ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সংসদে প্রথমবারের মতো ভাষণ দিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ঐতিহাসিক রেড হাউসে দাঁড়িয়ে তিনি দুই দেশের গণতন্ত্র, নারী নেতৃত্ব, ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের অবদান ও গ্লোবাল সাউথের অগ্রাধিকারের কথা বলেন। বন্ধুত্বের মিষ্টি সুরে মোড়ানো এই ভাষণে উঠে এল সন্ত্রাসবিরোধী কণ্ঠ, বিশ্বব্যবস্থার সংস্কারের দাবি এবং সংস্কৃতি ও ক্রীড়ায় দুই দেশের মিলনের বার্তা। দেশের সর্বোচ্চ সম্মান পেয়ে মোদী উৎসর্গ করলেন দুই জাতির চিরন্তন সম্পর্ককে। এই হৃদয়ছোঁয়া ভাষণ রাজনীতির গাম্ভীর্যের মধ্যেও এনে দিল মধুর আবেগের এক ছোঁয়া।

📌 স্টোরি হাইলাইটস

  • প্রধানমন্ত্রী মোদীর রেড হাউসে প্রথম ভাষণ

  • ভারত-ত্রিনিদাদ ঐতিহাসিক সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন

  • নারীনেতৃত্ব ও গণতন্ত্র নিয়ে বক্তব্য

  • সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান

  • গ্লোবাল সাউথকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি

  • ক্রিকেট ও সংস্কৃতির মাধ্যমে দুই দেশের মেলবন্ধন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিদেশ সফরের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় রচিত হল ত্রিনিদাদ ও টোবাগোয়। রেড হাউস নামক ঐতিহাসিক ভবনে দাঁড়িয়ে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সংসদের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য রেখে তিনি এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। ইতিহাসের পাতা ওলটালে বোঝা যায়, এর আগে কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী এই ভবনে দাঁড়িয়ে এমন সম্মানজনক ভাষণ দেননি।

রেড হাউস—ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর রাজনীতির প্রতীক হয়ে ওঠা এক ভবন। এক সময়ের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাক্ষী এই ভবনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী যখন কথা বলছিলেন, তখন তার কণ্ঠে ছিল আবেগ, বক্তব্যে ছিল দৃষ্টিভঙ্গি এবং বার্তায় ছিল এক গভীর বন্ধনের ছোঁয়া।

রেড হাউসে প্রথম ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী বলেন:
“আমি ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এই রেড হাউসে বক্তব্য রাখতে পেরে সম্মানিত ও বিনীত। এই ঐতিহাসিক ভবন ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর মানুষের সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের প্রতীক।”

এই ভবনের রাজনীতি ও সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা দীর্ঘ ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে তাঁর বক্তব্য হয়ে উঠেছিল এক স্মরণীয় মুহূর্ত। করতালি দিয়ে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সাংসদরা তাঁর বক্তব্যকে স্বাগত জানান।

দুই দেশের গণতন্ত্র এবং ঐতিহ্যের সংযোগ

প্রধানমন্ত্রী বলেন:
“উভয় দেশ ঔপনিবেশিক ইতিহাস থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেদের হাতে গড়েছে। সাহস দিয়ে আমরা ইতিহাস লিখেছি, গণতন্ত্র দিয়ে তা রক্ষা করেছি।”

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্র ভারতীয়দের কাছে কেবল একটি শাসনব্যবস্থা নয়, এটি হাজার বছরের ঐতিহ্যের অংশ। এই ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে তিনি সংসদ ভবনের স্পিকারের চেয়ারে খোদাই করা “ভারতের জনগণ থেকে ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর জনগণের প্রতি” বার্তাটিকে এক আবেগঘন মুহূর্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।

ভারত-ত্রিনিদাদ সম্পর্ক: ইতিহাসের সুতোয় গাঁথা

প্রধানমন্ত্রী বলেন:
“ভারত ও ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সম্পর্ক শুধু রাষ্ট্রীয় স্তরে নয়, এটি সংস্কৃতি, সমাজ এবং মানুষের হৃদয়ের সঙ্গে জড়িত। এই সম্পর্ক শতাব্দীপ্রাচীন।”

তিনি দুটি দেশকেই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সার্বভৌমত্ব, সংলাপ ও মানবমর্যাদার ধারক বলে উল্লেখ করেন।

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কড়া বার্তা

রেড হাউসের একসময়কার জখম অতীত স্মরণ করে মোদী বলেন:
“সন্ত্রাস মানবতার শত্রু। এই ভবনও একসময় সন্ত্রাসের আঘাত সহ্য করেছে। আমাদের একত্র হয়ে সন্ত্রাসবাদকে কোনো আশ্রয় বা স্থান না দেওয়ার অঙ্গীকার নিতে হবে।”

এই মন্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারত ও ত্রিনিদাদকে এককাটিতে আনার বার্তা দেন।

গ্লোবাল সাউথের অগ্রাধিকার

আন্তর্জাতিক পরিসরে উন্নয়নশীল দেশগুলির সম্মান ও দাবি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন:
“আমরা আমাদের উন্নয়নকে শুধুমাত্র নিজেদের জন্য নয়, বরং অন্যদের প্রতিও দায়িত্ব হিসেবে দেখি। আমাদের অগ্রাধিকার সবসময় গ্লোবাল সাউথ থাকবে।”

তিনি জাতিসংঘের সংস্কার প্রসঙ্গে বলেন:
“জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকীতে বিশ্বজুড়ে এক নতুন আশার জন্ম হয়েছিল। কিন্তু সেই আশা আজ হতাশায় পরিণত হয়েছে।”

এই বক্তব্যে একটি “নতুন ও ন্যায্য বিশ্বব্যবস্থা”-র দাবিও উঠে আসে।

সংস্কৃতি ও ক্রিকেটে ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের অবদান

ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের অবদান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন:
“ভারতীয়রা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলের অন্যতম বড় ভক্ত, শুধু তখন নয় যখন তারা ভারতের বিরুদ্ধে খেলে।”

তিনি বলেন:
“আজ ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সমাজের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাজনীতি থেকে কবিতা, ক্যালিপসো থেকে চাটনি—সবক্ষেত্রেই তারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন।”

রাষ্ট্রপতি ক্রিস্টিন কাঙ্গালুর কাছ থেকে প্রাপ্ত ‘অর্ডার অব দ্য রিপাবলিক অব ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো’ সম্মান তিনি দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বের প্রতি উৎসর্গ করেন।

নারীনেতৃত্বের প্রসার

নারীনেতৃত্ব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন:
“আপনার দেশের মতো আমাদের দেশেও একজন নারী রাষ্ট্রপতি রয়েছেন, যিনি সাধারণ জীবন থেকে উঠে এসেছেন।”

তিনি জানান, ভারত সরকার সংসদ ও রাজ্য বিধানসভায় নারীদের জন্য ৩৩% আসন সংরক্ষণের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

“ভারতের গ্রামীণ স্তরে প্রায় ১৫ লক্ষ নির্বাচিত নারী স্থানীয় প্রশাসনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমরা নারীনেতৃত্বের এক নতুন মডেল তৈরি করছি।”

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সংসদে মোদীর ভাষণ কূটনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির এক সংমিশ্রণ। তিনি ইতিহাস, রাজনীতি, সংস্কৃতি ও মানবমুল্যবোধের মোড়কে দুই দেশের সম্পর্ককে তুলে ধরেন। এ ভাষণ শুধু এক রাজনৈতিক পদক্ষেপ নয়, বরং ভারত-ত্রিনিদাদ সম্পর্কের আরও এক মজবুত ভিত্তিপ্রস্তর।

ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর সংসদে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই ভাষণ ছিল এক ঐতিহাসিক সংলাপ—যেখানে দুই দেশের অতীতের বন্ধন, বর্তমানের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যতের বিশ্বদর্শন একসঙ্গে মিলে গেল। গ্লোবাল সাউথের নেতৃত্বে ভারতের সক্রিয় অবস্থান, নারীনেতৃত্বের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও সংস্কৃতির আন্তর্জতিক যোগসূত্র—সবকিছু মিলিয়ে এই সফর কূটনৈতিক সৌহার্দ্যের পাশাপাশি এক আবেগঘন বার্তাও বয়ে আনল। বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি উঠে এল শান্তি, মর্যাদা ও সমতার নতুন প্রত্যাশা। মোদীর কণ্ঠে ত্রিনিদাদ হয়ে উঠল দক্ষিণ গোলার্ধের এক নতুন কূটনৈতিক মঞ্চ।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply