পুরীর জগন্নাথ মন্দির চত্বরে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত জগন্নাথ রথযাত্রা। আষাঢ়ের পবিত্র দ্বিতীয়া তিথিতে অনুষ্ঠিত এই মহাযাত্রা ঘিরে পুরী শহরে নেমেছে আনন্দের ঢল। লক্ষাধিক ভক্তের উপস্থিতিতে জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রা দেবীর রথ টানার প্রস্তুতি সম্পূর্ণ। রথগুলি গন্তব্যে পৌঁছাবে গুন্ডিচা মন্দিরে, যার পথে মিলবে আধ্যাত্মিক পরশ। নিরাপত্তায় পাঁচস্তরের ঘেরাটোপ, মোতায়েন বিশাল পুলিশবাহিনী ও নজরদারিতে AI ক্যামেরা। বিশ্বাস, ভক্তি ও ব্যবস্থাপনার অপূর্ব মেলবন্ধনে শুরু হচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন চ্যারিয়ট উৎসব।

🔷 STORY HIGHLIGHTS

  • পুরীতে শুরু রথযাত্রার পবিত্র পর্ব

  • ভগবান জগন্নাথ, বলভদ্র ও সুভদ্রার রথযাত্রা

  • লক্ষাধিক ভক্তের আগমন; ধর্মীয় উন্মাদনা চরমে

  • তিনটি ঐতিহ্যবাহী রথ – নন্দিঘোষ, তলধ্বজ ও দর্পদলন

  • গন্তব্য গুন্ডিচা মন্দির, পথ প্রায় ৩ কিমি

  • ২০০ প্লাটুন পুলিশ, কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন

  • AI-নিয়ন্ত্রিত ২৭৫টি ক্যামেরায় নজরদারি

পুরী শহর আজ যেন আধ্যাত্মিক আবেশে মুড়ে গিয়েছে। শুক্রবার শুরু হতে চলেছে বহু প্রতীক্ষিত রথযাত্রা — ভগবান জগন্নাথ, ভ্রাতা বলভদ্র এবং ভগিনী সুভদ্রার বার্ষিক শুভযাত্রা। রথযাত্রা কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, ওড়িশার সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং বিশ্বাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে থাকা এক ঐতিহ্য। আর এই উৎসবকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখ লাখ ভক্ত ছুটে এসেছেন পুরীর এই পবিত্র শহরে।

এই মহোৎসব প্রতি বছর আষাঢ় মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয় দিনে পালিত হয়, যাকে “দ্বিতীয়া তিথি” বলা হয়। জ্যোতির্বিজ্ঞানে এই সময়টিকে অত্যন্ত শুভ মনে করা হয়, কারণ এটি চাঁদের আলোর বৃদ্ধির সময় — যা দেবতাদের জন্য অমৃতসম। রথযাত্রা বা ‘শ্রীগুন্ডিচা যাত্রা’ শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, বরং এ এক আবেগ, যা পুরীর প্রাচীন ইতিহাসের বুকে যুগ যুগ ধরে বয়ে চলেছে।

জগন্নাথ সংস্কৃতির অন্যতম পাণ্ডিত্যসূত্র সূর্যনারায়ণ রথ শর্মা জানান, “বিশ্বের ইতিহাসে রথযাত্রা সম্ভবত প্রাচীনতম চ্যারিয়ট উৎসব। যুগযুগান্ত ধরে এই যাত্রা শুধু পুরী শহর নয়, সমগ্র ভারতবর্ষের ভক্তদের কাছে মোক্ষপ্রাপ্তির আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে।” তাঁর মতে, এই রথযাত্রায় জগন্নাথদেবের রথের মাত্র এক ঝলক দর্শন পেলেও পুণ্যলাভ হয়, এমনকি মোক্ষলাভও সম্ভব বলে বিশ্বাস।

এই যাত্রায় তিন দেবতার বিশাল রথ — নন্দিঘোষ (জগন্নাথ), তলধ্বজ (বলভদ্র) ও দর্পদলন (সুভদ্রা) — ভক্তদের হাত ধরে প্রায় ৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে পৌঁছাবে গুন্ডিচা মন্দিরে। এই মন্দির নিয়ে কিংবদন্তি রয়েছে যে, এখানেই চতুর্দ্ধমূর্তির (জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা ও সুদর্শন) আবির্ভাব ঘটেছিল। তাই এই যাত্রাপথ এবং গন্তব্য উভয়ই গভীর ধর্মীয় তাৎপর্যে পূর্ণ।

ভক্তরা আজ রথ টানার আনন্দে উদ্বেল। দেশ-বিদেশ থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ “জয় জগন্নাথ” ধ্বনিতে রথের দড়ি টানবেন, মুখে থাকবে ভক্তিমূলক গান ও চরণস্মরণ। সমগ্র পুরী শহর যেন এক চলমান মন্দিরে রূপ নিয়েছে। প্রতিটি অলিগলি, প্রতিটি মোড় সেজে উঠেছে রঙ-বেরঙের পতাকা, ফুল আর আলোকসজ্জায়।

রথযাত্রার জন্য এবার প্রশাসনও নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি। পুরীর জেলা শাসক সিদ্ধার্থ শঙ্কর স্বাইন বলেন, “আমরা সমস্ত দিক থেকে প্রস্তুত। রথ টানার সমস্ত আচারবিধি ও লজিস্টিক পরিকল্পনা শেষ হয়েছে। আমরা মহাপ্রভুর কৃপা কামনা করি এবং সমস্ত ভক্তদের সহযোগিতা চাই যাতে এই ঐতিহাসিক রথযাত্রা শান্তিপূর্ণ ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্য বজায় রেখে সম্পন্ন হয়।”

নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রশাসন যে কোনও আপস করতে নারাজ। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে সমগ্র পুরী শহরকে। রথযাত্রা উপলক্ষে ২০০টি প্লাটুন পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। সঙ্গে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বাহিনী — বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স ও সিআরপিএফ-এর মোট আট কোম্পানি।

এছাড়াও প্রায় ১০ হাজার নিরাপত্তাকর্মী — ওড়িশা পুলিশ, সেন্ট্রাল আর্মড ফোর্স ও হোম গার্ড — নিয়োজিত রয়েছেন বিভিন্ন পয়েন্টে। প্রথমবারের মতো পুরীতে চালু হয়েছে একটি ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সিস্টেম। এখান থেকেই শহরের সমস্ত চৌমাথা, রাস্তা, জনসমাগম ও যান চলাচলের ওপর সরাসরি নজরদারি চালানো হবে।

এই জন্যই শহরের গুরুত্বপূর্ণ রুট — উত্তরা স্কোয়ার থেকে শুরু করে পুরী শহর এবং পুরী-কোনার্ক পর্যন্ত — ২৭৫টি AI-নির্ভর ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এই ক্যামেরাগুলি মানুষের গতিবিধি, রথের গতি এবং কোনো ধরণের অস্বাভাবিকতার ওপর নজর রাখবে রিয়েল টাইমে।

সব মিলিয়ে, পুরী আজ পরিণত হয়েছে এক আধ্যাত্মিক মহাযজ্ঞের কেন্দ্রে। ভক্তি, সংস্কৃতি এবং নিরাপত্তার সম্মিলনে শুরু হয়েছে মহাপ্রভুর রথযাত্রা — যা পুরীতে নয়, বরং প্রতিটি বিশ্বাসীর হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।

জগন্নাথ রথযাত্রা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক ঐতিহ্য, এক আস্থা, এবং ভক্তির গভীর নিদর্শন। পুরী শহর এই মহাযাত্রাকে কেন্দ্র করে পরিণত হয়েছে এক আধ্যাত্মিক মিলনক্ষেত্রে, যেখানে ভক্তি, উৎসব ও প্রশাসনিক প্রস্তুতির অপূর্ব সামঞ্জস্য প্রতিফলিত হয়েছে। লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণ, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা, এবং যুগযুগান্তরের বিশ্বাস মিলিয়ে রথযাত্রা আজও তার মহিমা ধরে রেখেছে। এই উৎসব যেন প্রতিটি হৃদয়ে ছড়িয়ে দেয় শান্তি, ভক্তি ও একতার বার্তা।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply