পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে এক অদ্ভুত পরিণতির মুখোমুখি হল জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর শীর্ষ মুখ মৌলানা আবদুল আজিজ। এক ভিডিও ঘিরে জন্ম নিচ্ছে নানা প্রশ্ন, আর দলীয় সূত্র বলছে হৃদরোগ, যদিও আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ নেই। বহু জঙ্গি ষড়যন্ত্রের ছায়াপাত ঘটানো এই নামটি শেষবার দেখা গেল নিথর দেহে। দাফনের স্থান—জইশের সদর দফতর বাহাওয়ালপুরে। কাকতালীয় না প্রয়োজনে সাজানো? ভারত-বিরোধী কর্মকাণ্ডের দীর্ঘ রূপরেখার ছায়ায় ঢাকা পড়ছে এই রহস্যমৃত্যু। ঘটনা কি শুধুই মৃত্যু, না কি শুরু আরও বড় কিছুর?

পাকিস্তানে রহস্যমৃত্যু: জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর শীর্ষ নেতা মৌলানা আবদুল আজিজ নেই

পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে অবস্থিত ভাক্কার জেলার কাল্লুর কোটের আশরাফওয়ালায় ২০২৫ সালের ২ জুন এক অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর সামনে এসেছে। মৃত্যু হয়েছে জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর উচ্চপদস্থ কমান্ডার মৌলানা আবদুল আজিজ-এর।

 মৃত্যু ও দাফন ঘিরে অস্পষ্টতা

মৌলানা আবদুল আজিজ-এর মৃত্যুর কারণ হিসেবে জইশ-ই-মোহাম্মদ দাবি করছে ‘হৃদরোগ’।কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন বা নিরপেক্ষ উৎস থেকে মৃত্যুর কোনো মেডিকেল সার্টিফিকেট প্রকাশ পায়নি।তাঁর দাফনের স্থান নির্ধারিত হয়েছে জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর বাহাওয়ালপুর সদর দফতরের ‘মারকাজ’-এ, যা এই গোষ্ঠীর আধ্যাত্মিক ও অপারেশনাল কেন্দ্রীয় স্থান।

ভিডিওচিত্র ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক বিদেশি গোয়েন্দা মাধ্যমের চ্যানেলে, যা মৃত্যুকে ঘিরে বিতর্ক আরও উসকে দিয়েছে।

 মৌলানা আবদুল আজিজ: পরিচিতি ও অতীত

মৌলানা আবদুল আজিজ ছিলেন জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর অন্যতম পুরনো কৌশলবিদ ও প্রচারক।ভারতের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, গোপন হামলার রূপরেখা তৈরিতে তাঁর ভূমিকা ছিল সক্রিয়।২০১৬ সালের নাগরোটার সেনা শিবিরে হামলা সহ একাধিক জঙ্গি কর্মকাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার ইঙ্গিত মেলে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ থেকে।

শুধু হামলার নকশা নয়, পাকিস্তানে উসকানিমূলক বক্তব্য ছড়ানোর ক্ষেত্রেও মৌলানা আবদুল আজিজ ছিলেন সরব।

 বাহাওয়ালপুর: কাকতালীয় না উদ্দেশ্যপ্রণোদিত?

বাহাওয়ালপুরে যেখানে তাঁর দাফন হচ্ছে, সেটি জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর মূল ঘাঁটি।ভারতের অপারেশন সিন্ধুর-এ এই এলাকাতেই প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল জইশের প্রশিক্ষণ শিবির ও অস্ত্রভাণ্ডার।বাহাওয়ালপুরকে ঘিরে পাকিস্তান প্রশাসনের বিশেষ নজরদারির প্রমাণ অতীতে মিলেছে বহুবার, অথচ এই মৃত্যু স্থানীয়ভাবে নির্বিঘ্নে গৃহীত হয়েছে বলে জানা যায়।

 নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের সংশয়

আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌলানা আবদুল আজিজ-এর মৃত্যু সময় ও স্থান উভয় দিক থেকে কাকতালীয় মনে হচ্ছে না।ঠিক এমন সময়ে তিনি মারা গেলেন, যখন পাকিস্তানের অভ্যন্তরে জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর কার্যকলাপ ঘিরে বাড়তি নজরদারি শুরু হয়েছে।পাকিস্তানে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন জইশ-ই-মোহাম্মদ সংশ্লিষ্ট নেতার নিকট-পরিচিত ব্যক্তিরা রহস্যজনকভাবে গুম বা নিহত হচ্ছেন, যার কোনো প্রত্যক্ষ তদন্ত সামনে আসেনি।

 ভিডিও ফুটেজের তাৎপর্য

মৃত্যুর কিছুক্ষণের মধ্যেই যে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে, সেটি কিছু নিরপেক্ষ বিশ্লেষকের মতে রেকর্ড করা হয়েছিল অন্তত একদিন আগে।ভিডিওতে দেখা যায়, মৌলানা আবদুল আজিজ একটি ঘরের মেঝেতে নিথর অবস্থায় পড়ে আছেন এবং চারপাশে কয়েকজন ব্যক্তি উপস্থিত, তবে কোনো চিকিৎসা সহায়তা দৃশ্যমান নয়।

এই ভিডিও প্রথম প্রকাশ পায় একটি বিদেশি গোয়েন্দা বিশ্লেষণভিত্তিক সোর্সে — OSINTTV।

 আন্তর্জাতিক প্রভাব ও পর্যবেক্ষণ

ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলির তরফে এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি, তবে জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর শীর্ষ নেতৃত্বে এই রকম মৃত্যু গোয়েন্দা পর্যবেক্ষণে স্পষ্টতই গুরুত্বপূর্ণ।আফগানিস্তান ও ইরানের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে জইশ-ই-মোহাম্মদ পুনর্গঠন করছে বলে যে রিপোর্ট উঠে এসেছে, তাতে মৌলানা আবদুল আজিজ-এর আকস্মিক অনুপস্থিতি ভবিষ্যতের গোষ্ঠীগত ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে।

এই মৃত্যুর পেছনে প্রকৃত কারণ কী, তা এখনও অস্পষ্ট। তবে এটি যে জইশ-ই-মোহাম্মদ-এর অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, পরিবর্তন অথবা নিরপেক্ষ পরিণতির ইঙ্গিত দিতে পারে, তাতে কোনো অতিরঞ্জন নেই। মৌলানা আবদুল আজিজ-এর দীর্ঘ ইতিহাস ও তাঁর শেষ অবস্থানকে ঘিরে যে অসংখ্য প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে, তা ভবিষ্যতে উপমহাদেশের নিরাপত্তা সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণেও প্রভাব ফেলতে পারে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply