কলকাতার পার্ক স্ট্রিটে বৃহস্পতিবার ভোররাতে সাইবার থানার ঝটিকা অভিযানে ফাঁস হল এক ভুয়ো কল সেন্টারের জাল। অভিযুক্তরা মার্কিন নাগরিকদের লক্ষ্য করে টেক সাপোর্টের ছদ্মবেশে প্রতারণার ছক কষে চলছিল। পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেফতার করে ল্যাপটপ, মোবাইল, রাউটার এবং প্রতারণার কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। মূল অভিযুক্ত আশুতোষ রায়-সহ আরও কয়েকজন পলাতক। ‘কল সেন্টার প্রতারণা’ ঘিরে ফের উত্তেজনা শহরে। প্রযুক্তির পর্দার আড়ালে চলছিল লোভ ও প্রতারণার খেলা— যার শিকার হচ্ছিল বহু বিদেশি। তদন্তে নেমে নড়েচড়ে বসেছে গোটা প্রশাসন।

📌 স্টোরি হাইলাইটস:

  • অভিযান স্থান: পার্ক লেন, পার্ক স্ট্রিট

  • গ্রেপ্তার: ৫ জন — আশুতোষ রায়, মো. সারফরাজ, আকিল আহমেদ, নওয়াজিশ হোসেন, মো. রাশেদ হোসেন

  • কার্যকলাপ: ভুয়ো টেক সাপোর্ট ও ইউটিলিটি পরিষেবা দেখিয়ে আমেরিকার নাগরিকদের প্রতারিত করা

  • উদ্ধার: ৪টি ল্যাপটপ, ৫টি মোবাইল, ২টি রাউটার, স্ক্রিপ্ট ও “লিডস” সহ নানা ডকুমেন্ট

  • আইন: আইটি অ্যাক্ট ও ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু

কলকাতার অন্যতম প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রিটের অভিজাত এলাকা পার্ক লেনে বৃহস্পতিবার ভোররাতে কলকাতা পুলিশের সাইবার থানার একটি সফল অভিযানে চাঞ্চল্য ছড়ায়। জানা গিয়েছে, বহুদিন ধরেই একটি ঘরের আড়ালে চলছিল এক ‘ভুয়ো কল সেন্টার’-এর গোপন কর্মকাণ্ড। অভিযোগ, এই কল সেন্টার থেকে আমেরিকার নাগরিকদের লক্ষ্য করে প্রতারণার ছক কষা হচ্ছিল। সেখান থেকেই পুলিশ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। অভিযানে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র।

পুলিশ সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার ভোর ২:১৫ থেকে ২:৩৫ মিনিটের মধ্যে, একটি নির্দিষ্ট ফ্ল্যাটে হানা দেন কলকাতা পুলিশের সাইবার শাখার আধিকারিকেরা। গোপন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পরিকল্পিতভাবে চালানো এই অভিযানে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে আশুতোষ রায় (২৮) পার্ক স্ট্রিটের বাসিন্দা এবং মূল অভিযুক্ত বলে দাবি করেছে পুলিশ। বাকিরা হলেন মো. সারফরাজ (২২), আকিল আহমেদ (২২), নওয়াজিশ হোসেন (২৩), ও মো. রাশেদ হোসেন (২২) — করায়া এলাকার ব্রাইট স্ট্রিটের বাসিন্দা।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, পার্ক লেনের ওই ঘরে একটি ‘ফেক’ বা ভুয়ো কল সেন্টার গড়ে তোলা হয়েছিল। এখান থেকেই VoIP (Voice over Internet Protocol)-এর মাধ্যমে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে কল করা হত। কল করে অভিযুক্তরা নিজেদের PayPal, Norton, বা McAfee-এর মতো নামী টেক কোম্পানির ‘কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ’ হিসেবে পরিচয় দিত। সেই ছদ্মবেশে তারা মার্কিন নাগরিকদের বিশ্বাস অর্জন করত এবং পরে তাদের কম্পিউটারে রিমোট অ্যাক্সেস সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রবেশ করে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা কার্ড থেকে টাকা সরিয়ে নিত।

এই পুরো প্রতারণার পদ্ধতিকে সুপরিকল্পিত বলা যেতেই পারে। ধৃতদের কাছ থেকে পুলিশ যে তথ্য পেয়েছে, তা থেকে স্পষ্ট— এই চক্র কেবল তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগই নয়, মানুষের মনস্তত্ত্বের দুর্বলতাকেও ব্যবহার করছিল। অভিযোগ, ‘সাপোর্ট’ দেওয়ার নাম করে তারা নিরীহ গ্রাহকদের বিভ্রান্ত করে আর্থিকভাবে কাবু করত।

এই অভিযানে উদ্ধার হয়েছে চারটি ল্যাপটপ, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি রাউটার, বেশ কিছু স্ক্রিপ্ট (যা ফোন কলের সময় ব্যবহার করা হত) এবং ‘লিডস’ নামক সম্ভাব্য শিকারদের তথ্যভিত্তিক তালিকা। এই সমস্ত কিছুর মধ্যেই ছড়িয়ে রয়েছে প্রতারণার ছাপ। পুলিশ জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ডিভাইসগুলিতে স্পষ্টভাবে পাওয়া গেছে ডায়ালার সফটওয়্যার এবং রিমোট অ্যাক্সেসের প্রমাণ।

পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, ধৃতদের ছাড়াও এই চক্রের আরও সদস্য রয়েছে যারা এখন পলাতক। তাদের খোঁজে ইতিমধ্যেই তদন্তের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। ধৃতদের শুক্রবার আদালতে তোলা হবে এবং পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হবে।

এই ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইন ২০০০-র ধারা ৬৬, ৬৬সি, ৬৬ডি, ৮৪বি এবং ৪৩-সহ একাধিক ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন সংস্করণ, অর্থাৎ ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (BNS) ২০২৩ অনুযায়ী, ৬১(২), ৩১৯(২) (ব্যক্তি সেজে প্রতারণা), ৩১৮(৪) (প্রতারণা), ৩৩৬(২) ও ৩৩৬(৩) (জালিয়াতি), ৩৩৮ (মূল্যবান নিরাপত্তার কাগজ জালিয়াতি), এবং ৩৪০(২) (জাল দলিল ব্যবহার)-এর অধীনেও মামলা রুজু করা হয়েছে।

এই ঘটনার পর সাইবার অপরাধ নিয়ে নতুন করে চিন্তা শুরু হয়েছে প্রশাসনের অন্দরে। কল সেন্টারের আড়ালে কীভাবে এমন প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে, তা নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন করে নজরদারি। কলকাতার মতো মহানগরে প্রযুক্তির সুযোগকে অপব্যবহার করে এই ধরনের কার্যকলাপ উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply