দুর্ঘটনায় এক হাতে সবকিছু হারিয়েও হার মানেননি পার্বতী গোপকুমার। জীবনের চ্যালেঞ্জ তাঁর পথ আটকাতে পারেনি; বরং সেই চ্যালেঞ্জকেই পাথেয় করে তিনি হয়ে উঠেছেন এক গর্বিত আইএএস অফিসার। কেরালার সাধারণ ঘরের মেয়ে থেকে ভারতের শীর্ষ প্রশাসনিক দপ্তরে পৌঁছনোর এই লড়াই শুধু একক সাহসের নয়, এটা এক অধ্যবসায়ের শিল্প। বাঁ হাতে লেখা প্রতিটি অক্ষরে লুকিয়ে আছে অদম্য জেদের ইতিহাস। এই প্রতিবেদনে রইল সেই অনন্য অভিযাত্রার প্রতিচ্ছবি, যেখানে জীবন হারেনি, জিতেছে আশ্চর্য এক মানসিক দৃঢ়তা।
সূচিপত্র
Toggleশিক্ষাজীবন ও প্রস্তুতি: পার্বতী গোপকুমারের লক্ষ্যভেদী অধ্যায়
পার্বতী গোপকুমার – এই নামটি আজ শুধুই এক আইএএস অফিসার নন, বরং এক জীবনের চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে গড়ে ওঠা সাহসিকতার প্রতীক। তাঁর শিক্ষাজীবন ও প্রস্তুতি পর্বে প্রতিটি ধাপ ছিল সংগ্রামের, কিন্তু সেই সংগ্রামই তাঁকে করে তোলে অতুলনীয়। এবার দেখে নেওয়া যাক তাঁর প্রস্তুতির প্রতিটি সূক্ষ্ম পর্ব:
📚 প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা: বেঙ্গালুরু থেকে শুরু
পার্বতী গোপকুমার শিক্ষাজীবন শুরু করেন কেরালার স্থানীয় স্কুলে, কিন্তু তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষার সীমানা ছিল বিশাল।
বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ল’ স্কুল থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক হন, যেখানে প্রবেশের প্রতিযোগিতা নিজেই একটি যুদ্ধ।
তিনি ছিলেন একমাত্র ছাত্রী, যিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়েও পুরো কোর্স সফলভাবে সম্পন্ন করেন — যা ছিল শিক্ষাঙ্গনে এক বিরল নজির।
আইনের পড়াশোনার সময়ও পার্বতী গোপকুমার তাঁর নিজস্ব ছাপ রেখে যান বিতর্ক প্রতিযোগিতা, গবেষণা ও ছাত্র নেতৃত্বে।
🎓 পেশাগত দিশাবদল: আইনজীবী থেকে প্রশাসনিক যাত্রা
আইনের ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি আইনজীবী হিসেবে রেজিস্টার্ড হলেও, তাঁর অন্তরের লক্ষ্য ছিল একটাই — একজন আইএএস অফিসার হওয়া।
জীবনের চ্যালেঞ্জ ছিল তাঁর প্রতিনিয়ত সঙ্গী, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জকেই তিনি রূপান্তর করেন অনুপ্রেরণায়।
আইনজীবী হিসেবে কাজ করার সময়ই তিনি ঠিক করেন যে, আদালতের বাইরেও সমাজের জন্য কিছু করার আছে তাঁর।
🏫 পরিকল্পিত প্রস্তুতি: ফর্চুনস আইএএস একাডেমির অধ্যায়
তিরুবনন্তপুরমের ফর্চুনস আইএএস একাডেমি-তে তিনি ভর্তি হন, যা কেরালার অন্যতম সেরা UPSC কোচিং সংস্থা।
প্রতিদিন ৮–১০ ঘণ্টা পড়াশোনা, টেস্ট সিরিজ, গ্রুপ ডিসকাশন, মক ইন্টারভিউ—সবকিছুই ছিল তাঁর নিয়মিত রুটিনের অংশ।
তাঁর কোচিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা জানান, “পার্বতী গোপকুমার ছিল ক্লাসরুমের সবচেয়ে একাগ্র ও দৃঢ়ছাত্রী।”
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা থাকায় নোট নেওয়া, উত্তর লেখা সবই ছিল বাম হাতে—তবুও ছিল না একটুও অভিযোগ।
📌 প্রথম ব্যর্থতা ও দ্বিতীয় সাফল্য
২০২২ সালের প্রথম চেষ্টায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারলেও, পার্বতী গোপকুমার হাল ছাড়েননি।
দ্বিতীয় চেষ্টায়, ২০২৪ সালে তিনি অর্জন করেন অল ইন্ডিয়া র্যাঙ্ক ২৮২—এবং হয়ে ওঠেন একজন গর্বিত আইএএস অফিসার।
তাঁর আত্মবিশ্বাস ছিল এই: জীবনের চ্যালেঞ্জ যদি আমাকে আটকাতে না পারে, তাহলে UPSC তো কেবল এক ধাপ।
🌟 কিছু অজানা তথ্য: যা তাঁকে অনন্য করে তোলে
বাম হাতে লেখা রপ্ত করার জন্য তিনি শিশুপাঠ্য কার্সিভ রাইটিং বই ব্যবহার করতেন—এক অভিনব উদ্যোগ।
পরীক্ষায় অতিরিক্ত সময় পেলেও, তিনি সর্বদা নিয়ম মেনে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতেন নির্দিষ্ট সময়ে—যাতে নির্ভরতা না আসে।
ক্লাসে কখনোই ‘বিশেষ সুবিধা’ চাননি; নিজেকে কখনো “প্রতিবন্ধী” হিসেবে দেখতেই চাননি তিনি।
পার্বতী গোপকুমার শুধুই একজন আইএএস অফিসার নন, তিনি একটি সাহসিকতার সংজ্ঞা, যেখানে জীবনের চ্যালেঞ্জ ছিল সিঁড়ি, বাধা নয়। তাঁর শিক্ষাজীবন ও প্রস্তুতি এক গভীর অনুপ্রেরণা, যা আজকের প্রজন্মকে বলে—“দুর্বলতা নয়, জেদই শেষ কথা।”
🔁 এই নামটি মনে রাখুন — পার্বতী গোপকুমার, যিনি এক হাতে জাতির ভাগ্য লিখছেন!
জীবনের চ্যালেঞ্জ ও অদম্য ইচ্ছাশক্তি: পার্বতী গোপকুমারের লৌহমানসিকতার প্রতিচ্ছবি
পার্বতী গোপকুমার—এই নামটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে এক তীব্র সংগ্রামের ইতিহাস, যেখানে জীবনের চ্যালেঞ্জ কখনোই তাঁকে দমাতে পারেনি। বরং এই চ্যালেঞ্জই তাঁকে গড়ে তোলে ভারতের অন্যতম শক্তিশালী প্রশাসনিক মুখ হিসেবে। এক নজরে দেখে নিই তাঁর জীবনের চ্যালেঞ্জ এবং অদম্য ইচ্ছাশক্তির সেই অনন্য উপাখ্যান।
🛣️ দুর্ঘটনার ধাক্কা: শরীর ভেঙেছিল, মন নয়
২০১০ সাল, এক সাধারণ দিনের শেষ বিকেলে ঘটে যায় অস্বাভাবিক এক ঘটনা—এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় পার্বতী গোপকুমার হারান তাঁর ডান হাত।
চিকিৎসকরা জানান, অস্ত্রোপচার করেও হাত বাঁচানো সম্ভব নয়; সেই মুহূর্তে অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁর স্বপ্ন বুঝি চিরতরে থেমে গেল।
কিন্তু পার্বতী গোপকুমার প্রমাণ করেন—শরীর ভাঙলে স্বপ্ন ভাঙে না, যদি মন থাকে অটুট।
✍️ বাম হাতে নতুন করে লেখা শুরু: কার্সিভে ইচ্ছেশক্তির অনুশীলন
ডান হাত হারানোর পরও পার্বতী গোপকুমার বেছে নেন এক অভিনব পথ—বাম হাতে লেখার নতুন অধ্যায়।
অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি—তিনি শিশুদের জন্য তৈরি এলকেজি ক্লাসের কার্সিভ রাইটিং বই ব্যবহার করে রোজ অনুশীলন শুরু করেন।
প্রতিদিনের অনুশীলনে শুধু লেখা নয়, নিজের ধৈর্য, জেদ ও মানসিক শক্তিকেও শাণিত করেন তিনি।
তাঁর পরিবার জানিয়েছে, পার্বতী গোপকুমার ঘন্টার পর ঘন্টা নির্জনে বসে বাম হাতে ইংরেজি ও মালয়ালমে ক্যালিগ্রাফির মতো নিখুঁত লেখা অভ্যাস করতেন।
🧠 মানসিক প্রতিকূলতা জয়: নিজের ভিতরে নিজেই শক্তি
সমাজের চোখে তখন তিনি একজন শারীরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তি; কিন্তু নিজের চোখে তিনি ছিলেন একজন ভবিষ্যতের আইএএস অফিসার।
আত্মবিশ্বাস ও মানসিক স্থিতি বজায় রাখতে তিনি নিয়মিত ধ্যান ও যোগচর্চা করতেন, যা তাঁকে মানসিক ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে।
পার্বতী গোপকুমার বলেন, “প্রতিটি জীবনের চ্যালেঞ্জ আমাকে আরও নির্মম ও প্রস্তর কঠিন বানিয়েছে।”
🏁 সমাজ ও নিজেকে প্রমাণ: প্রতিবন্ধকতা নয়, প্রতিজ্ঞা মুখ্য
পরীক্ষাকেন্দ্রে বিশেষ সময়সীমা প্রাপ্ত হওয়ার অধিকার থাকলেও, পার্বতী গোপকুমার কখনওই সেই সুবিধার আশ্রয় নেননি।
তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন—আইএএস অফিসার হওয়ার যোগ্যতা কারও করুণা নয়, বরং প্রাপ্য।
শিক্ষকরা জানিয়েছেন, ক্লাসে তিনিই ছিলেন সর্বদা প্রথম উত্তরদাতা, যাঁর লেখা ছিল বাঁ হাতেও ঝরঝরে ও স্পষ্ট।
💡 কিছু বিরল ও অজানা তথ্য: যা তাঁকে আলাদা করে
দুর্ঘটনার পরে তিনি নিজেই নিজের স্পিচ রেকর্ড করতেন ও শুনতেন, যাতে মস্তিষ্কের লিখনক্ষমতা উন্নত হয়।
পার্বতী গোপকুমার একমাত্র ছাত্রী হিসেবে পেন্সিলের বদলে কলমে লেখা রপ্ত করেছিলেন বাম হাতে, যাতে লিখন গতি উন্নত হয়।
তিনি UPSC প্রস্তুতির সময় প্রতিটি স্যাম্পল পেপার নিজে হাতে বাঁ হাতে বার বার লিখে উত্তর অনুশীলন করতেন।
পার্বতী গোপকুমার-এর জীবন কেবল এক আইএএস অফিসার হয়ে ওঠার গল্প নয়, এটি এক জীবনের চ্যালেঞ্জ-কে জয় করার ইতিহাস, যেখানে প্রতিটি বাঁকেই লুকিয়ে আছে জেদ, নিষ্ঠা ও মননের ছাপ। এক হাতে জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের এই সাহসিক গল্প আজ শুধু কেরালার নয়—সমগ্র ভারতের গর্ব।
📢 এক হাতে নয়, ইচ্ছাশক্তির হাত ধরেই গড়ে ওঠে ইতিহাস!
🏆 সাফল্যের পথে: পার্বতী গোপকুমারের কঠিন লড়াই ও বিজয়ের কাহিনি
পার্বতী গোপকুমার, যাঁর নাম আজ আত্মপ্রত্যয় ও অদম্য মানসিকতার প্রতীক, তাঁর জীবনের চ্যালেঞ্জ আর লড়াই শুধু একটি আইএএস অফিসার হওয়ার গন্তব্য নয়—বরং সেটি এক অভূতপূর্ব মানসিক ও শারীরিক জয়ের প্রতিচ্ছবি। UPSC পরীক্ষার পথে তাঁর যে প্রতিটি পদক্ষেপ, তা আজ তরুণ প্রজন্মের কাছে একটি জীবন্ত অনুপ্রেরণা। আসুন, তাঁর সেই পথচলার সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণ দেখি।
🎯 প্রথম পরাজয়—সফলের বীজ
২০২২ সালের UPSC পরীক্ষায় প্রথমবার প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন পার্বতী গোপকুমার।
অনেকেই ভাবতে পারেন, এটাই তাঁর স্বপ্নভঙ্গের মুহূর্ত। কিন্তু তাঁর কাছে সেটি ছিল আত্মসমীক্ষার সুযোগ।
✅ উপপয়েন্ট:
এই ব্যর্থতাকে তিনি বিশ্লেষণ করে বোঝেন—কোথায় ভুল হয়েছে, কীভাবে পড়াশোনার পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে।
পার্বতী গোপকুমার বলেছিলেন, “প্রথম চেষ্টায় না পারা মানে হেরে যাওয়া নয়, বরং জয়টা আরও সুগঠিত করার সময়।”
📘 দ্বিতীয় চেষ্টায় দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন
দ্বিতীয় চেষ্টায় পার্বতী গোপকুমার UPSC পরীক্ষায় ২৮২তম র্যাঙ্ক অর্জন করেন, যা ছিল এক ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন।
✅ উপপয়েন্ট:
এই সময় তিনি কেবল প্রিলিমিনারি নয়, মেইনস ও ইন্টারভিউয়েও অনবদ্য পারফর্ম করেন।
বাঁ হাতে উত্তর লিখেও টাইম ম্যানেজমেন্টে দক্ষতার প্রমাণ দেন।
তার উত্তরপত্রে ছিল যুক্তির গভীরতা, ব্যতিক্রমী ভাষাশৈলী ও যথাযথ উদাহরণ, যা তাঁকে র্যাঙ্ক লিস্টে জায়গা করে দেয়।
⏳ অতিরিক্ত সময়—সুবিধা নয়, সহ্যশক্তির পরিমাপ
আইনি সুবিধা অনুসারে, শারীরিক চ্যালেঞ্জ থাকা পরীক্ষার্থীদের জন্য অতিরিক্ত ২০ মিনিট প্রতি ঘণ্টায় বরাদ্দ থাকে।
পার্বতী গোপকুমার এই সুযোগ ব্যবহার করলেও, তাঁকে পড়তে হয়েছে এক অন্যরকম মানসিক পরীক্ষায়।
✅ উপপয়েন্ট:
বাঁ হাতে লিখে দ্রুততার সাথে যুক্তিসম্মত ও পরিপাটি উত্তর লেখা ছিল কঠিন কাজ।
অতিরিক্ত সময় মানে শুধু বাড়তি সুযোগ নয়—এটি ছিল এক অসম লড়াই যেখানে পারফর্ম করাই ছিল সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
🔍 প্রস্তুতির অনন্য কৌশল
পার্বতী গোপকুমার শুধুমাত্র বই মুখস্থ করতেন না—তাঁর প্রস্তুতি ছিল গবেষণামূলক এবং নিজস্ব।
✅ উপপয়েন্ট:
প্রতিটি UPSC মেইনস প্রশ্ন নিজে হাতে বাঁ হাতে বারবার লিখে অনুশীলন করতেন।
তাঁর নিজস্ব কৌশল ছিল—প্রতিদিন এক ঘণ্টা কেবল লিখনের জন্য বরাদ্দ, যেখানে টাইমার দিয়ে নিজের গতি যাচাই করতেন।
📚 আইএএস অফিসার হিসেবে স্বীকৃতি: জীবনের চ্যালেঞ্জ জয় করার চূড়ান্ত মুহূর্ত
আইএএস অফিসার হওয়ার পর, পার্বতী গোপকুমার জানান—”এটা কেবল চাকরি নয়, এটি আমার জীবনের লড়াইয়ের স্বীকৃতি।”
তাঁর এই সাফল্য হাজারো যুবক-যুবতীর কাছে এক জীবন্ত প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পার্বতী গোপকুমারের জীবন আমাদের শেখায়—জীবনের চ্যালেঞ্জ আসবে, ব্যর্থতা আসবে, কিন্তু তার মধ্যেই জেগে উঠবে এক আইএএস অফিসার হয়ে ওঠার সাহসিক গল্প। তাঁর কঠিন পরিশ্রম, শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করার তীক্ষ্ণতা এবং মানসিক শৃঙ্খলা আজকের সময়ে বিরল উদাহরণ। পার্বতী গোপকুমার আজ কেবল একটি নাম নয়—এটি একটি যুগান্তকারী বার্তা: “মন থেকে লড়লে, কোনো হারই চূড়ান্ত নয়।”
👪 পরিবার ও সহায়তা: নিরব লড়াইয়ের দৃশ্যপট
পার্বতী গোপকুমার একজন আইএএস অফিসার হিসেবে আজ যেভাবে আলোচনায়, তার অন্তরালে রয়েছে এক অসম্ভব দৃঢ় মানসিক সহায়তা—তাঁর পরিবার। এই সহানুভূতির বৃত্তের মধ্যেই গড়ে উঠেছে এক অনবদ্য সাফল্যগাঁথা। জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় যে মানসিক বল প্রয়োজন, তার গোড়ার উৎস ছিল এই পরিবার।
পিতা গোপকুমার – নিয়মের ভিতরেও সহানুভূতির প্রেরণা
পার্বতীর পিতা গোপকুমার ছিলেন একজন তহসিলদার, যাঁর পেশাগত জীবন ছিল শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধে পরিপূর্ণ।
সরকারি দপ্তরের এই কঠোরতা যে ঘরে ঢুকলে উষ্ণতায় পরিণত হয়, সেটাই প্রমাণ করেছেন তিনি।
✅ উপপয়েন্ট:
দুর্ঘটনার পর মেয়ের মানসিক ভেঙে পড়া রুখতে তিনি সব দায়িত্ব ছেড়ে সময় দিয়েছেন।
আইএএস পরীক্ষার প্রতিটি ধাপে পার্বতীর পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির সঙ্গী ছিলেন তিনি—একজন অবিচল ‘কোচ’ ও ‘সাইলেন্ট ফাইটার’।
মাতা শ্রীকলা নায়ার – শিক্ষার মাটিতে মনোবলের বীজ
পার্বতী গোপকুমারের মা, শ্রীকলা নায়ার, পেশায় একজন স্কুল শিক্ষিকা। তাঁর কাছেই পার্বতী প্রথম শিখেছিলেন শৃঙ্খলা, ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের পাঠ।
✅ উপপয়েন্ট:
প্রতিদিন ভোরে পড়াশোনার পরিবেশ তৈরি করা থেকে শুরু করে মানসিক প্রশান্তি নিশ্চিত করা—সবটাই মাতৃসম্ভব।
বাঁ হাতে লেখা শুরু করার কঠিন পর্বে প্রতিদিন তিনি মেয়ের পাশে বসে থাকতেন, যেন শুধু কলম না—মনের সাহসও চলে তাঁর হাত ধরেই।
পরিবার হিসেবে যুদ্ধ – বাইরের নয়, ঘরের ফ্রন্টলাইন
জীবনের চ্যালেঞ্জ যেভাবে পার্বতীকে বিঁধেছিল, ঠিক তেমনই পরিবারকেও বিঁধেছিল মৌন এক যুদ্ধ।
চিকিৎসা, থেরাপি, পড়াশোনা—সবকিছুর অর্থনৈতিক ও মানসিক দায় তাঁদের ভাগে পড়ে।
✅ উপপয়েন্ট:
পরিবার কোনও দিন “কি হবে আর?” বলেনি। বরং বলেছে, “তুই পারবি, কারণ তুই পার্বতী গোপকুমার।”
পার্বতী গোপকুমারের আত্মবিশ্বাস, যেটা তাঁকে আইএএস অফিসার হতে সাহায্য করেছে, তার রসদ পেয়েছিল এই সাহসী পরিবার থেকে।
অনন্য প্রেক্ষাপট – কেরলের এক সাধারণ পরিবারের অসাধারণ গাথা
কেরলের মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া একটি মেয়ের পক্ষে জীবনের চ্যালেঞ্জ জয় করে আইএএস অফিসার হওয়া যেন এক রূপকথার বাস্তব রূপ।
পার্বতীর পরিবার কখনও পৃষ্ঠপোষকতা করেনি, করেছে প্রেরণা সঞ্চার।
পার্বতী গোপকুমার যদি হন অদম্য মনের প্রতীক, তবে তাঁর পরিবার ছিল সেই শক্তির জ্বালানি। এই পরিবার দেখিয়েছে, একজন আইএএস অফিসার গড়ে ওঠার পেছনে কেবল পঠন-পাঠন নয়, প্রয়োজন একখণ্ড বিশ্বাসভরা পরিবেশ। তাঁদের নিঃশব্দ লড়াই, আত্মত্যাগ এবং মনোসংযোগই পার্বতীকে নিয়ে গেছে সাফল্যের চূড়ায়। সত্যিই, জীবনের চ্যালেঞ্জ কখনো একার নয়—সেই লড়াইয়ে পরিবারই প্রথম ও শেষ ব্যাটেল ব্যাকআপ।
অনুপ্রেরণার প্রতীক: যেখানে ব্যথা নয়, বেদনার ভেতরেও জন্ম নেয় আশ্চর্য আলো
পার্বতী গোপকুমার শুধুমাত্র একজন আইএএস অফিসার নন—তিনি এক জীবন্ত কাহিনি, যেখানে জীবনের চ্যালেঞ্জ আর দুর্ঘটনা কেবল বাঁধা নয়, তা এক অভাবনীয় উত্থানের সিঁড়িও।
দুঃসহ দুর্ঘটনা: একটি মোড় ঘুরিয়ে দেয় জীবন
২০১৫ সালে একটি বাইক দুর্ঘটনায় পার্বতী গোপকুমার হারিয়েছিলেন তাঁর ডান হাত—এই মুহূর্তেই তাঁর জীবনে ছায়া নেমে আসে।
চিকিৎসা চলাকালীনই তাঁকে বলা হয়েছিল, ভবিষ্যতে লেখালেখি বা দীর্ঘ পড়াশোনা হয়তো আর সম্ভব হবে না।
✅ উপপয়েন্ট:
তবুও থেমে যাননি। বাঁ হাতে লিখতে শেখার জন্য শুরু করেন প্রতিদিনের কষ্টসাধ্য প্র্যাকটিস, যা ছিল তার নিজস্ব এক বিপ্লব।
চিকিৎসকদের “অসম্ভব” ঘোষণাকে তিনি “আমি পারব” বলে চ্যালেঞ্জ করেন।
বাঁ হাতে লেখা, বাঁ পা দিয়ে স্বপ্ন গড়া
ডান হাত হারানোর পরেও পার্বতী গোপকুমার আইএএস প্রিলিমস, মেইনস ও ইন্টারভিউ—সবপর্বই দিয়েছেন বাঁ হাতে লিখে।
তিনি নিজেই বলেন, “আমার হাত গেছে ঠিকই, কিন্তু আমার লক্ষ্য তো অটুট।”
✅ উপপয়েন্ট:
প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা বাঁ হাতে লেখার অভ্যাস গড়ে তুলেছিলেন, যাতে আইএএস অফিসার হওয়ার লক্ষ্যে কোনও খামতি না থাকে।
অপ্রচলিত পদ্ধতিতে নিজের প্রস্তুতির রুটিন তৈরি করেছিলেন—কোনও কোচিং নয়, ছিল আত্মবিশ্বাস।
মনোবলের ভিত – যেখানে সাহসই অস্ত্র
একাধিকবার খারাপ ফলাফল, শারীরিক যন্ত্রণা ও সামাজিক সহানুভূতির আড়ালে থাকা কটূক্তি পার্বতীকে একটুও দমাতে পারেনি।
তাঁর মনোবল ছিল এমন এক সোনার খাঁচা, যেখানে ব্যর্থতা ধাক্কা খেয়ে ফিরে যেত।
✅ উপপয়েন্ট:
পার্বতী গোপকুমার বিশ্বাস করতেন, জীবনের চ্যালেঞ্জ মানেই হেরে যাওয়া নয়, বরং নতুন কৌশলে ফিরতে শেখা।
প্রিলিমসের জন্য বারবার সিলেবাস ভেঙে ফেলতেন নিজের পদ্ধতিতে, যাতে পড়াশোনার সময় অনুপ্রেরণার অভাব না হয়।
সাফল্যের মানে নতুনভাবে লেখা
২০২0 সালে তাঁর আইএএস অফিসার হওয়ার খবর সারা দেশের মিডিয়া কভার করে—তাঁর ছবির সঙ্গে লেখা হয়েছিল: “She lost a hand, not her grit.”
✅ উপপয়েন্ট:
এমনকি প্রশিক্ষণকালীন সময়েও পার্বতী নিজে অন্য ট্রেনিদের জন্য অনুপ্রেরণামূলক ওয়ার্কশপ নেন।
আজ তাঁকে বলা হয়—”ভারতের মেয়েদের জন্য এক পথপ্রদর্শক, যিনি নিজে পথ বানিয়ে হাঁটেন।”
ব্যতিক্রমী তথ্য: যা সচরাচর আলোচনায় আসে না
দুর্ঘটনার পর তিনি প্রথম যে বই পড়েছিলেন তা ছিল Helen Keller-এর জীবনী—এ থেকেই তিনি উপলব্ধি করেন, “দৃষ্টি না থাকলেও দিগন্ত ছোঁয়া যায়।”
সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পার্বতী গোপকুমার নিজে টাইম ম্যানেজমেন্টের জন্য তৈরি করেছিলেন এক ‘নোট রিটেন বাইন্ডার’—যেখানে প্রতিটি বিষয়ে তাঁর হাতে লেখা প্রশ্ন-উত্তর সাজানো ছিল বাঁ হাতেই!
পার্বতী গোপকুমার কেবল একটি নাম নয়—তিনি এক প্রতীক, যিনি প্রমাণ করেছেন যে আইএএস অফিসার হওয়ার পথে জীবনের চ্যালেঞ্জ যতই কঠিন হোক, মনোবল আর নিষ্ঠা থাকলে কোনও কিছুই অসাধ্য নয়। তিনি দেখিয়েছেন, স্বপ্ন যখন আগুনের মতো জ্বলে, তখন হাতের অনুপস্থিতিও থামাতে পারে না সেই আলোকধারা।
আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো