“কামাল হাসান“-এর একটি ভাষা-সম্পর্কিত মন্তব্যে দেশজুড়ে উঠেছে বিতর্কের ধ্বনি—”কন্নড় তামিল থেকে জন্ম নিয়েছে” এই উক্তির সূত্র ধরে সৃষ্টি হয়েছে ভাষাগত আবেগ, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া এবং জনরোষের এক জটিল আবহ। একদিকে কর্ণাটকে শুরু হয়েছে প্রতিবাদ, অন্যদিকে অভিনেতা নিজেই বলেছেন, “ভাষা নিয়ে কথা বলার যোগ্য নই।” এই নিবন্ধে বিশ্লেষণ করা হয়েছে কীভাবে এককথায় জন্ম নেয় ভাষা বিতর্ক, ছড়িয়ে পড়ে নিন্দার ঝড়, আর সামনে আসে ভাষা ও পরিচয়ের সূক্ষ্ম দ্বন্দ্ব।
সূচিপত্র
Toggle🔶 বিতর্কের সূত্রপাত: এক মন্তব্যে তোলপাড়
প্রখ্যাত অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ কামাল হাসান সম্প্রতি এক ভাষা-সংক্রান্ত মন্তব্য করে প্রবল ভাষা বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “কন্নড় ভাষা তামিল থেকে জন্ম নিয়েছে।” এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে একযোগে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে বিজেপি ও কংগ্রেস—দুই শিবিরই। তাদের মতে, এই মন্তব্যে কন্নড় ভাষার ইতিহাস ও গরিমাকে অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।
মূল বক্তব্য: “কন্নড় ভাষা তামিল থেকে জন্ম নিয়েছে”—এই বক্তব্যই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে।
দুই রাজনৈতিক দলের অভিন্ন প্রতিক্রিয়া: বিজেপি ও কংগ্রেস—উভয়ই সমালোচনায় সরব।
🔶 কামাল হাসানের সাফাই ও নতুন মন্তব্য
কামাল হাসান, যিনি নিজে তামিল জাতীয়তাবাদের এক প্রবক্তা হিসেবে পরিচিত, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে দেখে একটি ব্যাখ্যা দেন। তিনি বলেন, “আমি যা বলেছি তা ভালোবাসা থেকে বলেছি। বহু ঐতিহাসিকের কাছ থেকে ভাষার ইতিহাস শিখেছি। আমার বক্তব্যে কারও মনে কষ্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য ছিল না।”
ব্যাখ্যার মূল পয়েন্ট: “আমি কারও ভাষাকে অপমান করিনি। ইতিহাসের আলোকে একটি দৃষ্টিভঙ্গি দিয়েছি।”
আরও সংযোজন: “তামিলনাড়ু এমন এক রাজ্য যেখানে মেনন, রেড্ডি, তামিল এবং কন্নড়িয় আইয়েঙ্গার সবাই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।”
তবে বিতর্ক থামেনি। একপর্যায়ে তিনি বলেন, “রাজনীতিবিদরা ভাষা নিয়ে কথা বলার উপযুক্ত নন—আমিও নই।” এই বক্তব্যেও বিতর্কে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়।
🔶 কর্ণাটকে নিন্দার ঝড় ও প্রতিবাদ
ভাষা বিতর্ক ঘিরে কর্ণাটকের বিভিন্ন প্রান্তে নিন্দার ঝড় উঠে। বিশেষ করে, প্রো-কন্নড় সংগঠনগুলি প্রতিবাদে নেমে পড়ে। তারা দাবি তোলে, কামাল হাসান যেন নিঃশর্ত ক্ষমা চান।
প্রতিবাদের ধরন:
বেঙ্গালুরু, হুব্বলি, মাইসুরু, বেলাগাভি-সহ বহু জায়গায় পোস্টার পোড়ানো হয়।
◾ চলচ্চিত্র শিল্পের প্রতিক্রিয়া ও আলোচনা:
Thug Life সিনেমাকে ঘিরে বিতর্ক:
কামাল হাসান-এর আসন্ন চলচ্চিত্র ‘Thug Life’, যেটি মনিরত্নম পরিচালিত, তার মুক্তি নিয়ে কর্ণাটক চলচ্চিত্র মহলে আলোচনা শুরু হয়।
কিছু মহলে এই সিনেমার উপর আংশিক নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাবও তোলা হয়।
চলচ্চিত্র সংস্থার অবস্থান:
একটি আলোচনায় চলচ্চিত্র সংস্থার প্রতিনিধিরা মত প্রকাশ করেন, “ভাষা বিতর্ক কেবলমাত্র একটি সিনেমার বাজারকেই নয়, শিল্পের আন্তঃরাজ্য সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে।”
প্রো-কন্নড় সংগঠনগুলির তৎপরতা:
Karnataka Rakshana Vedike:
এই সংগঠনটি বেঙ্গালুরু পুলিশের কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের করে কামাল হাসান-এর মন্তব্যের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের ভাষায় বলা হয়, “এই মন্তব্য কর্ণাটকবাসীর আবেগে আঘাত হেনেছে এবং কন্নড় ভাষার মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছে।”
🔶 রাজনীতিকদের মন্তব্য
সিদ্ধারামাইয়া (কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী) বলেন, “কন্নড় ভাষার ইতিহাস হাজার হাজার বছরের পুরনো। কামাল হাসান তা জানেন না।”
বিজেপি কর্ণাটক সভাপতি বি.ওয়াই. বিজয়েন্দ্র বলেন, “তিনি কন্নড়কে অপমান করেছেন। তাঁকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।”
একজন বর্ষীয়ান অভিনেতা হিসেবে কামাল হাসান যেভাবে ভাষা বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন, তা দেশজুড়ে ভাষা-সংবেদনশীলতার প্রশ্ন তোলে। তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, ইতিহাসের নিরিখে বলা হলেও এটি ভুল ব্যাখ্যায় বদলে গেছে। এবং তার ফলে সৃষ্টি হয়েছে নিন্দার ঝড়, সামাজিক উত্তেজনা, এবং রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া।