ভ্লাদিমির পুতিনকে ঘিরে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ দাবি থেকে সরলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ হয়ে তিনি অবশেষে স্বীকার করলেন—রুশ নেতা তাঁর আশার তুলনায় কঠিন ও জটিল। সাম্প্রতিক কিয়েভ হামলার পর আমেরিকার অস্ত্র সহায়তা বন্ধ করে ফের চালু করার সিদ্ধান্তে দেখা গেল এক নাটকীয় মোড়। পুতিনকে নিয়ে ট্রাম্পের ভাষা এখন তীব্র, আর যুদ্ধ থামানোর একদিনের প্রতিশ্রুতি আজ প্রশ্নবিদ্ধ। আন্তর্জাতিক মহলে এই সম্পর্কের ভাঙন নতুন করে আলোড়ন তুলেছে মার্কিন কূটনীতি ও যুদ্ধনীতি ঘিরে।
🔴 STORY HIGHLIGHTS
ট্রাম্প বলেন, পুতিন নিয়ে তার ধারণা ছিল বিভ্রান্তিকর
টেলিফোন আলোচনার পরই কিয়েভে বিধ্বংসী হামলা
ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, “পুতিন অনেক বাজে কথা বলছে”
ইউক্রেনের অস্ত্র সহায়তা স্থগিত করে আবার চালু করা হয়
২০২৩ সালে একদিনে যুদ্ধ বন্ধের দাবি, এখন পেরিয়েছে ৮৫৬ দিন
ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা বারবার প্রচার করে আসা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অবশেষে স্বীকার করেছেন—রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে তার পুরনো বিশ্বাস ভুল ছিল এবং ইউক্রেন যুদ্ধ থামানোর ক্ষেত্রে তার কোনও কার্যকর প্রভাব নেই। এটি নিছক একটি স্বীকারোক্তি নয়—বরং আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির এক চমকপ্রদ মোড় বদলের ইঙ্গিত।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিবর্তন কেবল কূটনীতির অঙ্গনে নয়, ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ কৌশলের দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষত, এমন এক সময়ে যখন ইউক্রেন রাজধানী কিয়েভে রাশিয়ার লাগাতার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চলেছে—যার মাত্রা ছিল সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। এবং ঠিক এই ঘটনার আগেই, ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে হয়েছিল ফোনালাপ। বিষয় ছিল যুদ্ধবিরতি এবং শান্তিচুক্তি।
টেলিফোনে সংলাপের জবাবে রাশিয়া যখন সাত ঘণ্টার মধ্যেই ৫৩৯টি ড্রোন ও ১১টি ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে কিয়েভে আঘাত হানে, তখন সেই আলোচনা কতটা ফলপ্রসূ হয়েছে—তা নিয়ে আর প্রশ্ন থাকে না। আমেরিকার রাজনৈতিক মহল ও আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক বিশ্লেষকেরা একে দেখছেন ট্রাম্প-পুতিন সম্পর্কের “মিথের ভাঙন” হিসেবে।
এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া ছিল আগের তুলনায় অস্বাভাবিকভাবে কঠোর। ৮ জুলাই এক টেলিভিশন সম্প্রচারিত কেবিনেট বৈঠকে তিনি বলেন, “ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন নিয়ে অনেক বাজে কথা বলছে।” এমন স্পষ্ট ভাষায় আগে কখনও তাকে বলতে শোনা যায়নি।
তবে এই অসন্তোষ কেবল শব্দের স্তরে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সম্প্রতি ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ এক পোস্টে ট্রাম্প লেখেন, “রুশ বাহিনীর কিয়েভে হামলা অপ্রয়োজনীয় এবং সময়টা খুবই খারাপ। ভ্লাদিমির, থামো! সপ্তাহে পাঁচ হাজার সৈন্য মারা যাচ্ছে। শান্তিচুক্তি করো!” কিন্তু বাস্তবতা হলো, ট্রাম্প এমন কোনও কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেননি, যা রাশিয়াকে থামতে বাধ্য করতে পারত। তার আগের প্রতিশ্রুতি—রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা—এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে, পেন্টাগন সূত্রে ফাঁস হওয়া খবর অনুযায়ী, আমেরিকা ইউক্রেনে পাঠানোর কথা থাকা প্যাট্রিয়ট এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং হাজার হাজার হাউইটজার গোলা সরবরাহ স্থগিত করেছে। বিষয়টি ট্রাম্প-ঘনিষ্ঠ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দৃষ্টিতেও এসেছে সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ৩ জুলাই পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে এই সিদ্ধান্তকে “একটি শত্রুতামূলক পদক্ষেপ, যা কার্যত পুতিনের পক্ষে যায়” বলে উল্লেখ করা হয়।
এই মুহূর্তে ট্রাম্পের উপর চাপে রয়েছেন তার নিজ দলের অংশ—MAGA অনুসারীরা—যারা তাকে ভোট দিয়েছেন এই বিশ্বাসে যে তিনি আমেরিকাকে বিদেশি যুদ্ধে জড়াবে না। ফলে অস্ত্র সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত ব্যাকফায়ার করে।
তিন দিন যেতে না যেতেই ট্রাম্প আবার নিজের অবস্থান বদলান। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে এক বৈঠকের ফাঁকে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “ওরা খুব মার খাচ্ছে। ওদের আত্মরক্ষা করতে হবে। আমাদের আরও অস্ত্র পাঠাতে হবে।”
বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। যুদ্ধের শুরুর দিকে ট্রাম্প সরাসরি ইউক্রেনকে দায়ী করেছিলেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের জন্য। কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন ইউক্রেনের ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা। তার সহযোগীরাও রাশিয়ান প্রচারণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কথা বলেছিলেন।
২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে হোয়াইট হাউস বৈঠক তুমুল বাদানুবাদে রূপ নেয়। এমনকি যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন বাতিল হয়ে যায় এবং জেলেনস্কিকে অফিস ছাড়তে বলা হয়। যদিও পরে দুটি দেশের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ চুক্তি হয়, যা সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে।
বর্তমানে, ট্রাম্প প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন—পুতিন এখন আর আগের মতো সহজ অংশীদার নন। ন্যাটো বৈঠকে তিনি বলেছিলেন, “পুতিন শান্তি প্রতিষ্ঠায় অনেক বেশি জটিল আচরণ করছে।” অথচ এক সময় তিনি বলেছিলেন, “আমি অফিসে ঢোকার আগেই যুদ্ধ শেষ করব। একদিনের বেশি লাগবে না।” সেই বক্তব্য ছিল ২০২৩ সালের ৫ মার্চে। আজ তার থেকে পেরিয়ে গেছে ৮৫৬ দিন। আর কতদিন লাগবে যুদ্ধ শেষ হতে—সে প্রশ্নই এখন ঘুরছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে।
এই বাস্তবতাই বোঝায়, ব্যক্তিগত সম্পর্ক দিয়ে যুদ্ধ থামানো যায় না। বাস্তব কূটনীতি এবং শক্ত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া যুদ্ধক্ষেত্রে শান্তির সম্ভাবনা দূরের আলো হয়ে থাকে।
ভ্রান্ত বিশ্বাস ও অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসের পথ ধরে শুরু হওয়া ট্রাম্প-পুতিন সম্পর্ক আজ এক কঠিন সত্যের মুখোমুখি। যুদ্ধ থামানোর সহজ প্রতিশ্রুতি এখন জটিল বাস্তবতার সামনে নিষ্প্রভ। ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আমেরিকার নীতিগত টানাপোড়েন, বন্ধুত্বের পর্দা সরে যাওয়া এবং রুশ আগ্রাসনের মুখে অস্ত্র সহায়তার পুনর্ব্যবস্থা—সব মিলিয়ে স্পষ্ট, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কেবল ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে না। বাস্তব সিদ্ধান্ত ও দায়িত্বশীল নেতৃত্বই পারে সংকটে পথ দেখাতে।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো