আরসিবি জয়ের উদ্‌যাপনে চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে মর্মান্তিক পদদলিত দুর্ঘটনা ঘটে, যেখানে প্রাণ হারান ১১ জন এবং আহত হন ৪৭ জন।
একটি বিজয়ের উল্লাস কীভাবে পরিণত হল হৃদয়বিদারক বিপর্যয়ে—এই প্রশ্নে স্তব্ধ বেঙ্গালুরু। প্রস্তুতির ত্রুটি, নিরাপত্তার অভাব এবং অতিরিক্ত ভিড় মিলে ঘটায় চরম ট্র্যাজেডি। স্টেডিয়ামের সীমিত পরিকাঠামো ভেঙে পড়ে লাখো উন্মাদ জনতার চাপে। পুলিশ অনুমতি না দিলেও আয়োজিত হয়েছিল শোভাযাত্রা। এক মুহূর্তের আনন্দ বদলে যায় দীর্ঘশ্বাসে। ঘটনার নেপথ্য রাজনীতি ও প্রশাসনিক ব্যর্থতা ঘিরে শুরু হয়েছে তুমুল বিতর্ক—এই প্রতিবেদনে মিলবে ঘটনার পূর্ণ বিবরণ।

📌 Quick Read Box (AI Generated Summary)

  • দুর্ঘটনার সময় উপস্থিত জনসংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ

  • স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ছিল মাত্র ৩৫ হাজার

  • পদদলিত হয়ে মৃত্যু: ১১ জন, আহত: ৪৭ জন

  • সবচেয়ে কমবয়সী নিহত: ১৪ বছরের দিব্যানশি

  • পুলিশ অনুমতি না দিলেও অনুষ্ঠিত হয় বিজয় উদ্‌যাপন

  • দুই ভেন্যুতে একসঙ্গে প্রোগ্রাম হওয়ায় ছড়াল নিরাপত্তা সংকট

  • মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ও রাজনীতি উত্তপ্ত

নিহতদের তালিকায় কিশোরদের আধিক্য

হঠাৎ ভেঙে পড়ল উদ্‌যাপনের উন্মাদনা। বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে ঘটে গেল হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের আইপিএল ট্রফি জয়ের পর উদ্‌যাপন করতে আসা অসংখ্য সমর্থকের ভিড় সামলাতে ব্যর্থ হল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তারই ফল—পদদলনের ঘটনা। প্রাণ গেল ১১ জনের, আহত অন্তত ৪৭।

নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো মাত্র ১৪ বছরের দিব্যাংশী। বাকিদের বয়সও ৪০-এর নীচে। মৃতদের মধ্যে তিনজন কিশোর ও ছয়জনের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। বেশিরভাগই বন্ধুদের সঙ্গে এসেছিলেন প্রিয় দলের জয় উদ্‌যাপন করতে। কেউ বেঙ্গালুরু শহরের বাসিন্দা, কেউ আবার দূর-দূরান্তের জেলা থেকে ছুটে এসেছিলেন।

১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রফি জিতেছিল আরসিবি। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছিল গোটা শহর। কিন্তু সেই আনন্দই কিছুক্ষণের মধ্যে পরিণত হয় মৃত্যুমিছিলের দৃশ্যে। হঠাৎ হুড়োহুড়ি, বিশৃঙ্খলা এবং অতিরিক্ত ভিড়ের চাপেই ঘটে যায় মর্মান্তিক ঘটনা।

নিহতদের নাম—দিব্যাংশী (১৪), দোরেশা (৩২), ভূমিক (২০), সহানা (২৫), আক্ষতা (২৭), মনোজ (৩৩), শ্রবণ (২০), দেবী (২৯), শিবলিঙ্গ (১৭), চিন্ময়ী (১৯) ও প্রজ্বাল (২০)। এই মর্মান্তিক ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে।

এই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে তড়িঘড়ি প্রস্তুতি, সঠিক পরিকল্পনার অভাব এবং অতিরিক্ত ভিড় সামলাতে না পারা। একাধিক স্তরে অব্যবস্থার অভিযোগ উঠেছে। একটি আনন্দঘন মুহূর্ত যে এমনভাবে প্রাণহানিতে পরিণত হবে, তা কল্পনা করতে পারেননি কেউই।

ভিআইপি অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা ব্যস্ত, চিন্নাস্বামিতে পর্যাপ্ত পুলিশ না থাকায় ঘটল বিপর্যয়

চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর এবার প্রশ্ন উঠেছে কর্ণাটক রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে। রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুর বিধান সৌধ প্রাঙ্গণে রাজ্যপাল থাওয়ার চাঁদ গেহলট, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া ও উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমারের উপস্থিতিতে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর দলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ঠিক এই একই সময়ে স্টেডিয়ামে চলছিল বিজয় উৎসব। দুটি ভিন্ন ভেন্যুতে আয়োজন তৈরি করে বিশাল নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ।

প্রত্যাশার চেয়েও অতিরিক্ত ভিড়

বিধান সৌধে ভিআইপি উপস্থিতির জন্য প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়, যার ফলে চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামের মতো বিপুল জনসমাগমের জায়গায় সীমিত সংখ্যক নিরাপত্তা কর্মী পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খায়। যেখানে স্টেডিয়ামের ধারণক্ষমতা ৩৫,০০০, সেখানে ভিড় হয় ৩ লক্ষেরও বেশি।

উল্লেখযোগ্যভাবে, বেঙ্গালুরু পুলিশ শুরুতেই বিজয় শোভাযাত্রার অনুমতি দেয়নি, নিরাপত্তা ঘাটতির কথা জানিয়ে। কিন্তু কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ও টিম আয়োজকরা পুলিশি নিষেধ উপেক্ষা করে পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যান। দুপুর ৩টা ১৪ মিনিট নাগাদ আরসিবি ঘোষণা করে বিজয় শোভাযাত্রা হবে এবং বিনামূল্যে পাস দেওয়া হবে—যা মুহূর্তেই জনতার ঢল নামিয়ে দেয় স্টেডিয়ামে।

প্রবেশ পদ্ধতি নিয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশ না থাকায় তৈরি হয় চরম বিশৃঙ্খলা। ‘ফার্স্ট কাম, ফার্স্ট সার্ভ‘ ভিত্তিতে প্রবেশাধিকার পাবেন—এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে। কেউ গেট টপকে ঢোকার চেষ্টা করেন, কেউ ব্যারিকেড ভেঙে এগিয়ে যান। নিরাপত্তারক্ষীরা নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হন। হুড়োহুড়িতে অনেকে পা পিছলে পড়ে যান এবং সেখান থেকেই শুরু হয় পদদলনের ঘটনা।

সরকারি সিদ্ধান্ত, অসঙ্গত ব্যবস্থাপনা ও পরিকল্পনার ঘাটতি নিয়ে এখন উঠছে সরাসরি প্রশ্ন। মৃত্যু মিছিলের এই দায় কে নেবে—সে উত্তর এখন খুঁজছে গোটা রাজ্য।

মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া ও রাজনৈতিক পাল্টাপাল্টি

চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামে পদদলনের ঘটনার পর রাজ্য সরকারের প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে যখন চারদিক থেকে সমালোচনা শুরু হয়েছে, সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, মৃতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেওয়া হবে।

তিনি বলেন, “এই ধরনের ঘটনা অনেক জায়গাতেই ঘটেছে। আমি এখন তা তুলনা করে আত্মপক্ষ সমর্থন করব না। কুম্ভমেলায়ও ৫০-৬০ জনের মৃত্যু হয়েছিল, কিন্তু আমি তখন কোনো সমালোচনা করিনি। কংগ্রেস যদি সমালোচনা করে, সেটা আলাদা বিষয়। আমি কি বা কর্ণাটক সরকার কি কখনও সমালোচনা করেছিল?”

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া দেন বিজেপি নেতা প্রহ্লাদ জোশী। তিনি বলেন, এই ঘটনার দায় সরকার এড়াতে পারে না। কুম্ভমেলা এবং চিন্নাস্বামির পরিস্থিতি এক নয়। পুলিশ যখন অনুমতি দেয়নি, তখন জোর করে শোভাযাত্রা কেন করানো হল?

তিনি আরও বলেন, “আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন—মৃত্যুর পরেও কি করে উদ্‌যাপন চালিয়ে গেলেন? উপমুখ্যমন্ত্রী ডি কে শিবকুমার কেন তাঁদের সংবর্ধনা দিতে গেলেন? ওঁরা তখন সেলফি তোলায় ব্যস্ত ছিলেন। সাধারণ মানুষের কী হল, কেউ ভাবেননি।”

প্রহ্লাদ জোশী জানান, “কুম্ভে অন্তত সংবেদনশীলভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়েছিল। এখানে তা হয়নি। এ ঘটনা নিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত।” তাঁর দাবি, এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত এবং রাজ্য সরকারকে তার জবাবদিহি করতে হবে। তিনি এটিকে ‘অত্যন্ত নিন্দনীয়’ ঘটনা বলে মন্তব্য করেন।

চিন্নাস্বামি স্টেডিয়ামের পদদলিত দুর্ঘটনা কেবল এক মুহূর্তের দুঃস্বপ্ন নয়, এটি সতর্কতার অভাবে সংগঠিত এক প্রাণঘাতী উদাহরণ। জনতার আবেগকে সম্মান জানিয়ে কোনও আয়োজন করার আগে প্রশাসনিক প্রস্তুতি ও নিরাপত্তা বিধানে যেন কোনও ফাঁক না থাকে—এই দুর্ঘটনা সেই শিক্ষা আরও একবার স্পষ্ট করে দিল। রাজনৈতিক দায় এড়িয়ে না গিয়ে, এমন ভবিষ্যৎ বিপর্যয় রোধে প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা ও দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। উৎসব তখনই অর্থবহ, যখন তা প্রাণনাশের কারণ না হয়। আনন্দের মাঝে যেন আর কখনও এমন কান্নার সুর না বাজে—এই প্রতিজ্ঞাই হোক এই ঘটনার একমাত্র প্রাপ্তি।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply