এমজিএনআরইজিএস তহবিল বন্ধ : পশ্চিমবঙ্গ হারাল ₹২২,০০০ কোটি, অন্য রাজ্যে বরাদ্দের উৎসব
মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্পে (MGNREGS) অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় তহবিল বন্ধ রয়েছে ২০২২ সালের মার্চ থেকে। তিন বছর ধরে রাজ্যের কোষে এক পয়সাও আসেনি, যার সম্ভাব্য ক্ষতির পরিমাণ ₹২২,০০০ কোটি। অথচ বরাদ্দের খেলা থেমে থাকেনি—তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, বিহার ও মহারাষ্ট্রে গিয়েছে অতিরিক্ত ₹১৩,০০০ কোটি। প্রকল্পের বরাদ্দ প্রায় অপরিবর্তিত থেকেও এই অদ্ভুত বিন্যাস সকলের মনে প্রশ্ন তুলেছে—কারা পেল? কেন পেল? আর, পশ্চিমবঙ্গই বা হারাল কেন?
📌 স্টোরি হাইলাইটস
এমজিএনআরইজিএস প্রকল্পে অর্থ অপব্যবহারের অভিযোগে ₹২২,০০০ কোটির কেন্দ্রীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত পশ্চিমবঙ্গ
২০২২ সালের মার্চ থেকে অর্থছাড় সম্পূর্ণ বন্ধ
রাজ্যটি অযোগ্য হওয়ায় সেই অর্থ পুনর্বণ্টিত হয়েছে তামিলনাড়ু, বিহার, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে
এই চার রাজ্য FY23-FY25 সময়কালে পেয়েছে অতিরিক্ত ₹১৩,০০০ কোটি
কেন্দ্রীয় মোট বরাদ্দ স্থির থেকেছে ₹৮৬,০০০-₹৮৮,০০০ কোটির মধ্যে
কোভিড সময়ে (FY21) প্রকল্পে খরচ হয়েছিল সর্বাধিক ₹১.১ লক্ষ কোটি
গ্রামে রোজগার নিশ্চিত করতে গঠিত দেশের অন্যতম বৃহৎ সামাজিক প্রকল্প ‘মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প’ বা এমজিএনআরইজিএস-এর বরাদ্দ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ চরম ধাক্কার মুখে পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে—প্রকল্পের অর্থে ব্যাপক দুর্নীতি ও তহবিল অপব্যবহার হয়েছে রাজ্যে, যার জেরে প্রায় ₹২২,০০০ কোটি টাকার কেন্দ্রীয় সহায়তা হারিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিগত তিন অর্থবছরে (FY23 থেকে FY25 পর্যন্ত)।এই প্রকল্পের অধীনে বরাদ্দ বন্ধ থাকায় যে বিপুল পরিমাণ অর্থ পশ্চিমবঙ্গ পেতে পারত, তা সম্ভাব্যভাবে পুনর্বণ্টিত হয়েছে তামিলনাড়ু, উত্তরপ্রদেশ, বিহার এবং মহারাষ্ট্রের মধ্যে। তিন বছরে এই চার রাজ্য অতিরিক্ত ₹১৩,০০০ কোটি পেয়েছে, যদিও কেন্দ্রের বার্ষিক বরাদ্দ স্থিতিশীল থেকেছে ₹৮৬,০০০–₹৮৮,০০০ কোটির মধ্যেই। FY26-এর জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ₹৮৬,০০০ কোটি।
এত বিশাল অঙ্কের অর্থরাজস্ব বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে শুধু প্রকল্প থেমে যাওয়া নয়—এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ দিনমজুর, গ্রামীণ পরিবার, ওয়ার্ড লেভেলে কর্মরত আধিকারিক, পঞ্চায়েত কর্মী ও গ্রামীণ অর্থনীতির সঞ্চালন ব্যবস্থা। এই আর্থিক আঘাত কার্যত এক প্রজন্মের রোজগারের সম্ভাবনাকেই স্তব্ধ করে দিয়েছে।
২০২২ সালের ৯ই মার্চ থেকে কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা না মানার কারণে MGNREG আইনের ২৭ নম্বর ধারা প্রয়োগ করে পশ্চিমবঙ্গের জন্য ফান্ড ছাড় সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। FY22-এ রাজ্যটি ₹৭,৫০৮ কোটি বরাদ্দ পেলেও পরবর্তী তিন অর্থবছরে কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি।
একজন কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের মতো বড় রাজ্য ফান্ড না পেলেও প্রকল্পে কোনও অর্থ সাশ্রয় হয়নি। বরং সেই অর্থ অন্যান্য রাজ্যে বণ্টিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে পশ্চিমবঙ্গ যদি আবার যোগ্যতা অর্জন করে, তবে বরাদ্দ পুনরায় শুরু হতে পারে এবং তহবিলের পরিমাণ বাড়তেও পারে।
FY21 অর্থবছরে কোভিড পরিস্থিতিতে প্রকল্পের সর্বোচ্চ বরাদ্দ হয়েছিল ₹১.১ লক্ষ কোটি, যখন গ্রামীণ বিপর্যয় বাস্তব ছিল। পরবর্তী সময়ে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ স্বাভাবিক হওয়ায় এবং অপচয় ঠেকাতে পদক্ষেপ নেওয়ায় ব্যয় হ্রাস পেতে শুরু করে। FY22-এ ব্যয় ছিল ₹৯৬,৮১২ কোটি, FY23-এ ₹৮৮,২৯০ কোটি, FY24-এ ₹৮৮,২১৭ কোটি এবং FY25-এ ₹৮৫,৭৭১ কোটি।
তামিলনাড়ু FY23-এ এই প্রকল্পের অধীনে ₹৯,৭০৭ কোটি পেয়েছিল, FY24-এ তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ₹১২,৬০৩ কোটি। তবে রাজ্য প্রকল্পে মেশিন ব্যবহারের অভিযোগ ওঠায় এবং নিয়ম আরও কড়া হওয়ায় FY25-এ বরাদ্দ কমে দাঁড়ায় প্রায় ₹৭,৬০০ কোটিতে।
বিহার FY22-এ পেয়েছিল ₹৫,৪০৭ কোটি, যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে FY25-এ ছাড়িয়ে যায় ₹৬,৭০০ কোটি। উত্তরপ্রদেশের বরাদ্দ FY22-এর ₹৮,৫১০ কোটি থেকে FY23-এ পৌঁছেছিল ₹১০,২৬৯ কোটিতে, তবে FY25-এ কিছুটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়ায় ₹৯,৭০০ কোটি। মহারাষ্ট্র, যা এই প্রকল্পে তুলনামূলকভাবে কম অংশ পেত, FY22-এ পেয়েছিল ₹২,০৫৬ কোটি, যা FY25-এ বেড়ে পৌঁছেছে ₹৪,৯০০ কোটিতে।
উত্তরপ্রদেশ FY23-এ পেয়েছিল ₹১০,২৬৯ কোটি, যা FY25-এ কিছুটা কমে দাঁড়ায় ₹৯,৭০০ কোটি। বিহার FY22-এ পেয়েছিল ₹৫,৪০৭ কোটি, এবং ধাপে ধাপে বেড়ে FY25-এ তা পৌঁছেছে ₹৬,৭০০ কোটিরও বেশি। অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র, যেটি আগে তুলনামূলক কম বরাদ্দ পেত, FY22-এ পেয়েছিল ₹২,০৫৬ কোটি, যা FY25-এ বেড়ে হয়েছে ₹৪,৯০০ কোটি।
মহারাষ্ট্র, যা আগে এই প্রকল্পে তুলনামূলকভাবে কম অর্থ পেত, সেখানে FY22-এ বরাদ্দ ছিল মাত্র ₹২,০৫৬ কোটি। কিন্তু তিন বছরের মধ্যে সেই অঙ্ক দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে FY25-এ পৌঁছেছে ₹৪,৯০০ কোটিতে।
এই প্রকল্পের লক্ষ্য, দেশের গ্রামীণ পরিবারগুলিকে বছরে ১০০ দিনের নিশ্চয়তাপ্রাপ্ত মজুরি ভিত্তিক অদক্ষ শ্রমদানের সুযোগ করে দেওয়া, মূলত অফ-সিজনের সময়ে।এই প্রকল্পের আওতায় পরিবারগুলির প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যরা স্বেচ্ছায় অদক্ষ শারীরিক শ্রমে যুক্ত হতে পারেন, বিশেষত অফ-সিজনের সময় যখন গ্রামে কাজের সুযোগ তুলনামূলক কম থাকে। রাজ্যভিত্তিক এই তহবিল বণ্টনের গতিপ্রকৃতি প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্ব এবং প্রশাসনিক নির্ভরযোগ্যতার বাস্তবচিত্র স্পষ্ট করে তোলে।
সরকারি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ ফের যোগ্য হলে প্রকল্পে রাজ্যের অংশ বৃদ্ধি পেতে পারে। ততদিন পর্যন্ত অন্য রাজ্যগুলিই সেই ফান্ডের সুবিধাভোগী হিসেবে থাকবে।