সমৃদ্ধির সড়ক চালু: মুম্বই-নাগপুর এখন হাতের মুঠোয়
মহারাষ্ট্রের স্বপ্নের পথ “হিন্দু হৃদয়সম্রাট বালাসাহেব ঠাকরে মহারাষ্ট্র সমৃদ্ধি মহামার্গ” অবশেষে সম্পূর্ণরূপে খুলে গেল। ইগতপুরি থেকে আমানে শেষ ৭৬ কিমি রুট উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে মুম্বই থেকে নাগপুর পর্যন্ত ৭০১ কিমি একটানা ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে এখন চালু। ₹৬১,০০০ কোটি মূল্যের এই প্রকল্প রাজ্যের অর্থনীতি, কৃষি, শিল্প ও পর্যটনের নতুন দরজা খুলবে। যাত্রাসময় ১৭ ঘণ্টা থেকে কমে হয়েছে মাত্র ৮ ঘণ্টা। আগুন প্রতিরোধী টানেল, বন্যপ্রাণী করিডোর, স্মার্ট প্রযুক্তি—সব মিলিয়ে এ এক নজিরবিহীন “সমৃদ্ধির সড়ক”।

📌 STORY HIGHLIGHTS

  • ₹৫৫,৫০০ কোটির প্রকল্প খরচ বেড়ে ₹৬১,০০০ কোটি

  • ৭০১ কিমি একটানা ছয় লেনের এক্সপ্রেসওয়ে

  • নতুন যুক্ত ৭৬ কিমি অংশে ভারতের সবচেয়ে চওড়া টানেল

  • ২৪টি জেলা সরাসরি যুক্ত JNPT-এর সঙ্গে

  • সর্বোচ্চ গতিসীমা সমতলে ১২০ কিমি/ঘণ্টা

  • ৩.৩ মিলিয়নের বেশি গাছ রোপণ, ১০০০ কৃষি পুকুর নির্মাণ

  • বন্যপ্রাণী চলাচলের জন্য ৯২টি ওভারপাস ও ৮টি আন্ডারপাস

একটি স্বপ্ন যাত্রার সমাপ্তি ঘটল বৃহৎ অগ্রগতির মাধ্যমে। বছরের পর বছর ধরে মহারাষ্ট্রবাসীর প্রত্যাশা পূর্ণ হল বৃহস্পতিবার, যখন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস ইগতপুরি থেকে আমানে ৭৬ কিমি দীর্ঘ শেষ পর্বটির উদ্বোধন করলেন। এর ফলে ৭০১ কিমি দীর্ঘ হিন্দু হৃদয়সম্রাট বালাসাহেব ঠাকরে মহারাষ্ট্র সমৃদ্ধি মহামার্গ সম্পূর্ণভাবে জনগণের জন্য খুলে গেল। এই ছয় লেনের গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে মুম্বাই ও নাগপুরের মধ্যে দূরত্বকে সময়ের বিচারে প্রায় অর্ধেক করে দিয়েছে।

এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপমুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে ও অজিত পাওয়ারসহ মহায়ুতি সরকারের একাধিক মন্ত্রী। দীর্ঘ প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ ও রাজনৈতিক দৃঢ়তার মধ্য দিয়ে নির্মিত এই প্রকল্পে খরচ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ₹৬১,০০০ কোটিরও বেশি, যদিও প্রাথমিক অনুমান ছিল ₹৫৫,৫০০ কোটি।

Samruddhi Mahamarg: 76-km final stretch opens tomorrow; 701-km expressway  now fully ready | Mumbai News - The Indian Express

🔧 শেষ পর্বের জটিল বাস্তবতা

নাসিক ও থানে জেলার মধ্য দিয়ে যাওয়া শেষ অংশটি ছিল প্রকল্পের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়। এখানে প্রকৌশলগত চ্যালেঞ্জ ছিল পাহাড়ি ভূমি, গভীর বনাঞ্চল এবং প্রবল বর্ষণ। ইগতপুরি থেকে আমানে ৭৬ কিমি পথ তৈরি করতে হয়েছে অতিরিক্ত সতর্কতার সঙ্গে। এই অংশে নির্মিত হয়েছে ৫টি টুইন টানেল, যার মোট দৈর্ঘ্য ১০.৭৩ কিমি।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য টানেলটি ইগতপুরির কাছে, যা দেশের সবচেয়ে চওড়া টানেল হিসেবে পরিচিত—এর দৈর্ঘ্য ৮ কিমি এবং প্রস্থ ১৭.৬১ মিটার। এখানে রয়েছে ভারতের প্রথম টানেল ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম, যা তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রির বেশি হলে নিজে থেকেই চালু হয়।

