বেগুনের দাম ছুঁয়েছে আকাশ, কলকাতায় সবজির ঝুলিতে নেমেছে টানাপোড়েন

কলকাতার বাজারে সবজির দামে লেগেছে আগুন। বেগুনের দাম কেজি প্রতি ১৫০-২০০ টাকা ছুঁয়ে মধ্যবিত্তের ঘাম ছুটিয়েছে। টমেটো, লঙ্কা, লাউ, পটল, করোলা, ঝিঙ্গে—সবজির তালিকায় লেগেছে উর্ধ্বগতি। বর্ষায় জলমগ্ন মাঠে উৎপাদন কম, দক্ষিণ ভারত থেকে আমদানি হওয়ায় পরিবহন খরচে বেড়েছে দাম। ফুরিয়ে আসছে মরসুম, চাহিদা বাড়ছে—সব মিলিয়ে সবজির থালায় পড়েছে বড় ধাক্কা। বাজারে বেড়েছে অস্থিরতা, টিকছে না পকেটের হিসেব। এই মূল্যবৃদ্ধির রহস্য নিয়েই রিপোর্ট।’

📌 STORY HIGHLIGHTS

🔸 বেগুন কেজি প্রতি ১৫০–২০০ টাকা
🔸 লাউ ২৫–৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫–৫০ টাকা প্রতি পিস
🔸 শশা এখন ৭০–৮০ টাকা প্রতি কেজি
🔸 পটল ২৫–৩০ টাকা থেকে বেড়ে ৫০ টাকা প্রতি কেজি
🔸 করোলা ও ঝিঙ্গে ৮০ টাকা প্রতি কেজি
🔸 মূল কারণ: মাঠে জল জমে ফসল নষ্ট, মরসুমের ফুরোনো, দক্ষিণ ভারত থেকে আমদানি

কলকাতার সবজির বাজারে সাধারণ মানুষকে নতুন করে ধাক্কা খেতে হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যাচ্ছে, একাধিক সবজির দাম ক্রমশ আকাশছোঁয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বেগুন, টমেটো, কাঁচা লঙ্কা, লাউ, ঝিঙ্গে, করোলা ও পটলের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজির দাম গত এক সপ্তাহে একলাফে অনেকটাই বেড়ে গেছে। ফলে সাধারণ মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের রোজকার বাজারে নাভিশ্বাস উঠেছে।

বর্তমানে বেগুনের দাম কেজি প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। শুধু বেগুনই নয়, অন্যান্য সবজির দামও যেন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

মানিকতলা বাজারে সবজি বিক্রি করছেন এমন এক বিক্রেতা জানিয়েছেন,
“লাউ আগে যেখানে ২৫ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হত, এখন সেটাই বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় প্রতি পিস। শশার দামও ৪০–৫০ টাকা থেকে বেড়ে এখন ৭০–৮০ টাকায় পৌঁছেছে।”

তিনি আরও বলেন,
“পটল সাধারণত যেটা ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজিতে পাওয়া যেত, এখন সেটাই ৫০ টাকা কেজি। করোলা বা ঝিঙ্গের মতো সবজিও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে।”

হাতিবাগান বাজারে দেখা গেল বেশ কয়েকজন ক্রেতা দাম শুনে থমকে গেছেন। তাঁদের মধ্যে একজন, তপস দত্ত, জানালেন,
“বেগুন এখন কেনা সম্ভব নয় বললেই চলে। আগের মতো এখন আর বাজার থেকে ১ কেজি বেগুন তোলা যাচ্ছে না। দাম এতটাই বেড়েছে যে শুধুমাত্র প্রয়োজন হলে তবেই নিচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন,
“অন্যান্য সবজির দাম এখনো কিছুটা সহনীয়, কিন্তু বেগুন তো একেবারেই সাধ্যের বাইরে চলে গেছে।”

বাজারের অভ্যন্তরীণ সরবরাহ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, প্রতি বছর বর্ষার সময় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। খেতে জল জমে ফসলের ক্ষতি হয়। ফলে সরবরাহ কমে যায়। এই পরিস্থিতিতে চাহিদা অনুযায়ী যোগান নিশ্চিত করা যায় না, ফলে দাম চড়ে যায় স্বাভাবিকভাবেই।

বাগুইআটি বাজারের এক সবজি বিক্রেতা জানালেন,
“বেগুন এক প্রকার গ্রীষ্মকালীন ফসল, যেটা সাধারণত zaid মৌসুমে পাওয়া যায়। এখন এই ফসলের মৌসুম শেষ। ফলে এটা স্বাভাবিকভাবেই বাজারে কম আসছে।”

তিনি যোগ করেন,
“এই সময়ে বেগুন ও টমেটোর মতো সবজি দক্ষিণ ভারত থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। সেখানে পরিবহণ খরচ ও চাহিদা বেশি থাকায় দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।”

গৃহবধূ শিখা রাওয়াত, যিনি সাধারণত বিজয়গড় বাজার থেকে সবজি কেনেন, বললেন,
“আমি আগেও বাজারে গেলে এক–দুই কেজি বেগুন নিয়ে আসতাম। কিন্তু এখন বেগুনের দামের জন্য মাত্র ৫০০ গ্রামই নিতে পারছি। এত বেশি দামে কেনা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।”

সবজির বাজার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এমন এক বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ কোলে জানালেন,
“এই সময়টা মূলত এই ধরণের সবজির জন্য মরসুমের শেষ পর্যায়। ফলে যা কিছু বাজারে আসছে, তা অবশিষ্ট ফসল। সেজন্যই দাম বেশি রাখা হচ্ছে।”

তিনি আরও ব্যাখ্যা করেন,
“পশ্চিমবঙ্গের খেতগুলিতে এই সময় জল জমে যায়। ফলে চাষের ক্ষতি হয়, এবং সেই প্রভাব সরাসরি পড়ে শহরের বাজারে। এই চিত্র আমরা প্রতি বছরই দেখি। এই অবস্থা সাধারণত এক–দু’মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তারপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে।”

সব মিলিয়ে বলা যায়, বর্ষা যতদিন স্থায়ী হবে, ততদিন সবজির বাজারে এই চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কলকাতাবাসীর পাতে সবজি তুলতে গেলে আপাতত বাজেট বাড়াতেই হবে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply