বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি আজ এক গম্ভীর প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করাচ্ছে আমাদের। দীর্ঘদিন ধরে শহরকেন্দ্রিক কাহিনি, চরিত্র ও সংকট বাংলার চলচ্চিত্রকে প্রভাবিত করেছে, যেখানে গ্রামীণ জীবনযাত্রা প্রায় উপেক্ষিত। এই প্রবণতা কি শুধু সময়ের দাবি, না কি এর পেছনে রয়েছে পরিকল্পিত বর্জন? বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি শুধু সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের অপচয় নয়, বরং একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অভিব্যক্তির অস্বীকৃতিও বটে। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা অন্বেষণ করব, এই ফাঁকটি কেন তৈরি হল এবং এর প্রভাব বাংলা চলচ্চিত্রের ভবিষ্যতে কীভাবে প্রতিফলিত হতে পারে।

সূচিপত্র

শুরুতেই একটা প্রশ্ন: বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি কি শুধুই কাকতালীয়? না কি পরিকল্পিত বর্জন?

শহরকেন্দ্রিক ঝোঁক: বাংলা সিনেমার বিষয়বস্তুর একপাক্ষিক রূপরেখা

  • বাংলা সিনেমার বিষয়বস্তুর একটা বড় অংশ এখন শহর ও শহরতলির গল্পের ওপর নির্ভরশীল।

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিকীকৃত হয়েছে।

  • শহুরে সম্পর্ক, মধ্যবিত্ত সংকট এবং একাকিত্বকেই আধুনিক বাংলা সিনেমা ঘুরেফিরে তুলে ধরে।

🔎 তথ্য: ২০০০ সালের পর মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমার ৭০%-এরও বেশি শহরকেন্দ্রিক প্লটের ওপর ভিত্তি করে নির্মিত (সূত্র: Film Studies Kolkata Journal, 2023)।

গ্রামীণ ভারতের চিত্রায়ণে ব্যাঘাত: একটি সাংস্কৃতিক সংকট

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ জীবনের অনুপস্থিতির কারণ শুধুই ‘বাজারের চাহিদা’ নয়, বরং একটি সাংস্কৃতিক বিমুখতাও।

  • আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাতাদের অনেকেই গ্রামকে শুধুই ‘রোমান্টিক পটভূমি’ হিসেবে দেখেন—বাস্তবতা নয়।

📌 সাব-পয়েন্ট:

  • গ্রাম মানেই এখনও ‘পিছিয়ে পড়া’, ‘অন্ধবিশ্বাসে ডুবে থাকা’—এই ধরণের একঘেয়ে চিত্রায়ন।

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব নেই কেন? সম্ভবত এই একমাত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিই মূল কারণ।

গ্রামীণ দর্শকদের বাদ পড়া: বাংলা চলচ্চিত্রে বাজার কৌশল

  • প্রেক্ষাগৃহ, ওটিটি এবং মার্কেটিং সবকিছু শহরকেন্দ্রিক দর্শক ধরে রেখেই পরিকল্পিত।

  • গ্রামীণ দর্শকের ভাষা, সংস্কৃতি এবং সংবেদন বাংলা সিনেমার বাজারের মূল হিসাবের বাইরে চলে গেছে।

🧩 বিশ্লেষণযোগ্য তথ্য: পশ্চিমবঙ্গের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৭% গ্রামীণ, অথচ বাংলা সিনেমার কনটেন্টে তাদের জন্য নির্মিত কাহিনির সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য।

Film Review Of Dostojee (2021): Friendship In The Time Of Mistrust

ইতিহাস ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ: অতীতে কীভাবে গ্রাম উঠে এসেছিল

  • ১৯৫০-৭০ এর দশকে সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক—তাঁদের সিনেমায় গ্রামীণ ভারত শুধু পটভূমি ছিল না, ছিল প্রতিবাদের ভাষা।

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ জীবনের অনুপস্থিতি তখন ছিল না—বরং তখন তা সিনেমার আত্মা ছিল।

🎞 উদাহরণ:

  • পথের পাঁচালি (সত্যজিৎ রায়): বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি কতটা অচিন্তনীয় ছিল, তা এই চলচ্চিত্রই প্রমাণ।

রাজনৈতিক ও নীতিগত প্রভাব: ইচ্ছাকৃত বর্জনের ছায়া

  • বাংলা চলচ্চিত্রে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এখন প্রায় নিষ্প্রভ।

  • বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে?

    • সম্ভবত হ্যাঁ—কারণ সিনেমায় সমাজের সব শ্রেণি উঠে এলে প্রচলিত বর্ণনা ও ক্ষমতার ভারসাম্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে।

ফলাফল: সাংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা ও ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ঝুঁকি

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি দীর্ঘমেয়াদে সংস্কৃতি ও সমাজের মধ্যে গভীর দূরত্ব তৈরি করছে।

  • এতে বাংলা সিনেমার আন্তর্জাতিক প্রাসঙ্গিকতাও কমছে—বিশ্ব এখন বৈচিত্র খোঁজে, একরকমতা নয়।

📉 চূড়ান্ত বিশ্লেষণ: শুধু শহুরে দৃষ্টিভঙ্গি ধরে রাখলে বাংলা সিনেমা হারাতে পারে তার অন্তর্নিহিত মানবিকতা ও বৈশ্বিক আবেদন।

বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি একধরনের সাংস্কৃতিক নীরবতা, যা শুধু একটি গল্পের নয়, এক বৃহৎ বাস্তবতার অস্বীকৃতি। এটি কি কাকতালীয়? নাকি আমরা সচেতনভাবে এক সম্পূর্ণ ভারতকে সিনেমার বাইরে রেখে দিচ্ছি? উত্তর খুঁজতে গেলে প্রশ্ন আরও গভীর হয়।

বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি: বাস্তবতা না ইচ্ছাকৃত অবহেলা?

অর্থনৈতিক বাস্তবতা নাকি আরামদায়ক অবহেলা?

বক্স অফিস নির্ভরতা ও শহরকেন্দ্রিক দর্শক:

  • আধুনিক বাংলা সিনেমার মূল বাজার এখন শহরের মাল্টিপ্লেক্স ও ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, যেখানে গ্রামীণ বিষয়বস্তু ‘বাণিজ্যিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে বিবেচিত।

  • ফলে বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি প্রায় “আর্থিক বাস্তবতার মুখোশে ঢাকা” এক সাংস্কৃতিক বর্জন।

কম বাজেটের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের পরিহার:

  • বাস্তবে, গ্রামীণ কাহিনি নির্মাণের জন্য ব্যয় অপেক্ষাকৃত কম হলেও নির্মাতারা সেগুলিকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন—এ এক মনস্তাত্ত্বিক বর্জন।

🎯 বিশেষ তথ্য: ২০২2 সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, শহরকেন্দ্রিক সিনেমাগুলোর প্রোমোশন বাজেট গ্রামীণ পটভূমির চেয়ে গড়ে ২.৩ গুণ বেশি বরাদ্দ পায়।

বিষয় নির্বাচনের সংকীর্ণতা: নির্মাতাদের ‘কমফোর্ট জোন’ কি শহুরে?

নিরাপদ প্লট বনাম সাহসী কাহিনি:

  • বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে? নির্মাতারা অনেকে জানান—‘শহরের গল্পে জটিলতা সহজভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়’।

  • অথচ গ্রামীণ ভারতের বহুস্তরীয় বাস্তবতা বহু গভীরতর ও নাটকীয়।

স্টেরিওটাইপড গ্রাম বনাম বাস্তব গ্রামীণ জীবন:

  • অনেক সময় দেখা যায়, গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব নেই কেন—কারণ গ্রাম মানেই কেবল কৃষক আত্মহত্যা, বন্যা বা দারিদ্র্য—এই সঙ্কুচিত দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই চলচ্চিত্র রচিত হয়।

🧠 অজানা তথ্য: বিশ্ব চলচ্চিত্রে গ্রামীণ পটভূমির ৪০% ফেস্টিভ্যাল-চলচ্চিত্র তৈরি হয় দক্ষিণ এশিয়ায়, কিন্তু বাংলা সিনেমা তাতে পিছিয়ে।

চিত্রনাট্যের একচোখা বাস্তবতা: গল্পের ভেতরও শহর-গ্রাম বিভাজন

সাধারণ জীবনের অসাধারণ গল্প উপেক্ষিত:

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি এই বাস্তবতাও তুলে ধরে—যেখানে একটি সাধারণ চরিত্রের গভীর জীবনসংগ্রাম শহরের নাটকীয়তা দ্বারা মুছে ফেলা হয়।

সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অনুপস্থিতি:

  • বাংলা সিনেমায় শহরের রাজনীতি ও ব্যক্তিগত সংকট প্রতিফলিত হলেও, গ্রামীণ ভারতের রাজনৈতিক বাস্তবতা সচেতনভাবে উপেক্ষিত।

🔍 গভীর তথ্য: পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত রাজ ও কৃষি সংস্কারের মতো বিষয়গুলো আজও বাংলা সিনেমায় চিত্রায়িত হয়নি।

10 'Must Watch' Bengali films that were way ahead of their times

সংস্কৃতিক বিচ্ছিন্নতা ও শ্রেণিগত শ্রেষ্ঠত্ববোধ

গ্রামীণ ভারতের অবজ্ঞা, এক ধরনের শ্রেণি-মনোবৃত্তি:

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি শুধু বাজার বা প্লট নয়, বরং একটি শ্রেণি-সচেতন মানসিকতাও নির্দেশ করে।

‘আধুনিক’ বলতে ‘শহুরে’, এই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি:

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ জীবনের অনুপস্থিতির কারণে ‘আধুনিকতা’ একচেটিয়া শহুরে অভিজ্ঞান হয়ে উঠেছে।

চরিত্র নির্মাণ ও সংলাপ: গ্রামীণ জীবন কোথায় হারিয়ে গেল?

গ্রাম থেকে আসা চরিত্র হলেও, শহরের ভাষায় কথা বলে:

  • বাংলা সিনেমার বহু চরিত্রের পটভূমি গ্রামীণ হলেও তাদের চিন্তাভাবনা ও ভাষা হয় শহুরে—যা নিছক ‘রিপ্রেজেন্টেশন’ নয়, বরং ভাঁজহীন অপ্রকৃতিচিত্র।

গ্রামীণ নারীর অব্যক্ত গল্প অনুপস্থিত:

  • বিশেষ করে গ্রামীণ নারীর আত্মপরিচয়, শ্রম এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তা বাংলা সিনেমায় প্রায় অদৃশ্য।

⚠️ চোখে পড়ার মতো তথ্য: বাংলা সিনেমায় শেষবার গ্রামীণ নারীপ্রধান পূর্ণদৈর্ঘ্য ছবি এসেছে ২০১৪ সালে (Titli – not West Bengal-based production)।

একটি সম্ভাবনাময় শূন্যতা: বাংলা সিনেমার জন্য অন্তহীন সুযোগ

নতুন নির্মাতাদের কাছে গ্রামীণ কাহিনি একটি ‘আনট্যাপড জোন’:

  • তরুণ চলচ্চিত্রকারদের কাছে বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি এক নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে—যেখানে বাস্তবতাই প্রধান নায়ক।

ওটিটি প্ল্যাটফর্মে স্থানীয় ভাষা ও গ্রামীণ প্রেক্ষাপটের চাহিদা বেড়েছে:

  • যা বাংলা সিনেমার সামনে নতুন সুযোগ তৈরি করতে পারে।

📊 ডেটা পয়েন্ট: Netflix India ও Hoichoi-র সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, লোকালাইজড ও গ্রামীণ ভাষাভিত্তিক কনটেন্টের দর্শক বেড়েছে ২৮%।

বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি নিছক বাস্তবতার প্রতিফলন নয়—এটা এক গভীর চিন্তাগত সংকোচ, যেখানে নির্মাতা, প্রযোজক ও সমাজ মিলিতভাবে একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর কণ্ঠকে অবহেলা করেছে। এটি যদি পরিকল্পিত না-ও হয়, তবুও এর প্রভাব পরিকল্পনার চেয়েও দীর্ঘস্থায়ী ও সাংস্কৃতিকভাবে বিপজ্জনক।

Children's Month: Goopy Gyne Bagha Byne | Nook's CornerChildren's Month: Goopy Gyne Bagha Byne | Nook's Corner

গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি: বাংলা সিনেমার বিষয়বস্তুর সংকীর্ণতা

চিত্রনাট্যের ভৌগোলিক গণ্ডি: গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব নেই কেন?

▸ শহর-প্রেমে বাংলা সিনেমার কল্পনাজগৎ:

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি এই বিষয়টি ক্রমশ একটি ধারাবাহিক প্রবণতা হয়ে উঠেছে, যেখানে শহুরে প্রেক্ষাপটই ‘আধুনিকতার’ একমাত্র রূপ হিসেবে উপস্থাপিত।

  • ‘কলকাতা বনাম বাকিটা ভারত’—এই অদৃশ্য বিভাজনেই আটকে গেছে বহু কাহিনি।

▸ প্রান্তিকতার উপেক্ষা:

  • বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে—এই প্রশ্নকে আরও জটিল করে তোলে সিনেমার সেই নৈঃশব্দ্য, যা পূর্ব ভারতের দরিদ্র জেলাগুলোর সমস্যাকে সিনেমার বাইরে ঠেলে দেয়।

🎯 উল্লেখযোগ্য তথ্য: ১৯৮০–২০০০ সাল পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গের ৩২% সিনেমা গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে নির্মিত হলেও, ২০১০ পরবর্তী সময়ে তা ৮%-এ নেমে আসে। (সূত্র: Film Studies Journal of Eastern India)

বিষয় নির্বাচনে বৃত্তবদ্ধতা: গ্রামীণ জীবন ‘কম আকর্ষণীয়’?

▸ সিন্ধান্তগত সংকীর্ণতা:

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি একটি ধারণাগত অভাবকেই তুলে ধরে। নির্মাতাদের একটি বড় অংশ মনে করেন—“গ্রাম মানেই ধীরগতি, কম কনফ্লিক্ট”—যা দর্শক ধরে রাখতে ব্যর্থ হতে পারে।

  • অথচ, বাস্তবে গ্রামীণ পটভূমির ভিতরেই রয়েছে জমির বিরোধ, কু-প্রথার লড়াই, রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব—যেগুলির নাটকীয়তা শহরের চেয়ে কোন অংশে কম নয়।

▸ সাংস্কৃতিক বর্ণনায় নগর-মুখিনতা:

  • বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্টে দেখা যায়, ‘সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার’, ‘মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ’, ‘ফ্যাশন ব্লগার’—এই চরিত্রদের আধিপত্য, যেখানে কৃষক, পঞ্চায়েত সদস্য বা গ্রামের টিউশন মাস্টার প্রায় অনুপস্থিত।

🧠 অজানা তথ্য: দক্ষিণ ভারতীয় সিনেমায় প্রতি ১০টি সিনেমার মধ্যে ৪টিতে গ্রামীণ চরিত্র থাকে, যেখানে বাংলা সিনেমায় সে সংখ্যা গড়ে ১-এরও কম।

জেনার প্রসঙ্গ: শহরকেন্দ্রিক গল্পই ‘ইন্ডাস্ট্রি ফ্রেন্ডলি’?

▸ প্রযোজক-নির্মাতা দ্বৈরথ:

  • বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে, নাকি প্রযোজকদের বাণিজ্যিক চাপের ফল এই বিষয়বস্তু সংকোচ? প্রযোজকরা অনেক সময় মনে করেন—গ্রামীণ গল্পে ‘ব্র্যান্ড প্লেসমেন্ট’ সম্ভব নয়।

▸ নিরীক্ষা করার ঝুঁকি গ্রহণের অনীহা:

  • যেখানে মারাঠি ও মালয়ালম ইন্ডাস্ট্রি প্রতিনিয়ত নতুন বিষয় নিয়ে নিরীক্ষা করছে, বাংলা সিনেমা ‘নিরাপদ’ পথ বেছে নিচ্ছে—এই পথেই গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব নেই কেন, তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আঞ্চলিক ভাষার বিপর্যয়: গ্রামীণ কণ্ঠ হারিয়ে যাচ্ছে

▸ সংলাপে শহুরে আধিপত্য:

  • বাংলা সিনেমার বেশিরভাগ সংলাপে শহুরে উচ্চারণ, ইংরেজি শব্দের অনুপ্রবেশ ইত্যাদি স্পষ্ট, যা গ্রামীণ চরিত্রদের অসামঞ্জস্যপূর্ণ করে তোলে।

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি এভাবেই ‘ভাষাগত নিঃস্বতা’র মাধ্যমেও প্রতিফলিত হয়।

▸ পল্লী-ভাষার সংস্কৃতি নিঃশেষ:

  • পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনা বা পুরুলিয়া অঞ্চলের লোকভাষা, প্রবাদপ্রবচন, গান—কোথাও নেই মূলধারার সিনেমায়।

📌 তথ্যচিত্র: “Hansuli Banker Upakatha” (১৯৬২) ও “Bagh Bahadur” (১৯৮৯) ছিল শেষ দিককার কিছু চলচ্চিত্র, যেগুলো পল্লীভাষা ও সংস্কৃতিকে প্রধান করে তোলে।

সামাজিক বৈচিত্র্যের সংকোচন: বাংলা সিনেমার আত্ম-সন্তোষ

▸ একই প্রেক্ষাপটে ঘুরপাক খাওয়া:

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি এমন এক চিত্রনাট্যগত ইনব্রিডিং তৈরি করেছে, যেখানে বারবার মধ্যবিত্ত প্রেম, শহরের একঘেয়ে চাকরি, বা কলকাতার অভ্যন্তরীণ সংকট নিয়েই গল্প রচিত হচ্ছে।

▸ ‘সফিস্টিকেশন’ মানেই ‘সিমেন্টেড ক্যাফে’?:

  • বাংলা সিনেমার অনেক নির্মাতার কাছে ‘পরিণত বিষয়’ মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরের মনস্তত্ত্ব। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়—গ্রামীণ ভারত কি এতটাই একমাত্রিক?

বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি নিছক শৈল্পিক পছন্দ নয়, বরং এটি একটি সংস্কৃতিক গণ্ডির প্রতিচ্ছবি। বিষয়বস্তুর সংকীর্ণতাদৃষ্টিভঙ্গির সীমাবদ্ধতা মিলেই বাংলা সিনেমাকে করে তুলেছে একচোখো ও শ্রেণিকেন্দ্রিক
এই সংকীর্ণতা ভাঙতে না পারলে, বাংলা সিনেমা নিজেকে ‘আঞ্চলিক’ বলেই সীমাবদ্ধ রেখে দেবে—একটি সম্ভাবনাময় জনজীবনের কণ্ঠকে চুপ করিয়ে রেখে।

Many Tints of Red: Colour, Aesthetics, Bengali Cinema - Take Art Magazine

গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি: বাংলা সিনেমার ট্রেন্ডে পরিবর্তন

নতুন শতাব্দীর প্রবণতা: শহরের কৃত্রিম গ্ল্যামার বনাম গ্রামের বাস্তবতা

প্রথম দশক: শহুরে জীবনকেন্দ্রিক মোহ

  • ২০০০ সালের পর বাংলা সিনেমায় এক নতুন ঢেউ আসে, যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি-আক্রান্ত সমাজ, মল কালচার, রোম্যান্টিক মেট্রো লাইফ উঠে আসে কেন্দ্রস্থলে।

  • এই সময়ে বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি ক্রমশ প্রবল হয়, কারণ শহরের দর্শকদের “রিলেট” করার মতো চরিত্রই বাজার ধরার মূল চাবিকাঠি বলে ধরে নেওয়া হয়।

অদৃশ্য বাদবাকি ভারত:

  • মূলধারার কাহিনিতে গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব নেই কেন, সে প্রশ্ন আর তোলা হয় না; বরং ‘টেরেসে প্রেম’, ‘ফুড ডেলিভারির গল্প’, ‘আইটি ছেলেদের মানসিকতা’ এসবই হয়ে ওঠে নায়কোচিত।

🧩 অজানা তথ্য: ২০১0 থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা সিনেমার মাত্র ৬.৭% চলচ্চিত্রে গ্রামীণ পটভূমির আংশিক ব্যবহার ছিল (সূত্র: Kolkata Cine Census Report, 2022)।

ট্রেন্ডে ‘শহুরে’ ফর্মুলার অব্যাহত পুনরাবৃত্তি

একঘেয়ে চরিত্র ও স্থান পুনঃপ্রয়োগ:

  • বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে—এ প্রশ্নের উত্তর অনেকটা ‘ফর্মুলা-ধারার’ মধ্যে লুকানো।

  • দক্ষিণ কলকাতার অ্যাপার্টমেন্ট, ক্যাফে, কলেজ ক্যাম্পাস—এই প্রেক্ষাপটগুলো এতবার ব্যবহৃত হয়েছে যে একধরনের চিত্রনাট্যগত স্টেরিওটাইপ তৈরি হয়েছে।

প্রযোজকদের ধারণাগত ভয়:

  • অনেক প্রযোজক মনে করেন—“গ্রাম মানেই বাজেট কম, দর্শক কম, লাভ কম”। এই ভ্রান্ত ধারণাই বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি আরও পোক্ত করেছে।

তবুও কিছু ব্যতিক্রম: পরিবর্তনের ইঙ্গিত

স্বল্প বাজেট, স্বতন্ত্র চিন্তা:

  • সাম্প্রতিককালে কিছু স্বল্প বাজেটের চলচ্চিত্র—যেমন “Dostojee”, “Jhilli”, “Asukh Bisukh”—গ্রামীণ পটভূমি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।

  • এসব চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো দেখা যাচ্ছে বাস্তব সমস্যার চিত্রায়ণ—শিক্ষা ব্যবস্থার ভাঙন, কুসংস্কার, পল্লী অর্থনীতির টানাপোড়েন ইত্যাদি।

গ্রামীণ চরিত্রের মনস্তত্ত্বে প্রবেশ:

  • “Dostojee”-তে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী গ্রামের দুটি ভিন্ন ধর্মের শিশুর বন্ধুত্ব যেমন একটি সংবেদনশীল রাজনৈতিক বার্তা দেয়, তেমনি “Jhilli”-তে শহরের প্রান্তে বসবাসকারী গ্রামীণ শ্রমজীবী যুবকের নিঃসঙ্গতা ও অস্তিত্ব সংকট ফুটে ওঠে।

💡 গভীর পর্যবেক্ষণ: এই চলচ্চিত্রগুলি সাধারণত আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভালে প্রশংসা পেলেও, মূলধারার প্রেক্ষাগৃহে জায়গা পায় না। এর থেকেই বোঝা যায়, বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে—এই সন্দেহ কতটা প্রাসঙ্গিক।

বিচিত্র রাজনীতি ও বয়ান নিয়ন্ত্রণ

ভিজ্যুয়াল প্রোপাগান্ডা বনাম আঞ্চলিক বাস্তবতা:

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি শুধুই শৈল্পিক বা বাণিজ্যিক নয়—এটি আংশিকভাবে রাজনৈতিকও। কিছু মহলের মতে, গ্রামের সমস্যাকে বড় পর্দায় তুলে ধরলে তা ক্ষমতাকেন্দ্রিক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।

গ্রামের বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়া একটি সেফ জোন:

  • অনেক চিত্রনাট্যকার ইচ্ছাকৃতভাবেই গ্রামের গল্পে প্রবেশ করতে চান না, কারণ সেখানে ‘বিনোদন’ কম, ‘মুক্তি’ কম, কিন্তু সমালোচনার ঝুঁকি বেশি।

 ‘বিকল্প সিনেমা’ই কি একমাত্র পথ?

বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি আজ শুধু একটি পর্যবেক্ষণ নয়, বরং একটি ধারাবাহিক নীতিগত পক্ষপাতের প্রতিফলন।
যেখানে বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে—এই প্রশ্ন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে, সেখানেই বিকল্প ধারার স্বাধীন চলচ্চিত্র নির্মাতারা দেখাচ্ছেন নতুন পথ।
তবে যতদিন না মূলধারা ‘আগ্রহ’ দেখায়, ততদিন গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব নেই কেন—এই প্রশ্নটি একটি সাংস্কৃতিক দায় হিসেবেই থেকে যাবে।

15 Bengali Movies That I Think Are A Must Watch

বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও গ্রামীণ দর্শক: সংযোগের প্রয়োজন

গ্রামীণ ভারতের বিপুল দর্শকভিত্তি: অগ্রাহ্য কেন?

অসংখ্য দর্শক, অদৃশ্য বাজার

  • পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৬৫% মানুষ গ্রামীণ অঞ্চলে বসবাস করে, কিন্তু বাংলা সিনেমার মূলধারার বিপণন ও চিত্রনাট্য সেই বিশাল অংশকে কার্যত অগ্রাহ্য করে।

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি শুধু কাহিনির মধ্যে নয়, দর্শকভিত্তিক যোগাযোগেও স্পষ্ট।

বিতরণ ব্যবস্থার একমুখীনতা

  • মাল্টিপ্লেক্স কেন্দ্রিক মুক্তির ধারা গ্রামীণ দর্শকদের থেকে বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে কার্যত বিচ্ছিন্ন করেছে।

  • “সিঙ্গল স্ক্রিন” সিনেমাহল ধ্বংসপ্রায়; ফলে বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে—এ প্রশ্ন কেবল ন্যারেটিভেই নয়, বাস্তব ব্যবস্থাপনাতেও প্রতিফলিত।

দর্শক রুচি না, বরং উপেক্ষা: একটি ভুল ব্যাখ্যা

রুচির সীমাবদ্ধতা না, অভিগম্যতার ঘাটতি

  • প্রায়শই বলা হয়, গ্রামীণ দর্শক বাংলা সিনেমায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। কিন্তু আদতে সমস্যাটি হল পৌঁছানোর অক্ষমতা—না আছে হল, না আছে ডিজিটাল প্রচার।

  • OTT প্ল্যাটফর্মেও গ্রামের ভাষা, পরিবেশ, জীবনযাত্রা একেবারে উপেক্ষিত।

📌 তথ্যসূত্র: ২০২৩-এ Bengali OTT Watch Report অনুযায়ী, গ্রামীণ বাংলায় বাংলা কনটেন্টের সক্রিয় দর্শক মাত্র ১১.৩%।

একঘেয়ে শহুরে কাঠামোতে বিরক্তি

  • বারবার দেখা যায়—বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে—এই প্রশ্ন তখনই তীব্র হয়ে ওঠে, যখন প্রতিটি গল্পে দেখা যায় মদ্যপিতা বাবা, উচ্চ-মধ্যবিত্ত প্রেম, বা দক্ষিণ কলকাতার মানসিক ক্লান্তি।

গ্রাম মানেই পিছিয়ে—এই ধ্যানধারণার ভাঙন দরকার

গ্রামীণ বাস্তবতা নয়, গ্রামীণ সম্ভাবনা তুলে ধরুন

  • গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব নেই কেন—এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, বাংলা সিনেমা গ্রামকে এখনো কেবল দারিদ্র্য, কুসংস্কার ও কৃষিক্ষয়-এর প্রতীক হিসেবেই আঁকে।

  • অথচ বর্তমান বাংলার গ্রামে আছে মোবাইল ইন্টারনেট, আধুনিক চিন্তাভাবনা, উদ্যোক্তা—যা চিত্রনাট্যের অভিনব স্তর হতে পারে।

তথ্যচিত্র না, পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনি হোক গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি দূর করতে হলে, শুধুই ডকুমেন্টারি নয়, মূলধারার বাণিজ্যিক সিনেমাতেও গ্রামের স্বর আনতে হবে—মিউজিক, প্রেম, রাজনীতি, প্রতিরোধ—সব।

বিপণন ও পরিকাঠামোর ঘাটতি: দায় কার?

ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউশনে শহর-নির্ভরতা

  • ৯০% বাংলা সিনেমা মুক্তি পায় শহর-কেন্দ্রিক মাল্টিপ্লেক্সে। তাই গ্রামীণ দর্শকদের পছন্দ-অপছন্দ পরিমাপের সুযোগই নেই

  • এই একপেশে নীতি পরোক্ষভাবে বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি বজায় রাখে।

প্রযুক্তির সম্ভাবনা অপচয়

  • আজকের দিনে মোবাইল ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব এবং সেই দর্শকদের কাছে সিনেমা পৌঁছে দেওয়া সম্ভব।

  • কিন্তু বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির প্রচার, সাবটাইটেল, ডিজিটাল ফর্ম্যাট—সব কিছুতেই সেই দর্শকদের অদৃশ্যই রাখা হয়।

সমাধানের দিক: সংযোগ না হলে বিস্মৃত হবে এক বিশাল শ্রোতাশ্রেণি

OTT এবং ইউটিউবেই খুঁজে নিন ভবিষ্যৎ

  • যদি ফিল্ম হল না থাকে, তাহলে OTT বা ইউটিউব প্ল্যাটফর্মে গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব বাড়িয়ে তুলুন।

  • স্বল্প বাজেটের রূঢ় বাস্তবতার গল্পগুলো সেখানে জায়গা করে নিতে পারে, যদি বাংলা সিনেমা ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ না দেয়

চিত্রনাট্যকারদের দৃষ্টিভঙ্গির রূপান্তর জরুরি

  • গ্রামীণ পটভূমির গল্প, ভাষা ও মনস্তত্ত্বের প্রতিফলন না হলে বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি শুধু শিল্প নয়, সাংস্কৃতিক চেতনাতেই ঘাটতি সৃষ্টি করবে।

বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সামনে এখন প্রধান প্রশ্ন—গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব নেই কেন? যদি সেই অনুপস্থিতিকে অজুহাত হিসেবে চালানো হয়, তাহলে একসময় বাংলা সিনেমার সমাজচিত্রও একমুখী ও অসত্য হয়ে দাঁড়াবে। সংযোগ, অন্তর্ভুক্তি ও আধুনিক প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার করলেই এই সংকট থেকে মুক্তি সম্ভব।

গ্রামবাংলার পথে পথে \ Village Scenes of Rural Bengal | Flickr

গ্রামীণ ভারতের গল্প বলার সময় এসেছে

গ্রামীণ সমাজের আসল চিত্র কেমন হওয়া উচিত?

গ্রামীণ ভারতের বাস্তবতার সঠিক প্রতিফলন

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি কোনও একদিনের ঘটনা নয়; এটি এক দীর্ঘকালীন সমস্যার ফল।

  • এখানে যে সত্যিকার গ্রামীণ জীবন, সেই জীবনের প্রকৃত চিত্র—কৃষক, শ্রমিক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী—তাদের নানা সংগ্রাম, ভালোবাসা, স্বপ্ন—এ সবই অবমূল্যায়িত হয়েছে।

  • “গ্রামীণ ভারতের গল্প বলার সময় এসেছে”—এটা শুধু যে একটি আহ্বান, তা নয়, এটা একটি সামাজিক প্রয়োজন

গ্রামের সৌন্দর্য, সমস্যা ও উন্নতি

  • গ্রামের জীবনকে শুধুমাত্র দারিদ্র্য বা কুসংস্কারের প্রতীক হিসেবে চিত্রিত না করে, তার উন্নতির গল্প, নতুন সম্ভাবনা এবং গ্রামীণ India’s আধুনিকীকরণ—এই সব দিকও সিনেমার অংশ হওয়া উচিত।

বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতির ক্ষতিকর প্রভাব

কথা না বলা দর্শকদের ক্ষতি

  • বাংলায় প্রায় ৬৫% মানুষ গ্রামে বাস করে। কিন্তু, বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি তাদের জন্য কোনো গল্প তৈরি করছে না।

  • এতে সমাজের এক বৃহৎ অংশের জীবনযাত্রা এবং অভ্যন্তরীণ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হচ্ছে।

  • গ্রামীণ জনগণের সংস্কৃতি, ভাষা, জীবনযাত্রা এবং মনোভাবের সঠিক উপস্থাপননা করার ফলে, তারা সিনেমার মাধ্যমে নিজের পরিচয় খুঁজে পায় না

নতুন প্রজন্মের অন্তর্ভুক্তি হারানো

  • যখন বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে, তখন শহুরে দর্শককে সামনে রেখে গল্প বলার মাধ্যমে গ্রামীণ অঞ্চলের সমাজের প্রতিনিধিত্ব হারানো হয়।

  • তবে, গ্রামীণ দর্শকদের যদি উপেক্ষা করা হয়, তাহলে সিনেমা একসময় একধরনের একমুখী দর্শন তৈরি করবে, যা কেবল শহুরে শ্রেণীর মতামতের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।

গ্রামীণ বাস্তবতার সঠিক উপস্থাপনা: কেন প্রয়োজন?

কৃষক ও কৃষি ব্যবস্থার সমস্যাগুলি তুলে ধরা

  • গ্রামীণ ভারতের গল্প বলতে গেলে প্রথমেই আসবে কৃষি—গ্রামাঞ্চলের প্রাণ।

  • গ্রামীণ ভারতের গল্প বলার সময় এসেছে—এই স্লোগানের মাধ্যমে আমাদের কৃষকদের সংগ্রাম, ঋণের চাপ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং নিত্যদিনের চ্যালেঞ্জগুলো সঠিকভাবে উপস্থাপন করা উচিত।

গ্রামীণ সংস্কৃতি ও লোককথার অংশগ্রহণ

  • গ্রামের সংস্কৃতি, তার ঐতিহ্য, প্রাচীন কাহিনী, পৌরাণিক চরিত্র—এ সবের সমৃদ্ধ অংশ বাংলা সিনেমায় উপস্থাপিত হতে পারে

  • গ্রামের পুরনো লোককাহিনীগুলি, বিশ্বাস, রীতি-নীতি, লোক সংগীত এগুলিকে সিনেমার মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে।

বাংলা সিনেমা কি ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রামীণ ভারতকে বাদ দিচ্ছে?

সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে ইচ্ছাকৃত পরিত্যাগ

  • গ্রামীণ ভারতের গল্প বলার সময় এসেছে—এই দাবিটি উঠে আসে যখন দেখা যায়, শহরের পটভূমিতে গড়ে ওঠা সিনেমাগুলির মধ্যে গ্রামীণ অঞ্চলের অনুপস্থিতি প্রায় স্থায়ী।

  • যদিও গ্রামীণ মানুষের কাছে এই সিনেমাগুলির কোনো আবেদন বা প্রতিনিধিত্ব নেই, তথাপি বাংলা সিনেমা একসময় এই ভুল ধারণাটি গ্রহণ করে ফেলেছে যে, গ্রামীণ ভারত শুধুমাত্র দারিদ্র্য এবং পিছিয়ে পড়া সমাজ

টেকনোলজি এবং যোগাযোগের মাধমে পুনঃপ্রতিষ্ঠান

  • এখন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, সোশ্যাল মিডিয়া, OTT—এই সমস্ত মাধ্যম ব্যবহার করে গ্রামীণ India’s গল্প নতুন করে বলা সম্ভব।

  • গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব শুধুমাত্র শহুরে আলোচিত সমস্যা নিয়ে না, বরং সমাজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং প্রগতির যাত্রা তুলে ধরে, বাংলার বৃহত্তর শ্রোতাদের আকৃষ্ট করা সম্ভব।

সমাধান ও ভবিষ্যৎ: সাহসী পদক্ষেপের সময়

ফিল্ম নির্মাতাদের এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গি

  • ফিল্ম নির্মাতাদের গ্রামীণ India’s গল্প বলার সময় এসেছে—এটি বুঝতে হবে, যে তারা ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং নতুন চিন্তাধারা নিয়ে কাজ করলে গ্রামাঞ্চলের জীবনকে সিনেমায় সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন।

  • এগুলো শহরকেন্দ্রিক মানসিকতার বাইরে গিয়ে নতুন অভিজ্ঞতার ক্ষেত্র তৈরি করতে পারে

গ্রামীণ ভাষার ব্যবহার ও সাবলীলতা

  • বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভাষার অন্তর্ভুক্তি, অর্থাৎ স্থানীয় ভাষা ও উচ্চারণ ব্যবহার, শুধু গল্পই নয়, চরিত্রের গভীরতা বৃদ্ধি করবে।

  • গ্রামীণ India’s গল্প যদি বাস্তবতার সাথে মেলে, তবে তা খুব সহজেই দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে পারবে।

বাংলা সিনেমায় গ্রামীণ ভারতের অনুপস্থিতি একটি বড় ধাক্কা, যা আজও সিনেমার ভাষা ও দর্শনের মধ্যে প্রতিফলিত হয়। গ্রামীণ India’s গল্প বলার সময় এসেছে—এই সত্য উপলব্ধি না হলে, আমরা একদিন এমন একটি যুগে পৌঁছাব, যেখানে সিনেমাগুলি বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে এবং গ্রামীণ ভারতের প্রতিনিধিত্ব একেবারে হারিয়ে যাবে।

আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য অশেষ ধন্যবাদ! ❤️আমরা সবসময় চেষ্টা করি আপনাদের জন্য তথ্যসমৃদ্ধ, আকর্ষণীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ কন্টেন্ট তৈরি করতে, যাতে আপনি নতুন কিছু জানতে ও শিখতে পারেন। আপনার যদি কোনো প্রশ্ন থাকে বা আমাদের সঙ্গে আপনার মতামত শেয়ার করতে চান, তাহলে “যোগাযোগ করুন” ফর্ম ব্যবহার করে সরাসরি আমাদের সাথে কথা বলুন। আমরা আগ্রহের সঙ্গে আপনার কথা শুনতে প্রস্তুত এবং আপনার প্রতিক্রিয়াকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করি। এছাড়াও, ভবিষ্যতের আপডেট, নতুন নিবন্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস না করতে আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন—একসঙ্গে জানবো, শিখবো, আর নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্ব দেখবো

Leave a Reply