েই এই স্বাস্থ্যজনিত ঘটনাটি প্রশাসনের দৃষ্টি ফেরালো অন্য এক জরুরি দিকের দিকে। নাগরিকদের সচেতন থাকা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাই এখন প্রধান হাতিয়ার। জলই জীবন—তবে তা বিশুদ্ধ না হলে, বিপদ কতটা গভীর হতে পারে, তা ফের একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল এই ঘটনা।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো