মানুষের এক ধাপ দূরে HKU5 ভাইরাস, সতর্ক করছে বিজ্ঞান

একটি নতুন গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে—বাদুড়ঘেঁষা HKU5 ভাইরাস হয়তো মাত্র একটিমাত্র জিনগত পরিবর্তনের পরই মানুষে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। Nature Communications-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় উঠে এসেছে, MERS-CoV-এর আত্মীয় এই ভাইরাসটি আগে কখনও এতটা মানবঘনিষ্ঠ ছিল না। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, AI প্রযুক্তিতে স্পাইক প্রোটিনের বিবর্তন মডেল তৈরি করে সংক্রমণের আশঙ্কা স্পষ্ট হয়েছে। মিন্ক-এ সংক্রমণের নজিরও মিলেছে। গবেষণায় সম্ভাব্য প্রতিরোধের উপায়ও চিহ্নিত হয়েছে। আপাতত আতঙ্ক নয়, কিন্তু প্রস্তুতির প্রয়োজন জোরালোভাবে জানাচ্ছে বিজ্ঞান সমাজ।

🔎 গল্পের গুরুত্বপূর্ণ দিক (Story Highlights):

  • বাদুড়ঘেঁষা ভাইরাস HKU5-এর সম্ভাব্য মানব সংক্রমণের প্রমাণ মেলে।

  • ভাইরাসটি MERS-CoV-এর আত্মীয়—যার প্রাণঘাতী হার প্রায় ৩৪%।

  • AI টুল AlphaFold 3 ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনের মানব কোষে সংযোগ সম্ভাবনা তুলে ধরে।

  • চীনে মিন্ক প্রাণীতে সংক্রমণ ঘটার ঘটনা মানুষে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ায়।

  • শি ঝেংলি’র গবেষণায় HKU5-CoV-2 মানব কোষে সংক্রমণ সক্ষম প্রমাণিত হয়েছিল।

  • গবেষণায় সম্ভাব্য ওষুধ ও অ্যান্টিবডির খোঁজ মিলেছে।

মানুষের দিকে এগোচ্ছে HKU5 ভাইরাস? এক ধাপের ব্যবধানে নতুন আশঙ্ক

একটি সম্প্রতি প্রকাশিত গবেষণায় নতুন করে দুশ্চিন্তার ইঙ্গিত মিলেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা দল Nature Communications–এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে জানিয়েছেন, বাদুড় জাতীয় ভাইরাসের একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী—HKU5 ভাইরাস—মাত্র একটিমাত্র জেনেটিক পরিবর্তনের ফলে মানুষকেও সংক্রমিত করতে পারে। এতদিন পর্যন্ত বিজ্ঞানীদের দৃষ্টি এই ভাইরাসটির দিকে বিশেষভাবে ছিল না, কারণ এটি ছিল অনেকটাই গোপন ও নিরব ঘাতকের মতো। তবে নতুন গবেষণাটি সেই ধারণাকে আমূল বদলে দিয়েছে।

ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটি, ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (Caltech) এবং ইউনিভার্সিটি অফ নর্থ ক্যারোলিনা’র যৌথ উদ্যোগে সম্পন্ন হওয়া এই গবেষণায় জানানো হয়েছে যে, এই ভাইরাসটির মধ্যে রয়েছে এমন সব জৈব উপাদান, যা কোষ সংক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, HKU5 ভাইরাস হয়তো মানবদেহ সংক্রমণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে, এবং শুধু একটি মিউটেশনই তার দিক বদলে দিতে পারে।

গবেষণার মুখ্য লেখক এবং ভাইরোলজিস্ট ডঃ মাইকেল লেটকো বলেছেন,

“HKU5 ভাইরাস সম্পর্কে অতীতে খুব একটা তথ্য ছিল না। তবে আমাদের গবেষণায় উঠে এসেছে যে, এই ভাইরাসটি কোষে প্রবেশ করার উপযোগী যন্ত্রাংশ বহন করে। এতদিন যা শুধু বাদুড়ের শরীরে সীমাবদ্ধ ছিল, সেটি এক ধাপের পরিবর্তনে মানবদেহেও প্রবেশ করতে পারে।”

স্পাইক প্রোটিন এবং সংক্রমণের পথ

এই ভাইরাসটির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এর স্পাইক প্রোটিন, যা অনেকটা SARS-CoV-2 (Covid-19 এর ভাইরাস)–এর মতো কাজ করে। এটি হোস্ট কোষের ACE2 রিসেপ্টরের সঙ্গে আবদ্ধ হয়ে সংক্রমণ ঘটায়। যদিও এখন পর্যন্ত HKU5 ভাইরাস শুধু বাদুড়ের ACE2 রিসেপ্টরের সঙ্গে আবদ্ধ হতে পারে, তবে গবেষকরা বলছেন, এটি এমন একটি ভাইরাস যার গঠন এমনভাবে তৈরি যে একটি ক্ষুদ্র জেনেটিক পরিবর্তনই এর লক্ষ্য বদলে দিতে পারে। তখন মানব কোষে সংক্রমণ ঘটানো তার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠবে।

চীন থেকে আগত তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাস ইতিমধ্যেই মিন্ক প্রজাতির প্রাণীতে সংক্রমণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। এটি স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে, ভাইরাসটি প্রজাতি পরিবর্তন করে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই ধরনের পরিবর্তন ইতিহাসে নতুন নয়। অনেক ভাইরাসই আগে পশুদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, কিন্তু মিউটেশন ও অন্যান্য জিনগত রদবদলের মাধ্যমে মানুষের শরীরেও প্রবেশ করেছে। করোনাভাইরাস সেই উদাহরণের মধ্যেই পড়ে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে ভবিষ্যতের ঝুঁকি চিহ্নিত

গবেষকরা AI প্রযুক্তির সর্বাধুনিক সফটওয়্যার AlphaFold 3 ব্যবহার করে HKU5 ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের সম্ভাব্য বিবর্তনের নমুনা তৈরি করেছেন। এই সফটওয়্যার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এমন সব মডেল তৈরি করেছে যা দেখিয়েছে, ভবিষ্যতে ভাইরাসটি কীভাবে মানব কোষে সংযোগ ঘটাতে পারে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, সফটওয়্যার দিয়ে তৈরি এই তথ্যগুলি গবেষণাগারে পরীক্ষিত ফলাফলের সঙ্গে মিলে গেছে। ফলে বিজ্ঞানীরা এই বিষয়ে নিশ্চিত যে, ভাইরাসটির আচরণ ও সংক্রমণপথ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা এখন অনেকটাই সম্ভব।

পুরনো গবেষণার সঙ্গে নতুন গবেষণার সাদৃশ্য

এই গবেষণার সঙ্গে মিলে গেছে এক সময় চিনের বিখ্যাত ভাইরোলজিস্ট শি ঝেংলি’র গবেষণা, যাঁকে ‘ব্যাটওম্যান’ নামেও ডাকা হয়। তার গবেষণাতেই প্রথম দেখা যায় যে, HKU5-CoV-2 নামক ভাইরাসটি মানুষের কোষে, এমনকি শ্বাসপ্রশ্বাস ও হজমতন্ত্রের পরীক্ষামূলক মডেলেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই নতুন গবেষণা সেই পূর্ববর্তী আশঙ্কাকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে।

প্রতিরোধ এবং প্রস্তুতির পথ

গবেষকরা বলছেন, যদিও এখনই আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি, তবে প্রস্তুতি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। HKU5 ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে কেমন প্রতিক্রিয়া হতে পারে তা অনুমান করে বিজ্ঞানীরা কিছু মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি এবং অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ চিহ্নিত করেছেন, যা ভবিষ্যতে কাজে লাগানো যেতে পারে।

গবেষণার প্রধান ডঃ লেটকো বলেছেন,

“এটি এমন একটি সময়, যখন আতঙ্ক নয়, বরং বিজ্ঞানের আলোকে আগাম প্রস্তুতিই সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।”

এই গবেষণাপত্র এমন এক দরজা খুলে দিল, যেখানে আগামী দিনের সংক্রমণ রোধের কৌশল নির্ধারণে বিজ্ঞানীদের জন্য নতুন দিশা তৈরি হয়েছে। এখন অপেক্ষা শুধু সময়ের—HKU5 ভাইরাস সত্যিই মানুষকে সংক্রমিত করে কিনা, না কি আমরা আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়ে সেটিকে ঠেকিয়ে দিতে পারি।

HKU5 ভাইরাস নিয়ে নতুন গবেষণা আমাদের আরও একবার মনে করিয়ে দিল, অদৃশ্য জীবজগতের ভিতরেই লুকিয়ে থাকতে পারে আগামী দিনের মহা সংকট। যদিও এই ভাইরাস এখনো মানুষের শরীরে প্রবেশ করেনি, বিজ্ঞানীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন—এটি আর কল্পনা নয়, প্রস্তুতির সময় এখনই। প্রযুক্তি, গবেষণা এবং সচেতনতায় আগাম পদক্ষেপই হতে পারে ভবিষ্যতের বিপর্যয় ঠেকানোর একমাত্র উপায়। আতঙ্ক নয়, বিজ্ঞানের আলোয় ভরসাই এখন সবচেয়ে বড় অস্ত্র।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply