কলকাতায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) সম্প্রতি একটি গোপন অভিযান পরিচালনা করেছে, যার মূল লক্ষ্য সন্দেহভাজন পাকিস্তানি গুপ্তচরদের খোঁজা। এই অভিযান থেকে ধরা পড়েছে এক প্রাক্তন সিআরপিএফ অফিসার, যিনি তথ্য পাচারের মাধ্যমে দেশের নিরাপত্তায় সংকট সৃষ্টি করার অভিযোগে জড়িত। শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চলার ফলে মোবাইল, ল্যাপটপসহ গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ করা হয়েছে। এই গোয়েন্দা খেলা কতদূর এগোয় এবং এর প্রভাব কতটা বিস্তৃত, তা জানার জন্য পাঠকদের জন্য এটি রহস্যময় ও আকর্ষণীয় এক অধ্যায়।
সূচিপত্র
Toggleএনআইএ’র অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত
জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) দক্ষিণ কলকাতার ডায়মন্ড হারবার রোডের এক ট্রাভেল এজেন্সির অফিসে অভিযান চালায়।এই জায়গা থেকে বহু মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ বাজেয়াপ্ত করা হয়।এনআইএ’র সূত্রে জানা গেছে, গত বছর এখান থেকে ইলেকট্রনিক ভাবে কিছু টাকা পাঠানো হয়েছিল প্রাক্তন সিআরপিএফ অফিসার মোটি রাম জাতের কাছে।
মোটি রাম জাত, যিনি প্রাক্তন সিআরপিএফ সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর, সম্প্রতি জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র নজরে আসেন পাকিস্তানি গুপ্তচর সন্দেহে। মে মাসে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর দিল্লিতে তাকে আটক করে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)। তদন্তে প্রকাশ পায়, তার স্ত্রীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে বিদেশি উৎস থেকে নিয়মিত অর্থ জমা হচ্ছিল, যার পরিমাণ ছিল ৩,৫০০ টাকা। এই আর্থিক লেনদেন সন্দেহাতীতভাবে তথ্য পাচারের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মোটি রাম জাতের ওপর নজর ছিল কারণ তিনি পাহালগাম এলাকায় কর্মরত ছিলেন, যেখানে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হন। এই সময় সেনাবাহিনীর কনভয়ের গতি-প্রকৃতি পাকিস্তানি গুপ্তচরদের কাছে গোপন তথ্য হিসেবে সরবরাহ করা হত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। মোটি রাম জাতের এই কার্যকলাপ নিয়ে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) আরও গভীর তদন্ত চালাচ্ছে এবং তার সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সন্দেহভাজনদের সন্ধান চলছে। এই ঘটনা পাকিস্তানি গুপ্তচরদের কার্যক্রম ও জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)‘র অভিযানকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।
কলকাতার অন্য স্থানে এনআইএ’র অভিযান
পূর্ব কলকাতার টপসিয়া এলাকায় অবস্থিত এক হোটেলে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) অভিযান চালিয়ে এক ব্যক্তিকে আটক করে। আটক ব্যক্তির কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ এবং একাধিক মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে, যা সন্দেহভাজন পাকিস্তানি গুপ্তচর সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই দিক থেকে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র তৎপরতা পুলিশের নজরেও রয়েছে, কারণ মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ থেকে পাওয়া ডিজিটাল আলামত পরবর্তী তদন্তের জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হয়।
এর পাশাপাশি, মোমিনপুর ও কিড্ডারপুরের বন্দরের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) অভিযান চালিয়েছে। এই অঞ্চলে সন্দেহভাজন পাকিস্তানি গুপ্তচরদের জাল বিস্তার বা তথ্য পাচারের প্রয়াস থাকতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে, জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) গোপনে এই এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে সম্ভাব্য সংযোগ ও আলামত সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই ধরণের অভিযান স্থানীয় ও জাতীয় নিরাপত্তার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যেখানে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র সক্রিয়তা সন্দেহভাজন পাকিস্তানি গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে আরও প্রমাণ সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
এনআইএ’র গোপনীয়তা বজায় রাখা
জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র সাম্প্রতিক অভিযান সম্পর্কিত গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়েছে বিশেষ সতর্কতায়। তদন্তে জড়িত কর্মকর্তারা মিডিয়ার কাছে এই অভিযান নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করেননি, ফলে সমস্ত তথ্য এখনও গোপনেই রয়েছে। এই ধরনের গোপনীয়তা রক্ষার মধ্যে দিয়ে জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) নিশ্চিত করছে যে, সন্দেহভাজন পাকিস্তানি গুপ্তচরদের বিরুদ্ধে তল্লাশি ও তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে না।
এনআইএ’র এই গোপনীয়তা বজায় রাখার নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অভিযানের সময়, বিশেষ করে কলকাতার সংবেদনশীল এলাকা ও সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের বিষয়ে। এর ফলে, কোনো অপ্রত্যাশিত তথ্য ফাঁস হওয়ার আশঙ্কা কমে যায় এবং অনুসন্ধানের পরবর্তী ধাপগুলো সুনির্দিষ্ট ও সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়। এই ধরণের গোপনীয়তা জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র তদন্তের গতি ও গভীরতায় প্রভাব ফেলে, যা সন্দেহভাজন পাকিস্তানি গুপ্তচরদের কার্যকলাপের পরিসর বোঝার জন্য অপরিহার্য।
কলকাতায় জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র তৎপরতা ও অভিযান থেকে স্পষ্ট যে, দেশের নিরাপত্তায় সন্দেহভাজন পাকিস্তানি গুপ্তচরদের উপস্থিতি এখনও চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। ধৃত ব্যক্তিদের ও জব্দ আলামতের ভিত্তিতে তদন্ত গভীর হচ্ছে, যা দেশের গোয়েন্দা ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নীতির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরে। এই প্রক্রিয়া দেশের সুরক্ষায় এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।