ভারতে চরম দারিদ্র্যের হার গত দশকে অভূতপূর্ব মাত্রায় কমে এসেছে, যা নতুন আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখার পরিমাপেও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, $৩ দৈনিক আয় সীমা ব্যবহারের পরেও দেশের চরম দরিদ্রের সংখ্যা নাটকীয় হারে কমেছে। এই অর্জন শুধু পরিসংখ্যানের সংখ্যা নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতির মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। তবে মহামারীর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, যা ভবিষ্যত পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
Story Highlights:
দশ বছরে ভারতের চরম দারিদ্র্যের হার কমে মাত্র ৫.৩ শতাংশে।
বিশ্বব্যাংক $২.১৫ থেকে $৩ দৈনিক দারিদ্র্যের নতুন সীমা নির্ধারণ করেছে।
২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত প্রায় ১৭১ মিলিয়ন মানুষ দারিদ্র্যের নিচ থেকে মুক্ত।
গ্রামীণ ও শহরের দারিদ্র্য কমে পার্থক্য সংকুচিত হয়েছে।
মহামারীর কারণে জিডিপি কিছুটা কম হলেও দ্রুত পুনরুদ্ধার সম্ভব।
খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি দরিদ্রতা হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে।
ভারতে দারিদ্র্যের চিত্র গত দশকে একেবারে বদলে গেছে। ২০১১-১২ সালে দেশের প্রায় ২৭.১ শতাংশ মানুষ চরম দারিদ্র্যের কবলে ছিল, অর্থাৎ তারা দৈনিক মাত্র $২.১৫ বা তার কম আয় করতেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বব্যাংকের নতুন পরিসংখ্যান প্রকাশিত হওয়ার পর দেখা গেছে, দেশের এই চরম দারিদ্র্যের হার এখন মাত্র ৫.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। এটি শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক অগ্রগতির বড় সাক্ষী।
ভারতে চরম দারিদ্র্যের হার এক দশকে কমে ৫.৩ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ২০১১-১২ সালে ছিল ২৭.১ শতাংশ। এ সময় বিশ্বব্যাংক তাদের দরিদ্রতার সীমারেখা বাড়িয়ে দৈনিক ২.১৫ ডলারের বদলে ৩ ডলার নির্ধারণ করেছে। ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ভারতের মুদ্রাস্ফীতির প্রেক্ষিতে, ২০২১ সালের মূল্যে ৩ ডলার মূল্যের নতুন দরিদ্রতার সীমা পুরানো ২.১৫ ডলারের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। এই পরিমাপ অনুযায়ী, ২০২২-২৩ সালে ভারতের দরিদ্রতার হার দাঁড়িয়েছে ৫.৩ শতাংশ।
২০১১-১২ সালে দৈনিক আয় ৩ ডলারের নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল প্রায় ৩৪ কোটি। কিন্তু ২০২২-২৩ সালে এই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭.৫ কোটি, যা স্বাভাবিক সংখ্যাতত্ত্বেও বিশাল পতন নির্দেশ করে। বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক রিপোর্টে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।
“যদিও এই পরিবর্তনের ফলে বিশ্বব্যাপী চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা ১২৫ মিলিয়ন বৃদ্ধি পেয়েছে, তবুও ভারত একটি ইতিবাচক পরিসংখ্যানগত ব্যতিক্রম হিসেবে উঠে এসেছে। উন্নততর তথ্য ও আধুনিক সমীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে ভারত কেবলমাত্র উর্ধ্বতন সীমা সহ্য করেনি, বরং দারিদ্র্য হ্রাসের ব্যাপক প্রমাণও দেখিয়েছে,”
জানিয়েছে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB) ৭ জুন প্রকাশিত তাদের তথ্যপত্রে।
বিশ্বব্যাংক আন্তর্জাতিক দরিদ্রতার সীমারেখা (IPL) আপডেট করে ২০১৭ সালের ২.১৫ ডলার থেকে ২০২১ সালের ৩ ডলারে উন্নীত করেছে। প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (PIB) ৭ জুন প্রকাশিত তথ্যনুসারে, এই পরিবর্তনে বিশ্বব্যাপী চরম দারিদ্র্যের সংখ্যা ১২৫ মিলিয়ন বাড়লেও, ভারতের ক্ষেত্রে ফলাফল আলাদা এবং ইতিবাচক।
PIB এর তথ্য অনুযায়ী, উন্নত ডেটা ও নতুন সমীক্ষা পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা গেছে, ভারতের দরিদ্রতার হার নতুন উচ্চ সীমা সত্ত্বেও ব্যাপকভাবে কমেছে। এটি একটি বিশেষ উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যানগত ফলাফল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের একটি নতুন রিপোর্ট অনুযায়ী, নতুন দরিদ্রতার সীমারেখা আন্তর্জাতিকভাবে চরম দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ২২৬ মিলিয়ন বাড়াতে পারতো। তবে ভারতের তথ্য সংশোধনের কারণে বিশ্বব্যাপী দরিদ্র মানুষের সংখ্যা মাত্র ১২৫ মিলিয়ন বেড়েছে।
“ভারতের সংশোধিত তথ্য নিজেই ১২৫ মিলিয়ন মানুষের দারিদ্র্যের সংখ্যা কমিয়েছে,”
-রিপোর্টে বলা হয়েছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারতে দৈনিক আয় ৩ ডলারের নিচে থাকা মানুষের সংখ্যা ছিল ৫৪,৬৯৫,৮৩২। এই হিসেবে ২০২৪ সালে $৩ দৈনিক আয়ের ভিত্তিতে দরিদ্রতার হার ৫.৪৪ শতাংশ। ২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ পর্যন্ত চরম দারিদ্র্যের হার ১৬.২ শতাংশ থেকে কমে ২.৩ শতাংশে নেমে এসেছে। পাশাপাশি নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের দরিদ্রতার হার ৩৩.৭ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।
“দরিদ্র্য হ্রাসে বিনামূল্যে এবং সাশ্রয়ী মূল্যের খাদ্য সরবরাহের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ, এবং গ্রাম ও শহরের মধ্যে দরিদ্রতার ব্যবধান কমেছে,”
সবচেয়ে জনবহুল পাঁচটি রাজ্য দেশের চরম দরিদ্র মানুষের ৫৪ শতাংশেরও বেশি অংশ দখল করে রেখেছে।
অর্থনীতির দিক থেকে, রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২৫ অর্থবছরে ভারতের প্রকৃত জিডিপি মহামারী পূর্বের প্রবণতার তুলনায় প্রায় ৫ শতাংশ কম। “বিশ্বজুড়ে বর্তমান অনিশ্চয়তা নিয়ন্ত্রিতভাবে সমাধান হলে ২০২৭-২৮ সালের মধ্যে বৃদ্ধি ধীরে ধীরে পুনরায় স্বাভাবিক পর্যায়ে পৌঁছাবে,” রিপোর্টে উল্লেখ আছে। তবে “বিশ্বব্যাপী নীতি পরিবর্তনের কারণে উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি এখনো বিদ্যমান। বাণিজ্যিক উত্তেজনা ভারতের রফতানির চাহিদা কমিয়ে দিতে পারে এবং বিনিয়োগ পুনরুদ্ধারে বিলম্ব ঘটাতে পারে,” প্রতিবেদনে সতর্কবার্তা দেয়া হয়েছে।
বর্তমান হিসাব ঘাটতি ২০২৬-২৮ অর্থবছরের মধ্যে জিডিপির প্রায় ১.২ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে এবং মূলধন প্রবাহের মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণে তহবিলিত থাকবে। “বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ জিডিপির ১৬ শতাংশের কাছাকাছি স্থিতিশীল থাকার প্রত্যাশা করা হচ্ছে,” রিপোর্টে বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০১১-১২ থেকে ২০২২-২৩ অর্থাৎ এক দশকে ভারত ১৭১ মিলিয়ন মানুষকে চরম দারিদ্র্যের হাত থেকে উদ্ধার করেছে।
“গত দশকে ভারত দারিদ্র্যের ব্যাপক হ্রাস করেছে। ২০১১-১২ সালে যেখানে চরম দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬.২ শতাংশ, তা ২০২২-২৩ সালে নেমে এসেছে ২.৩ শতাংশে। ফলে ১৭১ মিলিয়ন মানুষ এই সীমারেখার উপরে উঠে এসেছে,”
এপ্রিল মাসে প্রকাশিত ‘দরিদ্র্য ও সাম্য বুলেটিন’-এ বিশ্বব্যাংক বলেছিল।
গ্রামীণ চরম দারিদ্র্যের হার ১৮.৪ শতাংশ থেকে কমে ২.৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং শহুরে ক্ষেত্রে তা ১০.৭ শতাংশ থেকে ১.১ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে গ্রাম ও শহরের দরিদ্রতার ব্যবধান ৭.৭ শতাংশ পয়েন্ট থেকে সংকুচিত হয়ে ১.৭ শতাংশ পয়েন্টে নেমে এসেছে।
ভারতে গত এক দশকে চরম দারিদ্র্যের হার অভূতপূর্ব হারে কমে এসেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির শক্তিশালী প্রমাণ। বিশ্বব্যাংকের নতুন দারিদ্র্যরেখা অনুসারে এই সফলতা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্রতা হ্রাসে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে সরকার। তবে বৈশ্বিক অস্থিরতা ও মহামারীর প্রভাব থাকা সত্ত্বেও দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আরও সজাগ পরিকল্পনার প্রয়োজন। দারিদ্র্য বিমোচনে এই অর্জন দেশের জন্য গর্বের বিষয় এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনার সূচনা।