দক্ষিণ কলকাতার কসবার সরকারি আইন কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে রাজ্যজুড়ে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। কলেজ প্রাঙ্গণে ভয়ঙ্কর এই ঘটনায় যে চারজন গ্রেফতার, তাদের মধ্যে অন্যতম মনোজিত মিশ্র—যিনি এক বছর আগে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ধর্ষণ মামলায় দোষীর ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হয়েছিলেন। রাজনৈতিক যোগ, নিয়োগে বিতর্ক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার গাফিলতির প্রশ্নে মুখোমুখি তীব্র সমালোচনা। ঘটনায় শাসক ও বিরোধী পক্ষের তীব্র বাদানুবাদ। প্রশ্ন উঠছে—যিনি বিচার চেয়েছিলেন, আজ তাকেই কি বিচারের মুখোমুখি হতে হবে?

📌 STORY HIGHLIGHTS

  • ফাঁসির দাবিদার মনোজিত এখন নিজেই ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত

  • কসবা সরকারি আইন কলেজ চত্বরে কলেজ কর্মীর নেতৃত্বে ছাত্রী গণধর্ষণের অভিযোগ

  • চারজন গ্রেফতার: মনোজিত-সহ দুই ছাত্র ও এক নিরাপত্তারক্ষী

  • ভুক্তভোগী allegedly টিএমসিপির মহিলা শাখার কলেজ সম্পাদক

  • মনোজিতকে কলেজে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে রাজনৈতিক বিতর্ক

  • অভিযুক্তের তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা নিয়ে পাল্টাপাল্টি মন্তব্য

কলকাতার কসবা অঞ্চলের একটি নামকরা সরকারি আইন কলেজের প্রাঙ্গণে ২৪ বছর বয়সী এক ছাত্রীর উপর সংঘটিত নির্মম গণধর্ষণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে রাজ্যজুড়ে। এই ঘটনায় যিনি মূল অভিযুক্ত হিসেবে উঠে এসেছেন — মনোজিত মিশ্র — এক বছর আগেই ধর্ষণের অপরাধে দোষীদের ফাঁসির দাবি জানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছিলেন। অথচ, আজ সেই ব্যক্তি নিজেই ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার।

২০২৩ সালের আগস্ট মাসে রাজ্যজুড়ে আলোড়ন ফেলে দেওয়া আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ভিতরে পিজি ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার প্রেক্ষিতে মনোজিত নিজের সামাজিক মাধ্যমে লিখেছিলেন:

“ধর্ষকের ফাঁসি চাই। বিচার চাই, নাটক নয়। তৎক্ষণাৎ বিচার চাই। দোষীর ফাঁসি চাই।”

ঠিক এক বছর পর, এখন মনোজিত মিশ্র নিজেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেই একই কাঠগড়ায় — যার বিরুদ্ধে একই রকম ভয়ঙ্কর অভিযোগ উঠেছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা ৭.৩০টা থেকে রাত ১০.৫০টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। ওই ছাত্রী কলেজে এসেছিলেন আসন্ন পরীক্ষার জন্য ফর্ম পূরণ করতে। সেই সময়েই কলেজের প্রাঙ্গণের মধ্যে এই নির্মম ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ।

পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যে চারজনকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন মনোজিত মিশ্র (৩১) — যিনি এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং বর্তমানে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। বাকি অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন দুই ছাত্র — জাইব আহমেদ (১৯) ও প্রমিত মুখার্জি (২০) এবং কলেজের নিরাপত্তারক্ষী।

কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মনোজিতকে নিয়োগ করা হয়েছিল সবে মাত্র ৪৫ দিন আগে। এ প্রসঙ্গে কলেজের উপ-প্রধান অধ্যাপিকা নয়না চ্যাটার্জি বলেন:

“মনোজিত মিশ্রকে কলেজ পরিচালন পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী চুক্তিভিত্তিক কর্মী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। এটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত।”

তবে এই নিয়োগ নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কলেজ পরিচালন পর্ষদের সভাপতি এবং তৃণমূল বিধায়ক অশোক কুমার দেব বলেন:

“আমি সভাপতির দায়িত্বে আছি, কিন্তু আমি কখনও মিশ্রর নাম সুপারিশ করিনি। পরিচালন পর্ষদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে তাকে নিয়োগ করা হয়েছে। আর আমার সঙ্গে বহু মানুষ ছবি তোলে — আমি একজন জনপ্রতিনিধি। কে ব্যক্তিজীবনে কী করছে, তা তো আমি জানি না।”

বিরোধী দল বিজেপি এই ঘটনার সঙ্গে শাসকদলের যোগসূত্র খোঁজার চেষ্টা করছে। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করেছেন, যেখানে মনোজিত মিশ্রকে দেখা গেছে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাঁর দাবি, মিশ্র ছিলেন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) এক গুরুত্বপূর্ণ পদাধিকারী।

যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। টিএমসিপির রাজ্য সভাপতি তৃণঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন:

“ওই কলেজে গত কয়েক বছর ধরে টিএমসিপির কোনও সক্রিয় ইউনিট নেই। যখন মনোজিত ছাত্র ছিলেন, তখন দক্ষিণ কলকাতা জেলার কমিটির একেবারে নিচু স্তরের পদে ছিলেন। ২০২২ সালে নতুন কমিটি গঠনের সময় তার নাম বাদ দেওয়া হয়। ভবিষ্যতে কে কী করবে, সেটা কোনও সংগঠন কীভাবে জানবে বা দায় নিতে পারে?”

এমন এক ভয়াবহ ঘটনায় যখন রাজনৈতিক রং লাগানোর চেষ্টায় ব্যস্ত শাসক ও বিরোধী দল, তখন প্রশ্ন উঠছে — যে সমাজে মানুষ সোচ্চার হয় ‘ফাঁসির দাবি’ নিয়ে, সেখানেই যখন সেই একই ব্যক্তি অপরাধে জড়ায়, তখন সমাজের প্রতিচ্ছবি কতটা কলুষিত হয়ে পড়ে?

তদন্ত চলছে। কিন্তু এই ঘটনাটি একদিকে যেমন কলেজ চত্বরের নিরাপত্তা ও নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তেমনি রাজনৈতিক যোগ এবং দ্বিচারিতা নিয়েও বিস্তর আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply