ভারতের অপারেশন ‘সিন্ধুর’-এ পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে নিখুঁত আঘাত, স্যাটেলাইট চিত্রে ধরা পড়ল চাঞ্চল্যকর প্রমাণ

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের মুজাফ্‌ফরাবাদ ও কোটলিতে অবস্থিত দুই ভয়ঙ্কর জঙ্গি ঘাঁটিতে ভারতীয় বাহিনীর পরিচালিত ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর নিখুঁত স্ট্রাইকে নতুন মোড় নিল দক্ষিণ এশিয়ার সন্ত্রাস দমন অভিযান। সদ্যপ্রকাশিত উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে এই সফল অভিযানের দৃশ্যপট, যেখানে লস্কর ও জইশ-সহ একাধিক সংগঠনের প্রশিক্ষণ ঘাঁটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস। কোনও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই এই হামলা ভারতীয় সেনার আধুনিক কৌশলের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই অভিযান ঘিরে কূটনৈতিক ও সামরিক মহলে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে।

📌 স্টোরি হাইলাইটস

  • মে মাসে ‘অপারেশন সিন্ধুর’ আওতায় ভারতীয় বাহিনীর লক্ষ্যবস্তু ছিল PoK-র পাঁচটি এবং পাকিস্তানের চারটি জঙ্গি ঘাঁটি

  • স্যাটেলাইট চিত্রে মুজাফ্‌ফরাবাদ ও কোটলির দুটি জঙ্গি ঘাঁটি সম্পূর্ণ ধ্বংস

  • কোনও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই সফল ড্রোন স্ট্রাইক

  • পহেলগাম হামলায় ২৬ জন নাগরিক নিহত হওয়ার জবাবে চালানো হয় এই অভিযান

  • সেনা সূত্রের দাবি, অভিযানে প্রায় ১০০ জন জঙ্গি নিহত

সাম্প্রতিক এক উচ্চ-রেজোলিউশন স্যাটেলাইট চিত্র প্রকাশ্যে আসতেই প্রকাশ পেল ভারতের ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর গোপন ও নির্ভুল অভিযানের চিত্র। এই ছবিগুলি প্রকাশ করেছে NDTV এবং আন্তর্জাতিক উপগ্রহ চিত্র বিশেষজ্ঞ সংস্থা ম্যাক্সার টেকনোলজিস। এগুলি দেখাচ্ছে, কীভাবে গত মে মাসে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে (PoK) অবস্থিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ জঙ্গি প্রশিক্ষণ ঘাঁটিকে নিখুঁতভাবে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনী যদিও অভিযানে ব্যবহৃত অস্ত্র সম্পর্কে কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে প্রতিরক্ষা সূত্রের মতে, এই হামলায় অত্যাধুনিক ‘লোইটারিং মিউনিশন ড্রোন’ ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। অভিযানের লক্ষ্য ছিল মুজাফ্‌ফরাবাদের সাইয়েদনা বিলাল ক্যাম্প এবং কোটলির গুলপুর ক্যাম্প—যা দীর্ঘদিন ধরে জইশ-ই-মোহাম্মদ ও লস্কর-ই-তৈবার মতো সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি ছিল।

সাইয়েদনা বিলাল ক্যাম্প: জইশ ঘাঁটির অবসান

পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফ্‌ফরাবাদে অবস্থিত সাইয়েদনা বিলাল ক্যাম্প বহুদিন ধরেই ছিল জইশ-ই-মোহাম্মদের অন্যতম কৌশলগত ঘাঁটি। এখানে অস্ত্রচালনা, বিস্ফোরক ব্যবহারে পারদর্শিতা, এবং গেরিলা যুদ্ধের কৌশল শেখানো হতো জঙ্গিদের। ৮১ ফুট বাই ৯২ ফুট মাপের সংযুক্ত একাধিক ভবনের স্যাটেলাইট চিত্রে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে সেই স্থাপনাগুলি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।

এক সেনা আধিকারিক জানান,

“২০২৩ সালের জুন মাস থেকে এই ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। এরপর তাদের পাকিস্তানের পাঞ্জাবে নিয়ে গিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হতো এবং পরে ৪ থেকে ৮ জনের দলে ভাগ করে ভারতে অনুপ্রবেশ করানো হয়।”

প্রশিক্ষণের শেষে জঙ্গিরা কাথুয়া ও রামবান জেলার মধ্যবর্তী রেলপুলে হামলার লক্ষ্য নিয়ে ভারতে ঢোকে বলে সেনা সূত্রে জানা গেছে। এই ক্যাম্পে নিয়মিত উপস্থিতি ছিল জইশ নেতাদের। যেমন, মুফতি আসগর খান কাশ্মীরি, আমির জইশ, আবদুল্লাহ জেহাদি এবং আশিক নেগ্রু। তাঁদের জন্য বিশেষ অতিথিশালাও নির্মিত হয়েছিল। সেনার দাবি, এই ঘাঁটিগুলি পাক গোয়েন্দা সংস্থা ISI-এর প্রত্যক্ষ সহায়তায় পরিচালিত হতো।

গুলপুর ক্যাম্প: আত্মঘাতী হামলার প্রস্তুতক্ষেত্র

কোটলি জেলার গুলপুরে অবস্থিত ক্যাম্পটি ছিল লস্কর-ই-তৈবার একটি অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ১১০ ফুট লম্বা ও ৩০ ফুট চওড়া একটি বিল্ডিং মাঝ বরাবর ভেঙে গেছে। পাশে একটি ছোট ঘর, যার ছাদে ক্ষতচিহ্ন স্পষ্ট।

সেনা সূত্র অনুযায়ী, এই ক্যাম্পে ৩০-৫০ জন জঙ্গি ও প্রশিক্ষক উপস্থিত থাকত। গেরিলা যুদ্ধ, অস্ত্রচালনা ও আত্মঘাতী মিশনের প্রশিক্ষণ এখানে নিয়মিতভাবে চলত। সূত্র জানায়, এই ক্যাম্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০২৩ সালে পুঞ্চ ও রাজৌরিতে হামলা চালানো হয়েছিল। এমনকি একটি তীর্থযাত্রীদের বাসেও হামলার ছক তৈরি করা হয়েছিল এখান থেকেই।

সেনার এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন,

“২০১৯ সালের বালাকোট স্ট্রাইকের পরে ক্যাম্পটি সাময়িক বন্ধ হয়ে গেলেও ২০২০ সাল থেকে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এখানে শুধু লস্কর নয়, আরও একাধিক সন্ত্রাসবাদী সংগঠন প্রশিক্ষণ নিত।”

অপারেশন সিন্ধুর: লক্ষ্যভেদে নিখুঁত সাফল্য

৭ মে রাত ১:০৫ থেকে ১:৩০-র মধ্যে মাত্র ২৫ মিনিটে ভারতীয় বাহিনী পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোয় একযোগে স্ট্রাইক চালায়। চারটি লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানে—বাহাওয়ালপুর, মুরিদকে, শিয়ালকোট ও শাকারগড়। বাকি পাঁচটি ছিল PoK-তে—মুজাফ্‌ফরাবাদ, কোটলি, ভিম্বার, রাওয়ালকোট ও চাকসওয়ারি। এই অভিযানে প্রায় ১০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের দাবি।

সামরিক বিশেষজ্ঞদের প্রতিক্রিয়া

অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল সতীশ দুয়া, যিনি একসময় কাশ্মীর উপত্যকায় ১৫ কোরের দায়িত্বে ছিলেন, বলেন—

“এই হামলা ভারতের সামরিক সক্ষমতার নিখুঁত প্রদর্শন। আগে আমরা পারমাণবিক আতঙ্কের জন্য হামলা করতাম না। কিন্তু পহেলগামের ঘটনার পরে সেই আত্মসংযম ভেঙেছে।”

অন্যদিকে ২০১৬ সালের সার্জিকাল স্ট্রাইকের সময় উত্তর কমান্ডের নেতৃত্বে থাকা লেফটেন্যান্ট জেনারেল ডি এস হুডা বলেন—

“এই ঘাঁটিগুলি থেকে অনুপ্রবেশের আগে জঙ্গিরা চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ ও রিকি করত। এই কাঠামোগুলি ধ্বংস হলে জঙ্গিদের মনোবল ও সংগঠনের কার্যক্ষমতা দুটোতেই বড় প্রভাব পড়বে।”

পরিশেষে

‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর মাধ্যমে ভারতীয় বাহিনী শুধু সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিগুলি ধ্বংস করেনি, বরং এক কঠোর বার্তা দিয়েছে—সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারত চুপ করে বসে থাকবে না। আন্তর্জাতিক স্তরে এই অভিযানের স্যাটেলাইট প্রমাণও সেই বার্তাকে জোরদার করেছে।ভারতের ‘অপারেশন সিন্ধুর’-এর সফল বাস্তবায়ন শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদ বিরোধী লড়াইয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নয়, বরং এটি ভারতীয় সেনার কৌশলগত সক্ষমতা ও প্রযুক্তির নিখুঁত প্রয়োগের এক জীবন্ত প্রমাণ। উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়া ধ্বংসচিহ্ন গুলোই বলে দেয়—এই অভিযান ছিল নির্ভুল, দ্রুত ও কার্যকর। কোনও বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি না ঘটিয়ে শত্রুপক্ষের জঙ্গি ঘাঁটি ধ্বংস করে ভারত আবারও প্রমাণ করল—আধুনিক যুদ্ধের ময়দানে দেশ পিছিয়ে নেই। আন্তর্জাতিক মহলে এই দৃশ্যপট ভারতকে এনে দিল এক নতুন মর্যাদা ও কূটনৈতিক শক্তির বার্তা।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply