অমিতাভ বচ্চনের অভিনয়জীবনে ‘জঞ্জীর’ নামক ছবিটি এক অলৌকিক মোড়। টানা ১৬টি ব্যর্থতার পর এই সিনেমাই তার ভাগ্য ফেরায়। সালিম-জাভেদ রচিত চিত্রনাট্যে, প্রকাশ মেহরার পরিচালনায় ও জয়া ভাদুড়ীর সুপারিশে জন্ম নেয় বলিউডের ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’। দিলীপ কুমার, ধর্মেন্দ্র, দেব আনন্দ, রাজকুমার প্রত্যাখ্যান করেন এই চরিত্র, ভাগ্য খুলে যায় অমিতাভের। প্রবীণ অভিনেতা রাজা মুরাদ এই প্রসঙ্গে বলেন, সাফল্যে ৯০% নির্ভর করে ভাগ্যের উপর। সিনেমা, কাকতাল না নিয়তি? বলিউডপিয়াসীদের জন্য রইল সেই উত্তাল ইতিহাসের দুলে ওঠা গল্প।
📌 STORY HIGHLIGHTS READ BOX:
‘জঞ্জীর’ ছিল অমিতাভ বচ্চনের কেরিয়ারের মোড় ঘোরানো সিনেমা
‘দুনিয়া কা মেলা’ থেকে বাদ পড়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন শেষ হয়ে গেলেন
১৬টি ফ্লপ ছবির পরেও প্রযোজক-পরিচালকের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল
‘জঞ্জীর’-এর মূল চরিত্র ফিরিয়ে দিয়েছিলেন একে একে দিলীপ কুমার, ধর্মেন্দ্র, দেব আনন্দ, রাজকুমার
শেষমেশ জয়া ভাদুড়ীর সুপারিশে বেছে নেওয়া হয় অমিতাভকে
রাজা মুরাদের মন্তব্য: “সাফল্যে ৯০% কাজ করে ভাগ্য”
বলিউডের ইতিহাসে কিছু ছবি আছে, যেগুলি শুধু একটি অভিনেতার কেরিয়ারের মোড় ঘোরায় না, গোটা ইন্ডাস্ট্রির গতিপথও পাল্টে দেয়। তেমনই একটি সিনেমা ১৯৭৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘জঞ্জীর’। এই ছবি শুধু অমিতাভ বচ্চনের জন্য নয়, সালিম-জাভেদ, প্রকাশ মেহরা, এমনকি বলিউডের মূলধারার বর্ণনাতেও এক অনন্য অধ্যায়। একদিকে যেমন এটি ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ ইমেজের সূচনা করে, অন্যদিকে অমিতাভ বচ্চনের পরপর ১৬টি ফ্লপ ছবি পেরিয়ে এক দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্পও তৈরি করে। তবে এই সাফল্যের পিছনে কি শুধুই প্রতিভা? নাকি ভাগ্যের একটা বড় ভূমিকা ছিল? সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে এই নিয়েই মুখ খুলেছেন প্রবীণ অভিনেতা রাজা মুরাদ।
রাজা মুরাদ সম্প্রতি ‘দ্য ফিল্মি চর্চা’ নামের এক বিনোদনমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “এই ইন্ডাস্ট্রিতে শুধু ট্যালেন্ট বা পরিশ্রম দিয়ে সব সম্ভব নয়। ভাগ্যের একটা বিশাল ভূমিকা থাকে। অনেকেই দিনরাত খেটে যায়, কিন্তু শেষমেশ সাফল্য মেলে না। আবার কেউ কেউ ঠিক সময় ঠিক জায়গায় পৌঁছে গিয়ে ইতিহাস গড়ে ফেলে।”
উদাহরণ হিসেবে তিনি সরাসরি অমিতাভ বচ্চনের কেরিয়ারকে টেনে আনেন। মুরাদ জানান, “‘দুনিয়া কা মেলা’ নামের একটি ছবি থেকে অমিতাভকে বাদ দিয়ে নেওয়া হয়েছিল সঞ্জয় খানকে। তখন তার ১৬টি ছবি ব্যর্থ। ডিস্ট্রিবিউটররাও একপ্রকার ঘোষণাই করে দিয়েছিল, ‘ওকে নিলে সিনেমা হলে কেউ যাবে না।’ তখন সত্যিই যেন সব দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যরেখা বদলাতে খুব বেশি সময় লাগে না। ঠিক পরের পর্বেই এল ‘জঞ্জীর’।”
এই সিনেমার নির্মাতা প্রকাশ মেহরা প্রথমে ভাবেন দিলীপ কুমারকে দিয়ে এই হিরো-কেন্দ্রিক কাহিনিটি করাবেন। সেই প্রস্তাব যান ধর্মেন্দ্র, দেব আনন্দ ও রাজকুমারের কাছেও। কিন্তু প্রত্যেকে কোনও না কোনও কারণে ছবিটি ফিরিয়ে দেন। সেটাও যেন এক অদ্ভুত ভাগ্যচক্র। এমন এক স্ক্রিপ্ট, যা পরে কাল্ট ক্লাসিকে পরিণত হয়, তখন কেউ নিতে চায়নি। ঠিক সেই সময়েই সামনে আসেন জয়া ভাদুড়ী। তখনও তারা বিবাহিত নন। জয়া নিজের বিশ্বাস থেকে বলেন, “অমিতাভকে নেওয়া যাক।” নিরুপায় প্রকাশ মেহরাও রাজি হন। সেই সিদ্ধান্তই আজ ইতিহাস।
‘জঞ্জীর’ ছবিটি কেবল একটি ছবি নয়, একটি সময়ের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এক সৎ পুলিশ অফিসার বিজয়, যার ছোটবেলার ট্রমা তাকে তাড়া করে ফেরে, যে সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে একা লড়াই চালায় — এই চরিত্র হয়ে ওঠে মধ্যবিত্ত ভারতীয় দর্শকের প্রতিচ্ছবি। ছবিতে প্রানের ‘শের খান’ চরিত্র, তার পাঠানী পোশাক, তার চরিত্রগত সম্মানবোধ — সবই মিশে যায় এক অপরাজেয় বন্ধুত্বের গল্পে।
ছবির সংলাপও সময়কে ছাড়িয়ে যায়। “এটা পুলিশ স্টেশন, তোমার বাপের বাড়ি নয়”— আজও এই সংলাপ বললেই মনে পড়ে যায় ‘জঞ্জীর’-এর দৃশ্য। সালিম-জাভেদের চিত্রনাট্যও তখন থেকেই বলিউডে লেখকদের গুরুত্ব বাড়িয়ে দেয়।
রাজা মুরাদ এ প্রসঙ্গে বলেন, “সবাই অমিতাভের মতো সাফল্য চায়, কিন্তু অনেকেই জানে না, সেই সাফল্যের পিছনে একটা অদৃশ্য শক্তি কাজ করে। কেউ যখন হাল ছেড়ে দেয় না, তখন ভাগ্য হয়তো একবার ঠিকই তার পাশে দাঁড়ায়।”
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো