উত্তর কলকাতার ব্যস্ত উল্টোডাঙা মেন রোডে এক বহুতল ফ্ল্যাটে ঘটেছে রুদ্ধশ্বাস চুরির ঘটনা। সোমবার ভোরে ঘুমন্ত পরিবারের অজান্তে চোরেরা প্রার্থনার ঘরের জানালা কেটে প্রবেশ করে। সোজা গয়নার আলমারিতে হানা দিয়ে তারা নিয়ে যায় প্রায় ২ কোটি টাকার গয়না ও নগদ। আশ্চর্যের বিষয়, দামি ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছুঁয়েও দেখেনি তারা—তবে বাদাম খাওয়া ভুলেনি। চুরির পদ্ধতি ও নির্ভুল নিশানা দেখে পরিবারের সন্দেহ, অভ্যন্তরীণ কেউ এর নেপথ্যে। পুলিশ, ফরেনসিক ও গোয়েন্দা বিভাগ তদন্তে নেমেছে। নিরাপত্তা ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল আতঙ্ক।
📌 স্টোরি হাইলাইটস:
উল্টোডাঙার পাঁচ বেডরুমের ফ্ল্যাটে মধ্যরাতের চুরি
নগদ ও গয়না মিলিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকার সম্পত্তি উধাও
প্রার্থনার ঘরের জানালার গ্রিল কেটে প্রবেশ করে চোরেরা
সোনার গয়নার নির্দিষ্ট আলমারি থেকেই চুরি, ইলেকট্রনিকস ছোঁয়া হয়নি
পরিবারের সন্দেহ—অভ্যন্তরীণ কেউ তথ্য সরবরাহ করেছে
পুলিশ ও ফরেনসিক বিভাগ তদন্তে নেমেছে, সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে
স্থানীয় বাসিন্দারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন
পূর্ব কলকাতার অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র উল্টোডাঙার মূল রোডের ধারে এই বহুতল আবাসন। ফ্ল্যাটটির মালিক সুশীল কুমার বাজাজ, বয়স ৬২। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, সুশীলবাবু একজন ব্যবসায়ী এবং বর্তমানে তিনি হৃদরোগে ভুগছেন। তাঁর ছেলে শুভমের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রার্থনার ঘরের জানালার লোহার গ্রিল কেটে চোরেরা ভিতরে প্রবেশ করে। ওই জানালাটিই ছিল চোরেদের প্রবেশপথ।
বিশেষ আশ্চর্যের বিষয় হলো, ঘরের ভিতরে বেশ কিছু মূল্যবান ইলেকট্রনিক দ্রব্য যেমন টিভি, ল্যাপটপ, ক্যামেরা ইত্যাদি থাকলেও সেগুলির কোনওটিই চোরেরা স্পর্শ করেনি। সোজা টার্গেট ছিল আলমারি। সেই আলমারিতে ঝুলন্ত চাবির মাধ্যমেই খুলে নেওয়া হয় সোনার গয়না। পরিবারের দাবি, চোরেরা নিখুঁতভাবে জানত কোন ঘরে কী আছে।
শুভম বলেন, “আমরা বুঝে গেছি, যারা এসেছিল তারা আমাদের ঘরের অনেককিছুই জানে। যে আলমারিতে গয়না রাখা ছিল, সেখানেই তারা সোজা ঢুকে পড়ে। অন্য কোথাও না ঘেঁটে রান্নাঘরে গিয়ে বাদাম খেয়েছে তারা। কেউ না জেনে এতটা নির্ভয়ে কাজ করতে পারে না।”
চুরি হওয়া গয়নাগুলির মধ্যে ছিল একটি সোনার নেকলেস সেট (নেকলেস, কানের দুল, চুড়ি), যার ওজন ৮০-১০০ গ্রাম, মূল্য প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা। হীরার চুড়ি (মূল্য ৫ লক্ষ), পাঁচ জোড়া হীরার দুল (মূল্য ৫ লক্ষ), ১০টি সোনার চেন (১৫ লক্ষ), একটি সোনার ব্রেসলেট (১.৫ লক্ষ), ও একাধিক সোনা-হীরার আংটি (১৫ লক্ষ) মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ২ কোটি টাকার কাছাকাছি। এছাড়া নগদ ২ লক্ষ টাকাও চুরি হয়েছে।
পরিবারের একজন সদস্য বলেন, “এই গয়নাগুলি শুধু সোনা নয়, এগুলো আমাদের পারিবারিক ইতিহাসের অংশ। দাদির সময়কার দুল থেকে শুরু করে মা-এর বিয়ের গয়না, সব ছিল সেখানে। এদের আর কোনও মূল্যায়ন করা যায় না।”
শুভম জানান, তার বাবা সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, আর তার মা ডায়াবেটিসে ভুগছেন। হঠাৎ করে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে দ্রুত নগদ টাকার প্রয়োজন পড়ে, সেই কারণেই কিছু টাকা ঘরে রাখা ছিল। “আমি সদ্য বিয়ে করেছি, এই গয়নাগুলিই ছিল আমাদের সঞ্চয়। এখন সব শেষ,” বলেন শুভম।
এই ঘটনার তদন্তে নেমেছে উল্টোডাঙা থানার পুলিশ। ইতিমধ্যে ভারতীয় দণ্ডবিধির নতুন ধারায় (বিএনএস ৩০৫) মামলা রুজু হয়েছে। ফরেনসিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে নমুনা সংগ্রহ করেছে। আশপাশের বিল্ডিংগুলির সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা বিভাগও তদন্তে সাহায্য করছে।
ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, যখন বাড়ির সদস্যরা ঘরে ছিলেন, তখনও এত বড় চুরি কীভাবে হলো? নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। পুলিশ বাসিন্দাদের উদ্দেশে অনুরোধ করেছে যাতে প্রত্যেকে বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা বসান এবং দরজা-জানালার নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন।
নগরবাসীদের চোখে নিরাপত্তা নিয়ে এক নতুন চিন্তার সৃষ্টি করেছে এই ঘটনা। এখন দেখার, পুলিশের তদন্তে কোন সূত্র উঠে আসে এবং চোরেরা ধরা পড়ে কি না।
এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তর কলকাতার উল্টোডাঙা এলাকায় ছড়িয়েছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। ঘুমন্ত পরিবারের মধ্যেই ঘটে যাওয়া এমন সুপরিকল্পিত চুরি প্রশ্ন তুলছে নাগরিক নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ সতর্কতার উপর। পুলিশ ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে, তবে এখনও পর্যন্ত চুরির স্পষ্ট সূত্র মেলেনি। স্থানীয়রা বাড়তি সতর্কতা ও নজরদারির দাবি তুলেছেন। এ ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—বাড়ির ভিতরেই গোপন হুমকি কতটা বিপজ্জনক হতে পারে। এখন দেখার, তদন্ত কতদূর এগোয় ও চোরেরা ধরা পড়ে কি না।