এই অংশে নির্মাণে সহায়তা করেছে আফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। তাদের হাইড্রো ও আন্ডারগ্রাউন্ড ইউনিট প্রধান কে. মাল্লিকার্জুনা রাও জানিয়েছেন, “প্রবেশ পথ না থাকায় ও অরণ্য ঘেরা এলাকায় আমাদের সাবধানতায় কাজ করতে হয়েছে, তবুও সুরক্ষার প্রশ্নে কোনো আপস করা হয়নি।” এই পথে রয়েছে ১৭টি ভায়াডাক্ট, যার সম্মিলিত দৈর্ঘ্য ১০.৫৬ কিমি।

ইগতপুরি, খুটঘর এবং আমানে নির্মিত হয়েছে নতুন ইন্টারচেঞ্জ। ৬০টিরও বেশি বিদ্যুৎ লাইন স্থানান্তর এবং নতুন রেল ওভারব্রিজ নির্মাণও এই পর্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। কসারা ঘাটের ভয়ের বিকল্প হিসেবে এই রুট এখন ইগতপুরি থেকে কসারা যাত্রা মাত্র ৮ মিনিটে সম্পূর্ণ করে।

Samruddhi Mahamarg opens fully, cuts down travel time from Mumbai to Nagpur  by 9 hours | Mumbai News - The Indian Express

🌱 উন্নয়নের করিডোর: অর্থনীতির নতুন দিগন্ত

এই এক্সপ্রেসওয়ে শুধু একটি রাস্তা নয়, এটি মহারাষ্ট্রের অর্থনীতির একটি সম্পূর্ণ করিডোর। মহারাষ্ট্র স্টেট রোড ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন (MSRDC)-এর পরিকল্পনায় নির্মিত এই গ্রিনফিল্ড এক্সপ্রেসওয়ে ১০টি জেলার ২৬টি তালুকার ৩৯২টি গ্রামকে অতিক্রম করে।

নাগপুর, ওয়ার্ধা, অমরাবতী, ওয়াশিম, বুলঢানা, জালনা, ছত্রপতি সম্ভাজিনগর, আহিল্যনগর, নাসিক ও থানে জেলাকে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। পরোক্ষভাবে উপকৃত হবে চন্দ্রপুর, নানদেড, ধুলে, পালঘর ও রায়গড় জেলার মানুষ।

উপমুখ্যমন্ত্রী শিন্ডে বলেন, “আগে একজন কৃষককে মুম্বাইতে ফসল নিয়ে পৌঁছাতে তিন দিন লেগে যেত। এখন সেই একই দিনে পৌঁছাতে পারছে।”

এই এক্সপ্রেসওয়ে জেএনপিটি-কে কেন্দ্র করে রাজ্যের অভ্যন্তরভাগে একটি শক্তিশালী পরিবহন সংযোগ গড়ে তুলেছে, যা শিল্প, কৃষি ও পর্যটনের বিকাশে বিশাল সম্ভাবনার সৃষ্টি করবে।

🛠️ প্রযুক্তি, সংরক্ষণ ও টেকসই ভবিষ্যৎ

এটি কেবল একটি রাস্তাই নয়, এটি পরিবেশ ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণের এক চমৎকার উদাহরণ। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে স্মার্ট প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী ব্যবস্থা। বন্যপ্রাণীদের নিরাপদ চলাচলের জন্য তৈরি হয়েছে ৯২টি ওভারপাস ও ৮টি আন্ডারপাস।

৩.৩ মিলিয়নের বেশি দেশীয় প্রজাতির গাছ স্থানান্তর করা হয়েছে। রাস্তার পাশেই ১,০০০টি কৃষি পুকুর নির্মিত হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের জলসংকটে সহায়তা করবে।

এক্সপ্রেসওয়েতে রয়েছে বৃষ্টির জল ধরে রাখার ব্যবস্থা এবং তাপমাত্রা-সংবেদনশীল অগ্নিনির্বাপক প্রযুক্তি। ফড়নবীস জানান, “এই প্রযুক্তি তাপমাত্রা ৬০ ডিগ্রি ছাড়ালে নিজে থেকেই সক্রিয় হয় এবং ৩০ ডিগ্রির নিচে নামলে বন্ধ হয়ে যায়।”

এছাড়া, নির্ধারিত সর্বোচ্চ গতিসীমা সমতলে ১২০ কিমি/ঘণ্টা এবং ঘাট অঞ্চলে ১০০ কিমি/ঘণ্টা রাখা হয়েছে, যাতে সুরক্ষার সঙ্গে গতিও বজায় থাকে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর মহারাষ্ট্রের হৃদপিণ্ডে গড়ে উঠল এই সুবিশাল পরিকাঠামো। এটি কেবল যাত্রা নয়, এটি মহারাষ্ট্রের ভবিষ্যতের পথে এক দৃঢ় পদক্ষেপ। নাগরিক, কৃষক, শিল্পপতি ও পর্যটকদের জন্য এই মহামার্গ অর্থনৈতিক গতি, পরিবহন ব্যবস্থার সহজতা এবং সামাজিক সংযোগের এক ঐতিহাসিক সেতু হয়ে রইল।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply